গল্প রাইটিং:-" শেষ ট্রেনের অপেক্ষা "II written by @maksudakawsarII
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই? আশা করবো সবাই ভালো আছেন সৃষ্টিকর্তার রহমতে । আমিও আছি আপনাদের দোয়ার বরকতে জীবন নিয়ে ভালোই। তবে কেন জানি আজকাল ব্যস্ততাগুলো আমায় দারুন প্যারা দিচেছ। প্যারা দিচ্ছে জীবন আর সময় দুটোই। কিন্তু আমি তো ব্যস্ততা চাই না। চাই একটু শান্তি আর প্রশান্তি। চাই একটু স্বাধীনতা। যাই হোক এসব কথা বলে শুধু শুধু সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তাই চলে যাই আজ আপনাদের জন্য আমার লেখা সুন্দর গল্পে। যা কিনা বাস্তব জীবেন থেকে সংগ্রহ করা।
প্রতিদিনই চেষ্টা করি আমি আপনাদের মাঝে সুন্দর করে কিছু লিখে উপহার দেওয়ার জন্য। চাই চারদিকের বাস্তব কিছু ঘটনাকে গল্পে রূপ দিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করতে। যাতে করে আমার লেখার যাদুতে আপনারা মুগ্ধ হতে পারেন। যদিও সময় করে উঠতে পারি না। যদিও নিজের ক্রেয়েটিভিটি আপনাদের মাঝে তুলে ধরার সময় হয় না। তবুও চেষ্টা করলাম আপনাদের মাঝে নতুন একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য। আশা করি প্রতিদিনের মত করে আমার আজকের জেনারেল গল্পটিও আপনাদের কাছে বেশ ভালো লাগবে।

রাতের গভীরতা যেন ধীরে ধীরে গাঢ় বেড়েই চলেছে। স্টেশনের চারপাশে একটা ঘুমন্ত নীরবতা। চারদিকে নিস্তব্দ। মাঝে মাঝে কুকুরের ডাকে কিংবা গা ছমছমে ট্রেন লাইনের কাঁপুনিতে নীরবতা একটু ভেঙ্গে যায়। শহরের কোলাহল থেকে দূরে এই ছোট্ট স্টেশনটা যেন একটা পুরনো দিনের চিঠি।আর এমন একটি স্টেশনের বেঞ্চে একা বসে আছে নিলয়। আর আমার আজকের রোমান্টিক গল্পটি নিলয় কে ঘিরেই। তো চলুন মূল গল্পে চলে যাওয়া যাক।
নিলয় স্টেশনে বসে আছে। চারদিকে নীরব আর নিস্তব্দ। কিন্তু নিলয়ের চোখে ঘুম নেই। নিলয়ের হৃদয় জুড়ে যে বিষন্নতা জমে আছে, সেই বিষন্নতাই আজ নিলয়ের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। নিলয়ের হাতে একটি চায়ের কাপ এবং পাশে একটি ব্যাগ। আর সেই চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতেই নিলয়ের চোখে ভেসে বেড়াচ্ছে হাজারও স্মৃতির মালা। জীবন বড় অদ্ভুত। যে মানুষটা একসময় ব্যস্ত রাস্তায়, গা ঘেঁষে হেঁটে চলত, আজ সে নিজের ইচ্ছায় একা, নির্জন এক রেল স্টেশনে। কারন নিলয় তার অতীত কে ভুলে যেতে চায়। নিলয় বিশ্বাস করতে চায় যে শুধুমাত্র একটি সম্পর্কে ভাঙনের পর মানুষের জীবন থেমে যায় না। কিন্তু নিলয়ের সেই বিশ্বাস কে বার বার ভেঙ্গে দেয় তার হারানো প্রেমের স্মৃতিগুলো।
হঠাৎ করেই নিলয় শুনতে পেল একটি ট্রলির শব্দ। নিলয় একটু লক্ষ্য করে দেখলো যে পাশেই একটি সুন্দরী রমনী বসে আছে। যার পড়নে একটি নীল শাড়ী। কাধেঁ একটি ব্যাগ। মেয়েটা এসে দাঁড়াল নিলয়ের সামনে। খুব নরম কন্ঠে নিলয় কে জিজ্ঞেস করলো- “এই ট্রেনটা কি কমলাপুর যাবে?” নিলয় বলল- “হ্যাঁ, আজকের শেষ ট্রেন। পনেরো মিনিটের মধ্যে ছাড়বে।”
মেয়েটা ধীরে বসে পড়ল নিলয়ের পাশে। কিছুক্ষণ কেউ কিছু বলল না। চারপাশের নিস্তব্ধতায় তাদের দুজনের চুপচাপ বসে থাকাটাই যেন কথার চেয়ে গভীর। হঠাৎ মেয়েটি নিলয়ের উদ্দেশ্যে বলা শুরু করে দিলো- “আমি ঐশী। ঢাকায় একটা ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছি। এবার নিলয় বললো- “আমি নিলয়। নিজের কিছুটা ভালো লাগার জন্য বার বার এখানে আসি।” ঐশী একটু হাসল। এইভাবে কথার ভাঁজে দুজন নিজেদের কথার গভীরে হারিয়ে গেল। কথা থেকে কথা আর এর মাঝেই নিলয় জানতে পারল ঐশী তার বাবাকে হারিয়েছে ছোটবেলায়। মা আর ভাইয়ের সঙ্গে গ্রামে বড় হওয়া। তার স্বপ্ন বড় শহরে গিয়ে নিজের মতো করে কিছু একটা করা। নিলয় বলল, শহরে থেকেও অনেক সময় মানুষ খুব একা হয়ে পড়ে। কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে হাঁটলেও পাশে কেউ থাকে না।
বিরতিহীন কথোপকথনের মাঝেই ট্রেন চলছে তো চলছে। এক সময়ে নিলয় বুঝতে পারলো যে্ ঐশী বেশ অসহায় এক রমনী। যার চোখে শুধু একটি অসহায় পরিবারের জন্য চিন্তার ভাজ। নিলয় এ ও বুঝে গেল যে এত বড় শহরে ঐশী বেশ অসহায়। ইট পাথরের শহরে ঐশী কি করে একা পথ চলবে। আর এমন একটি ভাবনাতেই নিলয় ঐশীকে আর ছেড়ে দিতে পারলো না। ঐশীর অনুমতি নিয়েই নেমে গেল ঐশীর সাথে ইনটারভিউ দিতে। ঐশীর ইন্টাভিউ শেষ হলে বাড়ী ফেরার পালা। কিছুক্ষনের পরিচয়ে কেন যেন ঐশীর প্রতি নিলয়ের মায়া পড়ে গেল। নিলয় আর ঐশীকে একা ছাড়তে চাইলো না। উঠে গেল ঐশীর সাথে তাকে পৌঁছে দিতে।
এক সময়ে ঐশীর গন্তব্য চলে আসলো। ঐশী দাঁড়িয়ে পড়ল। ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিলয়ের দিকে তাকিয়ে বলল-আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। বেশ কষ্ট করেছেন আমার জন্য। আমি তাহলে আসি। নিলয় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল- “আজ কেন জানি মন আর ফিরে যেতে চাইছে না। হয়তো কারও পাশে থাকাটাই জরুরী মনে করছে।” ঐশী তাকিয়ে রইল। তার চোখে জল। আর সেই জল নিজের জন্য ভালোবাসা খুঁজে পাওয়ার। দুজনেই নেমে গেল ট্রেন থেকে। নিলয় কে রেখে ট্রেন চলে গেল। স্টেশনে রয়ে গেল দুইটা মানুষ, যারা এই শহরের কোলাহলের বাইরে একখণ্ড নীরবতায়, কিছু না বলে একে অপরকে খুঁজে পেল।
সেই রাতে, ট্রেনটা চলে গেল ঠিকই, কিছু অপেক্ষা থেকে গেল, কিছু গল্প তৈরি হলো। এই প্ল্যাটফর্মে আরেকটা ট্রেন আসবে, হয়তো অন্য কোনো গন্তব্যে যাবে। কিন্তু ঐশী আর নিলয়ের গল্পটা সেই ট্রেনেই জন্ম নিল। যার তোস নতুন গন্তব্য নেই, আছে শুধু একসাথে থাকার অবচেতন ইচ্ছা। শেষ ট্রেনের অপেক্ষায় হয়তো সবসময় ট্রেন ধরা হয় না। কখনো কখনো, কাউকে পাশে বসিয়ে রেখে হারিয়ে যাওয়া মানুষটা নিজেই ফিরে আসে।
কেমন লাগলো আমার আজকের গল্পটি। আশা করি আপনাদের সবার কাছেই আমার গল্পটি বেশ ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন।
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy

শেষ ট্রেনের অপক্ষা শিরোনামে সুন্দর একটি গল্প আমাদের উপহার দিয়েছেন আপু। আপনি ভালো লিখেন। আজ়োকের গল্পটিও অনেক ভালো লিখেছেন। নিলয় আর ঐশীকে নিয়ে গল্পটি আমার ভালো লেগেছে। সুন্দর গল্পটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
https://x.com/maksudakawsar/status/1919812727687807194
https://x.com/maksudakawsar/status/1919812966276591955