বিচ্ছেদ প্রবণতা বৃদ্ধি, পরিবার ভাঙনের এক কঠিন বাস্তবতা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে যে বিষয়টি সবচেয়ে চোখে পড়ছে, তা হলো বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি। আগে সমাজে ডিভোর্সকে লজ্জাজনক মনে করা হলেও এখন এটি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আধুনিক শিক্ষা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পারিবারিক অশান্তি, অর্থনৈতিক চাপ কিংবা বিশ্বাসঘাতকতার কারণে দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এর ফলে কষ্টে পড়ছে বিশেষ করে নারী ও শিশু। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি বিভাগ ও জেলার ডিভোর্সের হার উদ্বেগজনক হারে বেড়ে চলেছে।
বাংলাদেশ ব্যুরো অফ স্ট্যাটিসটিকস (BBS) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে প্রতি ১,০০০ জনে ডিভোর্সের হার ছিল ০.৭। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে, অর্থাৎ ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১.৪ অর্থাৎ দ্বিগুণ। যদিও ২০২৩ সালে কিছুটা কমে ১.১ হয়েছে, তবুও এটি এখনো চিন্তার বিষয়।
ঢাকার দিকে তাকালে দেখা যায়, শুধু রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনে ২০২২ সালে ১৩,২৮৮টি ডিভোর্স আবেদন জমা পড়েছিল। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৩৭টি দাম্পত্য সম্পর্ক ভেঙে যাচ্ছে। প্রায় প্রতি ৪০ মিনিটে একটি করে দম্পতি আলাদা হয়ে যাচ্ছে।
বিভাগ ভিত্তিক বিচ্ছেদ নিয়ে ‘Population and Housing Census 2022’-এর রিপোর্ট বলছে, রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশি ডিভোর্স হয় ৬১%।বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ২৯%। অন্যান্য বিভাগের রিপোর্টে দেখা যায় খুলনা ৫৫%, ঢাকা ৪০%, সিলেট ৪৩%, রংপুর ৩৮%, ময়মনসিংহ ৪০%, চট্টগ্রাম ৩০% ডিভোর্স হয়।
এছাড়া জেলা ভিত্তিক তথ্যও বেশ চোখে লাগার মতো। উদাহরণস্বরূপ, মেহেরপুরে ২০২২–২৩ অর্থবছরে প্রায় ২,০০০ এর কাছাকাছি ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫টি বিচ্ছেদ। গ্রামীণ এলাকায় ডিভোর্সের হার শহরের তুলনায় ৮০% বেশি।
ডিভোর্সের পেছনে নানা কারণ কাজ করে। প্রথমত যেটা ধরা হয় পরকীয়া সম্পর্ককে। এটি শতে ২৩% ক্ষেত্রে প্রধান কারণ। দাম্পত্য জীবন চালিয়ে যেতে অক্ষম ২২% মানুষ। অর্থনৈতিক অক্ষমতা, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন ও বিদেশে থাকা স্বামী এসবও বড় কারণ। শহরাঞ্চলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও পারস্পরিক অবিশ্বাস বড় ভূমিকা রাখছে, আর গ্রামে আর্থিক সংকট ও পারিবারিক দ্বন্দ্বই মূল কারণ।
ডিভোর্সকে অনেক নারী নিজেদের মুক্তির পথ হিসেবে দেখছেন। নির্যাতন বা অসম্মানের জীবন আর মেনে নিতে চান না তারা। তবে ডিভোর্স সবসময় শান্তি বয়ে আনে না। বেশ অংশ দেখা যায় ডিভোর্সের পরে অনেক নারী আর্থিকভাবে ভেঙে পড়েন, আর সন্তানরা হয় সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী। মায়ের-বাবার বিচ্ছেদের কারণে তারা মানসিকভাবে অসহায় হয়ে পড়ে, পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে, ভবিষ্যতে সম্পর্কের ব্যাপারে ভীতি তৈরি হয়।
অন্যদিকে সমাজে ধীরে ধীরে ডিভোর্সকে আর লজ্জাজনক মনে না করলেও, পারিবারিক ভাঙনের কারণে সামাজিক বন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশে ডিভোর্সের হার গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। রাজশাহী ও খুলনার মতো বিভাগে বিচ্ছেদ বেশি হলেও বরিশালে তুলনামূলক কম। গ্রামে শহরের চেয়ে ডিভোর্সের প্রবণতা বেশি। প্রধান কারণ হলো পরকীয়া, পারিবারিক অশান্তি ও অর্থনৈতিক অক্ষমতা। কিন্তু দিন শেষে সবচেয়ে কষ্ট পায় নির্দোষ সন্তানরা, যারা মা-বাবার ভাঙনের শিকার হয়ে পড়ে অসহায় অবস্থায়।
তাই আমাদের উচিত পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে পারস্পরিক বোঝাপড়া, কাউন্সেলিং ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি করা। ডিভোর্স কখনো কখনো প্রয়োজন হলেও, তা যেন শেষ ভরসা হয় প্রথম নয়। কারণ ভাঙনের মাঝে হারিয়ে যায় শুধু সম্পর্ক নয়, ভেঙে যায় অনেক ছোট ছোট স্বপ্নও।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
পরিবার ভাঙনের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করা জরুরি, নইলে সমাজে এর প্রভাব মারাত্মক হবে।শুধু বিচ্ছেদ নয়, সমাধান খোঁজাটাই এখন সবচেয়ে বেশি দরকার।সমস্যার সময় সহনশীলতা, আলোচনার মানসিকতা আর পারস্পরিক সম্মানই পরিবার টিকিয়ে রাখতে পারে।ভুল বোঝাবুঝি দূর হলে সম্পর্ক আরও সুন্দর হয়, তাই কথোপকথনই সমাধানের মূল চাবিকাঠি।
জী ভাই ঠিক বলেছেন।
https://x.com/RamimHa74448648/status/1957099932331970909?t=mP7mz06Fp7NTNJoMARpUHQ&s=19