ঘুড়ির ছায়ায় স্বপ্নসারথী

হ্যালো প্রিয় কমিউনিটির বন্ধুগণ,

সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা বরাবরের মতো ভালোই আছেন আর পরম করুণাময়ের কৃপায় সুস্থ সাবলীল একটি প্রাণময় জীবনযাপন করছেন৷ সবার সুস্থতা ও শান্তির বার্তা জ্ঞাপন করে আজকের ব্লগ শুরু করছি।
ধন্যবাদ।

মানুষের জীবনে কিছু বিষয় সবসময়ই নিজের মতো হয় না, ঠিক যেমনটি চাওয়া হয়। কখনো দেখা যায়, নানাবিধ সমস্যাগুলো কিংবা জটিলতা এসে গ্রাস করে নিয়েছে, কখনো সাংসারিক কিংবা ব্যাক্তিগত টানাপোড়েন - আবার উটকো ঝামেলা যেটা একদম অপ্রত্যাশিত কিছু বিষয়কে সামনে নিয়ে আসে।

Src
স্বপ্ন সবারই থাকে, কেউ হয়তো খুব বাস্তবসিদ্ধ স্বপ্ন দেখে, কারো স্বপ্ন থাকে অনেক উঁচুতে ওড়া ঘুড়ির মতো যা এক আকাশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘোরাফেরা করে। সুখে দুঃখে মানুষের জীবন একের পর এক ঘটনার অবতারণা করে তো বেশ চলতেই থাকে, তবু কখনো কি আমরা কিছু মৌলিক বিষয় নিয়ে ভেবে দেখার সময় পেয়েছি -জীবনের নানাবিধ আয়োজনের মাঝে ?

আমি অবশ্য সে বিষয়টাতে গুরুত্ব দেওয়ার ব্যাপারে বেশ আগে থেকেই তৎপর ও উৎসাহী। স্বভাবসুলভ ভাবে প্রকৃতি, জীবন আর যান্ত্রিকতার মাঝে নীরবতা খুঁজে চলি, আপনমনে গেয়ে চলি গান, যেটা কাব্যিকতার আড়ালে ঢেকে গুরুগম্ভীর একঘেয়ে জীবনে একরাশ সাদা মেঘের হালকা পরশের মতো ছায়া দিয়ে যায় অবিরল। খুঁজে দেখেছি গমগমে ভরা মজলিসের আলাপচারিতায়, আড্ডার ফাঁকে অথবা নীরবতায় পর্যবসিত হয়ে চিন্তাভাবনা যখন ভাঁজ হয়ে যেতে থাকে।

Src

আজ শুধু স্বপ্ন ও ইচ্ছার মধ্যকার যে সূক্ষ্ম একটা মিল রয়েছে আর আমাদের জীবনপ্রবাহে তার তূল্যমূল্য কতটুকু তা ও খোলাসা করার দাবি রাখে। কেন জানি বড় বড় স্বপ্ন দেখতে দেখতে ভাবছিলাম কয়েকদিন ধরে হয়তো পূর্ণতা মিলবে না যা আশা করে থাকি, আশা ফুরোয় না, সাথে স্বপ্নগুলোও রাশি রাশি কাশফুলের মতো করে।

এইতো সেদিন ছুটির দিন গড়িয়ে চললো। অফিস আদালত, স্কুল কলেজ আর ব্যবসায়ী কার্যক্রম কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে রইলো। দুপুরের আহার শেষ করে নিজেকে কিছুটা ক্ষনস্থায়ী অবসরের মধ্যে নিবদ্ধ করে হালকা অনুভব করলাম। ভ্রমনে যদিও আমার না শব্দটা কেউ বেশি শোনে নি বন্ধুমহলে, তবুও বাড়ির কাছে যে বিল আছে তার কিনারে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না।

বর্ষার মরসুম শেষ হতে চলেছে মাত্র তখন আর শরতের দেরী করে আবির্ভাব বেশ ভালো লাগছিল। মানুষের ভীড় কমতে শুরু করলো কিছু পথ যাওয়ার পর আর শরতের সৌন্দর্য কাশফুলের শুভ্রতা যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম ধীরে ধীরে।

মূল সড়ক পার হয়ে কাঁচা রাস্তার ধারের দিকে চলে গেলাম। বৃক্ষবিটপী কিছু কাত হয়ে রয়েছে, বর্ষার শেষের ঝড়ের যে একটি তীব্র প্রবাহ ছিল তার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে চলেছে। আমি ঢাল বেয়ে হেঁটে চললাম, আর গাছের ডালগুলো যে জায়গায় সমান্তরাল হয়ে বসবার একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছে তাতে গিয়ে বসতেই হালকা বাতাস বইতে শুরু করলো।

কিছুদূরে দেখতে পেলাম, একটি ছেলে নাটাই সুতো আর ঘুড়ি হাতে জোরে বাতাসের অপেক্ষায় রয়েছে। দমকা হাওয়া বইতে শুরু করলেই ক্রমশ ছেয়ে যাওয়া কাশফুল, গুল্ম লতার ওপর দিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে দিল। সুতো ছাড়ছে আর ঘুড়ি ধীরে ধীরে নিত্যনতুন উচ্চতায় উড়ে চলেছে। ছেলেটির খুশি আর ধরে না।

Src

তার নিজের বয়সে স্বপ্ন হলো আরেকটি বড় ঘুড়ি বানানো, হয়তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া ; ছোট মনে ছোট স্বপ্ন। বাস্তবতাবোধ যেখানে কম সেখানে স্বপ্নগুলো সরলপথে পাখা মেলে। ছেলেটির ক্ষেত্রেও তাই সত্য, আমি বিষয়টি নিয়ে ভেবে চললাম।

মানুষের জীবনে ইচ্ছার শেষ হয় না, আশা যতদিন টিকে থাকে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলে ইচ্ছেগুলো। স্বপ্ন সেই ইচ্ছার সারিসারি রাশির এক সম্মিলিত প্রয়াস যা একটি বড় লক্ষ্য হিসেবে জীবনে ধরা দেয়। কখনো আমরা তা বুঝতে পারি, কখনো স্বপ্ন গড়ে ওঠে কিন্তু পূর্ণতা পেতে পেতে তা আর আগের মতো থাকে না।

এ শেষ অনুভবে পৌঁছে গেলাম আর আকাশে চড়াও হলো ঘনমেঘের দল, বৃষ্টি নামবে ঝপঝপ। আম, জাম, তাল-তমালের সারি সারি গাছের ভীড়ে নিজেকে মুক্ত অনুভব করলাম। পথ অনেকটা বাকি, ঘরে ফিরতে হবে ঝড় বা শিলাবৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে। মাঝপথে একহাত নিলে ভারী মুশকিল, এগিয়ে যাওয়া বৈ উপায় নেই।

১০% সাই-ফক্স ও ৫% এবিবি-স্কুল বেনিফিশিয়ারি