ছোটগল্পঃ- "ডিভোর্স "

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

12-02-2025

৩০ মাঘ , ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼


ai-generated-8679755_1280.jpg

copyright free image from pixabay

ঘড়িতে তখন রাত ১টা বেজে ৩০ মিনিট। আরেফিন টেবিলে বসে পড়ছে। সামনে তার একটা সরকারি চাকরির ইন্টার্ভিউ রয়েছে। ডিপ্লোমা করে বেরিয়েছে অনেক আগে। সেটাও আবার সিভিল ডিপার্টমেন্ট থেকে। আকিজ সিমেন্ট কোম্পানিতে জব করছে কয়েকবছর ধরে। মাস শেষে যে টাকা পায় সেটা দিয়ে দিব্যি চলে যায় আরেফিন। পাশাপাশি পরিবারটাকেও সে দেখছে। এমই থেকে বিএসসি করছে। সময়ের সাথে বয়স বাড়ছে কিন্তু বিয়ে করার কোনো প্লেন নেই তার। এখনও স্টেবল হতে পারেনি। বেসরকারি কোম্পানিগুলাতে চাকরি করলে ঠেলার উপরে থাকতে হয়। তার উপর ফিউচারের কোনে গ্যারান্টি নেই। যেকোন সময় চাকরি চলেও যেতে পারে। এজন্য আরেফিন সরকারি চাকরির দিকেই ফোকাস বেশি।

পড়ার টেবিলের পাশেই ফোন। হঠাৎ করেই টুং করে মেসেজ আসলো ফোনে! আরেফিন কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। এতো রাতে কে তাকে মেসেজ দিবে। তার কলিজার বন্ধু রাব্বি ছাড়া আর কে হতে পারে! আরেফিন হাতে নেই। হাতে ফোন নিয়ে দেখতে পাই রাব্বির বউ মিমির মেসেজ!!

" আমি আপনার বন্ধুর সাথে সংসার করতে চাই না। আমি তার থেকে ডিভোর্স চাই। রাব্বি বিয়ের আগে যেমন ছিল বিয়ের পর সব ভিন্ন! আমার চাহিদা পূরণ করতে পারে না। সংসারের ছোট ছোট চাহিদাগুলো সেটাও আপনার বন্ধু পূরণ করতে পারে না। আমি এর থেকে মুক্তি চাই। তাকে বলবেন আমাকে যেন সে ডিভোর্স দিয়ে দেয়! "

মিমির এমন মেসেজ দেখে হতবাক হয়ে পরে আরেফিন! কি এমন হলো যে সে ডিভোর্স চাইছে। অথচ তাদের ঘরে অলরেডি একটা ছেলে সন্তান আছে। সন্তান থাকার পরেও মিমি এমন কথা কেন বললো! অথচ বিয়ের আগে তাদের ভালোবাসা দেখলে বন্ধুমহলে প্রচুর হিংসা করতো। রাব্বি মিমিকে এক পলক দেখার জন্য সকাল ছয়টায় চলে যেত। হাতে একটা গোলাপ নিয়ে। আর বিয়ের পরের জীবনটাই যেন পরিবর্তন হয়ে গেল!

আরেফিন রাব্বিকে ফোন দিল! কিরে কি হয়েছে আবার তোদের মাঝে? ভাবী আমাকে মেসেজ দিয়ে ডিভোর্স এর কথা বলছে! ঘটনা কি বলতো!
" তোকে কি বলবো বল তো। তুই তো জানিস সবকিছু। একটা ক্রিমের দাম ১৯০০ টাকা। সাথে জামা কাপড়, বাসা ভাড়া দিয়ে মাস শেষে আমার কাছে এক টাকাও থাকে না। বারো হাজার টাকা দিয়ে কোনে রকমে সংসার চলে রে। আমি আর পারছি না। ছেলেটাও আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে! উঠতে বসতে আমাকে কোটা দেয়। বিয়ের আগে কতো কি বলেছি। বিয়ের পরে নাকি কিছুই কিনে দিতে পারিনি। প্রতিনিয়ত অভিযোগ শুনতে হয়। সারাদিন কাজ করে বাসায় আসার পর এতো অভিমান শুনলে কি ভালো লাগে বলতো! "

তোর ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি। আমি তোকে আগেই বলেছিলাম বুঝেশুনে কাজ কর। বিয়ে করেছিস বড়লোকের মেয়েকে। চাহিদা বেশি তো থাকবেই। এটাই স্বাভাবিক বিষয়। এখন তদের ঘরে একটা ছেলে সন্তান আছে। ওর মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও সংসারটাকে টিকিয়ে রাখা উচিত। ভাবী বললো সে নাকি ডিভোর্স চাই! তুই ও কি ডিভোর্স চাস??

" দেখ, আমার একটা ছেলে আছে। আমি কিভাবে ডিভোর্স চাইবো! "

আচ্ছা, আমি ভাবীর সাথে কথা বলি। তুইও ভাবীকে বুঝানোর চেষ্টা কর।

রাত তিনটা বেজে গেল। টেনশনে আরেফিনের ঘুম আসছে না। দুদিন পর পর ঝগড়া হয় তাদের মাঝে আর সেটা মেটাতে হয় আরেফিনকে। এজন্য আরেফিন কোনো রিলেশনে পা দেয়নি। ভাবতে ভাবতে আরেফিন কখন ঘুমিয়ে যায় টেরই পায়নি।

সকালে আরেফিন অফিস চলে যায়। মিমিকে ফোন দেয়ার কথা ছিল কিন্তু তার মনে নেই! লাঞ্চ টাইম! আরেফিনের ফোনে রাব্বির মেসেজ! সব শেষ রে বন্ধু! মেসেজটা দেখার পর ধুকধুকিয়ে বুকটা কেপেঁ উঠে আরেফিনের!

" কি হয়েছে? ভাবীর সাথে আবার ঝামেলা বাঁধাইলি? "

" মিমি পরিবারের সবাই এসে মিমিকে নিয়ে চলে গেছে। যাওয়ার সময় বলেছে ডিভোর্স লেটার যথাসময়ে পাঠিয়ে দিবে! "

রাব্বির এ কথা শুনে আরেফিনের হাত পাঁ কাপছে। এতোকিছুর পরেও একটা সংসার টিকিয়ে রাখা গেল না। আসলে চাহিদা পূরণ করতে না পারলে কেউই আপনার পাশে থাকবে না। পৃথিবীতে টাকা না থাকলে আপনার মূল্য নেই। আর আবেগের বশে বিয়ে করলে এর ফলটাও যে ভালো হয় না সেটা কিন্তু দুদিন পরে হলেও বুঝা যায়।



10% beneficary for @shyfox ❤️

1000158488.jpg

PUSS COIN:BUY/SELL

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg

আমি কে?

IMG_4442.JPG

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ডুয়েটে অধ্যয়নরত আছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত তিন বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 2 months ago 

গল্পটা পড়ে আসলে খুবই খারাপ লাগছে। কারণ একটা সংসার এভাবেই ভেঙে যাবে শুধুমাত্র কিছু চাহিদা পূরণের অভাবে। সেটা কখনোই মেনে নেয়া সম্ভব হয় না। তাও আবার সংসারে একটা ছেলে আছে সেটা ভেবেও মেয়েটা পিছু হটল না। যাই হোক এমন মেয়ে বা মা কারো ঘরে যেন না হয়।

 2 months ago 

জি আপু এমন মেয়ে যেন কারো ঘরে না হয়। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে

 2 months ago 

গল্পটি পড়ে খুব খারাপ লাগলো। সত্যি কথা বলতে এমন মেয়ে সমাজে খুব বেশী নেই।তবে সামান্য যা আছে তাতে তাদের সংসার টেকানো সম্ভব হয় না।যাদের এতো চাহিদা তারা কি করে সংসারে টিকে থাকে।একটি ছেলে আছে তা সত্ত্বেও সংসারের চেয়ে চাহিদা বেশী হওয়াতে সংসার টেকানো গেলো না।

 2 months ago 

একদম ঠিক বলেছেন আপু। গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে