ভিন্ন স্বাদের আমের জগতে বাংলাদেশ।।

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই, আশা করি আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। বাংলাদেশে আম শুধুমাত্র একটি ফল নয়, এটি একটি আবেগ, একটি অনুভূতি, একটি মৌসুমী উৎসবের নাম। গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশের গ্রামীণ জনজীবনে আমকে কেন্দ্র করে যে আনন্দময় পরিবেশ তৈরি হয়, তা আর কোনো ফলের বেলায় দেখা যায় না। গ্রীষ্মকালে যে হারে গরম লাগে, সে জন্য এই মৌসুমটা আসলে খুবই কষ্ট লাগে। কিন্তু এই মৌসুমে আমার সবচেয়ে জনপ্রিয় ফলের স্বাদ নিতে পারি। আর এই জন্যই গ্রীষ্মের গরম কষ্ট হলেও মনকে বুঝাই। আগামীকাল অফিস থেকে বাসায় যাওয়ার সময় কিছু আম কিনে নিয়ে গেছিলাম। ভাবলাম আজকে আম নিয়ে কিছু লেখালেখি করি। আজ আমরা জানবো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় কিছু আম সম্পর্কে, যেগুলো স্বাদ, ঘ্রাণ, ও সৌন্দর্য সত্যিই অতুলনীয়।

হিমসাগর- অত্যন্ত মিষ্টি, আঁশবিহীন এবং কচকচে মসৃণ একটি আম। ভেতরে হলুদাভ রঙ।বাণিজ্যিক আম হিসাবে সর্বপ্রথম এই আমটি খাওয়া হয়েছে। এটি পাকার সময় মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ। এটি সব থেকে বেশি জন্মে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর অঞ্চলে। এই আম ঠান্ডা স্থানে রেখে ৫-৭ দিন পর্যন্ত রেখে খাওয়া যায়। ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে ১০ দিনও টিকে। হিম সাগর আমে আঁশ না থাকায় এটি রসালো ও সহজে খাওয়ার উপযোগী।

ল্যাংড়া- এটি একটু ঝাঁঝালো মিষ্টি স্বাদ, রং হালকা সবুজাভ হলুদ। পাকলেও রং তেমন একটা বদলায় না। এটিই গতকাল কিনে নিয়েছি। খেতে খুবই মিষ্টি লেগেছে। এই আম পাকার সময় জুনের মাঝামাঝি থেকে শেষ পর্যন্ত। ল্যাড়া আম রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে বেশ পাওয়া যায়। ঐ অঞ্চলে আত্মীয় স্বজন থাকলে এখনই যাওয়ার উত্তম সময়, হে হে হে। ল্যাংড়া আম পাকা অবস্থায় ঠান্ডা পরিবেশে রাখা উত্তম। ফ্রিজে ৭-৮ দিন ভালো থাকে। এই আমের ঘ্রাণ ও স্বাদ অনেক শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী।

গোপালভোগ- এটি হালকা মিষ্টি স্বাদ, পাতলা আঁশ, গাঢ় হলুদাভ রঙ। দাম তুলনামূলক একটু কম। আমি এখনো গোপালভোগ খায়নি। তবে মানুষ ইচ্ছে মত কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমটি দেখতে খুবই সুন্দর। এটি মে মাসের শেষ ভাগ থেকে জুনের শুরুতে পাকে। দুই থেকে তিন মাস বাজারে থাকে। এটি রাজশাহী অঞ্চল, বিশেষ করে বাঘা ও চারঘাটে বেশি জন্মে। সেখান থেকে সারা বাংলাদেশে পৌছায়। এটি তাজা খাওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযোগী, ফ্রিজে ৩-৫ দিন রাখা যায়। খুব বেশি সময় রাখলে নরম হয়ে যায়, তাই তাজা অবস্থাতেই খাওয়া শ্রেয়।

আম্রপালি- বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় হাইব্রিড জাতের আম, যা মূলত ভারত থেকে আগত হলেও এখন বাংলাদেশেও ব্যাপকভাবে চাষ হচ্ছে। এটি ছোট আকৃতির হলেও অত্যন্ত সুস্বাদু ও বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক একটি আম। এটি অত্যন্ত মিষ্টি, রসালো এবং ঘনস্বাদের আম। আঁশ একদমই নেই। পাকলে গাঢ় কমলা বা লালচে-হলুদ রঙ ধারণ করে। জুনের শেষ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়। এখন এই আম দিয়ে বাজার সয়লাব।

ফজলি আম- বড় আকৃতির, রসালো ও মিষ্টি স্বাদের আম। হালকা হলুদ রঙ। আমার দেখা সব থেকে বড় আকৃতির আম ফজলি। জুলাই মাস থেকে আগস্ট পর্যন্ত পাওয়া যায়। সামনের মাসে বাজারে আসবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে বেশি পাওয়া যায়।
ভালোভাবে মোড়ানো ও ঠান্ডা জায়গায় রেখে প্রায় ১০ দিন সংরক্ষণ করা যায়।

হাড়িভাঙা- এটি টক-মিষ্টি মিশ্র স্বাদ, গাঢ় সবুজ রঙের হয়ে থাকে। পাকলে হালকা হলুদ হয়। জুন মাসে বাজারে পাওয়া যায়। তবে উপস্থিতি খুবই কম। রংপুর অঞ্চল, বিশেষ করে মিঠাপুকুরে বেশি জন্মে। এটি দ্রুত খাওয়াই উত্তম। সংরক্ষণ করলে রং দ্রুত পাল্টে যায়। তাই দোকানিরা অল্পকরে বাজারে তুলে। যারা হালকা টক স্বাদ পছন্দ করেন, তাদের জন্য আদর্শ আম।

বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের মাটিতে, জলে, আর মানুষের যত্নে বেড়ে ওঠা আম যেন একেকটা গল্পের মতো। হিমসাগরের মাধুর্য, ল্যাংড়ার গন্ধ, ফজলির বিশালতা সব মিলিয়ে আমের জগতে বাংলাদেশ এক অনন্য দেশ। এই মৌসুমী ফল শুধু রসনাতৃপ্তিই দেয় না, বরং আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষি অর্থনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আমের নাম যেমন ভিন্ন ঠিক তেমনি স্বাদেরও রয়েছে ভিন্নতা।

আপনিও শেয়ার করতে পারেন আম খাওয়ার অভিজ্ঞতা বা মজার কোন গল্প।

সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।

Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন

এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP

Click Here For Join Heroism Discord Server

💖💖💖সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖