আজকের পাতায় রইল একটি গল্প - রং নাম্বার। পর্ব - ১
আজকের পাতায় একটি গল্প - রং নাম্বার
বিশ্বভারতী থেকে পোস্ট গ্রেজুয়েশন পাস করবে, কমলিনীর এই ইচ্ছা বহুদিনের। দাদু সাধ করে নাম রেখেছিলেন কমলিনী। ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনায় ভালো। কিন্তু আর্থিক পরিস্থিতি কখনোই তার চিন্তা ভাবনাকে সুদৃঢ় করবার পথে মসৃণতা দেয়নি। তাই লড়াই করেই জীবনের এই পর্যায়ে আসতে হয়েছে তাকে। এই যুগে দাঁড়িয়েও মায়ের কাছে একটা মোবাইল চাইব চাইব ভাবতে ভাবতে কেটে গেছে জীবনের কুড়িটা বছর। আর যখন নিজের ইচ্ছা পূরণের সময় এসেছে, তখন সংসারের তীব্র অনটন পিছুটান হয়ে দাঁড়িয়েছে তার। কিন্তু লেখাপড়ায় ভালো হওয়ার সুবাদে কখনো তাকে কোথাও আটকাতে হয়নি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজি বিভাগে স্নাতক উতরে যাওয়ার পর নতুন করে ভাবতে হচ্ছে স্নাতকোত্তর বিভাগ নিয়ে। বিষয় তার মনস্তত্ত্ব। অর্থাৎ মানুষের মন নিয়ে খেলা করা। কিন্তু সত্যিই কি খেলা? আসলে নিজের মনটাকেই ঠিকমতো বাঁধতে পারে না সে। আর সেখানে অন্যের মন! তবু বিষয় হিসেবে সাইকোলজিকে বেছে নেওয়ার এক এবং একমাত্র কারণ হলো মানুষকে অন্ধকার থেকে মুক্তির উপায়। চাইলে হয়তো ফিজিক্স বা কেমিস্ট্রি নিয়ে পড়াশোনা করতেই পারতো। কিন্তু চিরকালই মনের টানাপড়েনগুলো নিয়ে তার অগাধ আকর্ষণ। তাই বিষয় হিসেবে সাইকোলজিকে বেছে নেওয়া।
যাইহোক এমন ভাবেই গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত পেরিয়ে তারপরে টাকার চিন্তায় দিনরাত এক হয়ে যায়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়তে গেলেও যে বিনা পয়সায় হবে না তা বিলক্ষণ জানে কমলিনী। তাই সঙ্গে একটা চাকরি হলে ভীষণ ভালো হতো। কিন্তু রেগুলার কোর্সে পড়াশুনা করতে হলে চাকরিও যে সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে যেন এক অদ্ভুত পরিস্থিতির শিকার সে। বাবা মারা গেছে ছেলেবেলাতেই। টুকটাক কাজ করে মা সংসারটাকে এতদিন টেনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু আর যেন কিছুতেই চলছে না। তাই এর মধ্যে নিজের উচ্চশিক্ষা নিয়ে ভাবাটা নেহাত বিলাসিতা বলেই তার মনে হয় বারবার। এইসব হাজার চিন্তাভাবনা মাথায় নিয়ে ঘুমোতে যায় সে। প্রবল অন্ধকার যেন ঘিরে ধরে মাথার চারপাশে।
সেদিন ঘুম থেকে উঠবার পর হঠাৎ মোবাইলে একটা কল। বেজেই চলেছে কলটা। বাথরুম থেকে চিৎকার করে কমলিনী মাকে বলে -
মা, ফোনটা ধরো...
তার কিছুক্ষণ পরে মায়ের প্রত্যুত্তর-
কেউ একজন ফোন করে তোকে চাইছিল। কিছুক্ষণ বাদে আবার করতে বলেছি...
এত সকাল বেলা কে ফোন করেছিল? তাও এমন কী কথা যা মাকে বলা যায় না? নিজের চিন্তাকে কিছুতেই প্রশমিত করতে পারল না সে।
ঠিক ঘন্টাখানেক বাদে আবার সেই ফোন নাম্বারটা থেকে কল এলো। এবার সরাসরি ফোনটা তুললো কমলিনী। ওপাশ থেকে ভেসে এলো ভারী কণ্ঠস্বর-
"তুমি একবার আমার সঙ্গে দেখা করো রিয়া। এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব... "
কে রিয়া? আপনি মনে হয় রং নাম্বারে ফোন করেছেন। - উত্তর দেয় কমলিনী।
কিন্তু আবার সেই কণ্ঠস্বর, "আজ বিকেল ঠিক সাড়ে চারটেয় ধর্মতলা বিগ বাজারের সামনে তুমি আমার সঙ্গে দেখা করবে"। এরপর কেটে গেল ফোন।
কে বারবার রিয়া বলে সম্বোধন করছে কমলিনীকে? এমনকি রং নাম্বার বলবার পরেও সে আবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করছে। চিন্তায় তো নাওয়া খাওয়া উঠবার জোগাড় তার।
[ক্রমশ...]
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
https://x.com/KausikChak1234/status/1894051191358664839?t=pb-K74KhN7B6iclpUvyyjA&s=19
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Daily tasks-
রং নাম্বার গল্পের প্রথম পর্ব পড়ে বেশ ভালো লাগলো। মনে হচ্ছে কামলিনীর জীবনে নতুন কিছু ঘটতে চলেছে। যা তা ইচ্ছে পূরনে সহায়ক হবে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম দাদা।
আমার গল্পটি পড়ে আপনার ভালো লেগেছে শুনে আমার খুব ভালো লাগলো আপু।
আরিব্বাস! দারুণ শুরু হয়েছে। অধীর আগ্রহে পরের অংশের জন্য অপেক্ষা করে থাকলাম। পারফেক্ট শুরু যাকে বলে। ওহ তুসি গ্রেট হো জি। কবিতার পর প্রবন্ধ তারপর গল্পে। উফফ। এগিয়ে যাও বন্ধু। পাশে আছি।
তোর ভালোলাগা আমার কাছে ভীষণ বড় একটা প্রাপ্তি। সুন্দর মন্তব্য করে আমাকে অনুপ্রাণিত করলি বলে অনেক ভালোবাসা।
মোবাইল কলটি যে রহস্য এবং অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে, সেটি তার মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে তোলে। "রিয়া" নামটি এবং ফোনের অদ্ভুত বার্তা কমলিনীর শঙ্কা এবং দ্বিধা বাড়িয়ে দেয়, যা গল্পে নতুন রহস্যের জন্ম দেয়। এটি নিঃসন্দেহে একটি চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে একজন সাধারণ মানুষের মনের অন্ধকার এবং তার চারপাশের রহস্যজনক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে। ধন্যবাদ দাদা,পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ।
এত সুন্দর সুচিন্তিত মন্তব্য করে আমার পাশে থাকবার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।