ষড়রিপুকে জয় করতে পারলে, যেকোনো পরিস্থিতিকে জয় লাভ সম্ভব।(Six enemies of our spiritual life)

in Incredible India10 months ago
IMG_20240113_172428.png

আমাদের জীবনের ৬ টি শত্রু এবং কলিকালে মানব জাতির অধঃপতনের কারণ হিসেবে পুরাণে বর্ণিত রয়েছে।
কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য।

এই ষড়রিপুর সাথে আরো একটি শত্রুকে যুক্ত করা হয়েছে আর সেটা হলো আলস্য।

  • কাম/বিকার-
    lust.
  • ক্রোধ-
    anger.
  • লোভ -
    Greed.
  • মদ/অহঙ্কার অথবা দর্প-
    arrogance/ego.
  • মায়া/মোহ:-
    attachment.
  • মাৎসর্য-
    envy/jealousy.

সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর এবং কলি এই চতুর্যুগের মধ্যে আমরা যে কালের মধ্যে দিয়ে আমরা এখন যাচ্ছি সেটা হলো কলিকাল।

আর পূর্বেই এর ভবিষ্যত বাণী করা ছিল, এই যুগে মানুষের মধ্যে ষড়রিপু সবচাইতে বেশি লক্ষণীয় হবে, এবং ফলস্বরূপ পাপের আধিক্য দেখা যাবে সবচাইতে বেশি।

আজকে কথাগুলো লিখতে বসেছি ভারতীয় সময় বিকেল ৪ টে বেজে ৩১ মিনিটে বেশ খানিকক্ষণ আগেই সাপ্তাহিক কিঊরেশন রিপোর্ট কমিউনিটিতে পোস্ট করে, তারপর লেখা শুরু করতে একটু দেরি হয়ে গেল।
গতকাল ভেবেছিলাম লিখবো, কিন্তু দুদিনে আমার শারীরিক দুর্বলতা এতটাই উর্দ্ধিগামী যে, সর্বক্ষণ মাথা ঘুরছে।

তারমধ্যে গত দুদিনে ঘরের বেশকিছু কাজ সমাধা করতে পারিনি শারীরিক অবস্থার কারণে, তাই আজ এই অবস্থায় ঘর মোছা, কাপড় কাঁচা সবটাই কষ্ট করে করতেই হয়েছে।

তারপর রিপোর্ট লিখতে বসেছি স্নান সেরে, পুজো দিয়ে উঠে।



যাইহোক, কথাগুলো আজকে লিখছি কারণ সবার মধ্যেই কম বেশি ষড়রিপুর উপরিউক্ত দোষগুলো দেখা যায়।

যার আছে, তারও মনে হয় তার কিছুই নেই, আরো প্রয়োজন।

সম্পর্কে চিড় ধরেছে সম্পদের লোভে!
পেলে খুশি আর না পেলেই ক্রোধ।
একাই সবটা জুড়ে থাকার ইচ্ছে, ভাগের প্রশ্ন আসলেই ক্রোধ!

মোহ যতটা না সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয়, তার চাইতে অনেক বেশি ষড়রিপুর একটি ব্যবহৃত হয় পকেটের ওজন, সমাজে ব্যাক্তির কতখানি পদমর্যাদা আছে, সেই ব্যাক্তি কোনো কাজে আসবে কিনা? ইহলোক পরিত্যাগ করলে নিজের কোনো সম্পদ লাভ হবে কিনা ইত্যাদি বিচার করে।

যদি কোনো একটির সম্ভবনা থাকে তাহলে সেই ব্যাক্তির প্রতি মোহ না চাইলেও বা মায়া এমনিতেই থাকবে আর যদি সম্ভবনা না থাকে তাহলে সে সবের ধার কেউ মন থেকে ধারে না!

আচ্ছা, লেখার মাঝেই বলে রাখা শ্রেয়, এগুলো আমার সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত অভিমত, কাজেই সহমত পোষণের আশা একেবারেই রাখছি না। তবে, অবশ্যই এই বিষয় আপনাদের অভিমত মন্তব্যের দ্বারা জানতে চাইবো।

যাইহোক, যে কথা বলছিলাম, মোহ/মায়া এর কিছু বাস্তব উদাহরণ আমার চোখে পড়েছে সেগুলো জানালে হয়তো বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে বোঝানো সম্ভব।

ধরুন, এক্ বাড়িতে দুই কন্যা, দেখা গেছে, যে জামাইয়ের অধিক উপার্জন তার বিরাট খাতির, আর যার কম তার সব দোষ কোনো গুন নেই!

অপরপক্ষে, দুই পুত্র এখন যে পুত্র বধূ সংসারে মাস গেলে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে সক্ষম তার সাত খুন মাফ, আর যার উপার্জন নেই দিন রাত সংসারের কাজ করেও মন পায় না।

ব্যতিক্রম আমার চোখে পড়েনি, আপনাদের মধ্যে হয়তো কেউ দেখে থাকতে পারেন, তবে ব্যতিক্রম দিয়ে সমাজের নিয়ম বদলায় না, তাই তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা নেই কারোর কাছেই।

যার অর্থ আছে, তার অহঙ্কার আছে ততোধিক। কথায় কথায় সেই অহঙ্কার বেরিয়ে আসে কাজের পাশাপশি কথায়।

মানুষ হয়ে যায় পিপীলিকা সম, চাইলেই পায়ের তলায় পিষে ফেলতে পারে!

আজও অনেক নামী, দামী, উন্নত শহরে মেয়েরা সুরক্ষিত নয়! কারণ আমরা মোহ, মায়া এবং লোভের সাথে কাম এমনিতেই ঘাড়ে চেপে বসে, আর ঠিক সেই কারণেই অনেক আগেই কবিগুরু চরিত্রহীন লিখে রেখে গিয়েছিলেন।

অন্যের উন্নতিতে খুশির পরিবর্তে হিংসা, ঈর্ষা ইত্যাদি যাকে বলে

মাৎসর্য

এখন বিষয় হলো এগুলো ধর্মের ভাষা এবং কর্মের দ্বারা এগুলোকে আমরা নিজেদের জীবনের চলার পথে জমা করতে করতে যাই।

যে সকল মানুষ এদের জয় করতে পারে তারা স্বর্গে জায়গা পাবে, আর যারা পারবে না তারা নরকে এমনটি কথিত থাকলেও আমার সে বিষয় নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।

তবে, এতটুকু আমি বুঝেছি, এই ষড়রিপুকে খানিক যদি আয়ত্তে আনা যায়, মানসিক শান্তি নিশ্চিত রূপে পাওয়া সম্ভব।

লোভ
নিজেকে উন্নত করতে ব্যবহার করতে পারি, যেমন আরো ভালো কাজ করতে হবে, নিজেকে উন্নত করতে হবে। সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে ইত্যাদি।

কাম কে যদি কামনায় রূপান্তরিত করে নেওয়া যায়, আর সেই কামনা দ্বারা জীবের সেবা করা যায়, তাহলে এই রিপুকে জয় করা সম্ভব।

emoticon-1669804_1280.webp

Pixabay

ক্রোধ
কে ব্যবহার করা যেতে পারে অন্যায়ের প্রতিবাদের ক্ষেত্রে, সেটা ব্যাক্তি জীবনে বা সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনের ক্ষেত্রেই হোক না কেনো।

তবে, ক্রোধের বশবর্তী না হয়ে, তাকে নিজের বশে রাখাও শেখার প্রয়োজন আছে।
আমার মনে হয় সবচাইতে ক্ষতিকারক রিপু হলো লোভ!

এটি জয় করতে ৯৯% মানুষ পারে না, বরঞ্চ এর বশবর্তী আমরা সকলেই।

ব্যতিক্রমী লোভী ব্যাক্তি ও আছেন, যারা লোভের বশবর্তী হয়ে অন্যের ক্ষতিসাধন অন্ততপক্ষে করেন না, তবে ভুল সিদ্ধান্ত অনেক সময় নিয়ে থাকেন জীবনে চলার পথে।



আমি এর আগেও একবার লিখেছিলাম, এখন মানুষের ব্যবহার সামগ্রীর ন্যায় হয়ে গেছে, নিজের সাথে খারাপ হলে সেই কষ্ট ভুলে অন্যের খারাপ দেখে।

যেমন ধরুন, হটাৎ পাওয়ার কাট অথবা লোড শেডিং হলে আগে জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে দেখবে, পাশের বাড়িতে কারেন্ট আছে কিনা, মোমবাতি জ্বালানোর পূর্বে।

যদি, দেখে পাশের বাড়িতেও অন্ধকার তাহলে এক গাল হেসে বলবেন, যাক পুরো পাড়ায় গেছে, চলে আসবে অল্প সময়।

আর কোনো কারণে যদি একটা ফেস (phase) যায়, আর কিছু বাড়ি অন্ধকার, বাকি সব আলোকিত তাহলে পরিস্থিতি দেখার মত হয়।

ইলেকট্রিক অফিসে কোন বাড়ির লোক যাবে তখন মোমবাতি জ্বালানোর আগে সেই নিয়ে আলাপ আলোচনা।

আসলে, আজকে যেটা আমার বলার উদ্দেশ্য ছিল, সেটা হলো আমরা সকলেই এই কলিকালের অংশ, তবে একটু চেষ্টা আর নিজেকে উন্নত করবার প্রয়াস দ্বারা বোধহয় সমাজের অনেকাংশ পরিবর্তন সম্ভব।

নইলে বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, বিদ্যাসাগর কলিযুগে জন্মাতেন না, আর চিরস্বরণীয় হয়েও থাকতেন না।

তারমানে সবটাই সম্ভব শুধু সদিচ্ছাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস করে যেতে হবে। আপনাদের অভিমত জানার অপেক্ষায় রইলাম।

I9Ws6mn5yoT8JYcTf1.gif

6VvuHGsoU2QBt9MXeXNdDuyd4Bmd63j7zJymDTWgdcJjo1R3nByagojBFK9X9VyMfrNoTUUqjGSvWpqdmMgU31CjnNeqLcAbmdrcdhwjg36qCE8hXx2eEL9gcF5xj7.gif

Sort:  

এই জিনিসটা আগে দেখতাম যে সংসারে বেশি টাকা দিতে সক্ষম তার কদর বেশি। কিন্তু কোলকাতায় এখন ৯০% এরও বেশি সব নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি। পুরনো দিনের বাংলা সিনেমা ছাড়া এখন এই জিনিসটা বাস্তবে আমাদের এখানে আর প্রায় দেখা যায় না। মফস্বলের দিকে হয়তো এই ব্যাপারগুলো এখনো অনেক পরিমাণে আছে, তবে কোলকাতায় এর পরিমাণ খুবই কম।

 10 months ago 

বিষয়টা কেবলমাত্র শহর অথবা মফস্বল(জায়গা কেন্দ্রিক) নয় পারিবারিক শিক্ষার উপরে নির্ভরশীল।
নিউক্লিয়ার পরিবারেরই এগুলো বেশী দেখা যায় কারণ ভাগের মা গঙ্গা পায় না। শুনেছেন নিশ্চই কথাটা। তাই মা বাবার খরচ তথা সামাজিক প্রেক্ষাপট যুগের সাথে একই আছে। যতই গায়ে আধুনিকতার তকমা লাগানো থাকুক, মনটা সেকেলে আজও আমি সচক্ষে দেখেছি, এবং জানিয়ে রাখি শহুরে মানুষদের ভিতরে আত্মকেন্দ্রিকতা বরঞ্চ বেশি দেখেছি, অত্যধিক খরচের নামে হাত গুটিয়ে নিতে।

দুঃখজনক হলেও বাস্তব বাঙালিদের মধ্যে বিষয়টি বেশি চোখে পড়ে, অন্য ভাষার মানুষদের চাইতে। সুতরাং বিষয়টি স্থান কেন্দ্রিক নয়, মানসিকতা কেন্দ্রিক। সিরিয়াল এবং সিনেমা বাস্তব ঘটনার নিরিখেই সৃষ্টি, কারণ জীবন কখনো এপিসোড অথবা আড়াই ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায় না।

তাই আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করতে পারলাম না। তবে ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

TEAM 1

Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator04. We support quality posts , good comments anywhere and any tags.
Curated by : @shiftitamanna



 10 months ago 

Thank you for this encouraging support.

Loading...