নাম সংকীর্তন
নমস্কার বন্ধুরা, আপনারা সবাই আশা করি ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে দিনগুলি কেটে যাচ্ছে ।বন্ধুরা আজ আমি আপনাদের জন্য একটি পোস্ট লিখতে চলেছি। যেটি আমি খুব ছোট্টবেলা থেকেই বা শৈশব কাল থেকেই দেখে আসছি আজ পর্যন্ত সেটি ক্রমবর্ধমান ভাবেই চলে আসছে। সেটি হচ্ছে আমাদের গ্রামের বাড়ি আমাদের পাড়ার বারোয়ারীর রাধা কৃষ্ণ মন্দিরের নাম সংকীর্তন। অর্থাৎ শ্রী শ্রী তারকব্রহ্ম নাম যজ্ঞের সম্পর্কে। আশা করি আপনাদের ভালই লাগবে।
ছোট্টবেলা থেকেই দেখে আসছি এবং এখনো বছরের পর বছর প্রতিবছরের ন্যায় এই বছরেও বাংলার জ্যৈষ্ঠ মাসে আমাদের গ্রাম তরণীপুরের ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারি এবং রাধা কৃষ্ণ মন্দির প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় শ্রী শ্রী তারকব্রহ্ম নাম যজ্ঞের এই নাম যজ্ঞ টি চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। মহা ধুমধাম এর সাথে। আগে ছোটবেলা থেকে দেখতাম দুদিনব্যাপী অর্থাৎ এই নাম যজ্ঞ টি অষ্টপ্রহর অব্দি উদযাপিত হতো। কিন্তু বর্তমানে ১৬ প্রভুর ব্যাপী এই নাম যজ্ঞ টি উদযাপিত হয় ।আসলে আগেকার দিনে হয়তো অর্থনৈতিক অবস্থা পাড়ার মানুষজনের তেমন সাবলীন ছিল না। সেই কারণে আগে অষ্টপ্রহরব্যাপী এই নাম যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হতো।
কিন্তু এখন বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের পাড়ার প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারেরই অর্থনীতি ব্যবস্থা যথেষ্ট সচ্ছল হয়েছে। সেই কারণে এখন বর্তমানে আমাদের এই নাম যজ্ঞ টি ফুল প্রহর ব্যাপী আয়োজিত হয়। মোট ৬৬ টি পরিবার নিয়ে আমাদের পাড়ার যে বারোয়ারী কমিটি এবং আমাদের পাড়ার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে মোট প্রায় আড়াইশো জনের কাছাকাছি। অর্থাৎ বয়স্ক থেকে শুরু করে মধ্যবয়স্ক এবং শিশু মিলিয়ে মোট আড়াইশো জন এর কাছাকাছি বলাই চলে ।খুবই যত সামান্য কিছু সংখ্যক পরিবার নিয়ে আমাদের এই বারোয়ারি কমিটি গঠিত হয়েছে ।কিন্তু তা সত্ত্বেও এবারের বাজেট হয়েছিল প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। আসলে সকলেরই আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট সচ্ছল হয়ে গেছে বর্তমানে। সেই কারণে এখন সকলেই যে যার মত মহাপ্রভুর উদ্দেশ্যে রাধা গোবিন্দের উদ্দেশ্যে দুহাত ভরে দান করেন সেই নাম যজ্ঞে।
যার ফলে এখন এই অনুষ্ঠানটি যথেষ্ট বড় আকারই ধারণ করেছে। পাড়ার প্রত্যেকটি পরিবার পিছু যে যার সামর্থ্য মত একটি চাঁদা ধার্য করা রয়েছে ।অনুষ্ঠানটি কোনমতে উদযাপন করবার জন্য। কিন্তু বর্তমানে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজনের জন্য এবং আরো ভীষণভাবে সাফল্যমন্ডিত করবার জন্য প্রত্যেকেই প্রত্যেকের চাঁদার অতিরিক্ত যে যার ইচ্ছামতো সেখানে দান করেন ।এছাড়াও বহিরাগত দর্শনার্থীরাও সেখানে যে যার মত দান করেন।
এবারে আসি মূল অনুষ্ঠানটিতে। প্রথম দিন হয় অধিবাস। অর্থাৎ তারকব্রহ্ম নাম যজ্ঞের সূচনা। এর পরের দিন ভোর চারটা থেকে শুরু হয় মহাপ্রভু তথা রাধা গোবিন্দের কীর্তন অনুষ্ঠান ১৬ দল দুরাত্রি ধরে চলে কীর্তন এবং রাসলীলার যাত্রাপালা। তারপর শেষ দিন হয় সকালবেলা আটটা থেকে গোষ্ঠ নাম গান অনুষ্ঠান এবং দুপুর বেলা থেকে বিকেল অব্দি চলে ভোজন আরতি অনুষ্ঠান। তারপর শুরু হয় মহাপ্রভু প্রসাদ বিতরণ যারা মহাপ্রভুর উদ্দেশ্যে তাদের বিশেষ কোনো মহৎ চাহিদা মহাপ্রভুর কাছে প্রার্থনা করেন তারা মালসা ভোগ মহাপ্রভুর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে। তারা যে যার মালসা নিয়ে যান বাড়িতে।
আর যারা সেখানে বসে কীর্তন গান শোনেন তাদেরকে মহাপ্রভুর বিশেষ প্রসাদ দেওয়া হয়। এরপর থেকে শুরু হয় মহাপ্রভুর মহোৎসব এর খাওয়া দাওয়া। এই খাওয়া-দাওয়া অনুষ্ঠানটি আবার সন্ধ্যাবেলা থেকে শুরু হয়ে রাত্রি বারোটা থেকে একটা অব্দি চলে ।প্রায় দুই হাজারের উপর লোক মহাপ্রভুর এই অন্ন খাওয়ার জন্য অংশ গ্রহণ করেন। তবে শুধু অন্ন উৎসবটি শেষ দিনে বিতরণ করা হয় না। যেদিন থেকে মহানাম যজ্ঞ অনুষ্ঠানটি শুরু হয় সেই দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় অন্ন মহোৎসবের খাওয়া দাওয়া।
সব মিলিয়ে ভীষণ জাঁকজমক সহকারে আমাদের এই মহাপ্রভুর মহানাম যজ্ঞ টি সম্পন্ন করা হয়। তবে আজকে এত বড় একটি অনুষ্ঠান তো সেই কারণে পুরোটা আমি শেষ করতে পারলাম না আমার এই পোস্টটিতে। আমি আবারও অন্য কোন পোস্টে আপনাদের সাথে বাকি তথ্যগুলি শেয়ার করব। সকলে ভালো থাকবেন। আজ আমি এখানেই শেষ করছি ।সকলের কেমন লাগলো কমেন্টে আমাকে জানাবেন। ধন্যবাদ।