KGF- Only a film or truth? কে জি এফ ছায়াছবি না বাস্তব?
![]() |
---|
- What's the full form of KGF? What is the place famous for?
- What are the truths hidden behind KGF?
পূর্বে উল্লেখিত অনেক লেখায় একটি কথা বার্তা হিবেসে নিজের লেখায় তুলে ধরেছি একাধিক বার, আর সেটা হলো জীবনের গল্প নিয়ে ছায়াছবি তৈরি হয়, ছায়াছবি জীবন নয় যে আড়াই ঘণ্টায় সেটা শেষ গিয়ে যাবে।
পুষ্পা ছায়াছবিটি যেমন ভারতীয় নামকরা চন্দন কাঠ পাচারকারী দস্যু বিরাপ্পনের জীবন কাহিনী থেকে নিয়ে তৈরি।
তেমনি হয়তো জানলে অবাক হবেন এই KGF ছায়াছবিটি কিন্তু একই রকম একজন মানুষকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে।
কি বিষয়টি আপনাদের পূর্বে জানা ছিল কি?
আজকের এই লেখায় বিস্তারিত উল্লেখ করবো KGF নিয়ে।

KGF সম্পর্কে জানতে হলে একটু পিছনে ফিরতে হবে। কতটা পিছনে? এই ধরুন ৪০০ বছর আগে! মানে সেই গুপ্ত যুগের সময়।
যখন মানুষ এই KGF থেকে হাতে করে সোনা তুলে নিয়ে যেতো, কি অবাক হচ্ছেন?
আমিও হয়েছিলাম বিষয়টি পড়ে!
- কোথায় অবস্থিত এই KGF?
পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি ব্যাঙ্গালুরু(দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত শহর) থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের কোলার জেলার (দক্ষিণ- পূর্বে) অবস্থিত এই KGF!
যেটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনার খাদান!

ভারত কে যেমন হিন্দুস্থান নামে অভিহিত করা হয়;
এছাড়াও ভারতকে সোনার চিড়িয়া (golden bird) নামেও অভিহিত করা হয়, আর এই নামটি ব্রিটিশদের দেওয়া, কারণ কি জানেন?
হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন! এই KGF এর কারণে।

প্রথমে জানা যাক KGF এর সন্ধান এর বিষয় নিয়ে, তারপর আসছি ছায়াছবির বিষয়ে।
১২১ বছরের রাজত্বকালে ৯০০ টন(৯লক্ষ কেজি) সোনা লুঠ করে ব্রিটিশরা নিজেদের দেশে নিয়ে গিয়েছিল!
বর্তমান যার বাজার মূল্য ৬.৫ লক্ষ কোটি টাকা!
বলা হয়, তারা এত সোনা ভারত থেকে নিয়ে গিয়েছিলেন যে, পুরো ব্রিটিশ দেশ তাই দিয়ে মুড়ে ফেলা সম্ভব!
শুরুতে জানিয়েছি গুপ্ত যুগের সময় থেকে এই KGF এর সূত্রপাত হলেও সময়ের চক্রে শেষে এসে পৌঁছয় টিপু সুলতানের হাতে।
ততক্ষণে ব্রিটিশ ভারতে রাজত্ব শুরু করে শুধু তাই নয়, তাদের নজর পড়ে যায় এই KGF এর দিকে।
এখন যেটা ইতিহাসে সবসময় দেখা গেছে, কিছু পেতে হলে সর্বাগ্রে দুর্বলতা জানতে হবে সামনের ব্যাক্তি কিংবা দেশের!
ইংরেজরাও সেটাই করেছিলেন, তারা বুঝতে পেরেছিলেন, মাটির গভীর থেকে সোনা তোমার মতো আধুনিক প্রযুক্তি কিংবা সরঞ্জাম কোনোটাই নেই ভারতের কাছে।
তাই প্রথমে তারা টিপু সুলতান কে সরাতে চাইলেন, কিন্তু টিপু সুলতান ইংরেজদের কাছে বশ্যতা স্বীকার করতে রাজি হন না এবং
ফরাসিদের সাথে নিয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অ্যাংলো মহীশূর(Mysore)যুদ্ধ শুরু করেন।
অপ্রাসঙ্গিক মনে হলেও আমি এই টিপু সুলতানের মহল দেখে এসেছি মহীশূর বেড়াতে গিয়ে।
পরাক্রমী টিপু সুলতান চতুর্থ বারের যুদ্ধে প্রাণ হারান!
এরপর ভারতীয় রাজাকে মহীশূর এর গদিতে বসালেও KGF রাখেন নিজেদের দখলে।

এরপর যা হবার সেটাই হয়! ভারতীয় শ্রমিকদের উপর অকথ্য অত্যাচার চালিয়ে তাদের দিয়ে সোনা উত্তোলনের কাজ করে চালিয়ে যান জন ওয়ারেন(ইংরেজ সাহেব)! আনুমানিক ৬০০০ শ্রমিক শুধু তার অত্যাচারে মারা পড়েন!
ভারতে সর্বপ্রথম বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপিত হয় এই শহরেই এবং এই খাদানের কারণে নিমেষেই আধিপত্য বিস্তার করেন ইংরেজ এই রাজ্যে এবং **মিনি ইংল্যান্ড নামেও আখ্যায়িত করা হতো এই শহরকে।
জানলে হয়তো খানিক অবাক হবেন, ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা পেলেও, ইংরেজ তখনও এই KGF হাতছাড়া করে নি! সেটি সম্পন্ন হয়েছিল ১৯৫৬ সাথে রাজ্য এবং ভারত সরকারের যৌথ উদ্যোগে।
যাইহোক, লেখা কম দীর্ঘায়িত করবার জন্য সরাসরি এবার ইতিহাস থেকে চলে আসব ছায়াছবির বিষয়ে।
বিষয়টি হয়তো অনেকের নজর কাড়তো না, যদি না থাঙ্গারামের মা আইনের দ্বারস্থ হতেন!
তার মায়ের কথা অনুযায়ী তার ছেলেকে কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি ছায়াছবিতে!
এখন অনেকের মনে প্রশ্ন উঠতে পারে, কেনো কেউ এমন একজনকে কৃতিত্ব দেবেন?
এবার সেই বিষয়টি লেখায় উল্লেখ করবো। ইংরেজ চলে যাবার পরেও ভারতীয় শ্রমিকদের উপরে অত্যাচার কম হয়নি, কারণ? স্থানীয় ঠিকাদার!
তারাও একই ভাবে শ্রমিকদের দিয়ে সোনা তুলতে থাকেন।
এই শ্রমিকদের মধ্যে একজন যার নাম পৌলিনা অথবা পাওলি ছিল এই খাদানে কর্মরত একজন মহিলা শ্রমিক।

ছায়াছবির মতন পৌলিনা, থাঙ্গমের জন্ম দেন এই খাদানেই।
ঠিক ছায়াছবির মতই মায়ের প্রতি ছিল থাঙ্গম এর অগাধ ভালোবাসা, আর তাই বড় হবার সাথে সাথে তার নামের সাথে যেমন যুক্ত হয় রাউডি (don) বাংলায় যাকে বলে মস্তান কিংবা গুণ্ডা!
থাঙ্গম, তেমনি সে তার দলের নাম রাখে পৌলি গ্যাং!
নিজের মায়ের নামে, এবং এক এক করে শেষ করতে থাকে সেই সমস্ত অত্যাচারী ঠিকাদার দের, লুঠ করে বহু সোনার দোকান।
সমস্ত অর্জিত অর্থের অধিক সে KGF এ কর্মরত শ্রমিক পরিবারে বিলিয়ে দিতেন, তাই থঙ্গম তাদের কাছে ছিল রবিন হুড!
শৈশব থেকে ঠিকাদার দের অত্যাচার দেখে বড় হয়ে ওঠা থঙ্গম তার মায়ের উৎসাহে প্রথম ১৬ বছরে একজন ঠিকাদার কে গুলি করে মাথার খুলি উড়িয়ে দিয়েছিল।
তবে ছায়াছবিতে রকি ওরফে থঙ্গম চরিত্রটি যেমন একমাত্র সন্তান হিসেবে দেখানো হয়েছে, বাস্তবে থাঙ্গমরা ছিল তিন ভাই যার মধ্যে সে ছিল সর্ব কনিষ্ঠ!
একুশ বছর হতে হতে কর্ণাটক সরকারের মাথায় ভাঁজ পড়লো! একদিকে তামিলনাড়ুর বিরাপ্পন অন্যদিকে কর্নাটকে থঙ্গমের বাড়বাড়ন্ত!
এরপর, ছায়াছবির মত কর্ণাটক সরকার পুলিশ কে নিয়ে থাঙ্গম কে ধরবার ছক কষে।
পুলিশ এর এই ছকের খবর পেয়ে থাঙ্গম গা ঢাকা দেয়!
তবে, মায়ের প্রতি ছেলের অগাধ টানের কথা প্রচলিত ছিল, তাই পুলিশ জানত থাঙ্গম যেখানেই থাকুক, নিজের মায়ের জন্মদিনে তার সাথে দেখা করতে আসবেই!
আর, হয়েছিল সেরকমই। ছদ্মবেশে একটি অটো তে করে মায়ের সাথে দেখা করতে আসে, কিন্তু সাধারণ পোশাকে তার আগেই সেখানে উপস্থিত ছিল পুলিশের টিম।
আর, মায়ের সাথে দেখা করে বেরোবার সঙ্গে সঙ্গে তাকে হত্যা করে পুলিশ, কারণ সরকারের(shoot on sight)সেই রকম নির্দেশ ছিল ২৫ বছরের থাঙ্গমের জন্য।
এইভাবে আসল থাঙ্গম এবং ছায়াছবির হিরো রকি শেষ হয়!

আপনাদের মধ্যে এই বিষয়গুলি নিয়ে কতজন ওয়াকিবহাল ছিলেন? মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।
আর শুরুতেই বলেছিলাম, জীবনের গল্প দিতে ছায়াছবি তৈরি হয়, ছায়াছবির অনুকরণে জীবন চলে না!
আজকে, এই লেখাটির আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, বর্তমানে ভারতের যান্ত্রিক উন্নয়নের কারণে, ভারত সরকার ঠিক করেছে, পুনরায় এই KGF খননকার্য শুরু করবেন। কারণ, একটাই, এখনও ওই খাদনে রয়েছে প্রচুর সোনা,
এখন নিশ্চই বুঝতে পারছেন, কেনো ইংরেজরা ভারতকে সোনার চিড়িয়া(golden bird) নামকরণ করেছিলেন।
তথ্যের সূত্র উইকিপিডিয়া, গুগল এবং অন্যান্য খবরের মাধ্যম।
যেসকল ছায়াছবিতে শিক্ষা, ইতিহাস, বাস্তব এবং তদন্তের বিষয়বস্তু থাকে সেগুলো আমাকে অধিক পরিমাণে আকর্ষণ করে।
আর সেই সূত্র ধরে তার পিছনের সত্যতা পড়তে আমার আগ্রহ অধিক থাকে সর্বদাই।

