**এক মুহুর্তের পরিচয়ও, সারাজীবন স্মৃতির পাতায় থাকে**
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
গত মঙ্গলবার শ্বশুর মশাইকে হসপিটালে ভর্তি করে সন্ধ্যার পর মামা শ্বশুরবাড়িতে এসেছিলাম। পরদিন সকাল সাড়ে ছটা নাগাদ ফোন বেজে উঠলো। ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম আয়া মাসির ফোন। দেখে খানিকটা চিন্তিতই হয়ে পড়লাম, কারণ আগের দিন রাত পর্যন্ত শ্বশুর মশাইয়ের পেটে ব্যথা ছিলো। তাই সেটাই বাড়াবাড়ি হয়েছে ভেবে তড়িঘড়ি ফোন তুললাম, জানতে পারলাম শ্বশুর মশাইয়ের বেড ভোরবেলায় পরিবর্তন করা হয়েছে।
যখন কারণ জানতে চাইলাম, তখন মাসি যে সংবাদটা শোনালো সেটা শোনার জন্য আসলে প্রস্তুত ছিলাম না। মাসি বলল শ্বশুর মশাইয়ের পাশের বেডে যে ব্যক্তিটি ভর্তি ছিলেন তিনি ভোরবেলায় হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। কথাটা শোনা মাত্রই একটা অপরিচিত আবছা মুখ ভেসে উঠলে চোখের সামনে। যাকে আগের দিন সন্ধ্যা বেলাতেই দেখে এসেছিলাম।
শ্বশুরমশাই ঠিক পাশের বেড। তিনি আধ শোয়া অবস্থায় বসে ছিলেন এবং নিজের স্ত্রীর সাথে কথা বলছিলেন। যেমনটা হয় পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে মুখটা আবছা বোঝা যায়, অথচ অপরিচিত বলে পুরোপুরি মনে রাখাও সম্ভব হয় না। এমনকি আমি দাঁড়িয়ে থাকার সময়, তার স্ত্রীও আমার আর শশুর মশাইয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, যিনি ভর্তি হলেন তিনি আমার কে হন।
![]() |
---|
গল্প হয়নি ঠিকই, তবে দু'চারটে বাক্য বিনিময় হয়েছিলো সেই মুহূর্তে। এমন একটা সুস্থ মানুষ কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছেন, কথাটা শুনে একটা অদ্ভুত রকমের অনুভূতিতে মনটা ভরে উঠলো। আরও একবার বুঝতে পারলাম সত্যিই জীবন কতখানি অনিশ্চিত, আর মৃত্যু কতটা আকস্মিক।
এরপর আর ঘুম হয়নি। উঠে ফ্রেশ হয়ে ফোনটা চার্জে দিয়েছিলাম। তারপর শুরু হলো এক এক করে সকলের ফোন আসা। আসলে হসপিটালে থাকাকালীন প্রত্যেকে খবর নেওয়ার জন্য ফোন করে ঠিকই, কিন্তু সকলের সাথে এক কথা বারংবার বলতে খানিকটা বিরক্ত বোধ করি কখনো কখনো। এরপর কমিউনিটির একটু কাজ গুছিয়ে রওনা করেছিলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
সেখানে পৌঁছে টেস্টের জন্য বিল করা, ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কেনা, এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে আরও অনেকটা সময় পার হয়েছিলো। বারোটার পর ভিজিটিং আওয়ার শুরু হয়, তখন গিয়ে শশুর মশাইয়ের সাথে কথা বলার জন্য ওয়ার্ডে ঢুকলাম। আমি জানি ততক্ষণে বডি নিশ্চয়ই সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, তাই মনে কোনো দ্বিধা না রেখেই সোজা হেঁটে শ্বশুরমশাইয়ের রুমের দিকে গেলাম।
রুমে ঢোকার মুখেই হঠাৎ করে থমকে দাঁড়িয়ে গেলাম। দেখলাম বডিটা তখনও সেখানেই রয়েছে, মুহূর্তের মধ্যে শরীরে যেন কোনো সার পাচ্ছিলাম না। কয়েক সেকেন্ডের জন্য একেবারে স্থির হয়ে গেলাম। কারণ এমনটা আশা করিনি যে, অতো বেলায় গিয়েও বডিটা ওখানেই দেখতে পাবো।
হসপিটালে আসা যাওয়াতে আমার এমনিতেই ভীষণ ভয়, তবে পরিস্থিতির কারণে খানিকটা ভয় কাটিয়ে উঠতে বাধ্য হয়েছি। কিন্তু এই রকম ভাবে সামনে থেকে বডি দেখার অভিজ্ঞতাটা একদম ভিন্ন। কয়েক সেকেন্ড স্থির থাকলেও সেখান থেকে ফিরে আসিনি। ঠাকুরের নাম হঠাৎ করে মুখে নিয়েছি এবং এগিয়ে গিয়েছি শ্বশুরমশাইয়ের বেডের দিকে।
![]() |
---|
সেখানে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে তার সাথে কথা বলেছি ঠিকই, তবে ওই কয়েক মিনিট আমার কাছে কয়েক ঘন্টার সমান ছিলো। কোনো রকম ভাবে কথা শেষ করে রুম থেকে বেরিয়ে আমি একেবারে গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে বসেছিলাম। ততক্ষণে ভয়ে আমার ভিতরে একটা অস্বস্তি কাজ করছিলো। যদিও জানি ভয় পেয়ে কোনো লাভ নেই কারণ, এটাই আমাদের জীবনের চিরন্তন সত্যি। কিন্তু তথাপি এই ভয়টা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
পরে আয়া মাসির কাছে শুনলাম আজ মানুষটির ছুটি হওয়ার কথা ছিলো। দিন চারেক আগে তার অপারেশন হয়েছে। এরপর তিনি অবজারভেশনে ছিলেন। সমস্ত কিছুই নরমাল ছিল হঠাৎ করে সকালের দিকে হার্ট অ্যাটাক হয়ে সাথে সাথেই তিনি মারা যান। কথাটা শোনার পর ভাবলাম মানুষের নিয়তি কখন কিভাবে পরিবর্তন হয়, সেটা আসলেই জানা সম্ভব নয়।
মানুষটার ছুটি হলো ঠিকই, তবে হসপিটাল থেকে নয়, জীবন থেকে চিরতরে ছুটি পেয়েছেন তিনি। হয়তো বাড়ি যাওয়ার জন্য তার মনে অনেক আনন্দ ছিলো, কিন্তু তিনি কখনোই ভাবেননি সেই বাড়িতে আর কখনোই তার ফেরা হবে না, যেখানে জীবনের অর্ধেকটা সময় তিনি পার করেছেন। আত্মীয় পরিজন সকলেই তার ফেরার অপেক্ষা করছিলো, তবে তাদের কাছে আর তার ফিরে যাওয়া হলো না। আর সেই মানুষগুলোর অপেক্ষার অবসান আর কখনো হবে না।
মানুষটার সাথে কখনো পরিচয় হয়নি, এক মুহূর্তে কয়েকটি বাক্য বিনিময় হয়েছিল মাত্র। তৎসত্ত্বেও তার নিথর দেহটা যখন দেখেছি তখন নিজের ভেতরে একটা অদ্ভুত খারাপ লাগা কাজ করেছে। না জানি এই মানুষটা যার স্বামী, যার বাবা, যার পরিচিত তাদের সেদিন কি অবস্থা হয়েছিলো।
আসলে আমরা সকলেই জানি, এমন পরিস্থিতি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে কখনো না কখনো আসবে। তবুও এই পরিস্থিতি গুলোর জন্য আমরা কখনোই পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারি না। যাইহোক এক ঝলক মানুষটাকে দেখেছিলাম, তবে আজীবন তিনি অস্পষ্ট ভাবে হলেও স্মৃতিতে থাকবেন। ঈশ্বর ওনার আত্মাকে শান্তি দিক, সেদিনও সেই প্রার্থনা ছিলো, আজও তাই চাই। এটাই ছিলো সেই ঘটনা, যেটা আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চেয়েছিলাম।
ভালো থাকবেন সকলে।
এই পোস্টটি পড়ার পর নিজের জীবনের অস্থিরতা এবং মৃত্যু সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করলাম। সত্যিই, মৃত্যু আসতে পারে যে কোনো সময়, এবং আমরা কখনও বুঝতে পারি না কখন সেই মুহূর্ত আসবে।
আপনার অভিজ্ঞতা সত্যিই হৃদয়স্পর্শী। মৃত্যুর অপ্রত্যাশিততা আমাদের জীবনের এক অবধারিত অংশ, কিন্তু কখনও কখনও এমন ঘটনাগুলি আমাদের আরও বেশি ভাবে অনুভব করাতে পারে। এক মুহূর্তের পরিচয়েও আমাদের মনেই বড় জায়গা করে নেয়, এবং মৃত্যু তা স্পষ্টভাবে মনে করিয়ে দেয়। এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিদি।
আসলে আপনি ঠিকই বলেছেন কিছু মানুষের সাথে হয়তোবা অল্প সময়ের জন্য আমাদের কিছু কথাবার্তা হয় কিন্তু হঠাৎ করে যখন শুনতে পাই সেই মানুষটা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তখন খুব খারাপ লাগে আপনার শ্বশুর মশাইকে হসপিটালে ভর্তি করানোর পর মানুষের সাথে আপনার হয়তো বা কয়েক বাক্য কথা হয়েছিল।
কিন্তু পরের দিন যখন শুনতে পেলেন মানুষটা এই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে পরকালে চলে গেছে খুব খারাপ লেগেছিল আমাদের জীবনটা অনিশ্চিত তারপরেও আমরা এই অনিশ্চিত জীবন নিয়ে কত অহংকার করি আসলে মানুষের কখন চলে যেতে হবে এটা আমরা কেউ জানিনা তারপরেও আমাদের এই দুনিয়া নিয়ে কত আশা আকাঙ্ক্ষা অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মনের অনুভূতি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।