দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মার্কিন দুই মহাকাশচারীর আজ পৃথিবীর বুকে ফিরে আসবার দিন।
মার্কিন দুই মহাকাশচারীর আজ পৃথিবীর বুকে ফিরে আসবার দিন
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
আজ আমরা পৃথিবীবাসীরা একটি অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হতে চলেছি। আজ থেকে ঠিক নয় মাস আগে মহাকাশে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে মাত্র আট দিনের জন্য পৃথিবী থেকে পাঠানো হয়েছিল দুটি মানুষকে। একজন হলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন বিজ্ঞানী সুনিতা উইলিয়ামস এবং আরেকজন বিজ্ঞানী বুচ উইলমোর। এনাদের দুজনকে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে কিছু গবেষণামূলক কাজের জন্য পাঠানো হয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার তরফে। কিন্তু সেই আট দিনের সফর পরিবর্তিত হয় নয় মাসে। বিগত বছরের জুন মাসে তাদেরকে অন্তরিক্ষে প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু কিভাবে সেই আট দিনের সফর নয় মাসে পরিবর্তিত হয়? আসলে ঘটনাটি ছিল কিছুটা অন্যরকম। যে আকাশযানে চড়ে তারা আইএসএস এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন, সেই আকাশযানটি মহাকাশে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটির সম্মুখীন হয়। এর ফলে মাত্র আট দিনের সফর শেষে এই দুই মহাকাশচারীর আর পৃথিবীর উদ্দেশ্যে ফিরে আসা হয়নি। কিন্তু আনন্দের কথা হলো এই দীর্ঘ ৯ মাস পরে এই দুই মহাকাশচারী আজ ভোররাতে ফিরে আসছেন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে। ভারতীয় সময় রাত প্রায় তিনটের সময় তাদের মার্কিন মুলকের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নেমে আসার কথা। কিন্তু এই সম্পূর্ণ অভিযানটি নিয়ে আমাদের সকলের উৎসাহের এবং উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
আসলে বারবার যেন এর আগের মহাকাশচারী কল্পনা চাওলার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই দুর্ঘটনার কথা মনে আসে। যখন দীর্ঘদিন মহাকাশ অভিযান শেষ করে তাঁরা ফিরে আসছিলেন পৃথিবীর উদ্দেশ্যে, তখন বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে তাদের মহাকাশযানটি বিস্ফোরণ হয়ে একেবারে ধুলিস্যাৎ হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে ছয় জন মহাকাশচারী আকাশেই প্রাণ হারান। তার মধ্যে ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী কল্পনা চাওলা। এবারও আরো দুজন ফিরে আসছেন মহাকাশ থেকে। আমরা আশা করছি তাদের সঙ্গে এমন কোন দুর্ঘটনা হবে না। তারা নির্বিঘ্নেই আজ রাতে পৃথিবীর বুকে অবতরণ করবেন। এবং পৃথিবীর মানুষ তাঁদেরকে ফিরে পেয়ে আনন্দ পাবেন।
এইবার আরো চারজন মহাকাশচারীকে নিয়ে ইলন মাস্কের মহাকাশযান আইএসএস-এর দিকে রওনা হয়েছে কদিন আগেই। সেই মহাকাশযান নির্বিঘ্নেই সেখানে পৌঁছে গেছে এবং দু'ঘণ্টা অপেক্ষা করবার পর ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের দরজা খুলেছে। ফলে তারা সকলেই সুনিতা উইলিয়ামসের সঙ্গে দেখা করে ফেলেছেন। এরপর সেই মহাকাশযানটি সুনিতা এবং বুচকে নিয়ে আজ রাতে রওনা দিচ্ছে পৃথিবীর উদ্দেশ্যে। তাদের সঙ্গে ফিরে আসবেন আরো দুজন মহাকাশচারী। এভাবেই সুনিতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরের মহাকাশের জীবন শেষ হতে চলেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন অন্য চিন্তায় মগ্ন। এই দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকবার পর এই দুজন মহাকাশচারী কি সুস্থ অবস্থায় পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারবেন? আসলে মহাকাশে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই বলে সেখানে দেহের ভর একেবারেই কম। কিন্তু পৃথিবীতে ফিরে তাঁরা হঠাৎ করে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে লড়াই শুরু করবেন। ফলে তাঁরা হয়তো ঠিক করে হাঁটতে পারবেন না। সবথেকে বড় কথা ডাক্তাররা বিভিন্ন ধরনের রোগের আশঙ্কাও করছেন। যেমন প্রোটিন কম যাওয়ার জন্য হাড়ে ক্ষয়জনিত রোগ দেখা দিতে পারে। তাই মহাকাশচারীরা পৃথিবীতে ফিরে এলে দীর্ঘদিন তাদেরকে চিকিৎসার মধ্যে রাখতে হয়। আর সেখানে এরা দীর্ঘ ৯ মাস পরে পৃথিবীতে ফিরছেন। ফলে তাদের লড়াই যে সহজ হবে না সে কথা একবাক্যে বলে দেয়া যায়।
তবু সব কিছু আশঙ্কার পরেও আমরা পৃথিবীবাসীরা অধীর আগ্রহে বসে আছি তাঁদের জন্য। দীর্ঘদিন মহাকাশে কাটানোর পর কেমন করে তারা আবার পৃথিবীর বুকে নামেন তা দেখতেই আমাদের অপেক্ষা। সবকিছু ঠিক থাকলে তিনটের সময় তারা পৃথিবীর বুকে পা রাখবেন এবং আবার তাদের নিজেদের ঘরে ফিরে আসতে পারবেন। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের অসম সাহসের কথা উল্লেখ করতেই হয়। পৃথিবী থেকে মহাকাশে গিয়ে একেবারে বান্ধব বর্জিত অবস্থায় নয় মাস কাটানো কিন্তু সহজ বিষয় নয়। তাঁরা এই অসাধ্য কাজটিই করে ফেলেছেন। এরপর যখন তাঁরা পৃথিবীতে ফিরবেন তখন সকল মানুষ চাইবেন তাঁরা যাতে সুস্থ অবস্থায় বাকি জীবনটা অতিবাহিত করতে পারেন। কোন ধরনের দুর্ঘটনা তাঁদের জীবনের সঙ্গে না ঘটুক এই প্রার্থনাই ভগবানের কাছে করি। বাকিটুকু তো সময় বলবে। এখন শুধু অপেক্ষা আর আকাশের দিকে চেয়ে থাকা। কখন আমাদের প্রিয় দুই মহাকাশচারী মহাকাশের মায়া কাটিয়ে আবার আমাদের মধ্যে ফিরে আসবেন।
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1902053632176279659?t=_n4hZvYoauhtTz9Qh6pY-A&s=19
Daily tasks-
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.