বাঙালির বই পড়ার অভ্যাস কি কমে যাচ্ছে? একটি সার্বিক পর্যালোচনা।

in আমার বাংলা ব্লগ22 hours ago

বই পড়ার অভ্যাস নিয়ে একটি পর্যালোচনা

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


book-1293414_1280.png
সোর্স


🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏


বর্তমানে বই পড়ার অভ্যাস মানুষের কাছে এক লুপ্তপ্রায় অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে কিঞ্চিত আলোচনা করতে চাই। তবে কি মানুষ বই পড়া ছেড়ে দিচ্ছে? নাকি আজকের ডিজিটাল দুনিয়ায় অন্য কোন বিষয়বস্তুতে মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি? আসলে বই হল এমন একটি শিক্ষনীয় উপাদান, যা থেকে চিরাচরিত পুঁথিগত শিক্ষা যেমন লাভ করা যায় ঠিক তেমনভাবেই বহির্বিশ্বের বিভিন্ন জ্ঞান সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হওয়া যায়। তাই সেই দিক থেকে দেখতে গেলে বইয়ের মত বন্ধু আর কেউ হয় না এ কথা আমরা ছেলেবেলা থেকেই জেনে এসেছি। কিন্তু বর্তমান যুগে দেখা যাচ্ছে বইয়ের চাহিদা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। মানুষ আর পয়সা দিয়ে ভালো বই কিনতে চায় না। এই একই সমস্যা আমি কলেজ স্ট্রিটে গেলেও শুনতে পাই। তাছাড়া এবারের কলকাতা বইমেলাতেও বিভিন্ন প্রকাশকের কাছ থেকে এই সমস্যা সম্বন্ধে শুনতে পাচ্ছি। ভালো বই বাজারে এলেও তার বিক্রি তেমন একটা চোখে পড়ার মতো নয়। আগে মানুষ বই কিনতে পছন্দ করত। বই প্রিয় বাঙালি প্রচুর পরিমাণে বই ক্রয় করত এবং পড়তে ভালবাসত। যার ফলে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করতে বাঙালির নাম ছিল সবার আগে। কিন্তু সেই বাঙালি যখন বইয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন সমাজে যেন সবকিছুই আলাদা বলে মনে হয়। কিন্তু বাঙালির এই বইবিমুখতার কারণ আসলে কী?

woman-6531363_1280.png
সোর্স

আমার মনে হয় বর্তমান যুগে ডিজিটাল মিডিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের গেজেটের ব্যবহার বাঙালিকে এবং অন্যান্য জাতিকে বই বিমুখ করে তুলছে। ঠিক যেমনভাবে সিডি এবং ক্যাসেট বিক্রি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এবং মানুষ বেশিরভাগ ঝুঁকে পড়েছে ইউটিউব অন্যান্য ডিজিটাল লাইব্রেরীর ভিতরে। ঠিক তেমনভাবে বইয়ের ক্ষেত্রেও মানুষ পিডিএফ এবং ডিজিটাল বুক সংগ্রহ করে ফেলছে। ফলে মোবাইল বা ট্যাবলেটে সেই বই পড়া অনেক সহজতর হয়ে যাচ্ছে। আর সেক্ষেত্রে টাকা পয়সা খরচেরও চিন্তা নেই। তাই খুব সহজে মানুষের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে অতি মূল্যবান সব বই। আর সমান্তরালভাবে কমে যাচ্ছে প্রকাশকদের ছাপানো বই বিক্রির সংখ্যা। তবে এছাড়াও আরেকটি কারণকেও প্রধান বলে আমি মনে করি। তা হলো নতুন প্রজন্মের মধ্যে পড়বার অভ্যাসের অভাব। নতুন প্রজন্ম যে পরিমাণে ডিজিটাল বিভিন্ন যন্ত্রের সাহায্যে জীবনকে সম্পূর্ণভাবে যান্ত্রিক করে তুলেছে, তার ফলে আর বই নিয়ে ধৈর্য ধরে বসে পড়বার সময় তাদের কাছে কই? তারা এখন বিভিন্ন ধরনের গেমস থেকে শুরু করে অ্যাপ হ্যান্ডেলিংয়ে ব্যস্ত। বই খুলে দু পাতা পড়বার জন্য যে ধৈর্যের প্রয়োজন হয় তা বর্তমান প্রজন্মের কোন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে আমি অন্তত দেখতে পাই না। তাই ধীরে ধীরে বইয়ের বিক্রি এবং বই পড়ার মধ্যে একটি তীব্র অনিহা চোখে পড়ছে। তবে পূর্ববর্তী প্রজন্ম এখনো বইমুখী। অনেকেই আছেন যাঁরা বই থেকে বিভিন্ন ধরনের বিষয়বস্তুকে পড়তে ভালবাসেন। আর সেই জন্য আজও কিছু পরিমাণ হলেও বইয়ের বিক্রি হয়। কিন্তু নতুন প্রজন্ম যতদিন না বুঝবে যে বইয়ের কোন বিকল্প নেই, ততদিন পর্যন্ত এই জাতির মধ্যে আবার বোধ এবং ভাবের কাঠামো তৈরি হবে না। যে কারণে আজকের প্রজন্ম ভীষণ অধৈর্য এবং অশান্ত হয়ে পড়ছে।

পুরনো সমস্ত জিনিস হারিয়ে গিয়ে যেভাবে নতুনের জন্ম হচ্ছে, তা যেমন একটি নতুন সমাজকে সূচিত করে, ঠিক তেমনভাবেই আবার একটি নতুন প্রজন্মের উপর দায়িত্বভার সঁপে দেয়। কিন্তু বই ছাড়া কখনোই একটি জাতির গঠন সম্পূর্ণ হয় না। তাই নতুন প্রজন্মেকেও বইয়ের দিকে ঝুঁকতে হবে। ডিজিটাল মেশিন থেকে বই পড়ার যেমন বিভিন্ন অসুবিধা আছে, ঠিক তেমনভাবেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সূত্রপাত ঘটছে বর্তমান যুগে। তাই যখন আমরা আবার প্রচুর পরিমাণে বই ক্রয় করে নিজেদের জ্ঞানের সমুদ্রকে আরো শ্রীবৃদ্ধি ঘটাবো, তখন যেমন আবার একটি নতুন দিগন্ত আমাদের সামনে খুলে যাবে ঠিক তেমনভাবেই বই প্রকাশনা শিল্প আবার আগের মত যথাস্থানে ফিরে যাবে। বর্তমান যুগে এই বিপন্ন সময়ে আমাদেরকে এই বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত বলেই আমার মনে হয়।

বই বিষয়ক আমার কিছু ক্ষুদ্র চিন্তাভাবনা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করলাম। যদি আপনাদের এই বিষয়ে কোন মনোভাব ও মতামত থাকে তবে অবশ্যই কমেন্টের মাধ্যমে আমাকে জানাবেন। কারণ এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা এবং প্রতি আলোচনা খুব গুরুত্বপূর্ণ।


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Sort:  
 22 hours ago 

Daily tasks-

Screenshot_20250207-103428.jpg

Screenshot_20250207-103350.jpg

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.