সাতক্ষীরা ভ্রমণ (পর্ব-০৬) ||২২-০৩-২০২৪|| by @kazi-raihan
আসসালামুআলাইকুম
বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন? আমি কাজী রায়হান। আমার ইউজার নেম @kazi-raihan বাংলাদেশ থেকে। আশা করি সবাই ভালোই আছেন, আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজকে আমি আপনাদের মাঝে আমার একটি ভ্রমণ কাহিনী শেয়ার করব।
গত সপ্তাহে সাতক্ষীরা যাওয়াকে কেন্দ্র করে ৫ম পর্ব শেয়ার করেছি মূলত বাসা থেকে বের হওয়ার পর বাইক ট্যুরে ভ্রমণের প্রতিটা অংশ আপনাদের মাঝে আলাদা আলাদা পর্বে তুলে ধরবো। যেহেতু অনেক দিন আগে গিয়েছিলাম তাই কিছু কিছু টপিক হয়তো বাদ পড়তে পারে তবে তারপরও নিজে সর্বোচ্চ দিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।৫ম পর্বে খুলনা সেনানিবাস এলাকা সহ খুলনা শহরের বেশ কয়েকটি জায়গা নিয়ে পোস্ট শেয়ার করেছি আর শেষ বেলায় খুলনা শহর ত্যাগ করে রাতের বেলায় সাতক্ষীরায় প্রবেশ করেছিলাম। সাতক্ষীরা যেখানে এসেছিলাম সেখানে পৌঁছাতে রাত আটটা বেজে গিয়েছিল। রাতে সাতক্ষীরার ভেটখালী পৌঁছানোর পরে রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে পরবর্তী দিন পুরোপুরি এলাকা ঘুরে দেখার প্রস্তুতি নিয়ে ঘুমোতে গিয়েছিলাম।
আমরা সাগর ভাইয়ের খালার বাসায় পৌঁছানোর পর দেখলাম তিনি আমাদের জন্য বেশ আয়োজন করেছেন কয়েক রকমের মাছ মাংস সহ বেশ কিছু আইটেম তৈরি করেছেন। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে বেশ খাওয়া দাওয়া হল আর ভর পেট খাওয়া দাওয়ার কারণে বেশ ক্লান্ত শরীর নিয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠেই সেখানকার সকালটা উপভোগ করলাম। আমরা যে রুমে রাতে ছিলাম সেই রুমের টপ বারান্দায় গিয়ে সকালবেলা মেঘলা আকাশ যুক্ত দারুন একটা আবহাওয়া লক্ষ্য করলাম। রাতের বেলায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে সেটা কিছুটা অনুভব করেছিলাম আর সকালটা যখন এমন মেঘলা আবহাওয়া কেন্দ্র করে লক্ষ্য করলাম তখন মনে হচ্ছিল পুরো দিনটা যদি এরকম মেঘলা থাকে আর বৃষ্টি হয় তাহলে তো আমরা আশপাশে ঘুরতে পারবো না। যাই হোক আমরা সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগেই আবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হল তখন অনেকটা মন খারাপ হলো যে এতটা কষ্ট করে এসেছি সাতক্ষীরা সহ সুন্দরবন ঘুরবো আর যদি এরকম বৃষ্টি হয় তাহলে তো আমাদের ঘোরাফেরা ঠিক মতো হবে না। বৃষ্টি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পাশের বাজারের একটি দোকানে গিয়ে রেইনকোট কিনতে চাইলাম যেহেতু আমাদের দুইটা রেইনকোট ছিল আরো দুইটা রেইনকোট দরকার। তবে সেখানে কম দামে তেমন কোন রেইনকোট ছিল না। সব ছিল অনেক বেশি দামের, যেগুলোর দাম ছিল প্রায় দুই হাজার টাকার আশপাশে। তাই সেখান থেকে আর রেইনকোট কেনা হলো না শুধু বাজারটা ঘুরে দেখাই হলো। হঠাৎ সাগর ভাইয়ের খালু বলল আচ্ছা আমার কলিকদের কাছে থেকে আমি রেইনকোট ম্যানেজ করে দিতে পারব। যেহেতু সেদিন শনিবার ছিল তাই তাদের অফিস ছুটি ছিল বলে তিনি আমাদের সবার জন্য একটা করে রেইনকোট ম্যানেজ করে দিলেন।
ভেটখালি,শ্যামনগর, সাতক্ষীরা।
what3words address.
https://w3w.co/disguises.likability.cookers
আকাশলীনা পর্যটন পার্ক, মুন্সিগঞ্জ, সাতক্ষীরা।
what3words address.
https://w3w.co/elector.finessing.reply
আমরা বাসা থেকে সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ উপজেলার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। কেননা মুন্সিগঞ্জ উপজেলার অনেকটা অংশ সুন্দরবনের অঞ্চল রয়েছে। যখন রওনা হয়েছিলাম তখন অনেকটাই মেঘ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল কিন্তু কিছু পথ যাওয়ার পরে আবার পুনরায় বৃষ্টি শুরু হলো আমরা তাড়াহুড়ো করে বাইক থামিয়ে আবার রেইনকোট পড়ে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম। প্রায় এক ঘন্টা যাত্রা করার পরে আমরা সুন্দরবনের এরিয়া দেখতে পেলাম। ভেতরে প্রবেশ করার আগে আমরা একটি চায়ের দোকানে বসে সবাই চা খেয়ে নিলাম কারণ সেদিনের বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া আর উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে বেশ বাতাস ছিল তাই চা খেয়ে শরীর সতেজ করে নিলাম। পরবর্তীতে পার্কের সামনে গিয়ে বাইক পার্কিংয়ে বাইক রেখে টিকিট কাউন্টার থেকে আমরা সবাই টিকিট সংগ্রহ করলাম। সেখানে প্রবেশ করতে প্রতি জনের ২০ টাকা করে টিকিট নিতে হয়। পার্কের ভেতরে সুন্দরবনের অনেক বন্যপ্রাণী কৃত্রিম সৌন্দর্য তৈরি করে রাখা হয়েছে তাছাড়া পার্কের সামনের দিকে গেলে সুন্দরবন এলাকায় যে গাছগুলো জন্মায় সেগুলো বেশ ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছিল তাছাড়া জোয়ারের পানি আসলে সেখানকার সৌন্দর্যটা ভালোভাবে উপভোগ করা যায়। জোয়ারের সময়ে পার্কের ভেতরের অংশে পানি চলে আসে আর সুন্দরবনের নোনা পানির মাছ ও দেখা যায়।
পার্কের ভিতরের অংশ।
what3words address.
https://w3w.co/streetcar.wagers.fast
পার্কের পেছনের দিকে রয়েছে নদী আর সেই পার্কের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে কৃত্রিমভাবে অনেক বড় একটি টাওয়ার তৈরি করে রাখা হয়েছে যেখানে পর্যটকরা উঠে সুন্দরবনের এরিয়ার কিছুটা অংশ দূর থেকে দেখতে পারবে। পার্কের ভেতর দিয়ে কাঠের এবং কংক্রিটের ব্রিজ তৈরি করে রাখা হয়েছে তার নিচ দিয়ে জোয়ারের পানি আসা-যাওয়া করে। আমি হুট করে এক ধরনের বন্যপ্রাণীও দেখলাম যদিও সেগুলোর ছবি তুলতে পারিনি। বন্যপ্রাণীটা আমাদেরকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে পালিয়ে গেল সম্ভবত সেটা বন্য শুকর হবে। আমরা চেয়েছিলাম টাওয়ারে উঠে সুন্দরবনের এরিয়াটা দেখব কিন্তু ঝড়ের কবলে পড়ে টাওয়ারে যাওয়ার যে ব্রিজ ছিল সেটা ভেঙে গিয়েছে তাই সেখানে আর যাওয়া হয়নি পরে জানতে পারলাম ব্রিজ সংস্কারের কাজ বর্ষার মৌসুম পার হলে শুরু হবে। কল্পনা করুন সুন্দরবনের নোনা পানির উপর দিয়ে ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে আর সেই পানির মধ্যে সুন্দরবনের নোরা পানির বিভিন্ন মাছ সহ চিংড়ি মাছ লাফাচ্ছে আর আপনি ব্রিজের উপর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্যটা দেখছেন। বিষয়টা কল্পনা করতেই কিন্তু বেশ মজা লাগে তাহলে বাস্তবে যদি এই সৌন্দর্যটা উপভোগ করা যায় তাহলে কতটা মজা লাগে একবার চিন্তা করুন।
সুন্দরবন এড়িয়া।
what3words address.
https://w3w.co/elector.finessing.reply
পার্কের অংশটা দেখার পরে আমরা চাইছিলাম সুন্দরবনের ভেতরের অংশটা ঘুরে দেখব কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ছাড়া সুন্দরবনের ভেতরের অংশে প্রবেশ করা যায় না। পার্কের মধ্য থেকে একজনের সাথে যোগাযোগ করে আমরা একটি নৌকা ভাড়া করলাম। নৌকার মাঝি আমাদের সাথে কথা বলে ঘাট থেকে নৌকা নিয়ে আসতে গেল। তিনি আমাদেরকে জানালেন এখন ভাটা চলছে তাই নৌকা উপরে জেগে রয়েছে নৌকা নিয়ে আসতে একটু সময় লাগবে তত সময় আমাদেরকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। আমরা সেই সুযোগে সুন্দরবনের পাশের যে নদী সেই নদীর পাড়ে গিয়ে অনেক সময় দাঁড়িয়ে ছিলাম আর ছবিতে নদীর পাড় দিয়ে বড় বড় গাছের যে দৃশ্য দেখছেন আসলে সেটাই সুন্দরবনের অংশ মূলত এখান থেকে সুন্দরবনের অংশ শুরু হয়েছে। অনেক সময় অপেক্ষা করার পরে মাঝি আমাদের মাঝে নৌকা নিয়ে হাজির হলেন আর আমরা নৌকায় উঠে সুন্দরবনের এর এরিয়াটা দূর থেকে ঘুরে দেখার জন্য রওনা হলাম। ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন পাড়ে একটি নৌকা এসেছে আর আমাদের গ্রুপের ছেলেরা সেই নৌকায় ওঠার জন্য নিচে নামছে। মজার বিষয় হচ্ছে রাজশাহী থেকে চারজন ছেলে আমাদের গ্রুপে যুক্ত হয়েছিল। মূলত সুন্দরবনের এর এরিয়া শুধু নৌকায় ঘুরে দেখার জন্যই এই চারজন ছেলে আমাদের সাথে যুক্ত হয়েছিল যাইহোক নৌকায় উঠে আমরা সুন্দরবনের এরিয়ায় যাচ্ছিলাম আর ছবি তুলছিলাম। আজকের মত এখানেই শেষ করছি আবার আগামী পর্বে সুন্দরবনের ভিতরের কিছু অংশ নিয়ে পোস্ট শেয়ার করবো ইনশাল্লাহ।
বন্ধুরা, এটিই ছিল আমার আজকের আয়োজনে, আশাকরি আপনাদের সবার কাছেই ভালো লেগেছে।এই ভ্রমণ কাহিনী পড়ে আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে সেটা কমেন্ট বক্সে আমাকে জানাবেন। আর আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙏
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান।আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও বাইক নিয়ে ঘুরতে খুবই ভালোবাসি। মনের অনুভূতির ডাকে সাড়া দিয়ে কবিতা লিখতে পছন্দ করি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।


VOTE @bangla.witness as witness

OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

https://x.com/KaziRai39057271/status/1771090981078655084?s=20
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
সুন্দরবনে আবার জোয়ার ভাটা খেয়াল করে নৌকা ট্রলার এগুলো চালানো হয়। আমি একবার গিয়েছিলাম তখন দেখেছিলাম। শ্যামনগর সাতক্ষীরার বিখ্যাত একটা জায়গা। এর আগে ইত্যাদিতে আকাশ নীলা ট্যুরিজম সেন্টার সম্পর্কে দেখেছিলাম। জায়গাটা বেশ সুন্দর। বিশেষ করে সুন্দরবনের গা ঘেষে এইরকম একটা জায়গা ভাবা যায় না। বেশ সুন্দর ছিল অপেক্ষা শেয়ার করা ফটোগ্রাফি গুলো ভাই। এবং চমৎকার ছিল আপনাদের ভ্রমণ টা।
হ্যাঁ এই জায়গাটি বেশ চমৎকার একদম সুন্দরবনের গা ঘেঁষে রয়েছে।
অনেক সুন্দর একটি স্থান ভ্রমণ করেছেন আপনি। সাতক্ষীরা ভ্রমণের ষষ্ঠ পর্বের লেখাগুলো পড়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আসলে এরকম সুন্দর একটি স্থান ভ্রমণ করার মজাই আলাদা। আপনার ভ্রমণ করা স্থানের চমৎকার ফটোগ্রাফি গুলো দেখেও আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে। দারুন একটি ভ্রমণের পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার সুন্দর মতামত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
সাতক্ষীরায় কখনো যাওয়া হয়নি৷ তবে প্রতিনিয়ত আপনি খুব সুন্দর খুব সুন্দর কিছু পর্ব শেয়ার করে আসছেন। সবগুলো পর্বের মধ্যে সাতক্ষীরার অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গার ফটোগ্রাফি শেয়ার করছেন এবং খুব সুন্দর বর্ণনা দিচ্ছেন৷ আজকের এই পর্বের মধ্যেও আপনি অনেক কিছুই ফুটিয়ে তুলেছেন৷ একই সাথে আপনি যে পার্কে গিয়েছেন এবং সেখানকার কিছু সুন্দর ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন তা আমার অনেক বেশি পরিমানে ভালো লেগেছে৷
হ্যাঁ সাতক্ষীরার কয়েকটি দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য তুলে ধরছি।
আশা করি ভবিষ্যতে আরো অনেক সৌন্দর্য দেখব এবং অনেক কিছু জানতে পারব।