গল্প: একটি চিনি-হাঁসের গল্প

in আমার বাংলা ব্লগ2 days ago


আসসালামু আলাইকুম
আমার বাংলা ব্লগে সকলকে স্বাগতম


IMG-20250414-WA0000.jpg

Photography device: Huawei P30 Pro-40mp


গল্প


অনেকদিন আগের একটি ঘটনা শেয়ার করার জন্য আপনাদের মাঝে উপস্থিত হলাম। আমার এই ঘটনাটি পড়লে অবশ্যই আপনারা আনন্দ পাবেন। আমার ঘটনার মূল বিষয় হচ্ছে একটি চিনি হাঁসকে কেন্দ্র করে। তাহলে মূল গল্প চলে যাওয়া যায়। আমাদের গ্রাম পাড়া প্রতিবেশী একটি দাদি ছিলেন। উনার হাতে হাঁস কবুতর মুরগি অনেক বেশি বেশি হত। পাড়াগাঁয়ের মধ্যে তার একটা সুনাম ছিল। সবাই এক নামে জানতো এই মহিলা অনেক বেশি পশুপাখি পালন করতে পারে। তাই বাইরের গ্রাম থেকেও যদি কেউ ডিম কিনা বলে অথবা পশুপাখি কেনা উদ্দেশ্যে খোঁজখবর নিলে সবাই এক বাক্যে তার কথা বলে দিত। এমনই সুনাম ছিল তার। যাহোক একটা দিন গ্রামের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তের এক মহিলা তার কাছ থেকে চিনি হাঁস কেনার উদ্দেশ্যে যাই। তখনকার সময় হাসের দাম অনেক কম ছিল। যাই হোক নির্দিষ্ট দাম মোতাবেক ওই মহিলার কাছ থেকে হাঁস কিনে গ্রামের আরেক মহিলা বাসায় ফিরল। চিনি হাঁসটা লক্ষ্য করে দেখেছে কোন পথ দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যে মহিলা হাঁসটা কিনেছিলেন সে মালিকের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে আনার পথে বেশ কয়েক জায়গায় থেমেছিলেন। পথের মধ্যে অনেকেই দাঁড় করিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন কত দাম হল কত কেজি হল ইত্যাদি। মহিলাটা আনন্দের সাথে সব উত্তর দিয়েছে জায়গায় জায়গায় থেমে। হয়তো হাঁস পথের কিছু অংশ চেনে। আবার জায়গায় জায়গায় থামার কারণে আরো একটু রাস্তা সম্পর্কে আইডিয়া হয়ে গেছে। যাই হোক ৪/৫ দিন মত হাঁসটাকে বেঁধে রেখেছিল অথবা ঢেকে রেখেছিল বাড়ি ধরানোর জন্য।

এরপর হাঁস টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। হালকা হালকা বাড়িঘর ধরেছে। এরপর নতুন সঙ্গীদের সাথে চড়াই করে বাড়ির মধ্যে। যিনি কিনে এনেছিলেন। হাঁসের পাখা বা বড় বড় পালক গুলো কেটে ছোট করে দিয়েছিল আর গায়ের রং করে দিয়েছিল। যেন খুব সহজে চিনতে পারা যায়। পাড়া গায়ের অন্যান্য মানুষের চিনি হাঁসের সাথে যেন মিশে না যায়। যাইহোক এভাবেই কিছুটা দিন হল হাঁস বারি ধরেছে। মহিলাটা নিশ্চিন্তে হাঁসটা পালন চলতে থাকে। লক্ষ্য করা গেল এক মাস পর হাঁসের পালকগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে। এরপর বাড়ি থেকে রাস্তা এদিকে ওদিকে চড়াই করতে থাকে। মাঝেমধ্যে খাবার টাইমে বাড়ি ফিরতে চাই না। মহিলাটা মনে করছে আবারো পালক গুলো কেটে ছোট করে দেওয়া হবে। ঠিক এভাবে একটা দিন হাঁস বাড়িতে ফেরানোর জন্য রাস্তার দিকে আনতে গেছিল। কিন্তু দেখা গেল সেটা লাফ দিয়ে একটু উড়ে এদিক থেকে ওদিকে যাচ্ছে। বিষয়টা তার কাছে খুবই বিরক্তকর হয়ে গেল। এরপরে কোনরকম বাড়িতে ধরে নিয়ে আসে। বাড়ির লোকজন বলল হাঁস জাতীয় জিনিসগুলো অনেক সময় উড়তে পারে। তাই তাদের পালক কেটে ছোট করে রাখাই ভালো। আবার অনেকে বলল পাতিহাঁস রাজহাঁস তারা তো উড়ে না, চিনি হাঁস কেন উড়বে। এমনিতে দেখা যায় এই হাঁস গুলো অনেক ভারী হয়ে থাকে। তাই কিনে এনেছিল সেই মহিলা ভেবেছিল এ উড়বেনা।

কিছুদিন যেতে যেতে একদিন হঠাৎ করে লক্ষ্য করা গেল। হাঁসটিকে বাড়ি ফিরে আনতে গিয়ে সে বেশ উড়ার চেষ্টা করছে। এরপর এক বিকেলে সত্যি সত্যি সেই চিনি হাঁস উড়ে চলে যায়। যতদূর চোখ যায় সে উড়ে চলে যেতে থাকে। কোন দিকে সে থামে না। তবে হাঁসটি যাচ্ছিল তার পুরাতন গেরস্থের বাড়ির দিকে। অনেকে দেখে বলাবলি করছিল আর হাসাহাসি করছিল যার বাড়ির হাতে জিনিস তার বাড়িতে উড়ে চলে গেল। বর্তমান গেরস্থ খুবই রাগান্বিত হলো। আর ভাবতে থাকল না জানি আজকে সে হাঁস হারিয়ে ফেলবে। এরপর নিজের বাড়ি থেকে যে বাড়ি থেকে কেনা হয়েছিল সেই বাড়ির দিকে রওনা দিলেন মহিলা। ইতোমধ্যে দেখা গেল বাড়িতে অনেক হইচই লেগে গেছে। যার বাড়ি থেকে কেনা হয়েছিল তার বাড়িতে হাঁসটি এসে পৌঁছায়নি। তাহলে সে হাস গেল কোথায়। আস্তে আস্তে বিকেল শেষের সন্ধানে আমি আসতে থাকলো। ভয় পরিবারের মানুষরা ব্যর্থ হলো সে হাঁস খুঁজে পাওয়ার। সবাই নিশ্চিত হয়ে গেল হাসটা আর বাড়ি ফিরবে না। পরের দিন ঘুম থেকে উঠে আবারো খোঁজাখুঁজি শুরু। কিন্তু দেখা যায় পুরাতন গেরস্থের বাড়ির নিকটে একটি পুকুরের মধ্যে হাঁসটি চড়াই করছে। অনেকেই ধরতে গেল কিন্তু ব্যর্থ হল। এই পাড়া থেকে ওই পাড়ায় সন্ধান রাখল বর্তমান মালিক। পুরাতন মালিক বলেছিল তারা ধরে রেখে দিবে। যাহোক এভাবেই একটা মুহূর্ত দেখা গেল পুরাতন মালিকের সেই হাঁসের ঘরটাতে অন্যান্য হাঁসের সাথে সেই কাঙ্খিত হাঁসটি ঢুকে পরলো। আর এভাবেই বোঝা গেল, যার যেখানে জন্ম সে সেই জায়গার মায়া সহজে ছাড়তে পারে না। তাই এক দেড় মাস পর হলেও জন্মস্থানে সে উড়ে এসেছে এক পাড়া থেকে আরেক পাড়ায়।


PB8ro82ZpZP35bVGjGoE93K3E4U5KX8KtMBJ2rhmkyLqtRRZvVw9YH8hEBg7DJQKSJLWf7VJRhnjGRYSDmuGDMSHAPBRbiRis5HV4ATHTF7QvLHc.png


পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ



received_434859771523295.gif


পোস্ট এর বিবরণ


বিষয়গল্প
ফটোগ্রাফি ডিভাইসInfinix
ক্রেডিট@jannatul01
W3w locationsource
দেশবাংলাদেশ
ব্লগারআমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি


আমার পরিচয়


আমার নাম মোছাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস শশী। আমার বাসা গাংনী মেহেরপুর, বাংলাদেশ। আমি আপনাদের সুপ্রিয় বিদ্যুৎ জিরো ওয়ান এর পরিবার। আমি একজন গৃহিণী। স্বামী সন্তান সহ আমাদের যৌথ পরিবার। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটির চারজন সদস্য রয়েছে আমাদের পরিবারে, তার মধ্যে আমি একজন। এইচএসসি পাশ করার পর বিয়ে হওয়ার মধ্য দিয়ে আমার লেখাপড়া স্থগিত হয়। আমার ইচ্ছে আমি এই কমিউনিটিতে দীর্ঘদিন ব্লগ করব। পাশাপাশি আমার নিকটস্থ প্রিয়জনদের সহায়তা করব এই কমিউনিটিতে কাজ করার জন্য।


2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif



99pyU5Ga1kwqSXWA2evTexn6YzPHotJF8R85JZsErvtTWXkFkcDg5ibdZCen8p3uDxVoV5q1NZLwPPeBug1jepgK3e2Zdtv5gFKAP1J8S7nez1ced4GsXM4bVpnBb88Np6.png