ডুয়ার্সের জঙ্গলে গিয়ে বন্যপ্রাণী দর্শনের অভিজ্ঞতা। ট্রাভেল পোস্ট।
উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের জঙ্গল ঘুরতে যাওয়ার কিছু স্মৃতি
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
আমি কিছুদিনের জন্য বাইরে ঘুরতে যেতে সব সময় পছন্দ করি। তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভ্রমণ বিষয়ক ব্লগ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে থাকি। বিগত বছর ডিসেম্বর মাসে আমি গিয়েছিলাম ডুয়ার্সের জঙ্গল ঘুরতে। ডুয়ার্স হল উত্তরবঙ্গের সৌন্দর্য। এটি আসলে কোন জায়গার নাম নয়। হিমালয়ের উপত্যকায় অবস্থিত বিস্তীর্ণ জঙ্গলভূমিকে ডুয়ার্স বলে চিহ্নিত করা হয়। আর এই ডুয়ার্স অঞ্চলে অনেকগুলি অভয়ারণ্য রয়েছে যেগুলি তাদের নিজস্বতায় পরিপূর্ণ এবং সৌন্দর্যে অপরিসীম সুন্দর। তাই উত্তরবঙ্গে বেড়াতে গেলে হয় ডুয়ার্সের জঙ্গল আর না হলে হিমালয়ের আহ্বান আমাকে টেনে রাখে। আমরা দক্ষিণবঙ্গে বাস করি বলে উত্তরবঙ্গের এই মনোরম পরিবেশে গিয়ে কয়েকটি দিন কাটিয়ে আসতে বেশ ভালই লাগে। তাই আমি সময় সুযোগ করতে পারলেই পৌঁছে যাই হিমালয়ের শিখরে অথবা ডুয়ার্সের জঙ্গলে। কিন্তু গন্তব্য হিসেবে উত্তরবঙ্গ আমার অত্যন্ত প্রিয়।
আজ আমি আপনাদের সঙ্গে ডুয়ার্সের জঙ্গলের তেমনই কিছু মুহূর্ত এবং ছবি শেয়ার করব। জঙ্গলের সৌন্দর্য আমায় সব সময় টেনে রাখে। এখানে নেই কংক্রিটের অরণ্য অথবা অত্যাধিক দূষণের মাত্রছাড়া অস্বস্তি। তাই সব সময় আমার জঙ্গলে গিয়ে কয়েকটি দিন কাটিয়ে আসতে ভালো লাগে। আর জঙ্গলে সাফারি করতে গেলে মনের মধ্যে থাকে এক অসাধারণ রোমাঞ্চ। কারণ জঙ্গলের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের বন্য পশু বিচরণ করে বেড়ায়। তাই যদি আপনার ভাগ্য ভালো থাকে তাহলে অনেক সময় আপনার সামনে এসে সেইসব বন্যপ্রাণী উপস্থিত হতেই পারে। ঠিক যেমন এইবারে আমাদের কিছু ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সাধারণত আমার জঙ্গলের অভিজ্ঞতা বলে যে জঙ্গলে সাফারি করতে গেলেই সব সময় বন্য প্রাণীর সম্মুখীন নাও হতে পারি আমরা। আগেরবার আমি যখন ডুয়ার্সের জঙ্গল ঘুরতে গিয়েছিলাম, তখন কোনো প্রাণী প্রায় আমাদের চোখে পড়েনি। শুধুমাত্র দূর থেকে কয়েকটি গন্ডার দেখতে পেয়েছিলাম মাত্র। কিন্তু তার মানে এই নয় যে জঙ্গলে কোন বন্যপ্রাণী নেই। কারণ বন্যপ্রাণী দর্শন একমাত্র ভাগ্যের উপর নির্ভর করে।
এইবারে বেড়াতে গিয়ে আমাদের ভাগ্য বেশ সুপ্রসন্ন ছিল। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনদপ্তর দ্বারা পরিচালিত জঙ্গল সাফারির বিশেষ জিপে উঠে সাফারি করতে করতে আমাদের চোখে বেশ কয়েকটি বন্যপ্রাণ ধরা পড়ে। ডুয়ার্সের জঙ্গলে সাধারণত যেসব ধরনের বন্যপ্রাণী পাওয়া যায় তাদের মধ্যে বন্য শুকর, বাইসন, হরিন, হাতি বা চিতাবাঘ অন্যতম। এছাড়াও কখনো কখনো গন্ডার দেখা যেতে পারে। এই সব ধরনের বন্যপ্রাণীর মধ্যে এইবার আমাদের গাড়ির সামনে এক পাল বাইসন এসে উপস্থিত হয়েছিল। সেইসব বাইসনগুলি দেখতে যেমন বিরাট তেমনি তাদের ভয়ংকর তেজ। তাই তাদের সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ বিপদজনক বটে। তবুও আমরা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সেই সব বাইসনের পালগুলিকে পরিদর্শন করে ধীরে ধীরে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেলাম। তারপর হঠাৎ কয়েকটি হরিণ আমাদেরকে আহ্বান জানালো। সেই সব হরিণ আপন খেয়ালে গাছের পাতা এবং ঘাস খাচ্ছিল। আমাদের গাড়ি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা একদৃষ্টিতে গাড়ির দিকে তাকিয়ে ছিল। এছাড়াও এইবার জঙ্গল সাফারি করতে গিয়ে একটি বিশালাকার হাতি আমাদের চোখের সামনে পড়ে যায়। যদিও হাতি পালে থাকে এবং একসঙ্গে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তারা হেঁটে চলে। কিন্তু মাঝে মাঝে তারা দলছুট হয়ে পড়ে। আর তেমনই একটি দলছুট হাটি আমাদের গাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয়েছিল। সেই হাতিটি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল এবং আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার সময় সে আস্তে আস্তে জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করে। ফলে কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি আমাদের চোখের দৃষ্টি থেকে দূরে চলে যায়। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টি ভীষণ রোমাঞ্চকর ছিল সে কত অস্বীকার করা যায় না। আর জঙ্গলে করবার সময় আমাদের গাড়ির আশেপাশে প্রচুর পরিমাণে ময়ূর তো ছিলই। এছাড়াও বিভিন্ন পাখির আধিক্য ছিল বেশ চোখে পরওয়ার মত।
ডুয়ার্সে যেসব উল্লেখযোগ্য জঙ্গল আছে তারমধ্যে এইবার আমরা দুটি জঙ্গলে ঢুকেছিলাম। প্রথমটি ছিল চাপড়ামারি অভয়ারণ্য এবং দ্বিতীয়টি ছিল গরুমারা অভয়ারণ্য। এই দুটি জঙ্গলই উত্তরবঙ্গের একটি বিশাল জায়গা নিয়ে অবস্থিত। বর্তমান যুগে যেহেতু শহরাঞ্চলে গাছপালা কেটে কংক্রিটের জঙ্গল তৈরি হয়ে যাচ্ছে, তাই উত্তরবঙ্গের এইসব অক্সিজেন নেওয়ার জায়গাগুলিতে মানুষের ভিড় বহুল পরিমাণে বেড়ে চলেছে। তাই সিজনে এইসব জঙ্গলগুলির সমস্ত রিসর্ট এবং হোটেলগুলি সব সময় ভর্তি থাকে। এবারে আমরা উত্তরবঙ্গে গিয়ে মূর্তি নদীর ধারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিশেষ বাংলোতে ছিলাম। সেখানকার ব্যবস্থাপনা বেশ সুন্দর এবং অভিজাত। সেখান থেকে বিশেষ জিপে করে জঙ্গল সাফারিতে দুইদিন জঙ্গলে ঢুকেছিলাম। আর সেই বিশেষ অভিজ্ঞতাই আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম।
সবসময় এবং সারা বছর কংক্রিটের জঙ্গলের মধ্যে বসবাস করতে করতে যখন আমরা একেবারে হাঁপিয়ে উঠি তখন উত্তরবঙ্গের অক্সিজেন নিয়ে আসতে প্রয়োজন হয়। আর তখনই ছুটে যাই পাহাড় বা জঙ্গলের কোণে। ভালোলাগার এই জায়গাগুলিতে দু-একদিন কাটিয়ে এলে বেশ অনেকটা এনার্জি বুকের মধ্যে ভরে নেওয়া যায়। আর সেখানে ঘুরতে যতটা ভালো লাগে, তার থেকেও বেশি ভালো লাগে সেই সব স্মৃতিগুলি রোমন্থন করে ছবির মাধ্যমে আপনাদের সামনে উপস্থাপনা করতে। আর ঠিক সেই কারণেই মাঝে মাঝে এই ধরনের গন্তব্যগুলি নিয়ে ব্লক লিখতে আমি পছন্দ করি। আজ এই ব্লগে আপনাদের জন্য রইল ডুয়ার্সের চাপড়ামারী এবং গরুমারা অভয়ারণ্যের কিছু আলোকচিত্র। যদি আপনাদের সেই সব ছবি ভালো লেগে থাকে তবে নিশ্চয়ই কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1893613171530731982?t=-6j8nUANfQzhznieg34xOg&s=19
Daily tasks-