এ কেমন মানুষ হলাম, মানুষের রুপ ধরে শুধু কি পশুত্বকে বরন করলাম?
🌿আমি মোঃ আশিকুর রহমান। আমি বাংলাদেশ 🇧🇩 থেকে বলছি। আমার স্টিমিট আইডির নাম @ayaan001।
কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছি। তবে ভালো থাকার ভেতরেও একটু খারাপ লাগা কাজ করছে। অল্প কয়েক দিনের পৃথিবীতে কত কিছুই যে দেখার বাকি আছে সেই কথাই মাঝে মাঝে চিন্তাতে আসে। এই মূহুর্তে আমি যখন লিখছি রাত বাজে ২ টা বেজে ৩০ মিনিট। ১২ টা ১০ মিনিটে ফায়ার এলামের শব্দ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল। যদিও ঘুম তেমন একটা চোখে জমেনি। ফায়ার এলামের শব্দের কাঁচা ঘুম ভেঙে কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে সিঁড়ি থেকে নেমে বের হলাম দূর্ঘটনার যাওয়ার উদ্দেশ্য। আগুন লেগেছে আমাদের অফিস থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে। আমারা জানি এত দূর পথ পাড়ি দিয়ে আগুন অসম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের যেটা দ্বায়িত্ব সেটা পালন করতেই হবে। রাতের অন্ধকার ঘন কুয়াশাতে তেমন একটা পথ দেখা যাচ্ছে না। ড্রাইভার বার বার হাত দিয়ে তার সামনে থাকা গাড়ির কাঁচ পরিষ্কার করছে। বেশ কিছু সময় পার হওয়ার পর আমারা ঘটনাস্থলে পৌঁছালাম।
কিন্তু সেখানে পৌঁছে দেখি আরেক বিপত্তি। রাস্তার উপর একটি বরই গাছ, তার পাশেই বিল্ডিংয়ের কাজ চলছে। রাস্তার উপর বালু আর ইটের টুকরো (খোয়া)। আমাদের গাড়ি যাওয়া কোন উপায় নাই। আমাদের দুই জন ফায়ার ফাইটার ও অফিসার হাটতে হাটতে ঘটনাস্থলে যাওয়া শুরু করলো। পথে মধ্যে আমরা জানতে পেলাম আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। তারপরও আমাদের সেখানে গিয়ে দেখতে হবে যার জন্য সেখানে যাওয়া। সেখানে গিয়ে দেখলাম পাশাপাশি দুইটি বাড়ি পুড়ে গেছে। তাবে হঠাৎ করে দেখতে পেলাম মেঝের উপরে পড়ে রয়েছে মানুষ সাদৃশ্য কিছু একটা। অন্ধকার সাথে ধোঁয়ার কারণে তেমন একটা দেখা যাচ্ছিল না। পড়ে লাইট নিয়ে দেখলাম একজন মানুষ পুড়ে মারা গেছে। আরা শরীর ঝলসে গেছে চামড়া বলতে কিছুই ছিলো না।
এমন একটি লাশ দেখে আমরা যতটা না অবাক হয়েছি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছি সেই মৃত ব্যক্তির ছেলের কর্ম কান্ড দেখে। আর প্রতিবেশীদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আসলে আমারা প্রকৃত মানুষ এখনো হয়ে উঠতে পারেনি। আমাদের ভেতর থেকে মায়া, মহব্বত, স্নেহ, ভালবাসা সব কিছু হারিয়ে যাচ্ছে। আর এর পেছনে সব থেকে বড় কারন হচ্ছে সার্থ। দুনিয়ায় জীবনকে অতিরিক্ত মাত্রাই প্রাধান্য দেওয়া, দুনিয়ায় নিজেকে জাহিল করাকে আমারা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আর এর জন্য আমারা মানুষ আমাদের সর্বস্তরের বিবেকে বিকৃতি করে ফেলেছি।
ঘটনাস্থলে আমারা যখন পৌছালাম তখন আমাকদেকে দেখার পর ওই (মৃত ব্যক্তির সন্তান) আমাদেকে একটি বারের জন্য বলেনি আপনার এসেছেন আমার বাবাকে দ্রুত ওই আগুন থেকে বের করে নিয়ে আসেন। বরং আএ আমাদেরকে ডেকে নিয়ে দেখাচ্ছে যে এই অগ্নিসংযোগের কারন কি? কিন্তু পাশেই তার বাবা আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে সে কথা একটি বারের জন্য উচ্চারণ করেনি।
আমারা চারিদিকে ভালো করে দেখে শুনে যেটা জানতে পারলাম আগুন লাগার মূল কারণ ছিল বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট। তবে এর ভেতর অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে তা সেই পরিবারের বাকি সদস্যদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে। যিনি মারা গেছেন তিনি ছিলেন পুলিশ সদস্য। ১৫ বছর আগে তিনি নায়েব থেকে অবসরে গেছেন। তার স্ত্রী মারা গেছে অনেক দিন আগেই। চাকরি থেকে আসার ৫-৬ বছরের মাথায় তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন পরবর্তীতে তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান। এই দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তিনি পড়ে আছেন একটি ছোট ঘরে। অল্প সময়ের যত টুকু জানতে পারলাম ছেলের বউ কম বেশি দেখা শোনা করতো। মানছি এটা একটি দূর্ঘটনা কিন্তু ছেলে আর ছেলে বউয়ের মধ্যে কোন তাপ ঝাপ নাই অর্থাৎ তার বাবা মারা গেছে তাতে তার ভেতর কোন কষ্ট নেয়। আর তার বউয়ের কথা বাদ দিলাম সে না হয় পরের মেয়ে। সেখানে পুলিশ এসেও তদন্ত করছিলো। তাকে বার বার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল আপনি কাউকে সন্দেহ করেন কি কিনা বা এটা দুর্ঘটনা নাকি ষড়যন্ত্র। সে বলে এটা দুর্ঘটনায় হবে। প্রায় ২ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছিলো আমাদের সেখানে যাওয়া। মৃত ব্যক্তির ছেলে ছেলের বউ কাউকে আমি কান্না করতে দেখি নাই।
তবে এতটুকু ঠিক ছিলো তবে এর পর আমি যেটা দেখতে পারলাম সেটা হয়তো আমার সামনে না ঘটলেও হতো। দুই ঘরের মাঝখানে সরু পথ সেই পথের মাথায় আমারা দুই জন দাঁড়িয়ে আছি, এমন সময় লক্ষ্য করলাম ওই মৃত ব্যক্তির ছেলে সিগারেট ধরিয়ে টানছে। আমারা দুই জন মানুষ তার দিকে আশ্চর্য হয়ে তার কর্মকাণ্ড গুলা দেখতে লাগলাম। এটা কি ছেলেরে ভাই........ এটা দেখে আমি নিশ্চিত হলাম যে এটা দুর্ঘটনা নয় এটা হয়তো তারা নিজেরাই ঘটিয়েছে। ওহ অরেকটা কথা বলতে ভুলে গেলাম সেটা হলো ছেলে শুধু একটা কথায় তার বাবাকে নিয়ে বললো সেটা হলো... নিজে তো গেছে তো গেছে সাথে করে সব কিছু শেষ করে দিয়ে গেছে। হায় রে আদরের মানিক চাঁদ..........
বাবা মা এই দুই জন ব্যাক্তি পৃথিবীর বুকে সবথেকে দামী আর আপন। এর থেকে আপন আর কেউ দুনিয়াতে নেই। কত কষ্ট করে মা বাবা আমাদেকে মানুষ করেছে। নিজে না খেয়ে না পড়ে সন্তানের সুখের আশায় নিজের জীবনকে বিসর্জন দিয়ে নিজের রক্তকে পানি করে সন্তানের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য যারা সারা জীবন সংগ্রাম করেছে আজ তারা বৃদ্ধ বয়সে আমাদের কাছে বড় অসহায়। তাদের মূল্য আমারা কখনো দিয়ে পারি না। আসলে দেওয়ার যোগ্যটা কারো নেই।
তার এই অবস্থা দেখে আমি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করলাম আসলে কি আমরা সত্যিকারের মানুষ হতে পেরেছি নাকি শুধু আমরা মানুষ হিসেবে দুনিয়াতে এসেছে কিন্তু আমাদের স্বভাব চরিত্র পশুর মতো নিকৃষ্ট হয়েই আছে। মানছি তার বাবা দীর্ঘ ১০ বছর বিছানায় পড়েছিল তাকে নিয়ে নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর সময় সেই চিন্তা ভাবনা তো মাথায় আসার কথা নয়। আমারা কেমন মানুষ আমাদের কেমন বিবেক? দিন যত যাচ্ছে কেয়ামত তত সামনে চলে আসছে হয়তো এটাই তার জলজ্যান্ত প্রমান। মানুষের উপর থেকে মানুষের ভালোবাসা উঠে যাবে মানুষের উপর শুধু ঘৃণা জমা হতে থাকবে।
পৃথিবী ধ্বংস হবে এটাই সত্য দিন যত যাচ্ছে তার প্রমাণ আমরা নিজের চোখে দেখতে পারছি। অবাক করা সব ঘটনা ঘটে চলেছে আমাদের পৃথিবীতে। সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে চিরজীবন কেউ এই দুনিয়ায় স্থায়ী নয়। যিনি মারা গেছেন কয়েক ঘন্টা আগে হয়তো তার কাছে মানুষজন এসেছিলো তার সাথে কথা বার্তা বলেছিলো। কিন্তু কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মানুষ তাকে দেখতেও ভয় পাচ্ছিলো ছুয়ে দেখা তো দূরের কথা। কি মূল্য আছে আমাদের জীবনের? কোন মূল্য নেয় সব থেকে মূল্যহীন হলো মানুষ। যে মারা গেলে তাকে ছুয়ে দেখতে গেলেও ভয় লাগে।
যাই হোক শেষে একটা কথায় বলতে হয় যেমনটা আপনি করে যাবেন ঠিক তেমনটা আপনিও কারো না কারো কাছ থেকে ফেরত পারেন। কতটা কষ্ট সহ্য করে বৃদ্ধ মানুষটির আত্মা বের হয়েছে তা হয়তো আমরা কেউ কল্পনা করতে পারবোনা। আমাদের ভাবনাতেই এই আসবে না। ওই বাবা মৃত্যুর সময় যদি মন থেকে যদি কিছু বের করেই ফেলে তাহলে সেটা একদিন কাজে লাগবেই।
সমাপ্ত
পোস্টের বিষয় | অনুভূতি মুলক পোস্ট। |
---|---|
পোস্টকারী | মোঃ আশিকুর রহমান |
ডিভাইস | গ্যালাক্সি এ ১৫ |
লোকেশন | পাবনা |
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এটা আসলেই দুর্ঘটনা না,বরং এটা তারা নিজেরাই ঘটিয়েছে। আর সেজন্যই বাবার এমন মৃত্যুতে ছেলের কোনো আফসোস নেই। দিন যতই অতিবাহিত হচ্ছে, আমরা ততই স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি। বাবা প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছে বলে, তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিবে,এটা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। যাইহোক পোস্টটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
তার কোন শাস্তি হবে না ভাই। কারন পুলিশ এই বিষয়য়ে কোন তদন্ত করবে না। সব কিছু সাবেক হয়ে গেছে।
ব্যাপারটা জেনে ভীষণ খারাপ লাগলো ভাই। এমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাও ভালো ছিলো। যে সন্তানকে আদর যত্নে বড় করলো,আর সেই সন্তান সেই লোকের মৃত্যুর কারণ হলো।
পুরো ঘটনাটা পড়ে সত্যিই নিজেকে ধরে রাখতে পারছি না। কতটা হৃদয়বিদারক ঘটনা, ইয়া আল্লাহ। সন্তানের সামনে পিতা ঝলসে গেছে তার নূন্যতম খারাপ লাগা কাজ করে না, বরং সম্পত্তির চিন্তায় দিশেহারা। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা এই সন্তানের কৃত কর্মের উপযুক্ত শাস্তি দেবেন। ঘটনা সত্যিই কষ্টকর মেনে নেয়া।
জ্বি ভাই আমারা সবাই তার চাল চলন দেখে হতবাক। ধন্যবাদ ভাই আপনার মূল্যবান অভিমত ব্যক্ত করার জন্য ভালো থাকবেন।