ছোটগল্পঃ- " অপেক্ষা "
20-03-2025
০৬ চৈত্র , ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২০ রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি পরছে। বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে মৌমি। বেলকনিতে দাঁড়িয়েই বাহিরে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মৌমি। এক পশলা বৃষ্টির স্পর্শ পাওয়ার জন্য। মৌমির ভীষণ পছন্দ বৃষ্টিতে ভেজা। একটা সময় যে কি না বৃষ্টিতে ভেজার জন্য পাগল হয়ে যেত। সাথে থাকতো তার প্রিয় মানুষ অয়ন! অয়নের সাথে বৃষ্টিতে ভেজার মুহূর্তটা এখনও মনে পরছে মৌমির! হাত বাড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে বাহিরে থাকিয়ে আছে মৌমি। এমন সময় হঠাৎ করেই তার মায়ের হাত কাধেঁ। মৌমি কিছুটা ইতস্তত বোধ করে নিজেকে সামলে নিল!
- মা, তুমি এখানে কেন?
- দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস!
-কিছু না মা! কিছু বলতে আসছো। - শোন মা, তোর বাবা তোর জন্য একটা সম্বন্ধ ঠিক করেছে। কাল তোকে দেখতে আসবে। তুই রেডি হয়ে থাকতে বলেছে! এতোদিনে অনেকগুলো ছেলেকে না করে দিলি। এ ছেলেটা ভালো। লন্ডনে থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে এসেছে! এবার অন্তত না করিস না!
- মৌমি নিচু স্বরে বললো ঠিক আছে মা। পাত্র পক্ষকে আসতে বলো!
মেয়ের কথা শোনে মৌমির মা ভীষণ খুশি হয়েছে। তার পরেরদিন পাত্রপক্ষ এসেছে মৌমিকে দেখতে। তেমন কোনো সাজে সাজায়নি নিজেকে মৌমি। চোখে হালকা কাজল দিয়েছে, হলুদ আর খয়েরী রঙের মিশ্রণে তৈরি তার মায়ের শাড়িটি পরেছে মৌমি। মৌমির বাবা যে সম্বন্ধ নিয়ে এসেছে সে ছেলেটির নাম আবির। খুবই ভদ্র একজন ছেলে। আবির মৌমিকে দেখে প্রথম দেখাতেই যেন তার ভালো লেগে যায়। মুখে হাসি নেই মৌমির, সরল চাহনি। আর এতেই যেন আবিরের ভালো লেগে যায়।
পাত্রপক্ষের একজন বললো ছেলে মেয়েকে কিছুক্ষণ কথা বলতে দেয়া উচিত। তাদেরও পছন্দ অপছন্দের বিষয় আছে!
মৌমি ও আবির চলে গেল বাসার ছাদে! দুজন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল! কেউ কোনো কথা বলছে না! হঠাৎ করেই আবির বলে উঠলো -
- আপনি কি এমনি! চুপচাপ থাকেন সবসময়!
- না, আসলে! আমার চুপচাপ থাকতেই ভালো লাগে।
- আমাকে আপনার কেমন লাগলো?
- ভালোই খারাপ না! আচ্ছা আমাদের যদি বিয়ে হয়ে যায় আপনি কি আমাকে নিয়ে লন্ডন চলে যাবেন?
- হ্যাঁ! লন্ডনে কি যেতে চান না?
- না এমনটা না আসলে! দেশের বাহিরে যাওয়ার কথা কোনোদিন ভাবেনি। তাছাড়া বাবা মাকে ছাড়া দূরে গিয়ে কোথাও থাকেনি!
আবিরের মৌমিকে ভালো লেগে যায়। দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়। এক মাস পরেই তাদের বিয়ে। আবির নিয়মিত মৌমির সাথে যোগাযোগ রাখে। মৌমিও আবিরের সাথে কথা বলে। কারণ দুদিন পরেই তাদের বিয়ে। দুজনের ভিতর একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং থাকা দরকার।
একদিন হঠাৎ করেই আবির চলে আসে মৌমির বাসায়! বাসায় এসে মৌমিকে পেয়ে যায়। আবিরকে দেখে কিছুটা সারপ্রাইজ হয়ে যায়। আবির রুমের ভিতরে গিয়ে বসে। মৌমি আবিরের জন্য চা বানাতে যায়!
আবির খেয়াল করে ড্রয়িং টেবলের উপরে একটা ডায়েরী। কৌতুহলবশত আবির ডায়েরী টা হাতে নেই! হাতে নিয়ে দেখতে পায় মৌমির কিছু লেখা!
" অয়ন তুৃমি যেখানেই থাকো না কেন আমি তোমাকে যে করেই হোক খুঁজে বের করবো। আমার ভালোবাসা কখনো মিথ্যে হতে পারেনা। আমি জানি কেন তুমি আমার থেকে লুকিয়েছো! আমি তোমার জন্য আজও অপেক্ষায় রয়েছি। শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য কাউকে বিয়ে করেনি! আবির খুব ভালো একটা ছেলে। মা বাবা তার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। কিন্তু তোমার সাথে দেখা না করা অবধি আমি বিয়ে করবো না! "
মৌমি চা নিয়ে এসে দেখতে পায় আবির চলে গেছে। আর সেখানে তার পুরনো ডায়েরীটা পরে রয়েছে। তারপর থেকে আবিরের ফোন বন্ধ! আর আবিরের না পাওয়ার গল্পটা সেখানেই থেমে যায়।
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করছি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় (ডুয়েট) থেকে অধ্যয়নরত আছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত তিন বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Twitter share
Comment link
একটা অসমাপ্ত কাহিনীর কথা অনেক সুন্দর করে আপনি তুলে ধরেছেন। আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে আপনার আজকের লেখা গল্পটা পড়তে। মৌমি বিয়েতে রাজি হলেও ওই ছেলেটাকে সে এখনো ভালোবাসে। আর মৌমির লেখা ডায়েরি পড়ে আবির বুঝতে পেরেছিল সবকিছু। আর মৌমির সাথে সব যোগাযোগ বন্ধ করে। অনেক সুন্দর করে লিখেছেন পুরো গল্পটা।
এই গল্পটি সত্যিই হৃদয়স্পর্শী। মৌমির বৃষ্টিতে ভেজার একাকী মুহূর্ত থেকে শুরু করে তার মনের গহীনে লুকানো অয়নকে নিয়ে অপেক্ষা, সবকিছুই গভীর আবেগ ও প্রেমের ছোঁয়া বহন করছে। আবিরের সাথে তার বিয়ে ঠিক হলেও, মৌমির মন তার পুরনো প্রেমে আটকে ছিল। একদিকে পারিবারিক চাপে তার সামনে জীবন এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা খোলা, আর অন্যদিকে তার হৃদয়ে অয়নকে নিয়ে অব্যক্ত অনুভূতি। এমন গল্পে আসলে ভালোবাসা, আত্মসম্মান ও সিদ্ধান্তের মধ্যে দারুণ সংঘর্ষ দেখা যায়। সত্যি, আবিরের চলে যাওয়ার পর মৌমির কষ্টটা মনে গভীর ছাপ রেখে যায়। গল্প টি পড়ে বেশ ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু গল্পটি পড়ার জন্য।