"মেধার ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নত হোক, বিত্তশালীদের অর্থে নয় "
![IMG_20220909_211755.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmTCKhT2MZLHYypKwcaMpKf4J85WobG8injYYMaBG7Gzhx/IMG_20220909_211755.jpg)
Hello,
Everyone,
আশাকরি সকলে ভীষণ ভালো আছেন। আর আপনাদের সকলের আজকের দিনটা খুব ভালো কেটেছে।
আজকে আমি একটু অন্য বিষয়ে লিখতে চলেছি। জানিনা আপনারা বিষয়টিতে আমার সাথে সহমত পোষন করবেন কিনা। তবে আমি কিন্তু শুধুমাত্র আমার ব্যক্তিগত মতামত শেয়ার করতে চলেছি।
আসলে লক ডাউনের পর থেকেই আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবার অনেক আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটিয়েছি। একদিকে কাজের অভাব, অন্যদিকে বাজারে জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধি। লক ডাউনের সময় বহু মানুষ তাদের কাজের সংস্থান হারিয়েছেন। আর স্বজন হারানোর কথা আলাদা করে কিছুই বলার নেই। ঔ ভয়ংকর সময়ের কথা মনে পড়লে এখনও যেন ভয় করে। চারিদিকে শুধু মানুষের হাহাকার।
এরপর থেকে সবার জীবনে কমবেশি পরিবর্তন এসেছে। আর সবথেকে বেশি পরিবর্তন বোধহয় ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে এসেছে। মোবাইল ফোনে পড়াশোনা হতে পারে, আমরা সেটা হয়ত স্বপ্নেও ভাবিনি। কিন্তু সেটা হয়েছে। এতে লেখাপড়ার মান বহুগুনে কমে গেছে। কারন ঔ সময় সব স্টুডেন্টদের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল পরীক্ষা দিলেই পাশ করা যাবে। বাড়ি বসে বই খাতা খুলেও অনেকে পরীক্ষা দিয়েছে।
![IMG_20220909_224310.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmVqqq155mUuRAoY17MDmAmeBHuJBbao3MjQr1Vea7cnwP/IMG_20220909_224310.jpg)
যাইহোক, এরপরে সবকিছু ধীরে ধীরে ঠিক হলো। অনেকেই ভাবতে পারেন আমি আজ কেন এইসব কথা লিখছি। আসলে আজকে আমি আমার ননদের বড় ছেলেকে নিয়ে ওর নতুন কলেজে গিয়েছিলাম। এই বছর সে সরকারি শিল্প প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠানে(Government Industrial Training Institute) এ প্রথমবর্ষে ভর্তি হলো। এই কলেজটা কলকাতার গড়িয়াহাটে অবস্থিত। ওর ট্রেনে যাতায়াত করার অভ্যাস নেই। আর আমাদের বাড়ি থেকে যেহেতু অনেকটাই দূর তাই ওর সাথে একজনকে যেতে হবে। ননদের ছোটো ছেলের স্কুলে পরীক্ষা চলছে, তাই অগত্যা আমাকেই যেতে হলো।
![IMG_20220909_211813.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmUP9PQjArHkiz71YHuW4hMvVKEgoyLGrXHMgvFpXfhgCU/IMG_20220909_211813.jpg)
তবে যাওয়ার পর মনে হলো, একটা ভালো দিন কাটালাম। কিছু মানুষের সাথে ভালো সময় কাটালাম। অনেকের জীবনের কষ্টের কথা শুনলাম। ওখানে প্রথম দিন সকলকে সকাল ১০.৩০ এর মধ্যে পৌঁছে যেতে বলেছিল। সেই মতো সকাল ৮.১০ নাগাদ আমরা বাড়ি থেকে বেড়িয়ে ট্রেনে করে সময় মত কলেজে পৌঁছালাম। এরপর অঙ্কনের (ননদের ছেলে) ক্লাস শুরু হলে আমরা কয়েকজন অভিভাবক পাশে একটু ফাকা জায়গা ছিল, সেখানে গাছের নিচে বসলাম। ক্লাস শেষ হতে বিকাল ৪ টে বাজলো। তাই সারাদিন ওখানে বসে আমরা সকলেই গল্প করলাম।
তখন নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে জানতে পারলাম। ঔ মানুষ গুলো লক ডাউনের সময় কতো কষ্ট করেছে। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালানোর জন্য কতো কষ্ট করে একটা মোবাইল কিনেছে। অনেক কষ্ট করে তবে আজকে তাদের সন্তানদের এই কলেজে ভর্তি করেছে। যাতে এখানে পড়াশোনা করে তারা চাকরি করতে পারে। নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে পারে।
এটা যেহেতু সরকারি কলেজ তাই এখানে খরচ অনেকটাই কম। বেসরকারি কলেজে পড়াশোনা করানোর মতো সামর্থ্য ঔ মানুষ গুলোর সত্যিই নেই। আমার ননদের ছেলে কোনোদিন অভাব কি জিনিস তা বোঝেনি, তাই আমি জানি না , এই কলেজে পড়াশোনার গুরুত্ব ও কতটুকু বুঝবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে ছেলেমেয়ে গুলো অতো লড়াই করে, অতো দূর থেকে পড়তে এসেছে, ওরা বুঝতে পারবে এই লড়াইটা সঠিক ভাবে লড়লে, তবেই জীবনের লড়াইয়ে কষ্ট কম।
![IMG_20220909_211835.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmW8GX9EbGBjSGYtCiaiB2WcjdJi1aizN9heRCdQm2mcHP/IMG_20220909_211835.jpg)
অঙ্কন আমার ননদের ছেলে বলেই যে আমি তার ভুলগুলো বলতে পারবো না, তেমন ভালো মামী আমি নই, আর হতেও চাইনা। কারণ আমি বিশ্বাস করি সব সত্যি সবসময় সত্যিই হয়। আজকে হয়তো ওর সাথে কলেজে না গেলে জানতেই পারতাম না, কতো মানুষ আমাদের থেকেও আর কতো কঠিন লড়াই করছে। সেখানে অঙ্কন না চাইতেও কতো কিছু পেয়ে যায়। কখনো কখনো সেই সব জিনিসের সঠিক মূল্যায়ন ও করতে পারে না। অথচ আজ ওর বয়সী ৩/৪ জন ছেলেকে দেখলাম। কষ্টের ছাপ ওদের মুখে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। টিফিনের সময় অঙ্কন কি খাবে না খাবে সেটাতেই ব্যস্ত, অথচ ঐ ছেলে গুলো বাড়ি থেকে মায়ের আনা মোটা চালের ভাত হাসিমুখে খেয়ে নিলো।
আজকে ঔ বাচ্চাগুলোর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখলাম। আমি খুব স্বচ্ছলতার মাঝে বড়ো হয়নি ঠিক কিন্তু আমি নিজেও ওদের মতো অতো কষ্ট করিনি। আমি হয়তো জীবনে কিছু করতে পারিনি। তবে মন থেকে ওদের জন্য প্রার্থনা করি, ওরা প্রতিষ্ঠিত হোক। জানিনা আর কোনো দিন মানুষগুলোর সাথে দেখা হবে কিনা। কিন্তু ওনরা সকলে যেন খুব ভালো থাকে।
সবশেষে আমি একটাই কথা বলতে চাই, এইরকম সরকারি কলেজ আরও তৈরি করা উচিৎ। যাতে শুধুমাত্র আর্থিক অভাবে বেসরকারি কলেজে ভর্তি হতে না পেরে, অনেক মেধাবী ছাত্র ছাত্রী তাদের জীবনের লড়াই সারাজীবন ধরে লড়ে যেতে বাধ্য হয়।
![IMG_20220909_211846.jpg](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmfNmtgf6uEPeUMy7RqdbTvMoafxFyT2dYcx6KdTAHxtXo/IMG_20220909_211846.jpg)
সকলে ভীষণ ভালো থাকবেন, চেষ্টা করবেন যদি আপনার আশেপাশে এমন কোনো মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী থাকে তাদের একটু সাহায্য করতে। দেখবেন এক অদ্ভুত শান্তি পাবেন ভেতর থেকে। আমি করেছি তাই নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকেই কথাটা বললাম।
শুভ রাত্রি।
পার্থ চ্যাটার্জীর অবস্থা প্রমাণ করে কি কারণে সমাজে শিক্ষা ক্ষেত্রে কেনো এই অবস্থা বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে। যদিও দারিদ্র্য ঘরের ছেলে মেয়েদের অর্থের অভাব কিন্তু সমীক্ষা বলে প্রকৃত প্রতিভা সেইসব ঘরেই বেশি দেখা যায়।