"সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মতোই জন্ম ও মৃত্যু জীবনের চিরন্তন সত্য"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন। আজকাল যে পরিমাণে গরম পরতে শুরু করেছে, আপনাদের সকলকে অনুরোধ করবো সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য। গত ২-৩ দিন আমাকেও কিছু কাজের কারণে বাড়ির বাইরে বের হতে হয়েছিলো। ইতিপূর্বে আপনাদের জানিয়েছি, আমি দিদির বাড়িতেও গিয়েছিলাম। কি যে প্রচন্ড গরম বাইরে সেটা খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি।
রোদে তীব্রতা এতটাই বেশি যে, এই মুহূর্তে আমার রীতিমত সর্দি কাশি শুরু হয়ে গেছে, কারণ বাইরে থেকে গিয়ে হয় ফ্যানের নীচে না হলে এসি রুমে ঢুকতে হচ্ছে। ফলতো ঠান্ডা লেগে যাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। যাইহোক আজও আমি বাইরে বেরিয়ে ছিলাম এবং বাড়িতে ফিরতেও বেশ কিছুটা দেরি হয়েছিলো ট্রেন লেট হওয়ার কারণে। যদিও বাড়িতে ঢুকে দেখেছি শাশুড়ি মা বাড়িতে নেই, ভেবেছিলাম হয়তো পাশের দোকানে প্রয়োজনীয় কোনো জিনিস আনতে গেছেন।
শ্বশুরমশাই তখন চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলেন ভেবেছি তিনি ঘুমাচ্ছেন। তাই আর ডাকিনি। এরপর ফ্রেশ হয়ে আমি বুমিং এর কাজ করতে বসেছি, আর তখন শ্বশুরমশাই উঠে গিয়ে জানালেন আমাদের একেবারে সামনের বাড়ির জ্যেঠিমা অসুস্থ। আমার শাশুড়ি মা সন্ধ্যা থেকেই সেখানে আছেন।আমি ভেবেছিলাম হয়তো বয়স জড়িত কারণে যেমনটা মাঝেমধ্যে হয়ে থাকে শরীরটা সেই কারণেই খারাপ। তাই খুব বেশি আমল না দিয়ে আমি আমার কাজ করতে বসেছিলাম।
![]()
|
---|
কিছুক্ষণ বাদে শাশুড়ি মা হন্তদন্ত হয়ে এলেন এবং আমার শশুর মশাইয়ের জন্য কিনে রাখা প্যাম্পারস বের করতে করতে আমাকে জানালে যে, ওই জ্যেঠিমার শরীর অনেক খারাপ, বোধহয় স্ট্রোক হয়েছে। হসপিটালে নিয়ে যাবে। ওনাদের বাড়িতে যেহেতু অ্যাডাল্ট প্যাম্পারস নেই তাই শাশুড়ি মা নিতে এসেছেন। একথা শোনার পর আর না গিয়ে থাকতে পারলাম না।
তাই শাশুড়ি মায়ের সাথে সাথে আমিও গেলাম। গিয়ে দেখি একেবারেই অচৈতন্য অবস্থাতে তিনি শুয়ে আছেন এবং সম্পূর্ণ শরীর ছেড়ে দিয়েছেন। এমত অবস্থায় ওনাকে আমি, শাশুড়ি মা এবং ওনার বৌমা তিনজন মিলে তৈরি করে দিলাম হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সত্যি বলতে কোনো বয়স্ক মানুষ শরীর ছেড়ে দিলে এতটাই ভারী হয়ে যায় যে, অন্যদের পক্ষে তাকে রেডি করা খুবই কষ্টকর।
কিন্তু কোনো উপায় না পেয়ে আমাদেরকে সেটা করতে হলো। ওনার শরীরও যথেষ্ট খারাপ। কোনো সেন্স ছিল না মুখ থেকে অনবরত গ্যাজা বের করছিলেন। তবে কেউ ডাকলে কোনো সাড়া দিচ্ছিলেন না।
তবে যে বিষয়টা আমি খেয়াল করলাম, উনি অচৈতন্য অবস্থাতেও ওনার হাত-পা নাড়াচ্ছিলেন। ফলতো একটা বিষয় নিশ্চিত হলাম হয়তো ওনার স্ট্রোক হলেও প্যারালাইসিস হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাড়িতে অবশ্য সন্ধ্যাবেলা ডাক্তার ডেকেছিল তিনি কিছু ওষুধ দিয়েছিলেন ঠিকই, তবে ওনাকে সেই ওষুধ খাওয়ানো যায়নি। কারণ ওষুধগুলো খাওয়ানোর চেষ্টা করলেও উনি না গিলে, মুখ থেকে সেটা ফেলে দিচ্ছিলেন।
![]()
|
---|
যাইহোক সবকিছু করে সকলে মিলে ওনাকে এম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে এলাম। তারপর এসে আমি বুমিং এর কাজ শেষ করলাম। আজ অনেকটাই দেরি হয়েছিলো বুমিং এর কাজ করতে। তারপর শুরু করলাম ভেরিফিকেশন। ভেরিফিকেশন করতে গিয়েও এমন একটা পোস্ট পড়লাম যেখানে এক্সিডেন্টে একজন মানুষের মৃত্যুর বিষয় নিয়ে সবুজ ভাই পোস্ট লিখেছেন, যেটা পড়ে মনটা আরও খারাপ হয়ে গেল।
একটা মানুষের জীবনের কত পরিকল্পনা থাকে, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনেকে কত কিছু আশা থাকে, এমনকি অনেক সময় দেখা যায় যে একটা ছোট্ট ইচ্ছে পূরণ করার জন্যও আমরা অনেক সময় আগামীকালের বা ভবিষ্যতের অপেক্ষা করি।
কিন্তু আদেও কি আমাদের প্রত্যেকের জীবনে ভবিষ্যৎ বলে নিশ্চিত কিছু আছে? আজ আমি আপনাদের সাথে হয়তো ওনার শারীরিক অবস্থা নিয়ে পোস্ট লিখছি, কিন্তু আগামীকাল যে আমি এই পৃথিবীতে সুস্থ অবস্থায় বেঁচে থাকবো তার কি কোনো গ্যারান্টি আছে?
প্রতিনিয়ত শ্বশুরমশাইকে দেখি আর ভাবি, না জানি কোন অশুভ মুহূর্তে আমাদেরও ওনাকে হারাতে হবে। তবে কে বলতে পারে ওনার আগেই কোনো সুস্থ মানুষকে হারিয়ে ফেলবো না? আমাদের এই জীবনে কত হিংসা, বিবাদ, অসৎ আচরণ, এই সমস্ত কিছুর সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু সত্যি কথা বলতে, এই একটা বিষয়গুলো যদি আমরা প্রত্যেকে মনে রাখি, তাহলে হয়তো অন্যের প্রতি আমাদের আচরণে কিছুটা হলেও বদল আসবে।
আমরা যতই চাই না কেন আমাদের জীবনের চিরন্তন সত্যিই মৃত্যুটাকে কিছুতেই আটকাতে পারবো না। সেটা নিজের ক্ষেত্রেই হোক বা খুব আপনজনের ক্ষেত্রে। তাই যেটা বদলানোর ক্ষমতা আমাদের আছে সেটা হলো নিজেদের আচরণ ও ব্যবহার।তাই সেটা বদলানোর চেষ্টা করলে বোধহয় একটা সুস্থ জীবন নিজের কাটাতে পারবো এবং আমার পারিপার্শ্বিক সকলকে তেমনটা শেখাতেও পারবো।
![]()
|
---|
যাইহোক আজকের ঘটনাটা আরও একবার মনে করালো, আমরা যতক্ষণ সুস্থ আছি ততক্ষণ ঈশ্বরের কাছে জীবন নিয়ে অভিযোগ নয়, তাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। তিনি আমাদেরকে সুস্থ রেখেছেন এই কারণে। গত কয়েক বছর ধরে নিজের কাছের মানুষদের এতো অসুস্থতা দেখেছি, এত বেশি হাসপাতালে সময় কাটিয়েছি যে, আজকাল রাস্তা দিয়ে চলার সময়ও অ্যাম্বুলেন্সে করে কোনো রোগীকে নিয়ে যেতে দেখলে, একটাই প্রার্থনা আসে যে, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসুন। কারণ পরিবারের একজনের অসুস্থতা শারীরিক হলেও, বাকি সকলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তার প্রত্যক্ষ উদাহরণ আমি নিজে।
এই গরমে আপনারা প্রত্যেকে অবশ্যই বাইরে বেরোনোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করবেন, খুব প্রয়োজন ছাড়া চেষ্টা করবেন দিনের বেলায় বাইরে না বেড়োতে। বেশি পরিমাণে জল খাবেন, আর সহজপাচ্য খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। ছোটো ছোটো সাবধানতা আমাদেরকে অনেক বড় সমস্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারে। আপনাদের সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের লেখা শেষ করছি। ভালো থাকবেন সকলে। শুভ রাত্রি।
নিশ্চয়তা সত্যিই খুব অল্প জিনিসেরই থাকে জীবনে। আপনার কথাগুলো পড়ে মনটা ভারী হয়ে গেল। জীবন আসলে বড় অনিশ্চিত তাই প্রতিটা মুহূর্তকে যতটা সম্ভব ভালোভাবে বাঁচা উচিত। যতটা পারি, মানুষকে ভালোবাসা, পাশে থাকা, আর নিজের ইচ্ছেগুলো আজই একটু একটু করে পূরণ করার চেষ্টা করা সবার আগে দরকার। উনার সুস্থতা কামনা করছি, আশা করি উনি দ্রুতই আরোগ্য লাভ করবেন। আপনার জন্য ও শুভকামনা
Congratulations!! Your post has been upvoted through steemcurator04. We encourage you to publish creative and quality content.
Curated By: @miftahulrizky
@miftahulrizky thanks a lot for your support.
সত্যি আপু আপনার লেখাটি অত্যন্ত হৃদয়ের স্পর্শী। বাস্তবতার আলোকে আপনি যেভাবে জীবনের অনিশ্চয়তা ও মৃত্যু চিরন্তন সত্য তুলে ধরেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আপনার মানবিকতার দায়িত্ববোধ এবং চারপাশের মানুষদের প্রতি যত্নশীল দৃষ্টিভঙ্গি সত্যিই অনুকরণীয়। বিশেষ করে এই গরমের সময় আপনার সতর্কতা ও পরামর্শ আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আল্লাহ অশেষ রহমতে অসুস্থ জেঠিমা শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠবেন। আপনার মত মানুষের চিন্তা ভাবনা ও কাজ আমাদের সমাজে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।
Congratulations!! Your post has been upvoted through steemcurator04. We encourage you to publish creative and quality content.
Curated By: @miftahulrizky
Thank you for your support @miftahulrizky. 🙏