শৈশবের জানুয়ারী মাস!
25-01-2025
১২ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো আছেন। আমিও ভালো থাকার চেষ্টা করছি প্রতিনিয়ত। ভালো থাকার চেষ্টাটাই প্রতিনিয়ত অব্যাহত রাখতে হবে। ভালো না থাকলে দেখবেন কোনো কিছুই করতে ভালো লাগছে না। সন্ধ্যা থেকেই হঠাৎ কেন যেন শৈশবের কিছু স্মৃতি চোখে ভাসছিল! ফোনটা হাতে নিয়ে বসে পড়লাম লেখার জন্য কিছু কথা!
আজ থেকে দেড় দশক আগে ফিরে যায়! শৈশবের প্রতিটা সময় যেন দূরন্তপনার মধ্যে দিয়েই কেটে যেত। জানুয়ারী মাসটি ছিল শৈশবের সবচেয়ে গোল্ডেন মাস! কারণটা হচ্ছে বছরের শুরুতেই হাতে পেয়ে যেতাম নতুন বই! আর নতুন বইয়ের ঘ্রাণ সেটা তো অন্যরকম ফিলিংস। তখন বইয়ের উপরের পৃষ্ঠাটা পাতলা থাকতো। কিছুদিন ব্যবহার করার পরে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতো সবচেয়ে বেশি। স্কুল থেকে ফেরার পথে বাজার থেকে দশ টাকার মলাট কিনে নিয়ে আসতাম। বাজারের মলাটগুলোও তেমন ভালো হতো না মাঝে মাঝে। হাতে করে বই নিয়ে গেলে তখন গামের জন্য নরম হয়ে যেত। তখন আবার বাড়িতে টাঙানো পুরনো সালের ক্যালেন্ডার দিয়ে মলাট করে নিতাম। মলাট কিভাবে করতে হয় সেটা শিখেছিলাম বড় আপুর কাছে।
আপু হাতে ধরে শিখিয়েছিল কিভাবে ভাজে ভাজে মলাট করতে হয়। মলাট করার পর বইয়ের কোণায় কোণায় স্টেপলার মেরে দিতাম যাতে সহজেই ছিঁড়ে যেতে না পারে। সব বই মলাট করা হয়ে গেলে সেটা বিছানার নিচে রেখে দিতাম। যাতে করে বইটা আরও মসৃণ হয়, মলাটটা যেন ভালো করে লেগে যায়। সকালে বিছানার নিচ থেকে বইগুলো সব বের করে নিতাম। তারপর কলম নিয়ে বসে যেতাম বইয়ের উপরে বড় করে নাম লেখার জন্য। নাম, রোল, শ্রেণী সবই বইয়ের মলাটের উপরে লেখে নিতাম। যাতে বই হারিয়ে গেলেও খুঁজে পাওয়া যায়! বইয়ের কাজ শেষে শুরু হতো পড়াশোনা! প্রাইমারি লেভেলে বড় বোনের কাছেই পড়াশোনা করেছি। আমার ছোটবেলা থেকেই ম্যাথের প্রতি আলাদা ভালো লাগা কাজ করতো। ম্যাথের হাতেখরি আপুর কাছ থেকেই শেখা।
জানুয়ারী মাসে আরেকটা বিষয় ছিল নতুন স্কুল ড্রেস বানানো! সাথে প্যান্ট তো আছে। তখন তো শর্ট প্যান্ট পরতাম, হাহা! নতুন ড্রেস সাথে সাদা জুতো! সকাল সকাল শুরু হয়ে যেত এসেম্বলি। সকাল নয়টার পরে কেউ স্কুলে প্রবেশ করতে পারতো না। পরে প্রবেশ করলে স্যারের হাতের মাইর মিস নেই। এ ব্যাপারে সবাই সজাগ থাকতো। সকাল সকাল নতুন ড্রেস পরে চলে যেতাম স্কুলে! নতুন ড্রেস সাথে নতুন বই! ক্লাসে বই রেখে চলে যেতাম এসেম্বলি করতে! এসেম্বলির শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করা হতো। তারপর শপথ বাক্য পাঠ করাতো। শপথ বাক্য পাঠ করানোর পরে আমাদেরকে পিটি যেটা শারীরিক ব্যায়াম বলা যেতে পারে সেটা করাতো। সকাল সকাল রোদের তাপ মাথায় এসে লাগতো যেদিন খুব ঠান্ডা লাগতো সেদিন আবার রোদের তাপ আরামদায়ক লাগতো। আর কুয়াশা না থাকলে গামে শরীরের অবস্থায় খারাপ হয়ে যেত।
এসেম্বলিতে জাতীয় সংগীত সবাই একই সুরে গাওয়ার চেষ্টা করতাম। শুরুতে তখন জাতীয় সংগীত পুরোটা মুখস্থ ছিল না। তারপর আস্তে আস্তে সেটাও মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। স্কুলের ডিসিপ্লিন মূলত এখানেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাছাড়া জানুয়ারী মাসে আবার খেলাধুলার আয়োজন চলতো! আমরা বন্ধুরা মিলে তখন কলম চোরাচোরি খেলতাম। বেঞ্চেও কলম দিয়ে খেলতাম। বলতে কলম দিয়ে বেশ কয়েক ধরনের খেলা খেলেছিলাম তখন। মেয়েরা দেখতাম দৌড়গোল্লা, কুতকুত এসব খেলতো! আবার, কেউ ছিল আর্টপ্রেমী। উপজেলা পর্যায়ে দেখতাম আমাদের ক্লাসের বেশকজন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে উপহার পেয়েছিল।
আজকের দিনে সেই শৈশবের জানুয়ারী মাসটাকে বড্ড মিস করি! খুব মিস করি বইয়ে মলাট দেয়ার মুহূর্তটা, নতুন বইয়ের গন্ধটা! আজকালকার বইয়ে মলাট দিতে হয় না। উপরের পেইজটা অনেক শক্ত থাকে এখন। সহজেই ছিঁড়ে না। শৈশবের সেই সোনালী দিনগুলো কখনো ফিরে পাবো না। তবে শৈশব যে মোর রইবে সোনার খাচাঁয় বন্দি!
10% beneficary for @shyfox ❤️
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ডুয়েটে অধ্যয়নরত আছি। পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত তিন বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
Twitter share
Puss tweet
আমরাও মিস করি ভাইয়া। হাই স্কুলে উঠে একদম পূর্ণাঙ্গ অ্যাসেম্বলি ক্লাস পেয়েছিলাম। কত ঠান্ডার মধ্যেও চলে যেতে হতো আমাদের। আপনার মাধ্যমে যেন সেই দিনের অনেক স্মৃতি মনে করলাম।
একদম ঠিক বলেছেন আপু, কনকনে শীতেও চলতো এসেম্বলি!
সত্যি শৈশবে জানুয়ারি মাস অনেক মধুমাখা ছিল। নতুন বই পাওয়া, নতুন বইয়ের গন্ধ অনুভব করা, নতুন বইয়ে মলাট লাগানো, নতুন স্কুল ড্রেস বানানো,নতুন স্কুল ড্রেস পরে স্কুলে যাওয়া আরো কত কি। ওই সময়টাকে খুব মিস করি। এবার যখন বোনের বইতে মলাট দিতে বসে ছিলাম। তখন ওই সময়টার কথা খুব মনে পড়ছিল। আজকের পোষ্টের মাধ্যমে দারুন একটি টপিক নিয়ে আলোচনা করেছেন ভাইয়া। সুন্দর একটি পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো।
শৈশবের সময়টা আসলেই অন্যরকম ছিল। কতদিন হলো নতুন বইয়ের গন্ধ পায় না
এই বইয়ের উপরে নাম লেখা নিয়ে আমার জীবনে একটি মজার কাহিনী আছে ভাই যেটা আপনার পোস্ট পড়ে মনে পড়ে গেল। তাছাড়াও শৈশবের জানুয়ারি মাসের আরো চমৎকার কিছু কথা তুলে ধরেছেন পোস্টের মাধ্যমে। বিশেষ করে স্কুল ড্রেস বানানো এবং এসেম্বলিতে যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া ।এই দুটো কাজ আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে কড়া ভাবে করেছিল স্কুল শিক্ষকরা। সেসব সোনালী দিন এখন শুধুই স্মৃতি। যাই হোক শৈশবের স্মৃতিচারণ মূলক পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ ভাই।
আসলেই ভাই, শৈশবের সেই সোনালী দিনগুলো কখনো ভুলে যাওয়ার মতো না।
পুরাতন ক্যালেন্ডার কেটে নতুন বইয়ে মলাট দেওয়া।আহ সেই দিনগুলো এখন আর নেই ভাই। জাতীয় সংগীত সবাই একসঙ্গে গাওয়া। জানুয়ারি মাস মানেই যেন সবকিছু একেবারে নতুন। চমৎকার লাগল আপনার পোস্ট টা ভাই। অনেক স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন।
আসলেই শৈশবের সময়গুলো দারুণ ছিল তখন।