মানুষ উঁচুতে উঠে গেলে সকলকে তাচ্ছিল্য করে। জেনারেল রাইটিং।

in আমার বাংলা ব্লগ5 days ago

মানুষ বড় হয়ে গেলে সকলকে তাচ্ছিল্য করে।

💮💮💮💮💮💮💮💮💮


man-8040249_1280.jpg
সোর্স


🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏


আজ একটি বিষয় নিয়ে দু কথা বলতে ইচ্ছে করছে। আশা করছি আপনারা সবাই ভালো আছেন। এখন রমজান চলছে। এই গরমে সকলে শরীরের দিকে নজর দিন। এবার মূল বিষয়ে আসা যাক। বিষয়টি যথেষ্ট ভাববার। আপনার সঙ্গে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা কোন বন্ধু যখন সামাজিকভাবে অনেকটা উঁচু জায়গায় চলে যায় তখন দেখবেন বন্ধুত্বে কেমন পরিবর্তন এসে যায়। আসলে এই পরিবর্তন যেমন কিছুটা ইচ্ছাকৃত তেমন কিছুটা অনভিপ্রেতও বটে। আসলে মানুষ বড় ভয়ংকর প্রাণী। তার নিজের ওপরে সে আর কখনো কিছু ভাবতে পারে না। ধীরে ধীরে যখন সে উপর দিকে উঠে যায় বা নাম যশ ইত্যাদি অর্জন করে ফেলে তখন আর তার বন্ধুদের বা ছেলেবেলার সহপাঠীদের চিনতেও পারে না। এ বড় ভয়ংকর এক মুহূর্ত। যদি দেখেন আপনি হেঁটে যাচ্ছেন আর পাশ দিয়ে আপনার সহপাঠীর একটি দামি গাড়ি ধুলো উড়িয়ে চলে গেল। কিন্তু সে আপনার দিকে ফিরেও তাকালো না। কেমন লাগবে বলুন তো। আসলে মানুষ তার স্মৃতিকে বেশিদিন ধরে রাখতে পারে না। তাই যখন ছোট থাকে তখন সকলের সঙ্গে মিশে দিন যাপন করতে থাকে। কারণ তখন তার সাথে মেশবার মত মানুষ শুধুমাত্র তারাই। কিন্তু যখন ধীরে ধীরে প্রতিপত্তি আয় করে ফেলে, তখন আর সেই সব ছেলেবেলার স্মৃতি নিয়ে বয়ে বাড়াতে পছন্দ করেনা। তাই অগত্যা সাধারণ মানুষের থেকে তার দূরত্ব বেড়ে যায় অনেকটা। আর সেই সাধারণ মানুষের গণ্ডির ভিতরেই পড়ে বাল্যবন্ধু থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন সকলেই। তখন আর আপনার কথায় সে হাসবেও না আবার আনন্দও পাবে না।

আসলে আমাদের মন বড় জটিল। পৃথিবীর সমস্ত সুখ আপনার কাছে এনে দিলেও হয়তো কোনদিনই মনে প্রাণে আপনি ১০০ শতাংশ সুখী হতে পারবেন না। সব সময় কিছু একটা না পাওয়ার তাড়না আপনার পেছনে ধাওয়া করবে। আর সেই মুহূর্তে আপনি বিভিন্ন দিকে ছুটে বেড়াবেন। কিন্তু যখন সবকিছু পেয়ে যাবেন, তখন আর সেই লড়াই করবার মুহূর্তগুলি নিয়ে ভাবতে বসবেন না। আসলে তা কেউই বসে না। এটাই মানুষের বৈশিষ্ট্য। আর যে ব্যক্তি অনেকটা উপরে উঠে নাম যশ কামিয়ে নেবে, তার ধারেকাছে আপনি যেতে গেলে দুবার ভাববেন। যেমন একটি ছোট উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বোঝাই৷ ধরুন আপনার এক বাল্যবন্ধু আজ গানের জগতে নাম করেছেন। তারপর একদিন তিনি তার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন যেখানে তার একটি শোয়ের ছবি রয়েছে। আপনি সেখানে আনন্দের অনুভূতি স্বরূপ একটি অভিনন্দন কমেন্ট করলেন৷ কিন্তু দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও দেখবেন আপনি সেই কমেন্টের কোনো উত্তর পাবেন না। বিষয়টি আপনাকে ভাবাবে এবং আঘাত করবে। আপনি ভাববেন যে বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি কোনো উত্তর দিয়ে ন্যুনতম সৌজন্যবোধটুকুও দেখালেন না৷ আসলে তিনি সামাজিক ভাবে এখন আপনার চেয়ে অনেকটা উপরে। তাই তিনি আপনার অভিনন্দন বার্তা দেখলেও উত্তর দেননি৷ এটাই তার উন্নাসিকতা বা অহংকার। তিনি আপনার মত সাধারণ মানুষের অভিনন্দনে সাড়া করতে স্বচ্ছন্দ নয়। সেখানে আপনি আঘাত পাবেন কি না তা নিয়ে তিনি ভাববেনও না। আপনার কোনো বন্ধু যখন অনেক বড় হয়ে যায়, তখন আপনার পাশ দিয়ে গেলেও তিনি আপনাকে না চেনার ভান করবেন। এগুলো মানুষের খুব স্বাভাবিক ব্যবহার।

আসলে মানুষ স্বভাবগত ভাবে খুব স্বার্থপর ধরনের৷ জীবজগতে মানুষের মত স্বার্থপর আর কোনো প্রজাতি নেই৷ সব ধরনের জীব হিংস্র প্রকৃতির হলেও তারা কখনো নিজের প্রজাতির ক্ষতি করে না। আর আমরা মানুষেরা নিজেদের ক্ষতি করে থাকি। আমরা নিজেরা নিজেদের মত জীবনে সাফল্য পেয়ে গেলে আর পাঁচজনের কথা মনে রাখি না। অদ্ভুত আমাদের স্বভাব। শুধু নিজেদের কথাই আমরা ভাবি৷ আর সেটাই আমাদের কাছে একমাত্র লক্ষ্য।

আজ আমি মানুষের স্বভাবের একটি স্বাভাবিক বিষয়ে ব্লগে পোস্ট লিখলাম। যদি আপনাদের বিষয়টি ভালো লেগে থাকে, নিশ্চয় কমেন্টের মাধ্যমে জানাবেন।


🙏 ধন্যবাদ 🙏


(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


Yellow Modern Cryptocurrency Instagram Post_20240905_213048_0000.png

new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

Drawing_11.png

44902cc6212c4d5b.png

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1LsUc8S2zjHiaW6UcX2M5SAfbrPcxiCjQzCc6aZJSjUDgt85bSStrwGCUjZMWCDKxNata4NQ2cZTKGxsY.png

FrDSZio5ZCzUamf35asauSgs1tnNGCc8exBrDii52qi3JpjTyYCF9oFoYfs1EV4VTnFw6faxzt5X7uHiwMAHmLS3ef2Jb2JcxHBkpRBd2y...Qa3Q3c7Biv4c8mKsr8DHNVYqqpVomFSv1wmkMCbhs7oCjb14sjkA3vxAfSRk8QPzNZ5UirrZUzvHCXygHCV49RVVZBeTFCeo47WcQXnjLYGy2RNdJQycJW4cN.jpeg

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif


Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 5 days ago 

Daily tasks-

Screenshot_20250318-101845.jpg

Screenshot_20250318-101413.jpg

 5 days ago 

মানুষের স্বভাব নিয়ে এত সুন্দরভাবে বিশ্লেষণধর্মী লেখা সত্যিই ভাবনার খোরাক জোগায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন, ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির প্রভাব সবকিছুই বাস্তবতা। কেউ উপরে উঠলে তার দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়, পুরনো সম্পর্কগুলোর প্রতি আগ্রহ কমে আসে, যা সত্যিই কষ্টদায়ক। কিন্তু সব মানুষ একরকম নয়, কেউ কেউ এখনও বন্ধুত্বের মূল্য দিতে জানে। লেখাটি পড়ে অনেক চিন্তার দরজা খুলে গেল। দারুণ একটি পোস্ট, ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

 5 days ago 

আমার পোস্ট পড়ে এমন সুন্দর একটি সুচিন্তিত মতামত সংযোজন করলেন বলে খুব ভালো লাগলো আপু।

 5 days ago 

উচ্চ পদে উঠে অনেকেই কেন অন্যদের প্রতি তাচ্ছিল্য দেখায়, তা নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। এটি মানুষের আত্মবিশ্বাসের অভাব, ক্ষমতার অপব্যবহার, নাকি সামাজিক প্রভাবের ফল? এই বিষয়ে গভীরভাবে ভাবা উচিত।উচ্চ পদে উঠে শুধু পেশাগত উন্নয়ন নয়, ব্যক্তিগত উন্নয়নও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বিনয়, সহানুভূতি এবং সম্মান প্রদর্শন করা একজন প্রকৃত সফল মানুষের লক্ষণ।

 5 days ago 

আসলে মানুষের থেকে হিংস্র প্রাণী এই পৃথিবীতে আর হয় না। আমার পোস্ট পড়ে সুন্দর মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ ভাই।

 5 days ago 

স্বভাবগত ভাবে প্রতিটি মানুষ ই আলাদা স্বভাবের হয়।তবে একটা জায়গায় এলে দেখা যায় বেশীর ভাগ মানুষ ই এক।অর্থাৎ মানুষ যখন অনেক উঁচুতে উঠে যায় তখন তিনি তার নীচে পরে থাকা মানুষ গুলোকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে। তাদের অহংকার দেখতে থাকে অপর মানুষের সাথে।এটা আসলে কোন ভাবেই কাম্য নয়।

 5 days ago 

আসলে যত বেশি বুদ্ধি তত বেশি স্বার্থপরতা। আর মানুষ নিজেকে বুদ্ধিমান বলে মনে করে বলেই এতটা স্বার্থপর হতে পারে। সুন্দর মন্তব্যটি করে পাশে থাকলেন বলে ধন্যবাদ আপু।

 5 days ago 

এই বিষয়টা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। আর আমাদের সমাজে এরকম লোক অনেক দেখতে পাই। যখন কেউ বড় হয়, তখন অনেক সময় পুরোনো বন্ধুদের ভুলে যায় এবং তাদের আর গুরুত্ব দেয় না। মানুষ স্বার্থপর, নিজের ভালো হলেই অন্যদের কথা ভুলে যায়। সাফল্য পেলে অনেকেই সাধারণ মানুষকে তুচ্ছ মনে করে। তাই আসল বন্ধুত্ব চিনতে হলে মানুষকে সাফল্যের পর উপলব্ধি করতে হয়। আর তাতে বোঝা যায় সে আসল না ফেইক বন্ধু ছিল। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভালো একটি বিষয় শেয়ার করার জন্য।

 5 days ago 

হ্যাঁ আপু। এই জিনিসটির সঙ্গে আমরা প্রত্যেকে অভিজ্ঞতা লাভ করি। আজ যে মানুষটির জন্য আপনি করবেন কাল বড় হয়ে গেলে সে আপনাকে ভুলে যাবে।। এটি যেন পৃথিবীর নিয়মে পরিণত হয়েছে। আমার পোস্ট পড়ে নিজের সুচিন্তিত মতামত জানালেন বলে খুব ভালো লাগলো।

 4 days ago 

এমন বাস্তবিক প্রমাণ অনেক পেয়েছি ভাইয়া। তাই বাস্তবতা থেকেই বলছি স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে পিছনের কথাগুলো ভুলে যায়।