"সরস্বতী পুজোতে বান্ধবীদের সাথে কাটানো বিশেষ মুহুর্ত"
![]()
|
---|
Hello,
Everyone,
সরস্বতী পুজোকে ঘিরে বর্তমানে যতটা আবেগ, ভালোলাগা কাজ করে তার অনেক বেশি আবেগ ছিলো ছোটোবেলায়। পুজো আসার অনেক আগে থেকেই প্ল্যানিং হতো পুজোর দিনকে ঘিরে।
"প্রাইমারি স্কুলের প্রতিমা"
কুল গাছে ফুল ধরতে দেখলেই পুজো পুজো রব শুরু হয়ে যেতো। কি শাড়ি পরবো, সেই শাড়ির ব্লাউজ ঠিক নিজের মাপ মতো সেলাই করে দেওয়ার জন্যে দিনের মধ্যে কতবার যে দিদিকে অনুরোধ করতাম তার হিসাব নেই। তার থেকেও কঠিন কাজ ছিল পছন্দসই শাড়িটি পরতে দেওয়ার জন্যে মা কে রাজি করানো।
যাইহোক এই সবকিছুই আজ স্মৃতি। এখন আর তেমন উত্তেজনা নেই সরস্বতী পুজো কে কেন্দ্র করে। শুধু উপোস থেকে অঞ্জলি দিতে পারলেই হলো। তবে বহুবছর বাদে এইবার একটু অন্যরকম পুজো কাটালাম, সেই গল্পই এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। চলুন তাহলে শুরু করি, -
"পুজো শেষে প্রসাদ বিতরনের প্রস্তুতির মুহুর্ত"
বান্ধবীরা অনেক দিন ধরেই প্ল্যান করছিলো এবার আমাদের প্রাইমারি স্কুলে গিয়ে একসাথে অঞ্জলি দেবে। তবে আমাকে কিছুতেই রাজি করাতে পারছিলো না। আমার যেন এখন আর বাড়ি থেকে বেরোতেই ভালো লাগে না। তবে ওরা নাছোড়বান্দা। এতো বার ফোন করেছে যে আমি শেষ পর্যন্ত না গিয়ে পারিনি।
তবে আমিও ওদের জানিয়ে দিয়েছিলাম, যেতে পারি তবে শাড়ি পরবো না। এই বিষয়ে ওরা আমাকে টলাতে পারেনি। ওরা তিনজন শাড়ি পরবে ঠিক করেছিলো, তাই আমাকেও বহু বার অনুরোধ করেছে, তবে আমি রাজি হইনি। শাড়ি আমার পছন্দের পোষাক হলেও, সবসময় পড়তে ভালো লাগে না। আর ট্রেনে চলাচল করার ক্ষেত্রে তো একেবারেই না।
"নতুন সাজে সেজেছে আমাদের শিক্ষা নিকেতন"
যাইহোক সেদিন সকালে একেবারেই রৌদ্রের দেখা পাওয়া যায়নি। তবে সোমবার দিন সারাদিন রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া ছিলো। যাবো না যাবো না করেও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম কিছুক্ষণ সময়ের জন্য যাবো। যেহেতু পূজো শুরু হবে বারোটার পর থেকে, তাই ওখানে গিয়ে অঞ্জলি দেবো। সেই মতো মোটামুটি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ট্রেন থেকে নেমে অটো ধরে সোজা দিয়ে প্রাইমারি স্কুলের সামনেই নামলাম।
নিজের বাড়ির সামনে দিয়ে অটো করে চলে যাচ্ছি, অথচ বাড়িতে ঢুকতে না পারার যে কি অদ্ভুত একটা অনুভূতিটা, আপনাদেরকে বলে বোঝানো সম্ভব নয়। আর এই অনুভূতিটা অনুভব করবে না বলেই এখন যেন গ্রামের বাড়িতে যাওয়াটা এড়িয়ে চলি।
"আমি ও রাখী"
"আমি ও পিয়ালী"
"এর জোড়াজুড়িতেই যেতে বাধ্য হয়েছিলাম"
" আমরা চারজন প্রথমবার একসাথে অঞ্জলি দিলাম
যাইহোক বান্ধবীরা সেখানেই ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছিলো। সেখানে গিয়ে সকলের সাথে দেখা হলো। গ্রামের কত পুরনো মানুষ, যাদের বয়স বেড়েছে আরো কিছুটা। অনেকে চিনতে পেরেছেন আবার অনেকেই একটু সময় নিয়েছে চেনার জন্য। যাইহোক ভালো লাগলো সকলের সাথে দেখা করে। সেখানে পুজো শেষ হওয়ার পরে, সকলে মিলে অঞ্জলি দিলাম। খুব ভালো সময় কাটালাম।
"নিজেদের ছেলেবেলা"
"নতুনদের সাথে প্রাক্তন ছাত্রীরা"
ঐ সময়টা কাটানোর পর মনে হলো, এটুকু আনন্দ পাওয়ার জন্যই কিছুটা কষ্ট করাই যায়। আমরা যখন এই স্কুলে পড়তাম তখন স্কুলটা এতো উন্নত ছিল না। তবে এখন অনেক সুন্দর ভাবে তৈরি হয়েছে। বাচ্চারাও খুব সুন্দর শাড়ি পড়ে নিজেদের স্কুলের পুজোতে এসেছে। ওদেরকে দেখে নিজের ছেলেবেলা বেশ নাড়া দিয়ে গেলো। তাই সকলকে সাথে নিয়ে ছবিও তুললাম।
"চামচ না থাকলেও দই খাওয়া বাদ দেওয়া যাবে না"
"রাখীর তৈরী চামচ দিয়ে দই খাচ্ছে পিয়ালী "
"পুজোর প্রসাদ- পছন্দের খিচুড়ি"
এরপর সেখানে প্রসাদ খেলাম। ফল প্রসাদের সাথে খিচুড়িও ছিলো। তাই সকলে মিলে বসে একসাথে প্রসাদ খাওয়ার পর, কিছু ছবি তুললাম। তারপর আমি রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। বান্ধবীরা সকলের থাকার জন্য অনেক অনুরোধ করেছিলো, কিন্তু আমার পক্ষে থাকা সম্ভব ছিল না কারণ আমি তেমন ভাবে প্রস্তুতি নিয়ে যাইনি।
"আমি ও রাখী"
"চারমূর্তি"
আসলে সন্ধ্যার দিকে আমাদের হাইস্কুল মাঠে ভালো ফাংশন ছিলো। আমাকে সবাই মিলে অটোতে তুলে দিলো, আমিও স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
"হোয়াটসঅ্যাপ থেকে নেওয়া ছবি,ক্রপ করার কারনে তারিখ পরিবর্তিত দেখাচ্ছে"
বাড়িতে এসে পৌঁছে, ফ্রেশ হয়ে কমিউনিটির কাজই করছিলাম যখন বান্ধবীরা সকলের মিলে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে একটা ছবি পাঠালো। ওদেরকে দেখে একটু আফসোস হচ্ছিলো, হয়তো থেকে গেলেই ভালো হতো, আরো কিছুটা ভালো সময় উপভোগ করতে পারতাম।
"হাইস্কুলের পুজোর প্যান্ডেল"
"হাইস্কুলের প্রতিমা"
যাইহোক তবুও যে এইবার সবার সাথে পুজোটা এমন ভাবে কাটাতে পারবো, এই আশা আমার একেবারেই ছিল না। আমি ভেবেছিলাম পাশের বাড়িতে অঞ্জলি দিয়ে আর পাঁচটা দিনের মতনই কাটবে সরস্বতী পূজোর দিন। তবে হঠাৎ করে নেওয়া সিদ্ধান্ত বেশ কিছু সুন্দর মুহূর্ত উপহার দিল। সকলে মিলে প্ল্যান করেছি শীত সম্পূর্ণভাবে চলে যাওয়ার আগে একবার ইকোপার্কেও ঘুরতে যাবো। যদিও জানিনা তা কতটা সফল হবে।
![]() |
---|
![]() |
---|
![]() |
---|
কারণ এই মুহূর্তে আমি আপনাদের সাথে লেখাটা শেয়ার করছি কল্যাণী এইমস হসপিটালে বসে, শ্বশুর মশাইয়ের চেকআপের ডেট ছিল আজ। তাই অনেক সকাল বেলায় উঠে রওনা হয়েছি হসপিটালের উদ্দেশ্যে। সে গল্প না হয় অন্য কোনো পোস্টে শেয়ার করবো। আজ সরস্বতী পূজার আনন্দের মুহুর্তগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
আশা করি আপনাদের সকলের পুজোও অনেক ভালো কেটেছে। পুরোনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করা, আর পুরনো জায়গায় পুরনো মানুষদের সাথে কিছুটা সময় কাটানো সবকিছু মনে এক অন্য অনুভূতি তৈরি করে। যদিও তার পাশাপাশি অনেক কিছু হারিয়ে ফেলার কষ্টটাও সেদিন অনুভব করেছিলাম।
যাক এটাও জীবনেরই একটা অংশ। তাই সব কিছু নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে। আপনাদের কেমন লাগলো আমার পোস্ট পড়ে, মন্তব্যের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এই প্রার্থনা করে আজকের লেখা শেষ করছি। ধন্যবাদ।
এই পোস্টটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো এবং সুন্দরভাবে আপনার সরস্বতী পূজার দিনগুলি ও অনুভূতিগুলি আমাদের সাথে শেয়ার করেছে। এর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি। পুরনো স্মৃতি, বন্ধুত্ব, স্কুলের পুজো-এই সবই একেকটা সোনালী মুহূর্ত মনে করিয়ে দেয়। এটা সত্যি যে, পুরনো স্থান এবং পুরনো মানুষদের সাথে সময় কাটালে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে, যা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এই ভাবেই যেন সব সময় হাসি খুশি থাকেন এই দোয়াই রইল।
Thank you so much for your support @adeljose Sir. 🙏
আপনার লেখা পড়ে মনটা সত্যিই ভালো হয়ে গেল আপু। পুরনো দিনের স্মৃতি, বন্ধুত্বের সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত আর সরস্বতী পূজার আনন্দ সবকিছু যেন একসাথে জীবন্ত হয়ে উঠলো। বিশেষ করে শাড়ি পরা নিয়ে বন্ধুদের জোড়া জোড়া স্কুলের পরিবর্তন দেখে আপনার অনুভূতি গুলো দারুন লেগেছে। ছোটবেলায় সেই নির্মল আনন্দ আবার ফিরে পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার। আশা করি ইকোপার্কে যাওয়ার পরিকল্পনা সফল হবে। আপনাদের জন্য রইল শুভকামনা।
আপনার আগের পোস্টে জানতে পেরেছিলেন,আপনি আপনার বান্ধবীদের সাথে স্কুলের পুজোয় ঘুরতে যাবেন। তবে সেই ইচ্ছাটা আপনার পূরণ হয়েছে যেটা দেখে বেশ ভালো লাগলো। আসলে ছোটবেলার বেশ কিছু অনুভূতি আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। যেগুলো এখন অতীত হয়ে গেছে চাইলেও ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়।
তবে আপনার বান্ধবী রাখির জোরাজোরির কারণে আপনি সেখানে গিয়েছেন, গিয়ে কিন্তু অনেকটা সময় বান্ধবীদের সাথে কাটিয়েছেন মজা করেছেন এবং খাবারদাবার গ্রহণ করেছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ বান্ধবীদের সাথে কাটানো আনন্দঘন মুহূর্তটা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।