নির্ভেজাল সম্পর্ক!(Immaculate relationship!)

in Incredible India7 days ago (edited)
1000047872.png

বিগত দু'দিন, নানা দিক থেকে যেমন ব্যক্তিগত কাজ সমাধায় ব্যস্ত আছি, সমসাময়িক ভাবে, কমিউনিটির প্রতি কিছু জনের উদাসীনতা আমাকে বেশ অবাক করেছে!

কেউ নিজের সমস্যা জাহির করেন, আবার কেউ দৈনন্দিন জীবনের প্রতিকূলতাকে নিজের শক্তি দিয়ে মোকাবিলা করে অবিচল থাকেন নিজের লক্ষ্যে।

সমস্যা বিহীন জীবন কারোর নয়? নিজেকে খানিক উদ্বুদ্ধ করতে যেমন কাজ করি;
তেমনি, মাঝেমধ্যে ফোনের গ্যালারির কিছু ছবি দেখে পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করি।

সময়ের সাথে কত মানুষ হারিয়ে গেছে, কত সম্পর্কের রঙ ফিকে হয়ে গেছে! আবার, চেয়েও অনেক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারেনি অনেকেই।

IMG_20250120_210246.jpg
IMG_20250120_210049.jpg
IMG_20250120_210231.jpg
Nano - আজকের দিনে!

এই রকম একটি সম্পর্কের অক্ষত সুতো রয়েছে আমার আর ন্যানোর মধ্যে।
সেই জন্মলগ্ন থেকে দেখতে দেখতে সাত বছর অতিবাহিত হয়েছে, অনেক উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে বড়দের সাথে সম্পর্ক ম্লান হয়ে গেলেও, ওই শিশুটির মনে আমি আজও অক্ষত!

এর অন্যতম কারণ শিশুরা বোধহয় বুঝতে পারে কোন সম্পর্কে স্বার্থ বিহীন আন্তরিকতা রয়েছে!

বড়রা যখন একদিকে লাভ লোকসানের বিচার করে সম্পর্ক গড়তে ভাঙতে প্রস্তুত, ঠিক সেই সময় এই নিষ্পাপ শিশুর মন আমাকে বুঝিয়ে দেয় সৃষ্টিকর্তার উপস্থিতি।

জানিনা, কেউ বিশ্বাস করবেন কিনা! আজকেই, আমার ফোনের মেমরির টাইমলাইনে ন্যানোর সেই চার বছর আগের আজকের দিনের তোলা ছবিগুলো হঠাৎ সামনে এসে উপস্থিত!

খুব মন খারাপ হয় জানেন! একলা পথ চলার মাঝে অনেকটাই ঘিরে ছিল ন্যানো, তারপর সময়ের হাত ধরে স্থান পরিবর্তন এবং নানা কারণে, কবে আমার কাছ থেকে সরে গেল আর আমি সেই একই জায়গায় রয়ে গেলাম।

সব কিছুর মাঝে বাড়তি পাওনা, যতদিন পরেই আমায় ন্যানো দেখুক না কেন, আজও সে আমায় ভোলেনি।

আজকে সাপ্তাহিক বুমিং শুরু, সেগুলোই দেখতে দেখতে কানে আসছিল ন্যানোর কান্না, অনেকক্ষণ সহ্য করে শুনছিলাম, তবে আগাগোড়াই আমি ওর কান্না সহ্য করতে পারি না!

আমি ওকে অনেকটাই কোলে করে বড় করেছি, সেই আত্মিক টান আজও অমলিন, তাই কাজের শেষে আর না থাকতে পেরে দরজা খুললাম।

তারপর, আমাকে দেখে এক মুহুর্ত দেরি না করে কেঁদে কেঁদেই নালিশ শুরু করে দিলো মাম্মা বকেছে!
হাহাহা! মজার বিষয় হল, ন্যানো জানে আমার কাছে নালিশ করলে ওর মা এবং বাবা দুজনকেই আমি বকি।

অবশ্য তারা সেইজন্য মনক্ষুন্ন হয়নি কোনোদিন! কারণ তারা জানেন, এটা মিছিমিছি বকছি!

এরপর, এক্ মিনিটেই কান্না বন্ধ করে খানিক খেলাধুলো পর্ব চলছিল, তার মাঝে ছোট্ট ভিডিও করে নিয়েছিলাম।

আজকের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স(childhood is the most precious time of life) 💗😍

ভিডিও তৈরি হয়ে গেলে, আমাকে বললো কোথায় দেখাও! আমরা পাশাপাশি বসে ভিডিও দেখলাম, তারপর ন্যানো কে বললাম জানো তোমার ছোট বেলার অনেক ছবি এখনও আমার কাছে আছে!

1000001949.jpg
1000000264.jpg
1000000187.jpg
1000000188.jpg
1000000186.jpg
1000003607.jpg
(আমার সাথে অতিবাহিত কিছু অবিস্মরণীয় মুহুর্ত)

আমাকে দেখাতে বললো, আমিও ফোন ওর হাতে দিয়ে দেখালাম, আমার কোলে শুয়ে ঘুমানোর, দুধ খাওয়ার ছবি।

এরপর কিছু বইয়ের পাতা উল্টানোর ছবি দেখে বলল, ছোট বেলায় আন্টি আমাকে পড়াতো!
কি অসম্ভব স্মৃতি ধারণ করে ওইটুকু ছেলে, কিন্তু পারলাম না ওকে নিজের মতো করে গড়তে!

আমার এখনও মনে আছে, প্রথম ইংরিজিতে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের নাম শেখানোর দিন, বিকেলে আমি হেঁটে এসে ওকে নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়তাম, আমারই হাত ধরে হাঁটা শেখা ন্যানোর! মাত্র দু'মাসের মধ্যে নিজের পায়ে হাঁটা শুরু করেছিল।

এরপর প্রথম ইংরিজি শব্দ কার বলতে শেখা!
অজস্র স্মৃতি আজও অক্ষত, হয়তো যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন মনের মণিকোঠায় এবং স্মৃতির পাতায় অক্ষুন্ন থাকবে আমাদের একসাথে অতিবাহিত মুহুর্তগুলো।

এরপর হয়তো সত্যি একদিন আমাকে ভুলে যাবে, যখন আরো বড় হয়ে যাবে।
জানিনা! তবে, অনেক ভেজাল সম্পর্কের বহির্ভূত এই নির্ভেজাল সম্পর্ক বোধহয় একমাত্র শিশুদের সাথেই গড়ে তোলা সম্ভব।

বাকি সব প্রয়োজনের সম্পর্ক, স্বার্থ যতদিন ততদিন পর্যন্ত মনে রাখা, নইলে খেয়ে উঠে মুখ মুছে ফেলতে এক্ মুহুর্ত সময় লাগে না।

ক্ষণিকের জন্য কাটানো আজকের এই সময়টা আমাদের দুজনের কাছেই অমূল্য, অনেকেই ভাবেন ছোটরা কিছু বোঝেনা, তাই তাদের সাথে যথেচ্ছ আচরণ করেন!

আসল সত্যি হল, বড়দের চাইতে ঢের বেশি বোঝে এই ছোটরা, তারা অতি সহজেই আসল নকলের তফাৎ করতে সক্ষম।

তাদের আত্মসম্মান বোধ, ইমোশন, লজ্জা, অপমান এগুলো বড়দের থেকে বেশি বৈ কম নয়!

তাই এদের সাথে যেকোনো আচরণ খুব ভেবে চিন্তে করতে হয়। জানিনা, হয়তো ন্যানো যে সম্মানের দাবিদার সেটা দিতে পেরেছি বলেই আজও আমায় ভোলেনি!

অনুভূতিগুলো উস্কে গেল,
দিচ্ছে মনে উঁকি!
এক্ পা এগোই, দু'পা পিছুই
অপমানের ঝুঁকি!

এছাড়া আর কি কিছু দেবার আছে আমার?
নাহ্! একজন নিঃস্ব মানুষের নির্ভেজাল ভালোবাসা, আর সম্মান ছাড়া দেবার কিছুই থাকে না, কারণ তাদের ক্ষমতা সীমিত!

1000010907.gif

1000010906.gif

Sort:  
 7 days ago (edited)

আপনি ঠিকই বলেছেন, একটি নির্ভেজাল ভালোবাসা খুঁজে পাওয়া যায় বাচ্চাদের কাছ থেকে। ন্যানোর সাথে আপনি যেহেতু ছোটবেলা থেকেই অনেকটি বছর আছেন। হয়তো ন্যানো কথা, আপনার সারাটা জীবন হৃদয়ের স্থানে স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে এই দৃশ্যগুলো। ন্যানো সম্পর্ক জেনে অনেক ভালই লাগলো, ন্যানো ভিডিও গুলো দেখলাম সে অস্থির নাচে সাথে গান গায় খুব মজা করে!

আমার সবচাইতে বেশি হাসি পেয়েছে, ন্যানোর ফোকলা দাঁতের ফাঁক দিয়ে! যখন সেয় অস্পষ্ট ভাবে শব্দগুলো বের হচ্ছিল। ওই অনেক খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল, বাচ্চারা অল্পতেই খুশি হয়,বা সন্তুষ্ট হয়ে থাকে। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে-সাথে চাহিদা ও বেড়ে যায়, আবার অল্পতে সন্তুষ্ট হওয়ার প্রবণতা কমে যায়, সময়ের ব্যবধানে।

সৃষ্টিকর্তা যেন ন্যানোকে সবসময় এই ভাবে হাসিখুশিতে রাখে! এই দোয়াই রইল ওর জন্য। যদি মনে কিছু না করেন, তাহলে একটি প্রশ্ন করি, আপনার পোস্টটি সম্পূর্ণই পড়লাম আমি। কিন্তু ন্যানো আপনার সম্পর্কে কি হয়, ওইটা আপনি বলেননি। আশা করি কমেন্টের মাধ্যমে হয়তো ন্যানো এবং আপনার সম্পর্ক কথাটা বলবেন।

অনুভূতিগুলো উস্কে গেল,
দিচ্ছে মনে উঁকি!
এক্ পা এগোই, দু'পা পিছুই
অপমানের ঝুঁকি!

আমি সবসময়ই বলি,আপনার লেখার ভিতর জীবনের অনেক কিছু ইঙ্গিত করে! যা একটি মানুষের বাস্তব জীবন থেকে শিক্ষা, আমি সর্বশেষ এই কথাটি বলবো

অপমান আসুক যত!
এক পা, দু পা, করে আগাবো তত!
বুকে বাধবো বড় আশা!
দেখবো তখন উকি মেরে!
এই জগতের রং তামাশা!

আপনার জন্য সব সময় দোয়া ও ভালোবাসা রইলো দিদি! ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

 6 days ago (edited)

Thanks you so much @wirngo mam for supporting me 💕

 5 days ago 

@mdsuhagmia প্রথমেই দুঃখিত আপনার মন্তব্যের উত্তর দিতে বেশ দেরি হয়ে গেল!

ব্যক্তিগত সহ কমিউনিটির প্রায় সকল কাজ এক হাতে সামাল দিতে গিয়ে নাজেহাল পরিস্থিতি, সাথে শরীর আবারও বেঁকে বসেছে।

বাহ্! আপনি অনু কবিতার শেষ লাইনগুলো বেশ সুন্দর করে উপস্থাপন করেছেন তাই নয়, সাথে বিষয়বস্তু সাথে বেশ সামঞ্জস্য খুঁজে পেলাম।

শিশুদের সবচাইতে এই নির্ভেজাল মন থাকে বলেই তাদের মনে সৃষ্টিকর্তার বসবাস বলে বিশ্বাস করা হয়।

সেখান কোনো অভিনয় থাকে না, যেটা বড় হতে হতে বেশিরভাগ মানুষ রপ্ত করে ফেলে।

 5 days ago 

এত ব্যস্ততার মাঝে থেকেও আমার কমেন্টের উত্তর দিয়েছেন! এর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।

Que tierna publicacion amiga, puedo notar que realmente amas a tu hijo, a pesar de que acostumbrarse no fue nada facil, con el tiempo uno se acostumbra a los niños y a sus formas de ser, muchas bendiciones para toda tu familia.

After reading your post, i now feel like having my own baby unfortunately, that closeness is not always there between fathers and son. I think is more with daughter and dad.

I am just imagining , if you and nano is this close, how it would be, between you and your own kids..

The guys is pretty smart to have still remembered what you taught while he was a far much younger.

Thanks for this reflection you just shared with us between the bond you guys have together.

Loading...
 6 days ago 

অনেক গভীর একটা সম্পর্ক, ছোট থেকে আপনি আদর করে বড় করেছেন। বাবা মার পরে এই বাবুটি আপনাকে আপন ভাবে মনে হচ্ছে।

ছোটদের নালিশ করার বিষয়টা কিন্তু আমার কাছে খুব ভালোই লাগে, তারপর অভিনয় করে তাকে দেখিয়ে অন্য কাউকে বকাঝকা করতে হয় এতে দুপক্ষেরই ভালো লাগে।

হঠাৎ যখন ন্যানো চার বছর আগের ছবিগুলো আপনার সামনে আসলো সেই অনুভূতিটা আমি বুঝতে পারছি, এবং ছোট্ট বেলার ন্যানো অসম্ভব রকম কিউট ছিল।

@tipu curate

;) Holisss...

--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.

Loading...
 6 days ago 

Thank you my friend 😊