একটাই শব্দের ক্ষেত্র বিশেষে ভিন্নর্থ!
আমরা সারাদিন এমন অনেক কথা বলি যার মধ্যে কিছু শব্দ আছে যেগুলো ব্যবহারের তারতম্য অনুযায়ী তার অভ্যন্তরীণ অর্থ পরিবর্তন করতে সক্ষম!
ভাবছেন এমন তো কতই শব্দ আছে, আমি কোন শব্দের কথা বলছি?
শব্দটি হলো চুরি! |
---|
বিনা অনুমতিতে যখন অন্যের কোনো বস্ত হস্তান্তরিত হয়, তখন এই চুরি শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
এই বিষয়টি ব্যবহার করা হয় ক্ষতি বোঝাতে অর্থাৎ সদর্থক নয়, বরং নঞর্থক হিসেবেই ব্যবহার করা হয়, ব্যাক্তি তথা ঘটনা বিশেষে।
যেকোনো সামগ্রী, অর্থ, আত্মস্বাদ হলে যেমন শব্দটি ব্যবহৃত হয়, তেমনি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেও শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
তবে, এক্ষেত্রে ভালো তথা মন্দ দুভাবেই শব্দটিকে ব্যবহার করা হয়।
একটি সত্য ঘটনার উল্লেখ করছি, তখন আমি শিলিগুড়িতে, একেবারেই একলা থাকি। এরপর এক মাঝ বয়সী মহিলা আমার সাথে বেশ খাতির শুরু করে।
একলা থাকি, তাই যখন তখন না বলেই ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত হতো, দুটো রুম যেহেতু ফ্ল্যাটে, তাই মাঝে মধ্যে বলতো বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে, তাই সেই রাতে আমার ফ্ল্যাটেই থাকবেন।
আমিও একা থাকতাম বলে, কথা বলার একটা সঙ্গী হিসেবে, আর রাতের অন্ধকারে কেউ পাশের ঘরে আছে, এটা ভাবলেও একটা সাহস পাওয়া যায়।
(ছোটবেলায় অন্যের গাছের ফুল ফল চুরি সেটাও কিন্তু পাপে সামিল নয়!) |
---|
যাইহোক, একদিন একটি ছেলে, নামটা আমার এখনও মনে আছে মিঠুন, সে আবার আমি যে এলাকায় থাকতাম সেই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মৈত্রেয়ী দি এর হয়ে নানা রকম কাজ করতেন।
আমাকে একদিন বাজারে একা পেয়ে ডাকলেন, আমি মুখ চিনলেও, তেমন পরিচয় ছিল না।
আমাকে ডেকে প্রথমে জানতে চাইলো, ওই মহিলাকে আমি কিভাবে চিনলাম?
আমি তাকে জানালাম, এবং উত্তরে যেটা শুনলাম, ওইদিন আমি শুধু জানি, আমি কিভাবে ফ্ল্যাটে ফিরেছি!
ছেলেটি জানালো, এইভাবে অনেকের সাথেই সুমিষ্ট সম্পর্ক তৈরি করে এবং ঘরের কোথায় কি রাখা আছে বেশ কিছুদিন যাতায়াত করে জেনে নিয়ে, ঘরের জিনিষ চুরি করেন।
অদ্ভুত ব্যাপার ওইদিন রাতেও মহিলা আমার ফ্ল্যাটে এসে সোজা রান্না ঘরে ঢুকে পড়ে, আমি সেখানেই কাজ করছিলাম।
ওইদিন আমি যা শুনেছি তাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়ে আমার ফ্ল্যাটে আসতে মানা করে দিয়েছিলাম।
জানিনা, ঠিক করেছিলাম না ভুল, সেটা বুঝছিলাম যখন কথাগুলো শুনে মহিলা চুপচাপ বেরিয়ে গিয়েছিল আমার ফ্ল্যাট থেকে, চাইলে ছেলেটিকে ফোন করতে পারতো, আমি নম্বর নিয়ে এসেছিলাম।
যদি কেউ অপরাধী না করে থাকে, তাহলে শুধু শুধু অপবাদ মাথা পেতে নেব কেনো?
এটা যেমন একটা ঘটনা যেটা আমাকে ভয় এবং দুঃখ দিয়েছিল, কারণ এখানে শুধু দ্রব্য নয়, বিশ্বাসের চুরিও সামিল ছিল।
- এরপরের ঘটনাটিও শিলিগুড়িতে ঘটেছিল, তবে সেটা বেশ মজার!
(আজ জানিনা কেনো এটিএম থেকে টাকা তুলে বেরিয়ে বাইকে যাওয়া কিছু মানুষ পুরোনো স্মৃতি উস্কে দিয়ে গেছে) |
---|
আমার স্টেট ব্যাংকের একাউন্ট শিলিগুড়ির, একদিন ব্যাংকের পাশের এটিএম থেকে টাকা তুলে গলির ভিতর দিয়ে পায়ে হেঁটে ফিরছি, হঠাৎ একটা মোটরসাইকেলে একটি ছেলে আমার পথ আটকে দাড়িয়ে বললো, আমাকে চিনতে পারছো?
আমি খানিক ঘোরের মধ্যেই ছিলাম, সম্বিৎ ফিরতেই জানালাম, দুঃখিত চিনতে পারছি না!
সঙ্গে সঙ্গে বললো, তোমার নম্বরে ফোন যাচ্ছে না, তোমাকে অনেকদিক ধরে দেখতেও পাচ্ছি না(সেই সময় আমি কিছুদিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলাম)
কাজেই, অবিশ্বাসের কোনো কারণ খুঁজে না পেয়ে নম্বর দিয়ে দিলাম।
মাঝ রাস্তায় ঐভাবে দাঁড়িয়ে কে কথা বলবে!
এরপর, ফ্ল্যাটে ফিরতে ফিরতে এক্ সময় মনে হলো আমাকে বোকা বানিয়ে নম্বর নিয়ে নিলো না তো?
ওইদিন সন্ধ্যায় ফোন করলো, ফোন তুললাম এবং জানতে পারলাম, সে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে অনুসরণ করে, কিন্তু কোনোদিন কথা বলার সাহস পায় নি, তারপর যেসব কথা ছেলেরা বলে থাকে সবটাই জানিয়ে স্বীকার করেছিল, মিথ্যে কথা বলেই নম্বরটা সে নিয়েছিল!
এরপর আর কি? কিছুদিন কথা বলেছি, বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছি, তবে আমি এই দুটো ঘটনার পরে চাকরিতে ট্রান্সফারের জন্য আবেদন করে কলকাতায় ফিরে আসি।
(মনের ক্ষেত্রেও চুরি শব্দ ব্যবহৃত হয়) |
---|
সেই ফোন সহ নম্বর একদিন ট্রেনে চুরি হয়ে গিয়েছে, হাসনাবাদ লোকালে।
এটা ছিল একটা মন চুরির গল্প, তবে আমার মন তো, ওটিকে চুরি করা এতটাও সহজ কাজ নয়।
যাইহোক, এই চুরির পিছনে অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না, কাজেই শব্দ এক্ হলেও এক্ষেত্রে সেটি সদর্থক।
এটা প্রায়শই সকলেই করে থাকেন, কি অবাক হলেন?
কোনো অপছন্দের ব্যাক্তির সাথে যখন কাজ করতে হয়, অথচ সেই মানুষটি মোটেও পছন্দের নয়, তবুও কাজ ছাড়ার উপায় নেই, সকাল, সন্ধ্যে দেখা হলেই একগাল হাসি নিয়ে কথা বলা ভাবের ঘোরে চুরি করা বলে!
এটা পরিবার তথা কর্মক্ষেত্রে সর্বত্রই দেখতে পাওয়া যায়;
এই মুহূর্তে লিখতে গিয়ে কাভি খুশি কাভি গাম ছায়াছবিতে কাজলের একটি দৃশ্য মনে পড়ছে যেখানে, প্রতিবেশী তার বাচ্চাকে কাজলের কাছে রেখে কাজে যান।
হিন্দিতে উল্টোপাল্টা বলে, সেটার ইংরিজি সম্পূর্ণ উল্টো অর্থ দিয়ে মহিলাকে বোকা বানানোর দৃশ্যটি বেশ হাস্যকর ছিল।
আরো অনেক অনেক ভাবে শব্দটির প্রয়োগ আছে, যেটা আমরা বলার সময় তলিয়ে দেখিনা!
আজকে বিষয়টি নির্বাচনের উদ্দেশ্য হলো, আমার কাছে সবচাইতে গর্হিত অনুভূতির চুরি, কারণ সেখানে ভরসা, বিশ্বাস এবং আস্থা কলুষিত হয়।
শব্দের সঠিক ব্যবহার ক্ষেত্র বিশেষ তার অভ্যন্তরীণ অর্থ কিভাবে পরিবর্তন করে, সেটা আশাকরি কিছুটা হলেও আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে পেরেছি।
কাজেই, যদি জীবনে হিসেবী হতেই হয়, তাহলে সবচাইতে আমাদের হিসেবী হবার প্রয়োজন শব্দের নির্বাচনের ক্ষেত্রে।
কারণ, অযথা কাউকে উপরিউক্ত শব্দ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করলে সে আঘাত পাবেন, না খুশি হবেন সেটা তো বক্তার শব্দটির সঠিক প্রয়োগ নির্ধারণ করবে তাই না?
আপনারা কি ভাবেন এই বিষয়ে জানাতে ভুলবেন না, অন্ততপক্ষে যারা আমার লেখা পড়েন!
একটি শব্দকে কেন্দ্র করে আপনার সম্পূর্ণ একটি আর্টিকেল শেষ করছেন এর বাহবা দেওয়ার মতো আমার কাছে তেমন কোন কিছুই নাই তাই মনের গহীন থেকে ধন্যবাদ জানাই।
বাংলা এমন শব্দ অনেক রয়েছে যেমন ডাল । ডাল সাধারণত মানুষ রান্না করে খাই ।আবার একই শব্দ গাছের প্রশাখা যখন বড় হয় তখন ব্যবহার করা হয়। ডাল বড় হয়ে গিয়েছে কেটে ফেলতে হবে। শব্দ দুটিই একই তবে বলার ভঙ্গি আলাদা।
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.