শিক্ষামূলকঃ পর্ব ২৯|| উইটনেস কি, কেন, কি কাজ বিস্তারিত || Witnesses in Steem Blockchain [10% for shy-fox]
ভূমিকাঃ
ইতিপূর্বে আমরা ব্লকচেইন ও স্টিম ব্লকচেইন এর বেসিক বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেছে। আমরা জানি, প্রতি তিন সেকেন্ড পরপর স্টিম ব্লকচেইন-এ ব্লগ প্রডিউস হয়। এই ব্লকচেইন এর পিছনে কারা রয়েছে এবং কারা সার্ভার ও এডমিন সব ম্যানেজ করছেন এই বিষয়টি আমরা আজকের পোস্ট এর মাধ্যমে জানবো। স্টিমিট একটি বিকেন্দ্রীকরনকিত ব্লগিং সাইট যা ব্লকচেইন ভিত্তিক কিন্তু এর কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য অবশ্যই একটি গভর্নেন্স দরকার হবে। সেই গভর্নেন্সে কারা থাকবে এবং কিভাবে কাজটি সম্পন্ন হচ্ছে এই বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে।
পর্ব ২৯: উইটনেস আদ্যোপান্ত
স্ট্রিম ব্লকচেইনে যত কার্যক্রম হচ্ছে অর্থাৎ পোস্ট, কমেন্ট, আপভোট, ট্রান্সফার ইত্যাদি সবগুলোকে ভেরিফাই করে যারা ব্লক প্রোডাকশনে অংশগ্রহণ করে তাদেরকে বলা হয় উইটনেস (Witnesses বা স্বাক্ষীবৃন্দ)। ইতিপূর্বে আমরা তিন ধরনের ব্লকচেইন এর ব্যাপারে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে ডেলিগেটেড প্রুফ অফ স্টেক (DPoS) নামে একটি পদ্ধতির কথা আমরা আগেই জেনেছিলাম। এখানে কিছুসংখ্যক লোক অর্থাৎ কম্পিউটারের দরকার হবে যারা এই ব্লকের মধ্যে থাকা ট্রানজেকশন গুলোকে ভেরিফাই করে সম্মতি প্রদান করবে এবং ব্লক প্রোডাকশনে ভূমিকা রাখবে এবং তারা নির্বাচিত হবে সমস্ত ব্যবহারকারীদের ভোটের মাধ্যমে যাদেরকে এখানে স্টিম ব্লকচেইনে উইটনেস বলা হচ্ছে।
স্টিমিটে যত ব্যবহারকারী (কমিউনিটি) রয়েছে সবার সরাসরি ভোটের মাধ্যমে মূলত উইটনেস নির্বাচিত হবে। যারা উইটনেস নির্বাচিত হবে তারাই গভর্নিং বডি হিসেবে কাজ করবে। যত ধরনের ব্যবহারকারী রয়েছে সবাই উইটনেসদের-কে ভোট দেবে। তবে এক্ষেত্রে যাদের পাওয়ার যত বেশি তাদের ভোটের মূল্য তত বেশি। এভাবে করে প্রত্যেক ব্যবহারকারীর ভোটের মাধ্যমে উইটনেস নির্বাচিত হয় এবং সব উইটনেস এর মধ্য থেকে প্রথম ২০ জন ব্লক প্রোডাকশনে অংশগ্রহণ করে। ২১ তম থাকেন ব্যাকআপ হিসেবে থাকেন। এভাবে করে প্রতি (২১*৩ =) ৬৩ সেকেন্ডে একটা রাউন্ড সম্পন্ন হয়ে এরপর আবার এভাবে চলতে থাকে। প্রতি ৬৩ সেকেন্ডে একজন টপ ২০ উইটনেস একটি ব্লক প্রোডাকশনে ভূমিকা রাখেন। কখন কে কোন ব্লক প্রডিউস করছে তা আপনারা https://steemblockexplorer.com/ এ গিয়ে দেখে আসতে পারেন।
উইটনেসড এর মূল কাজ হচ্ছে সিস্টেমে যে সফটওয়্যার ডেভেলপ করা আছে সেই সফটওয়্যার তাদের কম্পিউটারে রান করার মাধ্যমে তাদের কম্পিউটারের প্রোগ্রাম এর দ্বারা কোন নির্দিষ্ট সময়ের ট্রানজেকশন গুলোকে বৈধতা দিয়ে হ্যাশ তৈরি করে সব কার্যক্রমকে রেকর্ডভুক্ত করে ব্লকচেইনে নিয়ে আসা। যাদের কাছে ভালো কনফিগারেশনের কম্পিউটার ও ইন্টারনেট কানেকশন আছে তারাই উইটনেস হিসেবে নিজেদেরকে ডিক্লেয়ার করতে পারবে কিন্তু যারা ভোট পাবে ও নির্বাচিত হবে তারাই ব্লক তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।
উইটনেস স্টিম ব্লকচেইন এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ব্লকচেইন এর কোডে যেকোনো ধরনের পরিবর্তন যেমন ছোট পরিবর্তন বা সফট ফর্ক (soft fork) অথবা বড় পরিবর্তন বা (hard fork) করতে হলে অবশ্যই সব উইটনেসদের সম্মতি দরকার হবে। যদি সব উইটনেসরা একটা সিদ্ধান্তে উপনীত হয় তাহলে তারা সবাই মিলে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারবে। উইটনেস মূলত এখানে গভর্নিং বডির মতো কাজ করছে কারণ আমরা জানি এটা একটা বিকেন্দ্রীকরণ ব্যবস্থা তাই যারা এই যখন শীর্ষ ২০ জনের মধ্যে থাকবে তারা তখন গভর্নিং বডির মত করে দায়িত্ব পালন করবেন। উইটনেসগণ সার্ভার ম্যানেজমেন্ট থেকে শুরু করে ডাটা ম্যানেজমেন্ট পর্যন্ত সব ধরনের কাজ সম্পন্ন করে থাকেন।
স্টিমের প্রত্যেক ব্যবহারকারী সর্বোচ্চ ৩০ জনকে উইটনেস হিসেবে ভোট দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে যেমনটি আগেই বলেছি অর্থাৎ যাদের পাওয়ার বেশি তাদের ভোটের মূল্য বেশি। সবার ভোটের মাধ্যমে যারা প্রথম ২০ জনের মধ্যে থাকবেন তারা ব্লগ প্রোডাকশনে অংশগ্রহণ করবেন। এ কারণে ভালো ভালো উইটনেস দেখে ভোট দেওয়া উচিত। যাদের এই ব্লকচেইনের প্রতি অনেক বেশি কন্ট্রিবিউশন রয়েছে এবং স্টিম ব্লকচেইন-কে আরো ডেভলপ করার জন্য কাজ করবেন তাদেরকে ভোট দিলে এই ব্লকচেইন ভাল থাকবে ও ভবিষ্যতে আরো ভাল করবে। ভালো উইটনেসবৃন্দ পজেটিভ এবং ভালো ভালো পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবেন যেটা সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।
যারা প্রথম ২০ জনের পরে উইটনেস লিস্টে থাকে তাদেরকে মূলত ওয়েটিং লিস্টে থাকা লাগে এবং যখন তারা ২০ জনের মধ্যে প্রবেশ করতে পারেন তখন তারা নিয়মিত ব্লগ প্রোডাকশনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। তাই আপনারা ওয়েটিং লিস্টে অনেকেই দেখতে পারবেন। যারা ১০০ এর মধ্যে রয়েছেন তারা অল্প কিছু ব্লগ প্রোডাকশনের সুযোগ পেতে পারেন যেহেতু ২১ তম হিসেবে তাদের সারাদিনে কিছু ব্লক প্রোডাকশনের সুযোগ রয়েছে।
উইটনেস ভোট দেওয়ার সময় অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে ভোট দেওয়া উচিত। প্রথম ৩০ জনকে ঢালাওভাবে ভোট না দিয়ে বরং দেখেশুনে ভালো ব্যাক্তিকে পেলে তাদেরকেই ভোট দেওয়া উচিত। আর আমরা যারা কাজ করছি তাদের অবশ্যই এই ভোটিং-এ অংশগ্রহণ করা উচিত কারণ আমাদের ভোট উইটনেস দের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
একজন উইটনেস আরেকজন উইটনেস-কে ভোট দিতে পারবেন না। আর এই কারণে উইটনেস স্প্যামিং হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম কারণ যদি কারো পাওয়ার থাকে সে আরো কয়েকজনকে ভোট দিয়ে উইটনেস বানিয়ে নিতে পারবে না। তাই এক উইটনেস অন্যকে ভোট দেওয়া প্রতিরোধের মাধ্যমে উইটনেস নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্পামিং হওয়াটাকে প্রতিরোধ করা হয়েছে। আর এভাবে করেই আপনারা খেয়াল করবেন, এখানে কোন কেন্দ্রীয় পাওয়ার কাজ করে না বরং এখানে যারা মূল ব্যবহারকারী রয়েছেন তাদের হাতেই পাওয়ারটা রয়েছে কারণ তাদের ভোটের মাধ্যমেই ভালো ভালো উইটনেস নির্বাচিত হতে পারবেন।
স্টিম ব্লকচেইন পোস্টে আমরা আলোচনা করেছিলাম যে, ১০% পার্সেন্ট রিওয়ার্ড চলে যায় হচ্ছে উইটনেসদের কাছে কারণ তারা গভর্নিং বডির মত ব্লকচেইন টাকে ধরে রাখছেন এবং সার্ভার ও ডাটা ম্যানেজমেন্ট এর কাজে অংশগ্রহণ করছেন। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত যতটুকু স্টিম জেনারেট হচ্ছে (বা মাইনিং হচ্ছে) তার থেকে ১০% অংশ চলে যায় উইটনেস দের কাছে। আর এটাই হচ্ছে উইটনেসদের বেনিফিট। তারা একটা ব্লকচেইন-কে রান করার জন্য যে ১০% পেয়ে থাকেন সেটা মোটেও বেশি নয় কারণ অন্যান্য অনেক ব্লকচেইন আছে যেখানে শতভাগ মাইনারদেরকে দেয়া হয়। কিন্তু এখানে ৬৫% দেওয়া হচ্ছে অথর ও কিউরেটর দেরকে এবং মাত্র ১০% যায় উইটনেসদের দখলে।
উইটনেস ভোট দিতে আপনার একটিভ কী দরকার হবে। কাজটি খুব সহজ। আমি নিচে স্ক্রিনশট আকারে দেখিয়ে দিচ্ছি।
ধাপ একঃ প্রথমেই স্টিমিটের ওয়ালেটে https://steemitwallet.com/ চলে যাবেন ও আপনার এক্টিভ কী দিয়ে লগ ইন করবেন।
ধাপ দুইঃ উপরের ডানদিকের কর্নারে ক্লিক করলে vote for witnesses নামে একটি অপশন পেয়ে যাবেন।
ধাপ তিনঃ আপনাকে যে ইন্টারফেসে নিয়ে আসা হবে সেখানে আপনি উইটনেস দের তালিকা পেয়ে যাবেন। কারো পোস্টে আপভোট দিলে যেমন সবুজ হয়ে যায় ঠিক তেমন এখানেও ভোট দেয়ার পর সবুজ হয়ে যাবে আর ভোট দেয়ার আগে তা স্বাভাবিক থাকবে। আপনার চাইলে পাশের লিংক এ ক্লিক করে ওই উইটনেস এর প্রোফাইল বা এক্সটারনাল কোন ওয়েবসাইট থেকে থাকলে তা ভিজিট করতে পারেন। এভাবে আপনি খুব সহজেই সর্বোচ্চ ৩০ জনকে ভোট দিতে পারবেন।
আশা করি আপনারা উইটনেস সম্বন্ধে একটা ভাল ধারণা পেয়েছেন। তারপরও কারো কোন প্রশ্ন ও মতামত থাকলে তা কমেন্টে জানাবেন।
খুবই তথ্যবহুল একটি পোস্ট করেছেন ভাইয়া। আপনার প্রতিটি পোষ্টের মাধ্যমেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিখতে পারি। অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এই ধরনের পোস্ট গুলো আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য। ট্রন এর ব্যাপারে একটা পোস্ট কইরেন ভাইয়া এই ব্যাপারে কিছু শিখতে চাই। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
একবারে মনে রাখা কঠিন তবে পড়তে পড়তে বিষয়টি মাথায় ঢুকবে। কেউ যদি বলে আমার মাথায় একবারে ঢুকে গেছে তবে সেটা মিথ্যা বলা হবে। আপনার শেয়ার করার বিষয় গুলো দারুন হয়। সবটুকু পড়ার সুযোগ হয়নি আস্তে আস্তে আপনার পোষ্ট গুলো আমি পড়ছি। ভালই লাগছে। নতুন কিছু জানতে পারছি। ধন্যবাদ।
আপনার থেকেও অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের। আপনার দীর্ঘ ফ্রিলান্সিং ও ট্রেডিং এর অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই উপকৃত হতে পারে। ধন্যবাদ
খুব তথ্যবহুল পোস্ট। উইটনেস সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এগুলো অনেক কাজে দেবে।ধন্যবাদ ভাই
ভাইয়া উইটনেস সম্পর্কে সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করে আমাদেরকে বুঝিয়েছে। দারুন একটা ধারণা পেলাম আপনার পোস্টটি পড়ে উইটনেস সম্পর্কে। সুন্দর একটি শিক্ষামুলক পোস্ট আমাদের উপহার দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনি উপকৃত হতে পেরেছেন এটাই হচ্ছে আমার সার্থকতা এবং আমি চেষ্টা করে চলেছি আমার পোষ্টের মাধ্যমে নতুনদেরকে এই ব্যবহারগুলো কে আরো সচেতন করতে। ধন্যবাদ
আপনার প্রচেষ্টা সফল হবে ইনশাল্লাহ। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
ভাইয়া আপনার পোস্টটি পড়ে সকলে অনেক বেশি উপকৃত হবে। আমরা অনেকেই উইটনেস ও এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে ভালোভাবে জানি না। আপনার এই পোষ্টের মাধ্যমে সকলে সঠিক ধারণা পাবে। খুবই সুন্দর করে আপনি প্রতিটি বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন। এরকম শিক্ষামূলক একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শুভকামনা রইলো ভাইয়া।
এটা খুবই অর্থবহো একটি পোষ্ট ।কয়েকবার পরেছি ।অনেক কিছু জানতে ও বুজতে পারলাম ।উইটনেস সম্পর্কে সবার জ্ঞান থাকা জরুরি ।ধন্যবাদ ভাই এমন শিক্ষামূলক পোষ্ট শেঋআর করে উপকার করার জন্য ।
এই ব্যাপারটি আমার জানা তবে এটা আমি সত্যি স্বীকার করবো যে এইভাবে একেবারে এভাবে করে আমার জানা ছিল না। এই কারনেই আপনার পোস্টগুলো আমি সময় নিয়ে এবং একটি নির্দিষ্ট সময় এ পড়ার চেষ্টা করি। যখন আমার মাথাটা একটু শান্তি থাকে বা আমি একটু রেস্টে থাকি। কারণ আপনার লেখাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়, সত্যি ভালো লাগে ভাইয়া।
ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যগুলোও অনেক চমৎকার হয় সব সময়।
প্রথমেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, প্রতিনিয়ত আমাদের মাঝে এতো সুন্দর এবং গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট শেয়ার করার জন্য।
আমি উইটনেস সম্পর্কের অল্পকিছু তথ্য জানতাম তবে এটার বিস্তারিত জানতাম না। আজকে আপনার পোষ্টের মাধ্যমে আমি আমার উইটনেস নিয়ে সব ধরনের ক্লিয়ার ধারনা পেলাম। আমার এটা অনেক উপকারে আসলো। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর একটা পোষ্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। এভাবেই আমাদেরকে সব সময় সাহায্য করে যান।
ধন্যবাদ।। শুভ কামনা রইল।
আকর্ষণীয় পোস্ট, আমার অন্তর্দৃষ্টি বৃদ্ধি করেছে, ভাগ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
এটা করলে কি কোন স্টিম দিতে হয় বা খরচ করতে হয়।
একদম না। ফ্রি। যেমন আমরা নির্বাচনে ফ্রি-তে ভোট দেই, তেমন-ই।
জেনে খুশি হলাম ভাই।🌷