আধুনিকতার সাথে হারিয়ে যাচ্ছে বহু হস্তশিল্প!(A multitude of traditional crafts is fading away in the face of modernity!)
![]() |
---|
আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি বলে, অনেক হস্তশিল্প প্রায় বিলুপ্ত এই বর্তমান যুগে!
এখনও আমার মনে পড়ে বাবার হাত ধরে রথের মেলা থেকে কেনা সেই খুদে আকারে গড়া
এরপর এলুমিনিয়ামের এর তৈরি ছোট্ট ছোট্ট বাসন পত্র, মানে সংসারে যা যা বাসনের প্রয়োজন সবটাই পাওয়া যেতো।
![]() |
---|
এখন প্লাস্টিকের চল হয়েছে, মাটির পরিবর্তে!
আগে জন্মদিন অথবা অন্নপ্রাশন হলে কাঁসা, পেতলের বাসন উপহার হিসেবে দিতে দেখতাম!
আর এখন? ব্র্যান্ডেড কোনো কোম্পানির একটা খেলনা যেটা থেকে কিছু শেখার সম্ভাবনা না থাকলেও কিছু যায় আসে না, ওই যে দামটা গায়ে লেখা, সেটাই যথেষ্ট!
আগে দেখতাম সকলেই পুজোর আগে ভালো টেলার্স খুঁজে বেড়াচ্ছে, আর আজকাল হলো রেডিমেড এর যুগ, তাই পাড়ার টেলার্সের কাছ থেকে তৈরি জামা কাপড় বিলো ক্লাসের আওতাভুক্ত!
অথচ, এই যে রেডিমেড পোশাক আমরা পরিধান করছি, সেটাও কিন্তু কেউ না কেউ তৈরি করেই একটা কোম্পানিতে পাঠাচ্ছে, আর সেই কোম্পানি নিজের ব্র্যান্ডের একটা তকমা দিয়ে পেল্লাই দামে তাকে গ্রাহকদের ধরিয়ে দিচ্ছে অবলীলায়।
যাক এরপর শৈশবে আরো কত কিছু ছিল যেগুলো এখন বিশেষ চোখে পড়ে না!
চটের উপরে রঙ বেরঙের উল দিয়ে তৈরি করা কি চমৎকার আসন তৈরি করতো আমার মেজো মাসীর মেয়ে!
এখন কতজন আসন পেতে মাটিতে বসে খায়?
এখন সকলেই ইংরেজি মতে টেবিলে বসে খেতেই অভ্যস্থ!
একমাত্র কিছু বাড়িতে দেখেছি পুরুত মশাই আসলে ওনাকে বসতে দেবার জন্য এক টুকরো আসন বেরিয়ে আসতে!
তৈরির তো প্রশ্নই নেই;
সেই বহু কালের আগে তৈরি করা একটিমাত্র অবশেষ পড়ে আছে!
খাবারের কথায় আসলে হারিয়ে গেছে কালো নুন, নেই সেই আচারের স্বাদ, আধুনিক মানুষের রুচি হারিয়েছে আলু কাবলি এবং ঘুগনীতে!
![]() |
---|
তবে পুজোর হাত ধরে এখনও যেটা রয়ে গেছে, সেটা হলো মাটির প্রতিমা।
তাও জানিনা অবশ্য কতদিন মা আর মাটি এক থাকবে!
কারণ, এখন আবার থিম পুজোর চল, তাই রকমারি ফ্রান্সি প্রতিমার চলন শুরু হয়েছে।
ভক্ত না থাক, ভক্তি না থাক তবে আধুনিকীকরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে আমরাই সেরা!
সাবেকি কথাটির মূল্যায়ন করতে ভুলে যাচ্ছে মানুষ।
যারা আজকে আধুনিক আগামীতে তারাই কিন্তু সাবেকি।
স্কুলে হাতের কাজের মধ্যে ছিল, ডিমের খালি খোসা দিয়ে তৈরি পুতুল, মোমবাতি তৈরি, উলের সোয়েটার, বিভিন্ন সার্টিনের সুতো দিয়ে রুমালে নানান ধরনের সেলাই, সেটা চিকনকারী, কাঁথা স্টিচ, আর কত কি নাম!
নাহ্! আজকাল সবটাই পাওয়া যায় কিন্তু আগের মত না আছে শেখার আগ্রহ আর না আছে বাড়িতে তৈরির ইচ্ছে।
![]() |
---|
তার চাইতে কম্পিউটারে বসে নকল বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে সৃষ্টি নানা ধরনের বিষয় অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
আমার খারাপ লাগে সেই মানুষগুলোর জন্য, যারা এক সময় অভাবের তাড়নায় সেভাবে লেখাপড়া শিখতে পারেনি বলে, এই হস্তশিল্পের দ্বারা সংসার চালাতেন।
![]() |
---|
আজকের এই উন্নত প্রযুক্তি তাদের বিশেষ কোনো কাজে আসে না, তাই অনেক রকমের নাম শুনে তারা ফ্যালফ্যাল করে মুখের দিকে চেয়ে থাকেন।
শৈশবে দেখতাম একটি লোক জোর গলায় শীল কাটাবেন? শীল? বলতে বলতে প্রায় প্রতিদিন কেউ না কেউ আসতেন পাড়ায়।
আর কি সুন্দর করে কখনও মাছ, আবার কখনও ফুল এঁকে দিয়ে যেতেন শীলের উপরে, আজকাল আর সেই ডাক শোনা যায় না!
সকলের ঘরেই এখন আধুনিক মিক্সি মেশিন, হাতে বাটার চল প্রায় উঠেই গেছে, তাই এদের কাজের অভাব!
এখন তো বাড়িতে চুল কাটার প্রচলন উঠেই গেছে, কিন্তু শৈশবে এক্ নাপিত হাতে একটা বাক্স নিয়ে ঘরে ঘরে পুরুষদের চুল কেটেই সংসার দিব্যি চালিয়ে নিতেন!
এখন পার্লার সকলের জন্য বরাদ্দ, আর ওই এক রকম ছাট দিয়ে পসর বসানো যাবে না, জানা চাই নিত্য নতুন চুলের কাট!
নইলে বাপু, ওই পথে যাওয়া নিষিদ্ধ।
কতজন আজকাল নকশী কাঁথা তৈরি করেন? সবটাই কেমন যেন ইতিহাস বলে মনে হয়।
কষ্ট হয় হারিয়ে যাওয়া সেই মিঠাই দিয়ে তৈরি ঘড়ি, মালা তুই ওয়ালা মানুষটিকে না দেখতে পেয়ে!
শীতল পাটি, তালপাতার পাখা, এখন কেউ যেনো কিনতেই চায় না! এগুলো আসলে উচ্চ ক্লাসের আওতাভুক্ত নেই আর!
আর সাবেকিয়ানার পরিভাষা তো শেখানোই হয়নি আধুনিক প্রজন্মকে, কাজেই তাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
শৈশবের সংজ্ঞার সাথে বাঁচার ধরন শুধু বদলায়নি, সাথে হারিয়ে গেছে বহু প্রতিভা এবং বহু হস্তশিল্প সহ বহু শিল্পী।*


@tipu curate
;) Holisss...
--
This is a manual curation from the @tipU Curation Project.
আপনার পোস্টটি আধুনিকতার আগমনের সঙ্গে কিভাবে বহু ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে তা অনেক সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন আমাদের মাঝে! অনেক ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প আজ মুছে যাচ্ছে, এবং নতুন প্রজন্মের কাছে তার মানে বা গুরুত্ব নেই। কিন্তু আমরা যদি চেষ্টার মাধ্যমে এগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারি, তবে সংস্কৃতির এই অমূল্য রত্নগুলিকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। এত সুন্দর একটি পোষ্ট আমাদের কে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।