ছোটগল্প - ইচ্ছে

in আমার বাংলা ব্লগyesterday

ছোটগল্প - ইচ্ছে

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


hands-1868562_1280.jpg
সোর্স

🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏

1720541518267-removebg-preview.png

নেলসন ম্যান্ডেলার ছবিটা সবে খুলে নিয়ে চোকলা খসা দেয়ালে রঙ করে দিয়েছে সাক্য। সকলে বলত ম্যান্ডেলা লৌহমানব, ঈশ্বরের বরপুত্র। শখের ছবিটা শুধু পেনসিলের স্কেচে সাক্য তৈরি করেছিল তিনদিনে। হ্যাঁ, সঙ্গে ছোট বোনের পঙ্গপাল সদৃশ হামলা থেকে মেসোর চোখের তীর্যক রশ্মি, সবই যেন পাকাপাকি ভাবে জাঁকিয়ে বসত নিয়মিত। তবু ছবি আঁকা, অনুরাগীর অন্বেষণ আর ছবি বিক্রি, এই ছিল তাঁর আর্টলিভের বারমাস্যা। আসলে এহেন শখের লিভ দিয়ে কতটা শিব আর জীব সেবা হয়, তা হয়ত জানা ছিল না সাক্যর মত একটা একুশ বছরের বাউণ্ডুলের, কিন্তু সমস্ত ক্লীবতা যে এতে পরস্মৈপদী হয়ে ওঠে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই ছিল না তাঁর কোনোকালেই। সেবার যখন স্বেচ্ছায় রক্তদান শিবিরে সকলে নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে বক্তৃতা করলো, সেই থেকেই তার ভালো লাগা শুরু ম্যান্ডেলার ত্যাগ আর লড়াইটা। তারপর সব মিলিয়ে আটটা ছবি এঁকেছে ম্যান্ডেলার। দুটো ছবি বিক্রিও করেছে অল্প দামে। বাবা মারা যাবার পর মেসোর সংসারে মা দেবযানী আর বোন সাক্ষীকে নিয়ে থেকে প্রদর্শনী করার মত নগদ টাকা হয়ত জোগাড় করে উঠতে পারে নি কখনো, কিন্তু প্রতিভার আঁচড়টুকুতে আজ দশ বাই আট ঘরদুটো যে পুরোপুরি অ্যাক্রিলিক ক্যানভাসে পরিণত হয়েছে, তার কৃতিত্ব একা সাক্যরই। ফলে চোকলার দাগগুলো সবই নিজেদের অস্তিত্বটুকু টিকিয়ে রেখেছে পর্দানশীন ভাবেই। তবে তাদের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখবার জন্য নিয়ম করে ছবিগুলো খুলে ঝাড়পোঁছও করতো সাক্য।

ম্যান্ডেলা তুলে আনতেন কালো মানুষদের কথা। ম্যান্ডেলা লড়াই করতেন দাসত্বের বিরুদ্ধে। তাঁর সাতাশ বছরের কারাবাস যেন আজও লড়তে শেখায় সাক্যর তুলির আন্তরিকতায় তৈরি অসংখ্য ম্যান্ডেলাদের। আবার ইতিহাস বইএর পাতাগুলো নিমেষে বিবৃত হয়ে ওঠে প্রতিদিন, নতুন রঙে।

সবে বাজার থেকে ঘরে ফিরেছে সাক্য। চোখে স্বপ্নের কাজল, বুকে বিশ্বাস। শিল্পী যে তাকে হতেই হবে। শিল্পী হতে গেলে কি কি করতে হয় তার একটা অপ্রাকৃত খসড়া মোটামুটি বালিশের তলাতেই গোঁজা থাকে। কিন্তু কোনোদিনই নিজের আপোসের সাথে তৈরী করা সেই খসড়া চুক্তিপত্রের সাথে মেলেনি আশ্রয়দাতা মেসোর ইচ্ছেগুলো, কারণ তার সেই লিস্টে ছোট বয়সে বাবা হারানোর ঘটনাটা লিপিবদ্ধ ছিল না যে। তুলি, রং, পেন্সিল কিনে দেবার জন্য মেসোর দরজায় খটখটানো ছাড়া উপায় কি তা আজও খুঁজে পায়নি সাক্য। আকাঙ্খাগুলো আত্মবিশ্বাস হয়ে ওঠার আগেই যেন মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে মিলিয়ে যেত রোজ।
আজ বাজার থেকে ফেরার পথে কোথা থেকে একটা ইজেল নিয়ে এসেছে সাক্য। জলে ভেজা কাঠের একটা নড়বড়ে ইজেল স্ট্যান্ড।

মেসো - এই যে মহারাজ, এটা কোথথেকে তুলে আনা হলো?
সাক্য - ওপাশের জানালাটার পাশে এটা অবহেলায় পরে ছিল মেসো। কার তো জানি না...
মেসো - মানে!! কার জানিস না, আর তুলে আনলি ঘরে? বিদায় কর এখনই।
সাক্য - মেসো, এটা থাক না, আমার আঁকার একটু সুবিধে হয় গো...
মেসো - থাকবি আমার ঘরে, সুবি আমার বিছানায়, আবার আমারই দাড়ি ওপড়াবি? শালা জানোয়ারের বাচ্চা।
ভেতর থেকে ছুটে আসে দেবযানী। চোখের সামনে দেখতে হলো নিজের হাতে ছেলের মধ্যে বুনে দেওয়া পালকগুলোর অকালমৃত্যু। চিৎকার করে ওঠে সে, "বাবুরে, যাদের বাবা নেই, তাদের শিল্পীও হতে নেই, এটা কবে বুঝবি?"
সাক্য আজও তুলি চালায়। সমস্ত রঙের মধ্যেই বয়ে নিয়ে চলে নিজের মৃত আকাঙ্ক্ষাগুলো। শুধু বদলে গেছে ক্যানভাস। আজ সাদা কাগজের বদলে রঙিন হয়ে ওঠে দেয়াল। বদলে গেছে স্বপ্ন। শিল্পীর বদলে আজ চোখে রঙের মিস্ত্রি হিসাবে ভালো বরাত জুটে যাবার তাগিদ। সাক্য শিল্পী হতে চেয়েছিলো, কিন্তু তার অভাচায়নি যে। আজ কৃষ্ণাঙ্গ নেতা ম্যান্ডেলার ছবিটা নামিয়ে নিজে হাতে ঘরের চোকলা ওঠা দেয়ালটা রং করে নিচ্ছে সাক্য।

1720541518267-removebg-preview.png


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

First_Memecoin_On_Steemit_Platform.png

hjh.png


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 yesterday 

আজকের টাস্ক -

Screenshot_20241121-205555.jpgScreenshot_20241121-175044.jpgScreenshot_20241121-175017.jpg
Screenshot_20241121-175002.jpgScreenshot_20241121-174841.jpgScreenshot_20241121-174759.jpg
 3 hours ago 

অসাধারণ লিখেছ! কিন্তু এ গল্প তো আমি আগে পড়িনি! কবে লিখেছ? চমৎকার লেখা। টান টান একেবারে৷ তোমার গল্পের হাত বেশ দারুণ মানতে হবে৷