কলকাতায় আয়োজিত হস্তশিল্প মেলায় কিছুক্ষণ সময় কাটানোর অনুভূতি।
কলকাতায় আয়োজিত হস্তশিল্প মেলার সংক্ষিপ্ত বিবরণী
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল হস্তশিল্প মেলা ২০২৫। এই মেলা এক অতি বিচিত্র ধরনের মেলা। এখানে সারা পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্পের উপকরণ নিয়ে শিল্পীরা এসে বসেন। সারা বছরে তাদের কঠোর পরিশ্রম এখানে আমরা দেখতে পাই এক জায়গায়। এই বছর হস্তশিল্প মেলা আয়োজিত হয়েছিল নিউ টাউন মেলা প্রাঙ্গণে। আপনারা হয়তো অনেকেই নিউ টাউন মেলা প্রাঙ্গণের নাম শুনেছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে এই নতুন ময়দান শুধুমাত্র মেলার জন্য বরাদ্দ করে তৈরি করা হয়েছে। এখানে সারা বছর বিশেষ করে শীতকালে বিভিন্ন ধরনের মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। এই বছর ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হলো পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত হস্তশিল্প মেলা। হস্তশিল্প মেলা মানেই বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ এবং অত্যাশ্চর্য সব জিনিসপত্রের সমাহার।
হস্তশিল্প মেলায় বিভিন্ন ধরনের জিনিস দেখবার জন্য বইমেলা থেকে সময় বার করে আমি একদিন পৌঁছে গিয়েছিলাম এই মেলা প্রাঙ্গণে। এখানে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র এবং হস্তশিল্পের উপকরণের সমাহার দেখে রীতিমতো অবাক হতে হয়েছে। সব থেকে ভালো লাগলো যে বিষয়টি তা হল, সমগ্র পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন হস্তশিল্পীরা তাদের হাতে বানানো উপকরণ নিয়ে এসে বসেছেন এই মেলাতে। যেমন পূর্ব এবং পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে শুরু করে বাঁকুড়া পুরুলিয়া দার্জিলিং জলপাইগুড়ি কোচবিহার নদীয়া দুই চব্বিশ পরগনা এবং কলকাতা সমেত আরো বিভিন্ন জেলার হস্তশিল্পের আয়োজন এখানে বিভিন্ন স্টলে সাজিয়ে রাখা ছিল। সেখানে বিভিন্ন ধরনের রংবেরঙের ঝুড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কাঁচের সামগ্রী আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, যেমন একতারা, ঢোল, বা অন্যান্য বিভিন্ন বাংলা বাদ্যযন্ত্র সেখানে পাওয়া যাচ্ছিল খুব সুলভে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য হল হস্তশিল্পের বিভিন্ন উপকরণ সামগ্রী যথেষ্ট কম দামে তারা মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছিল সেই মেলায়। কৃষ্ণনগরের মাটির পুতুলের স্টল সেখানে উল্লেখযোগ্য একটি জায়গা নিয়েছিল। আমি সেখান থেকে পছন্দ করে কয়েকটি মাটির পুতুল ক্রয় করি। সেগুলিও অতি কম দামে তারা মানুষের হাতে তুলে দিচ্ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আলো, ল্যাম্প শেড, চাবি রিং, পুতুল, হাতপাখা, মাদুর এবং অন্যান্য হস্তশিল্পের দ্রব্য বিক্রি হচ্ছিল। মানুষের ভিড়ও সেখানে কম ছিল না। প্রচুর পরিমাণ মানুষ ভিড় জমিয়েছিল সেই মেলায় সেইসব হস্তশিল্পের সামগ্রিক দেখবার জন্য।
একটি দোকান বসেছিল সেখানে বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি হচ্ছিল। বলে রাখি এই ফুলগুলি সবই আর্টিফিশিয়াল। কিন্তু সেই সব ফুল চোখ ধাঁধানো এবং অত্যন্ত সুন্দর। তাই সেই স্টলে ঢুকে আমার বিশেষ ভাবে ভালো লেগেছে। এছাড়াও সেখানে ছিল বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র সামগ্রী। তাই সবকিছু মিলে মেলায় একেবারে ছিল জমজমাট আয়োজন। নিউটাউনের মত অভিজাত জায়গায় এমন সুন্দর একটি হস্তশিল্প মেলা যেন মানুষের নজর কেড়ে নিয়েছিল বেশ কয়েকটি দিন। আমার প্রথম থেকেই ইচ্ছা ছিল এই মেলায় একদিন যাওয়ার। কারণ অন্যান্য মেলায় বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া গেলেও এত পরিমাণ হস্তশিল্পের দ্রব্য অন্য কোন মেলায় পাওয়া যায় না। তাই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন হস্তশিল্পের উপকরণ কিনতে এবং দেখতে হলে আসতেই হয় এই হস্তশিল্প মেলায়। প্রতিবছর শীতের সময় আয়োজিত হয় এই মেলা। কিন্তু প্রতিবছর আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। বহুদিন পরে আমি এই মেলায় আসার সুযোগ করে উঠতে পারলাম। আর তাই এক অসাধারণ অনুভূতির জন্ম হলো যা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করে আরো আনন্দ হচ্ছে।
হস্তশিল্প মেলা থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্রের ছবি সংগ্রহ করেছি মনের মতো করে। উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের সামনে তুলে আনব মেলার সমগ্র আয়োজন। সাজিয়ে আপনাদের সামনে পরিবেশন করলাম। যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟
Daily tasks-
হস্তশিল্প মেলায় খুব সুন্দর সুন্দর কিছু জিনিসের দোকান রয়েছে দেখছি। এই ধরনের মেলাগুলোতে এমন কিছু কিছু জিনিস থাকে যেগুলো পুরনো ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। এই জিনিসগুলো আসলেই ভালো লাগে দেখতে। আপনি খুব সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি শেয়ার করেছেন আমাদের মাঝে। আপনার কাটানো মুহূর্তগুলো দেখে ভালো লাগলো।
আপনি ঠিক বলেছেন আপু। এই ধরনের মেলাগুলি বাংলার পুরনো ঐতিহ্যকে তুলে আনে। আপনার সুন্দর মন্তব্য আমাকে অনুপ্রাণিত করল।
প্রত্যেক বছর সরকার কর্তৃত্ব এরকম হস্তশিল্প মেলা অনুষ্ঠিত হয় জেনে ভালো লাগলো। মেলায় তো দেখছি অনেক ধরনের হস্তশিল্প প্রদর্শন করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত মানুষের হস্তশিল্প দেখে খুবই ভালো লাগলো। আপনি মন মতো ফটোগ্রাফি গুলো ক্যাপচার করেছেন। ফটোগ্রাফি গুলো আবার সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। ভালো লাগলো দাদা আপনার পোস্ট পড়ে।
সারা বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে হস্তশিল্পের শিল্পীরা এখানে আসেন। বিভিন্ন ধরনের হারিয়ে যাওয়া দ্রব্যসামগ্রী বিক্রি করেন। সব মিলিয়ে দারুন সুন্দর একটি সময় কাটিয়েছি। আপনি এত সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকলেন বলে খুব ভালো লাগলো বোন।
কলকাতা হস্তশিল্প মেলায় তোমার তোলা ছবিগুলোও অসাধারণ হয়েছে। কী সুন্দর তুলেছ। কই তখন দেখালে না তো! আমি বাদ্যযন্ত্র সহ অনেক কিছুরই ছবি তুলতে ভুলে গেছিলাম। তুমি দেখছি সব কিছুরই ছবি তুলেছ নিখুঁত ভাবে। আর বর্ণনা পড়েও ভালো লাগল। গল্পের মতো বলেছ সবটা৷
ক্যামেরা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে শুধু ক্লিক করে যাচ্ছিলাম। তার ফলস্বরূপ এই ছবিগুলি আমার মোবাইলে থেকে গেছিল। তবে ছবিগুলি তোর পছন্দ হয়েছে জেনে খুব ভালো লাগলো।
পশ্চিমবঙ্গের হস্তমেলায় দারুণ দারুণ সব জিনিসপত্র দেখতে পাচ্ছি। মন চাচ্ছে সব গুলোই কিনে ফেলি।এগুলো দেখে তো লোভ সামলানো মুসকিল। সব জিনিসপত্র খুবই সুন্দর তবে আমার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে পুতুল গুলো ও পেঁচাটি। অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু দেখতে পেলাম। আসলে আমি গ্রামে থাকি তো সেজন্য মূলতো এতো সুন্দর সুন্দর হস্ত তৈজসপত্র দেখিনি কখনো মেলায়।ধন্যবাদ দাদা সুন্দর হস্ত মেলার বর্ণনা ও ফটোগ্রাফি গুলো ভাগ করে নিয়েছেন জন্য।
দাদা আপনার পোস্ট পড়ে সত্যিই ভালো লাগলো।সুন্দর ফটোগ্রাফি ও দারুণ উপস্থাপনা, হস্তশিল্প মেলার অনুভূতি যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল।হস্তশিল্প মেলার এত সুন্দর ঝলক ও ফটোগ্রাফি দেখে মনে হলো, যেন নিজেই মেলায় ঘুরে এলাম। ধন্যবাদ পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
কলকাতায় আয়োজিত হস্তশিল্প মেলায় খুব সুন্দর মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। আসলে এ ধরনের মেলায় অনেক দারুন দারুন জিনিস দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ট্রেডিশনাল জিনিসগুলো অনেক বেশি ভালো লাগে। আসলে একটা সময় আমাদের এদিকেও এধরনের মেলা হতো, কিন্তু এখন মেলা অনেক কমে গিয়েছে। যাই হোক দাদা ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।