ক্যান্টিনের আড্ডা (ছোট গল্প) @gentleman74 | আমার বাংলা ব্লগ|১০% বেনিফিশিয়ারি "লাজুক খ্যকের" @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)


ইউনিভার্সিটির হলের ক্যান্টিন খোলা থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত। মধ্যরাতের আড্ডা জমেছে। একই ডিপার্টমেন্টের চার বন্ধুকে ঘড়ির কাটার ক্লান্তি স্পর্শ করেনি এখনও।ধীরে ধীরে ক্যান্টিনের ভীড় কমে চারজনে নেমেছে।আড্ডা তখনও চলছে। বিষয় ভূত। গল্প বলছে রাসেল-

"প্রচন্ড এক গরমের রাতে, বাসায় ইলেকট্রসিটি ছিল না। ভাইয়া ছাদে হাটছে। প্রায় ভরা চাঁদ।চাঁদের আলোয় চারপাশ দেখা যাচ্ছে। আবছা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে। আমাদের বাসার শেষ মাথায় পুকুর। একটা অর্ধ ফুটবল মাঠের সাইজ। তার ওইপাড়ে খ্রিস্টান কবরস্থান "

টিপু মাঝদিয়ে বলে উঠল-"তোদের বেশিরভাগ গল্প কেন কবরস্থানের হতে হয়?"

সবকিছুতেই খুব মনোযোগ দেয়া শিহাব কিছুটা উচ্চস্বরে বলে উঠল-" শুন তো আগে। মাঝখানে বা'হাত না ডুকালে হয় না তোর! "

রাসেলের দিকে একটু ঝুকে বসে শিহাব বলল- " বল রাসেল। তারপর?"

চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রাসেল বলা শুরু করল-

" রাত তখন ১টার কাছাকাছি। ভাইয়ার কাছে মনে হল তিনি আগুনের মত কিছু একটা দেখলেন। ভাইয়া অন্য চিন্তায় ছিলেন বলে ভুল দেখলেন কি না বোঝার জন্য ছাদের কর্নারের দিকে গিয়ে দাড়ালেন। কার্নিসের পাশে এসে দাড়ালে অনেকদূর দেখা যায়। কবরস্থান পর্যন্ত। আবছা আলোয় দেখলেন একটা কুকুর কবরের উপর হাটছে।কিছু একটা খুজছে যেন। কুকুরটা হঠাৎ গুঙিয়ে উঠে ছুটে পালাল। ব্যাথা পেলে যেমন শব্দ করে তেমন। ভাইয়ার মাথায় চিন্তা আসল। কি হল? নিজেই ভেবে বের করলেন -কোন এক গর্তে পড়েছে হয়ত। কিন্তু অদ্ভূত ব্যাপার ঘটল পরের মূহুর্তেই। কুকুরটা ঠিক যেখানে পায়চারি করছিল ঠিক সেখান থেকে এক দলা আগুনের ফুলকি উঠে গেল ৬/৭ ফুট। এবার আর ভাইয়া ভাবতে গেলেন না। এক দৌড়ে বাসায়"

টিপু বলে উঠল,"তোকে গল্পটা ভাইয়া যখন বলেছে তখন তুই কোন ক্লাসে?"
-"ক্লাস 6"
-"তোকে গল্প শুনিয়েছে। ছোটরা গল্প পছন্দ করে তাই।"
-"ভাইয়া বানিয়ে গল্প বলত কিন্তু এইটা সে নিজে দেখেছে। নিছক গল্পের জন্য মিথ্যা বলার মানুষ না ভাইয়া। "
-"তোরা কেউ নিজে কোনদিন কিছু দেখেছিস!?"

শিহাব বলে উঠল-" আমি দেখেছি"
টিপু কিছুটা ব্যাঙ্গ করে বলল-" তা ভূতের অটোগ্রাফ রেখেছিলি। হা হা হা!"
তার বাচনভঙ্গিটা এমন ছিল যে হেসে উঠল সবাই। কিন্তু আড্ডার চতুর্থ সদস্য আফতাব হাসল না। হাসির শব্দ ভেঙে একটা কাশি দিল সে। গম্ভীর একটা ভঙ্গিতে বলল-" আচ্ছা রাসেল, সময়টা গরমের দিন ছিল। কুকুর কিছু একটা খুজছিল। এবং জায়গাটা কবরস্থান। সব ঠিক বললাম?"

সবাই আফতাবের দিকে এমন করে তাকাল যেন নির্বোধের মত কিছু বলেছে।
রাসেল উত্তর করল,"হা ঠিক আছে। কিন্তু তুই কি পয়েন্ট মেক করতে চাচ্ছিস।
"আই হ্যাব এ পয়েন্ট বন্ধু।"
মুখের সামনে হাত দিয়ে খুক করে একটা কাশি দিল আফতাব। তারপর বলতে শুরু করল।
" মানুষ বা অন্য যে কোন জৈব বস্তু পচে গেলে মিথেন গ্যাস হয়!"
শিহাব বলল-"হু হয়!"

শিহাবের দিকে মুখ ঘোরাল আফতাব," কবরে একটার পর একটা কবর দেয়া হয়। মিথেনের ভাল উৎস এটা। কোন একটা ছিদ্র হয়েছে। হাড্ডি এবং মিথেনের গন্ধে কুকুর এসেছে। গন্ধের উৎস খুজতে গিয়ে ছিদ্রটা সে আরো বড় করতে গিয়ে পড়ে গেছে।গুঙ্গিয়ে উঠেছে আকস্মিক। "

শিহাব খুব উত্তেজিত হয়ে বলল-" আই গট ইট নাও। গরমের দিন শুক্ন পাতায় বা কোন ভাবে আগুন লাগতে পারে এবং সেই আগুন কে গ্যাস উপরে ঠেলে নিয়ে গেছে। আগুনের দলা হিসেবে দেখা গেছে বাতাসে!"

আফতাব মুসকি হাসি দিয়ে বলল-" কোন ভূত-জ্বিন না। রাসেলের ভাই এই উপরে ওঠা আগুনকে জ্বিন ভেবেছে। বিষয়টা বাস্তবিক এরকম কিছু হবে।"

রাসেল খুব ক্ষিন স্বরে বলল- "হতে পারে!"

টিপু বলল- "হা হা খুব গোয়েন্দা গিরি করে ফেললি। আমি সবসময়ই তোদের এই ভৌতিক আগ্রহটা বুঝি না। এতে আগ্রহ দেখানোর কি আছে? ভূত -প্রেত সবই কাল্পনিক।"

শিহাব বলল-" না টিপু এই গল্পের না হয় একটা ব্যাখ্যা দাড় করানে গেল বলে বলতে পারতেছি ভূত বলে কিছু ছিল না। কিন্তু এমন অনেক ঘটনা থাকে যা তুই কোনভাবেই মানতে পারবি না। আমি যৌক্তিক কিন্তু ভূত-জ্বিন নেই এটা বলব না।"

"তুই যদি যোক্তিকই হইস তাহলে তুই অবশ্যই বলতি ভূত বলে কিছু নেই।"

টিপুর এই শক্ত বক্তব্য মেনে নিতে পারল না শিহাব," আমি নিজেই যে এক ঘটনার মধ্যে পড়েছি সেটার কোন ব্যাখ্যা হয় না।"

টিপু উল্টা ঘুরে মোজাফফর ভাইকে ডেকে বলল, "ভাই, চা দেন"
আফতাব টিপুর সাথে যোগ করল,"ভাই, দুইটা বেনসন দিয়েন"

টিপু সিগারেট হতে নিয়ে বলল," দেখ, ভুত বলে কিছু নাই। যা নাই ত নিয়ে গল্প করার কোন মানে হয় না।"
রাসেল বলল," সাহস না দেখিয়ে বলতে পারিস যে তোর ভয় লাগে। হা হা"
টিপু একটু রেগে গেল যেন। " বেশি বোঝা তোর একটা রক্তের সমস্যা"
রাসেল ক্ষেপে গেল। "রক্তের সমস্যা কি! তুই যে এত সাহস দেখাস। জানি তো কি সাহসী তুমি"
টিপু বলল,"দেখ শিহাব।রাসেল কিন্তু পার্সোনাল এট্যাক করতেছে।"
আফতাব চায়ে চুমুক দিয়ে বলল," রাসেল এর দাবি তুই ভীতু টিপু। ওকে ভুল প্রমাণ কর!"
টিপু বলল,"how?"
রাসেল উত্তেজনা থামিয়ে বলল,"তুই যদি এত সাহসী হইস তাইলে আজিমপুর কবরস্থানে একটা স্ট্যাম্প পুতে আয়।"
শিহাব মুচকি হেসে বলল,"সিরিয়াসলি। We are going to do this now!"
টিপু চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল যেন,"yes,we are . চল।বাইরে হাটি। আজিমপুর মোড় পর্যন্ত সবাই। আমি স্ট্যাম্প পূতে আসব। ইজি পিজি"

রাত ২:৩০ টা । রাসেল,টিপু আর শিহাব দাড়িয়ে আছে আজিমপুর মোড়ে। টিপু কথা অনুযায়ী স্ট্যাম্প পুততে গেছে ১০মিনিট হল।

আফতাব সিগারেট ধরাল। ল্যাম্প পোস্টের সাথে হালকা কুয়াশা মিলে একটা সাসপেন্স তৈরি করেছে ।

শিহাব বলল," এত রাতে কি দরকার ছিল এইটার।তোরা হাইপার হয়ে যাইস অনেক সহজে।"
আফতাব বলল,"little adventure. একটা ফিল আছে।"
রাসেলের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল,"টিপু প্রায়ই আমাদের সাথে এই ব্যাপারটা নিয়ে উপহাস করে। উপহাস করার যোগ্যতা প্রমাণ করা উচিত না! "
রাসেল ও হেসে উত্তর করল," অবশ্যই এবং আমার মনে হয়না ও এতটা সাহসী"

শিহাব পকেট থেকে ফোন বের করল। লকবাটনে প্রেস করে সময়টা দেখে নিল ।রাত ২:৫৫ টা । একটু উদ্বিগ্ন মনে হল ওকে, "কিরে ৩০মিনিট হয়ে গেছে । এখনও টিপু আসে না কেন? "

CC

@rex-sumon
@boss75
@moh.arif
@shuvo35
@amarbanglablog
@blacks
@beautiful.world
@boomerang
@winkles

Sort:  

ভাই অনেকদিন পর আপনার পোস্ট দেখলাম। আপনার গল্পটা খুবই সুন্দর হয়েছে। আপনার গল্প লেখার হাত খুব ভালো। খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। আসলে আমাদের সকলের জীবনে কোনো না কোনো সময় কিছু রহস্যময় ব্যাপার ঘটে কেউ এগুলিকে ভূত বলে কেউ বলে অলৌকিক ব্যাপার।ধন্যবাদ আপনাকে।

ধন্যবাদ ,আপনার মতামতের জন্য। গল্প ভালো লাগলেই ভালো লাগে। পড়বেন । উৎসাহ দিবেন।

 3 years ago 

আপনার গল্পটা খুবই সুন্দর হয়েছে। পড়ে অনেক ভালো লাগলো।খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

সবসময়ের মত গল্প পড়েছ। অসংখ্য ধন্যবাদ তোমাকে @limon88

 3 years ago 

ভালোবাসা অবিরাম 💖

চলবে। 💛

 3 years ago 

অনেকদিন পর এই গল্পের পরবর্তী পর্ব, পেলাম গল্পটির মাঝখানে অনেক কেউ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আপনি অনেক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন।

 3 years ago (edited)

ধন্যবাদ সিয়াম। তোমার মতামগুলো সবসময়ই সুন্দর হয়।
মাঝে মাঝে কনফিউজড হই- আসলে ভালো লেগেছে! নাকি তোমার প্রকাশটাই সুন্দর শুধু।
অনেক ভালোবাসা এবং শুভকামনা তোমাকে। 💛

 3 years ago 

না ভাই,, সত্যি অনেক ভালো লেগেছে তবে মাঝখানে কবরের যে অংশটি ছিল সেটি অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম, আমি একটু ভিতু টাইপতো।।।

💛

রাতের বেলায় ভূতের গল্পঃ পড়তে ভয় লাগছে,🤨

পড়েই ফেলেন ভাই। আপনার মত ভাল মানের পাঠক পেলে,গল্প লেখার মজা বেড়ে যাবে কয়েকগুন।

 3 years ago 

সত্যি কথা ভাই প্রথমে কিছুটা পড়ে পরে ভয় পেয়ে আর পড়ি নাই। তবে যতটুকু পড়েছি খুব আনন্দ পেয়েছি। খুব ভালো।

পড়ে ফেল। সাসপেন্স আনার চেষ্টা করে শেষ করলাম।

 3 years ago 

ঠিক আছে।

 3 years ago 

অসাধারণ হয়েছে ভাইয়া...

ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

দুর্দান্ত উপস্থাপনার সাথে আপনার গল্প টি দারুন হয়েছে । অনেক অনেক শুভেচ্ছা ভাইয়া।

পড়বেন ,মতামত করবেন। গল্পের সার্থকতা পাঠকের আনন্দে।

দারুন একটি গল্প হয়েছে। কখনো ভয় কখনো মজা।দারুন লেখনি আপনার । শুভকামনা রইল

ধন্যবাদ দাদা। আপনি গায়ক মানুষ । আপনার ভালো লাগল বুঝতে হবে গল্প ভালো হয়েছে।

 3 years ago 

আপনার গল্পটি উপস্থাপনার করার উপায় কী ছিল খুবই সুন্দর। তবে এই গল্পটি একটি ফ্রম করেছিল। যেটা আপনি সম্পূর্ণ ভাবে তুলে ধরেছেন

ফ্রম করেছিল ব্যাপারটা বুঝি নি!
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মতামতের জন্য।
পড়বেন ,মতামত করবেন। গল্পের সার্থকতা পাঠকের আনন্দে।

গল্প পড়ে ভালোই লেগেছে। বিষয় টা অনেক সুন্দর ছিলো। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে

পড়বেন ,মতামত করবেন,সাপোর্ট করবেন। গল্পের সার্থকতা পাঠকের আনন্দে।