এক্ মাসের উপরে হয়ে গেছে আমি প্রতি সপ্তাহের মঙ্গল বার আর শনিবার নিরামিষ খাচ্ছি।
কারণ? নাহ্! তেমন বিশেষ কোনো কারণ নেই, একদিন আমার দিদি ফোনে বলেছিল, এই দু'দিন নিরামিষ খেতে, ওর কথা মেনে পালন করছি, সাপ্তাহিক এই দুটো দিন।
এমনিতেও নিজেকেই বাজার করতে হয় সাথে পৌরসভার লোক এখন আর চার তলায় উঠে আবর্জনা নিয়ে যায় না, নিজেকেই ফেলতে বেরোতে হয়, তাই নিরামিষ খাবারের সুবিধা এই গরমে ঘরে সবজির খোসায় সেই দুর্গন্ধ বের হয় না, যেটা আমিষ খাবার ঘরে থাকলে এই গরমে হয়।
শহরে যেখান সেখানে একেবারেই আবর্জনা ফেলা নিষিদ্ধ, তাই একদিকে এই নিরামিষ খাবার আমার প্রতিদিন বাইরে আবর্জনা ফেলার হাত থেকে রক্ষা করছে!
অনেক নিরামিষ খাবার আছে যেগুলো সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর।
আজকে আপনাদের সাথে যে রান্নার পদ্ধতি উপস্থাপন করতে চলেছি, সেটি সম্পর্কে এশিয়ান দেশের মানুষ হয়তো অবগত কিন্তু অনেকেই হয়তো প্রথম নাম শুনছেন।
সাধারণত উপসের দিন সাবুদানা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা হয় থাকে।
শিবরাত্রি যারা পালন করেন, পুজো শেষে এই সাবু দানা মেখে খেয়ে থাকেন।
রান্নার পদ্ধতি ভাগ করে নেবার আগে জানিয়ে রাখি সাবু দানা দু'ধরনের হয়ে থাকে, একটি বড় দানার (যেটি আমি খিচুড়ি তৈরি করতে ব্যবহার করেছি), আরেকটি ছোটো দানার যেটি ভিন্ন ভাবে মেখে খাওয়া হয় শিবরাত্রির দিনে।
এবার আর বেশি সময় কথায় ব্যয় না করে, আমার সাথে চলুন শিখতে সাবু দানার খিচুড়ি রান্নার পদ্ধতি।
সবুদানা (Sago/Tapioca Pearls) | 100 গ্রাম(soaked/ভেজানো) |
মুগ ডাল (yellow lentils) | 50গ্রাম (semi-boiled/৭৫% সেদ্ধ করা) |
সরষের তেল (mustard oil) | 2 টেবিল চামচ (tbsp) |
ঘী (clarified butter) | 1টেবিল চামচ (tbsp) |
গাজর (carrot) | 1টি চৌকো আকারে কাটা(diced) |
মটরশুটি (green peas) | 1/4 কাপ |
ফ্রেন্চ বিনস্ (french beans) | 7-8 মাঝারি আকারের কুচানো(chopped) |
ফুলকপি (cauliflower) | 1টি ছোটো আকারের(one small size chopped and blanched) |
আলু (potatoes) | 2 টি চৌকো আকারে কাটা(diced like carrot) |
টমেটো (tomato) | 1টি ছোটো, টুকরো করে কাটা(Roughly chopped) |
তেজপাতা(bay leaves) | 2 টি |
গোটা শুকনো লঙ্কা (Dry red chili) | 2 টি |
গোটা জিরে (whole cumin seeds) | 1/4 চা চামচ(tsp) |
এলাচ (green cardamom) | 2 টি |
দারচিনি (cinnamon) | 1 ইঞ্চি স্টিক |
লবঙ্গ (clove) | 3-4 টি |
আদা (ginger) | 1 ইঞ্চির মতো(গ্রেটার দিয়ে কুচনো) |
নুন (salt) | স্বাদ অনুসারে(to taste) |
হলুদ (turmeric powder) | 1-1/2 চা চামচ (tsp) |
চিনি (Sugar) | 1/2 চা চামচ (tsp) |
রান্নার পদ্ধতি (Preperation Method):- |
- প্রথমে:- একটি শুকনো কড়াইতে মুগডাল ভেজে নিয়েছি।
(মুগডাল আমি উন্নত মনের ব্যবহার করেছি তাই প্রেসার কুকারের প্রয়োজন পড়েনি।)
এরপর সেই ভাজা মুগডাল বেশ কয়েকবার ধুয়ে নিয়েছি যতক্ষণ পরিষ্কার জল না বেরোচ্ছে ধোবার পরে।
- দ্বিতীয় ধাপে:-আমি একই কড়াইতে জল এবং ভাজা মুগডাল সাথে নুন দিয়ে সেদ্ধ করতে বসিয়ে দিয়েছিলাম।(এক্ষেত্রে ডাল ৭৫ শতাংশ সেদ্ধ হয়ে গেলে নামিয়ে নিতে হবে।)
যদি ডালে বাড়তি জল থাকে সেটা ফেলবেন না।
এই জল প্রয়োজন, তাই ছেঁকে অন্য একটি পাত্রে রেখে দেবেন।
- তৃতীয় পর্যায়ে:- কড়াইতে অর্ধেক সর্ষের তেল দিতে হবে।
তেল থেকে ধোঁয়া বের হলে বুঝতে হবে সেটি ব্যবহারের জন্য তৈরি।
এরপর, আগে থেকে ভাপিয়ে রাখা ফুলকপি আর আলুতে নুন, হলুদ মাখানো সবজি একে একে সোনালী বর্ণে ভেজে নিতে হবে।
ভাজা হয়ে গেলে একটি পাত্রে তুলে রেখে দিতে হবে।
- চতুর্থ ধাপে:- কড়াইতে অবশিষ্ট সর্ষের তেলের সাথে বাকি সর্ষের তেল দিয়ে দিতে হবে।
এরপর তেল গরম হয়ে গেলে, তারমধ্যে তেজপাতা, গোটা জিরে, শুকনো লঙ্কা, গোটা গরম মশলা দিয়ে দিতে হবে।
একটু নাড়াচাড়া করতেই যখন মশলার গন্ধ বেরোতে শুরু করবে, সেই সময় দিয়ে দিতে হবে গ্রেট করা আদা। দুই তিন সেকেন্ড নাড়াচাড়া করে, গাজর, বিনস, মটরশুঁটি আর সাথে সামান্য নুন সহযোগে আঁচ কমিয়ে কড়াইতে ঢাকনা চাপা দিয়ে মিনিট পাঁচেক রেখে দিতে হবে।
- পঞ্চম ধাপে:- মিনিট পাঁচেক বাদে ঢাকনা খুলে, কেটে রাখা টমেটো দিয়ে দিতে হবে। এরপর যতক্ষণ টমেটো নরম হয়ে খানিক মিশে না যাচ্ছে একটি খুন্তির সাহায্যে মিশিয়ে যেতে হবে।
- ষষ্ঠ পর্যায়:- আগে থেকে ভেজে রাখা ফুলকপি, আলু মিশিয়ে দিতে হবে, আর সঙ্গে ভেজানো সাবু দানা।
সঙ্গে সামান্য হলুদ, আর নুন। এবার সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে যেতে হবে মিনিট দুয়েক ধরে।
- সপ্তম পর্যায়:- মুগডাল যোগ করতে হবে, এবং আবারো সমস্ত উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। যারা ঝাল খেতে ভালোবাসেন তারা চেরা কাঁচালঙ্কা এই পর্যায়ে যোগ করতে পারেন।
এরপর ছেঁকে রাখা ডালের জল দিয়ে দিতে হবে।
সবকিছু মিশিয়ে নুন এর পরিমাণ দেখে, চিনি যোগ করতে হবে।
একটু নেড়েচেড়ে, আঁচ কমিয়ে ঢাকনা চাপা দিয়ে দিতে হবে।
মিনিট পাঁচেক পর, ঢাকনা তুলে, ঘী মিশিয়ে পুনরায় সব উপকরণ আরেকবার মিশিয়ে নিয়ে, ঢাকনা চাপা দিয়ে মিনিট দুয়েক রান্নার পর আঁচ বন্ধ করে দিতে হবে।
- অষ্টম অধ্যায় :- সাবু দানা জল টেনে নেয়, কাজেই খানিকক্ষণ চাপা দিয়ে রাখার পর যখন ঢাকনা খুলবেন দেখবেন, যেটুকু বাড়তি জল ছিল সেটা শুকিয়ে গেছে।
এবার পরিবেশনের পালা। আমি একটি কাঁচালঙ্কা আর কোরানো নারকেল দিয়ে পরিবেশন এর প্লেট সাজিয়েছি, আপনারা আপনাদের মত করে পরিবেশন করতে পারেন।
একবার তৈরি করে দেখবেন, সত্যি অসাধারণ লাগে খেতে।
এই সাবু দানা কিন্তু ঠান্দাই তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়, যদি কখনও তৈরি করি আপনাদের সাথে তৈরির পদ্ধতি নিশ্চই ভাগ করে নেবো।
আজকের খিচুড়ি যেমন দেখতে হয়েছিল, তেমনি স্বাদেও উপাদেয় হয়েছিল, নিজে রান্না করে নিজের গুণগান গাইছি ভাববেন না!
একবার বাড়িতে তৈরি করে নিজেরাই খেয়ে দেখতে পারেন, স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাবার রোজকার একঘেয়েমি কাটাতে সাহায্য করবে।
ভারতের মহারাষ্ট্র হলো এই খাবার তৈরির আঁতুড়ঘর!
Cured by @walictd
আপনার এই সাবু দানার খিচুড়ি রেসিপিটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়েছে! সাধারণত সাবু দানা শুধু শিবরাত্রি বা উপবাসের দিনে ব্যবহৃত হলেও, আপনি যে ভাবে এর ব্যবহারকে সাধারণ খাবারে নিয়ে এসেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আপনার উপকরণগুলির বর্ণনা এবং রান্নার পদ্ধতি খুব সহজ এবং স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেছেন আমাদের সাথে, যা অনুসরণ করে খুব সহজেই বানানো সম্ভব। সবজি এবং মশলা সংযোজনের মাধ্যমে আপনি যে ভারসাম্য সৃষ্টি করেছেন, তা খিচুড়িকে আরো সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর করে তোলে। আমি বিশ্বাস করি এই রেসিপিটি আপনার নিয়ম অনুযায়ী চেষ্টা করলে সবাই পারবে। আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি দারুণ রেসিপি শেয়ার করার জন্য। আশা করছি ভবিষ্যতে আরও অনেক নতুন রেসিপি শেয়ার করবেন! ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আপনার জন্য সব সময় শুভকামনা রইল দিদি।
সাবু দানার নিরামিষ খিচুড়ি তৈরি করার পদ্ধতিটা আসলেই অসাধারণ। আমার মা দেখতাম আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমি যখন খাবার খেতাম না। তখন সাবু দানা দিয়ে আমাকে পায়েস রান্না করে দিত যেটা খেতে আমার কাছে ভালই লাগতো। তবে আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করে নতুন একটা রেসিপি সম্পর্কে জানতে পারলাম।
সেই সাথে বলবো আপনার দিদির কথাটা কিন্তু খারাপ না, দুইদিন নিরামিষ খেলে ভালোই হয়। শহরে রয়েছেন যেহেতু তাই ময়লা ফেলার জন্য আপনাকে প্রতিনিয়ত নিচে নামতে হয়। তবে যেই দুইদিন আপনি নিরামিষ খান সেই দুইদিন আপনাকে নিচে নামতে হয় না। অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার রন্ধন প্রণালী আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।