গল্প: নীলাভ প্রেম। || Story: Blue Love. 💙 ( Part-2)
সোনম তার সেমিষ্টার ফাইনাল নিয়ে বেশ ব্যাস্ত সময় পার করছে। এদিকে বাড়িতে যাওয়া হয়নি বেশ কিছু মাস থেকে। বাবা-মা আর ভাইবোনের জন্য মাঝে মাঝেই তার খারাপ লাগে, কি আর করা পড়াশোনা করতে হলে তো সবাইকে ছেড়ে থাকতেই হবে। বিশেষ করে মায়ের হাতের খাবারের কথা মনে পরলে চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। হোস্টেলের খাবার কোন রকম বেঁচে থাকা ছাড়া আর কিছুই না। মনে মনে কতকিছু কল্পনা করতে থাকে। পরীক্ষা শেষ করে বাসায় যাবে, সারাদিন খেলাধুলা আর ঘুরে বেড়িয়ে দিন পার করবে আর মায়ের হাতে গরম গরম খাবার। এটা সেটা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মনে পরলো কাল পরীক্ষা আছে। সোনম তাড়াতাড়ি বইয়ের মাঝে ডুবে যেতে থাকে।
এদিকে অপ্সরার ঘুম হারাম, কখন সোনমকে দেখবে। আর কিভাবেই বা তার মনের কথা বলবে? যদি সোনম তাকে গ্রহণ না করে তখন কি হবে? এরকম উল্টো পাল্টা ভাবতে ভাবতেই সে ঘুমিয়ে যায়। দিনগুলো এভাবেই বিষন্নতা আর দুশ্চিন্তায় কাটতে থাকে অপ্সরার। সে নিজেও নিজেকে নিয়ে অবাক একজন মানুষকে সামনাসামনি না দেখে শুধুমাত্র তার ব্যাপারে শুনে সে কিভাবে সোনমের প্রেমে পরে গেছে? এলাকার কয়েকটি মেয়ের সাথে যখন তার কথা হতো সবাই বলতো সোনমের সবথেকে প্রিয় জায়গা হলো ছাদের একটা পাশ, আর এখানেই অধিকাংশ সময় সে বসে থাকে। মাঝে মাঝেই গান করে গুনগুন সুরে। ইদানিং অপ্সরা ঠিক সেই জায়গাটার দখল নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে, মাঝে মাঝেই বসে সোনমকে অনুভব করার চেষ্টা করে।
সোনমের আজ শেষ পরীক্ষা, বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। কখন পরীক্ষাটা শেষ হবে? দুপুর দেড়টায় একটা ট্রেন রয়েছে আর এটা যেভাবেই হোক ধরতেই হবে। পরীক্ষা ঠিক একটায় শেষ হবে, আর যেতে বিশ মিনিট লাগে। যেহেতু ব্যাগ গোছানো রয়েছে তাই সে রিস্ক নিতেই পারে ট্রেনটা ধরার। সাড়ে বারোটার দিকে মোটামুটি যা কমন ছিল সব লিখা শেষ, দুটো প্রশ্ন একদম বাইরে থেকে এসেছে, মাথামুণ্ডু কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে ট্রেন ধরতে হবে, আর বিশ মিনিট সময় নিয়ে নিজের মতো করে প্রশ্ন দুটো লিখে দিয়েছে। একটার দশ মিনিট আগে কোনমতে স্যারকে রিকোয়েস্ট করে খাতাটা জমা দিয়ে ছুট দৌড় হোস্টেলের দিকে।
দৌড়ে স্টেশনে পৌঁছে গেলেও সিট পাওয়া গেলো না, কি আর করা বাড়ি যাওয়ার কথা, দাঁড়িয়ে গেলেও গায়ে লাগবে না। প্রায় তিন ঘন্টা জার্নি শেষে অবশেষে বাসায় ফিরে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়েই, বেশ পরিপাটি হয়ে মাঠের দিকে দে ছুট। না আজ খেলার তেমন ইচ্ছে নেই, শুধুমাত্র এলাকার বন্ধুদের জানান দেয়া আমি এসে গেছি। তবে আজ সবকিছু প্রায় ম্যাচিং করে পরা হয়েছে। কালো প্যান্ট, কালো টিশার্ট, হাতে কালো রাবারের চওড়া ব্রেসলেট, কালো জুতো মানে পুরোপুরি ম্যান ইন ব্ল্যাক যাকে বলে।
মাঠের দিকে যেতেই বন্ধুরা সব ঘিরে ধরে প্রিয় বন্ধুর দেখা পেয়ে। দোস্ত কি খবর তোর? সবাইকে কিছুটা সময় নিজের পলিটেকনিক কলেজের কিছু অভিজ্ঞতা বলতে থাকে। যাইহোক এরপর তারা তাকে খেলার জন্য বলে, যদিও তেমন ইচ্ছে ছিল না, তবুও নেমে বেশ কিছু হার্ড হিটিং ব্যাটিং করে সোনম। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে বাসার কাছে আসতেই নিচ তলা থেকে ছাদে ঠিক তার বসার জায়গায় কারো উপস্থিতি টের পায় সে। অবাক ব্যাপার মেয়েটা ছাদের উপর থেকে তার দিকেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে।
বন্ধুদের জিঙ্গেস করে সোনম এই আপদ কোথা থেকে হাজির হয়েছে? আবার তার ছাদ দখলের চেষ্টা করছে। বন্ধুরা বেশ মজার ছলে বলে দোস্ত বেড়াতে এসেছে, উড়ো পাখি, বেশি দেখো না প্রেমে পরে যাবে 😄। সোনম হেসে জবাব দেয় প্রেমের ভুত অন্তত আমার মাথায় শোয়ার হবে না, জেনে রাখো তোমরা। কিন্তু সে আমার জায়গা দখলের চেষ্টা করছে এটাই সমস্যা।
পরদিন সকালে সোনম নাস্তা করেই ছাদে উঠেছে, হুট করেই অপ্সরার দেখা। দু'জনের খানিকটা চোখাচোখি হয়ে গেল, সোনম ধীরে ধীরে নিজের বসার জায়গার দিকে এগিয়ে যায় অনেকটা বিরক্তির ভাব নিয়ে। অপ্সরা অনেকটা লজ্জা পাওয়ার ভান করে সেখান থেকে দ্রুত সরে যায়। সোনম এই প্রথমবারের মতো মেয়েটাকে এক ঝলক দেখলো, চোখগুলো এমন টানা টানা মনে হয় ছোঁ মেরে হৃদয় হরণ করে নিয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতে নিজের জায়গায় বসে পরে, আর মেয়েটা দূর থেকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমি ইন্জিনিয়ার ইমরান হাসান। মেশিন নিয়ে পেশা আর ব্লগিং হলো নেশা। কাজ করি টেকনিক্যাল সাপোর্ট ইন্জিনিয়ার হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবসর সময়ে ব্লগিং করি নিজের মনের খোরাক আর একটু পরিবারকে ভালো রাখার জন্য। আমি আবেগী, বড্ড জেদি, নিজেই নিজের রাজ্যের রাজা। কেউ কোথাও থেমে গেলে সেখান থেকে শুরু করতে ভালোবাসি। আমার শখ ছবি তোলা, বাগান করা আর নতুন জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। মানুষকে আমি ভালোবাসি তাই মানুষ আমায় ভালোবাসে।
https://x.com/emranhasan1989/status/1879964764425842726?t=27YKz_3as_9_Elj1FlAyBw&s=19
চোখে চোখে কথা বলো মুখে কিছু বলো না হা হা। প্রথম এইরকম চোখে চোখ পড়ার অনূভুতি টাই একেবারে আলাদা। যাইহোক পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় থাকলাম ভাই। সত্যি কী সোনম এবং অস্পরার মধ্যে কিছু হবে নাকী। বেশ কৌতূহল লাগছে।