Vanvaas- A Flim review (বনবাস- ছায়া ছবির রিভিউ!)
![]() |
---|
যদি এই জগতের সকল মাতা পিতাকে একটি প্রশ্ন করা হয়, তাদের কাছে সবচাইতে মূল্যবান কি? তাহলে বোধহয়, সমস্বরে একটি উত্তর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পাওয়া যাবে, সেটা হলো, তাদের সন্তান!
জীবনের প্রথমার্ধে মানুষ ছুটে বেড়ায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে, কিন্তু সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ হবার পরে যখন তাদের কোল আলো করে সন্তানের আগমন ঘটে, তখন তাদের দৃষ্টিভঙ্গির অধিকটাই জুড়ে থাকে সেই সন্তান তথা তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করবার প্রয়াস।
আর, অধিক ক্ষেত্রেই মা বাবা নিজেদের শখ শৌখিনতা বিসর্জন দেয়, যাতে সন্তানের ইচ্ছেপুর্তি এবং তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করে রেখে যেতে পারেন।
এটা করতে করতে তারা প্রায়শই ভুলতে বসেন সময়ের চক্রে তারা ধীরে ধীরে শিশুতে পরিণত হচ্ছেন, এবং সেই এক রত্তি সন্তান কবে যেনো অনেক বড় হয়ে গেছে!

এই পর্যন্ত পড়ে অনেকেই মনে করবেন এটা সংসারের নিয়ম, এবং মা বাবার দায়িত্ব! যেটা পালন করা সকল মা বাবার ধর্ম তথা কর্ম।
পুরোটা অস্বীকার করছি না! তবে, এই আত্মত্যাগের মূল্যায়ন আধুনিক সন্তানের অধিক সংখ্যক একটা বয়সের পরে ভুলতে বসে!
যখন তারা নিজেদের আর্থিক সাবলম্বী করে ফেলতে সক্ষম হন, তাদেরকে দেখার নতুন লোক এদের জীবনে এসে উপস্থিত হয়, কিংবা যখন দেখে মা বাবা তাদের মাথার উপরে ছাদ আর আর্থিক ভবিষ্যত সুরক্ষিত করে ফেলেছেন, এমত অবস্থায় মা বাবা হয়ে পড়েন সংসারের বাড়তি বোঝা!

আজকে যে ছায়াছবির রিভিউ নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি, সেটি দেখে সত্যি চোখের জল ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব।
একটা রুঢ় বাস্তব হলো, স্বামীর অনুপস্থিতিতে একজন স্ত্রী যদিও সন্তানের অপমান অনেকখানি হজম করে নিজেকে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়, তবে বিপরীত ক্ষেত্রে বিষয়টি কতখানি কঠিন এটা ছায়াছবিটি থেকে শেখার।

বেশিরভাগ পুরুষ, স্ত্রীর মৃত্যুর পরে, আবার অনেক সময় জীবিত অবস্থায় অন্য নারির প্রতি আসক্ত হন, সংখ্যায় এরাই অধিক!
তবে, সমাজে এখনও ব্যতিক্রমী ব্যাক্তি রয়েছে, আর এই ছায়াছবিটি এই রকম একটি ব্যতিক্রমী স্বামী তথা পিতার গল্প, যার স্ত্রীর মৃত্যুর কারণে স্মৃতি বিভ্রম হয়, যিনি ওষুধের সাহায্যে বর্তমান মনে রাখতে সক্ষম হলেও, ওষুধ ছাড়া তিনি ফিরে যায় অতীতে! যেখানে তার তিন পুত্র সন্তানের একজন এর বয়স এগারো বছর, আরেক জনের সাত আর সর্ব কনিষ্ঠের পাঁচ!
তার স্ত্রী বিমলা এবং তার সুখী সংসার সেটাই কেবলমাত্র তার স্মৃতিতে অমলিন থাকে।
সেই মুহূর্তে কাউকেই সে চিনতে পারে না, আবার ওষুধের সাহায্যে স্মৃতি ফিরে পায়।



গল্পের দিক ঘুরে যায় বাবাকে নিয়ে তিন পুত্র এবং পুত্রবধূ যখন বেনারস ঘুরতে যায়।
এখানে একটু হিন্দু ধর্মের বিধি উল্লেখ না করলেই নয়!
বেনারস অবস্থিত কাশীকে চার ধামের একটি পবিত্র এবং অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে উল্লেখিত আছে।
বহু বছর আগে বৃদ্ধরা এই কাশীতে নিজেদের শেষ জীবন অতিবাহিত করতেন, কারণ এখানে পরলোক গমন করতে পারলে স্বর্গলোক প্রাপ্তির বিষয় প্রচলিত।
এছাড়াও অনেকেই নিজের স্বজনের পিণ্ড দানের ক্ষেত্রেও কাশী তে যান পুজো করেন স্বজনের আত্মার শান্তি কামনা করতে।
মানসিকতা, এটা কোনো আধুনিকতার ধার ধারে না, কারণ এটা সম্পূর্ণ নির্ভরশীল ব্যাক্তি বিশেষের উপরে।
এই ছায়াছবি আমাকে আরো একবার ভাবিত করলো, সত্যি কি পুরোটাই সন্তানের জন্য উজাড় করে দেওয়া উচিত?
নাকি, শেষ অবলম্বন হিসেবে নিজের একটা সংস্থান নিজের আগে থেকেই করে নেওয়া প্রয়োজন?
এই কিছুদিন আগের কথা, আমার বাসস্থানের কয়েক কিলোমিটার এর মধ্যে একটি বৃদ্ধাশ্রম তৈরি করা হয়েছে। সেই বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে একজন একটি ভিডিও করেছেন, সেটি দেখছিলাম, অনেকের মধ্যে একজন বৃদ্ধা মহিলা জানালেন, তিনি শিক্ষকতা করতেন, এবং স্বেচ্ছায় এই বৃদ্ধাশ্রমে এসেছেন।
কারণ জানতে চাইলে, বললেন ছেলে বড় হয়েছে, বিয়ে করেছে এখন ওদের ব্যাক্তিগত জীবন আছে, এদিক ওদিক ঘুরবে বেড়াবে, আমি কারো বোঝা হতে চাই না!
তাই এখানে চলে এসেছি!
ভাবুন একবার! জানিনা সন্তানের থেকে কোনো মা কি শুধু এই কারণে বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসতে পারেন?
যদিও সেটা হয়তো তারা বলতে পারবেন, যারা ভুক্তভুগী।
যাইহোক, ছায়াছবিতে নানা পাটেকরের অভিনয় নিয়ে বলার যোগ্যতা আমার নেই, তিনি বরাবর একজন বলিষ্ঠ অভিনেতা।

তবে, এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় নানা পাটেকর কে আগে দেখিনি, উনি বাস্তবে ভীষণ দৃঢ় স্বভাবের মানুষ।
মিলিটারিতে ছিলেন, এখন সামাজিক কাজের সাথে যুক্ত এবং উপার্জনের অধিক উনি বিলিয়ে দেন সমাজের প্রয়োজনীয় মানুষের মধ্যে অর্থাৎ মানব কল্যাণে।
এর আগেও ওনাকে নিয়ে এবং ওনার সামাজিক কাজের উপরে একটি লেখা লিখেছিলাম।
তবে, যদি দেখার সুযোগ পান, ছায়াছবিটি দেখবেন, এই ধরনের ছবি আগেও হয়েছে আর সেটা প্রমাণ করে, আমরা তথ্য প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত হয়েছি কিন্তু মানসিকতা এখনও আত্মকেন্দ্রিক রয়ে গেছে।
গাদার এক্ প্রেম কথা এবং এই ছায়াছবির সিক্যুয়াল তৈরি করেছেন পরিচালক অনিল শর্মা।
এই বানবাস ছায়াছবি সেই নির্দেশকের তৈরি এবং তার ছেলে এই ছায়াছবিতে অভিনয় করেছে।
অন্যান্য সকলের অভিনয়কে ছাপিয়ে গেছেন নানা পাটেকর।
অভিনয়ের নিরিখে আমি কেবলমাত্র একজন পিতার অনবদ্য অভিনয় এর জন্য নানাকে ১০/১০ দেবো।
বাকি অনেক নতুন অভিনেতার অভিনয় আমার বিশেষ ভালো লাগে নি, পাশাপশি বিষয়বস্তু পরিচিত তাই অনিল শর্মার মত একজন দক্ষ পরিচালক ছবির শেষটা হয়তো একটি ব্যতিক্রমী করতেই পারতেন!
সব মিলিয়ে একটি সামাজিক ছায়াছবি, যেটি সকলকে নিয়ে দেখা যায়, এবং কিছু শিক্ষা যেগুলো হয়তো নিজেদের অজান্তে অপূর্ণ রয়ে গেছে, অথবা যুব সম্প্রদায় ভুলতে বসেছে, তাদেরও একদিন বয়স হবে, সেগুলো এই ছায়াছবির মাধ্যমে তাদের শেখার প্রয়োজনীয়তা আছে, বলা ভালো মনে করিয়ে দেবার প্রয়োজন আছে!
শুরু এবং শেষাংশের ছোটো দুটি ভিডিও সাথে ছায়াছবি দেখতে দেখতে তোলা বনবাস ছায়াছবির কিছু ছবি রইলো লেখার মাঝে।


"বনবাস" ছবিটি দেখা হয়নি ঠিকই, তবে আপনার পোস্টটি পড়ে যেন মনে হলো ছবির বিষয়বস্তু খানিকটা বুঝে ফেললাম। আর উপরের লাইনটি আপনি কেন লিখেছেন সেটাও বুঝতে বাকি রইলো না, আপনার পোস্টের শেষে লেখা এক বৃদ্ধের বৃদ্ধাশ্রমে চলে আসার কথাটি পড়ে।
খুব সত্যি কথা বলতে আমরা আত্মকেন্দ্রিক হয়েছি বটে, তার পাশাপাশি এটাও ভুলতে বসেছি, আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই স্বাভাবিক নিয়মে বার্ধক্য আসবে। তাই আজ যে বৃদ্ধা তার ছেলেকে ছেড়ে বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিয়েছেন, আগামীকাল তার ছেলেও কিন্তু বৃদ্ধ হবে। আর প্রকৃতি নিজের মতো করে সকলের হিসেবে তুলে রাখে। তাই তার সন্তানের কাছ থেকেও তার কি পাওনা হবে, তার উত্তর সময় দেবে।
নানা পটেকারের কিছু কিছু সিনেমা আমিও দেখেছি, তাই তার অভিনয়ের দক্ষতা বিচার করার যোগ্যতা আমারও নেই। কমেডি সিনেমাতেও তার অভিনয় অসামান্য। তবে আজ আপনি লেখার মাধ্যমে তার যে চরিত্রটি উপস্থাপন করেছেন, তাতেও তিনি যে সমান দক্ষতার সাথে অভিনয় করেছেন সেটা আপনার রিভিউ পড়ে বুঝতে অসুবিধে হলো না।
এই সকল সিনেমাগুলো আজকালকার দিনের সন্তানদের অবশ্যই দেখা উচিত। তবে তা শুধু দেখার জন্য দেখা উচিত নয়, সিনেমাতে থাকা কিছু শিক্ষা নিজেদের মধ্যে গ্রহণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই সিনেমা দেখা উচিত। কারণ এই ধরনের সিনেমাগুলো খানিক আমাদের জীবনের গল্পের প্রতিচ্ছবি বলা যেতে পারে। অবশ্যই সুযোগ করে এই সিনেমাটি দেখবো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এতো সুন্দর ভাবে সিনেমাটির রিভিউ আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।