"অন্যরকম ভাবনা"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
ধরতে গেলে প্রায় দু দিন সময় কাটিয়ে এলাম আমার গ্রামে। প্রায় এই কারণেই বললাম কারণ, আজ দুপুরের পর ডাক্তার দেখানোর জন্য রাখিদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। গ্রামে থাকলেও এই দুদিন সময়ের মধ্যে নিজের বাড়িতে পা রাখার সাহস অর্জন করতে পারিনি।
জানিনা এই লাইনটা পড়ার পর আপনারা কতজন আমাকে কিভাবে জাজ করবেন, কিন্তু এটাই সত্যি। বেশ কয়েকবার রাখি আমাকে বাড়ি যাওয়ার কথা বলেছে, তবে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে বিষয়টাকে এমন ভাবে এড়িয়ে গেছি যাতে ওর কাছে আমার এই ভয়টা ধরা না পড়ে।
এবার যাওয়ার আগে ভেবেছিলাম সকালবেলায় বাড়িতে গিয়ে পুরনো কিছু জিনিস নাড়াচাড়া করবো। কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস বাড়ি থেকে নিয়ে আসবো। কিন্তু এই যে বললাম সেই সাহসটুকু আর জোগাড় করে উঠতে পারলাম না।
বাড়িতে যাবো অথচ কোনো ঘরেই কাউকে দেখতে পাবো না, এই বিষয়টা ভাবলেই বুকের ভেতরটা এত খালি হয়ে যায় যে, নিজের লোক দেখানো হাসিমুখটাকে বেশিক্ষণ বাঁচিয়ে রাখতে পারি না। চোখের কোণে জল ছলছল করে, কথা বলতে গেলে গলার কাছে দলা পাকিয়ে এসে কেমন যেন কথাগুলোকে আটকে দিতে চায়। সে এক অদ্ভুত অনুভূতি।
এই অনুভূতির নাম কি সত্যিই আমি জানিনা। খুব ইচ্ছে ছিল আপনাদের সাথে এবার আমাদের বাড়ির ছবি, ফেলে রাখা ঘরের ছবি, আরো ছোট ছোট কিছু স্মৃতি পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করবো, কিন্তু তার কোনোটাই করে উঠতে পারিনি।
ছবি তোলা তো দূরে থাক, নিজের ভিটে বাড়িতে পা দেওয়ার সাহসটুকু অর্জন করতে না পারাটা, এখন ভিতরে ভিতরে আরও বেশি কষ্ট দিচ্ছে। কারণ আজ সন্ধ্যায় ফিরে এসেছি শশুর বাড়িতে।
![]() |
---|
এই বাড়িতে ফিরতে কখনো কখনো অনেক বেশি অস্থিরতা কাজ করে, ঠিক যেমনটা হয়েছিল ২২ দিন হসপিটালে কাটানোর পর। আবার কখনো কখনো এই বাড়িতে ফেরার কথা ভাবলেও কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসে, ঠিক যেমনটা আজ হচ্ছিলো।
মেয়েদের নিজস্ব একটা বাড়ি সত্যিই দরকার, এই অনুভূতিটা এতখানি প্রবল এর আগে হয়নি। রাগ হলে, অভিমান হলে, কখনো কখনো মনে হয়েছে নিজের একটা বাড়ি হলে সেখানেই চলে যেতাম। কিন্তু এখন আর রাগ বা অভিমান হলে নয়, কেমন যেন প্রাণ ভরে বাঁচার জন্য নিজের একটা বাড়ির খুব প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।
২৩ টা বছর যে বাড়িতে কাটিয়েছি, যে বাড়ির প্রতিদিন কোণ আমার পরিচিত, আজ সেই পরিচিত বাড়িটিও যেন আমার কাছে বড্ড বেশি অপরিচিত লাগে। ভয় হয় ওই বাড়ির গেট খুলে ভেতরে ঢুকতে। চারিদিক থেকে কেমন যেন আপন মানুষগুলোর গলার স্বর, তাদের স্মৃতি আমাকে চেপে ধরতে আসে। যাদের হারিয়েছি চিরতরে।
এই অনুভূতি কাউকে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। আমি এখন হয়তো আপনাদের সাথে কথাগুলো লেখার মাধ্যমে শেয়ার করছি, কিন্তু চোখ থেকে কি কারনে জল গড়িয়ে পড়ছে আমি জানিনা। এমন অনুভূতি কি সকলের হয়? বোধহয় হয় না। কারণ অনেকেই বিয়ের পর বাপের বাড়িতে এসে কি আনন্দ, কি খুশিতে দিন যাপন করে। এই পূজাতে গিয়ে পুরোনো বান্ধবীর সাথে দেখা হয়েছে, যার ছেলেকে তার মা নিয়ে ঘুরছে, আর ও আমাদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।
আমার একটু হিংসে হলো জানেন? কেন আমি আমার বিয়ের পর এইরকম জীবন পেলাম না? কেন আমিও বাপের বাড়ি এলে আমার পছন্দের রান্না তৈরি করে, আমার মা আমার পথ চেয়ে বসে থাকতো না? কেন কখনো আমার জীবনে এই সুযোগ আসলো না, যেখানে আমার সন্তানের দায়িত্ব মায়ের উপরে দিয়ে আমি বান্ধবীদের সাথে ঘুরে বেড়াবো? যদি বলেন এটা অভিযোগ তাহলে তাই। আর যদি বলেন এটা মনের চাপা কষ্ট সেটাও মিথ্যে নয়।
![]() |
---|
এখন কেমন যেন জীবনটাকে বড্ড বেশি ভারী মনে হয়, যার ভার আর টেনে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করে না। মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনের ইতি টানি এখনই। পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষা তো কবেই বন্ধ করে দিয়েছি। বেঁচে থাকাও যে কখনো এতটা কঠিন হবে, এটাই বুঝে উঠতে পারিনি। দিন দিন কেমন অতলে হারিয়ে যাচ্ছি। রোবটের মত জীবন যাপন কখনো কখনো অসহ্য হয়ে ওঠে।
আগের দিনের পোস্টে আপনাদের সাথে আনন্দের কিছু মুহূর্ত শেয়ার করেছি। ভেবেছিলাম ও বাড়ি থেকে ফিরে এ বাড়িতে এলে মনটাও অনেকটা খুশি হয়ে যাবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন একদমই তার উল্টোটা হলো। মনটা যেন আরো বেশি ভারী, আরো বেশি খারাপ হয়ে গেলো। কেন এরকম হচ্ছে জানিনা।
তবে অনেক বেশি বিরক্তি, অনেক বেশি অস্বস্তি, মনের ওপরে চেপে বসেছে গত কয়েকদিন ধরে। তার থেকে নিস্তার পাওয়ার জন্য ছুটে গিয়েছিলাম নিজের ফেলে আসা গ্রামে। যেখান থেকে একরাশ কষ্ট, নিরাশা, অনেক বেশি হতাশা নিয়ে আবার এই বাড়িতে ফিরলাম, যেখানে আগে থেকেই দম বন্ধ হয় আমার।
তবে আবারো চলবে ঘড়ির কাঁটা, সপ্তাহ ঘুরবে, নিজের মতো মাসের পর মাস কেটে যাবে, দেখতে দেখতে বছর শেষে আবার নতুন বছর ফিরে আসবে, আমিও বেঁচেই থাকবো এই বাঁচা না বাঁচার মাঝখানে। এভাবেও কি জীবন কাটানো যায়? এভাবে বেঁচে থাকাকে কি আদেও বেঁচে থাকা বলে?
জীবন যত সহজ ভাবি ততটা সহজ নয়। কঠিন ভাবে ভাবতে গেলে বাঁচাও কঠিন হয়। এটাই আমার বর্তমান মানসিক স্থিতি। এ থেকে কবে, কিভাবে, মুক্তি পাবো জানিনা। তবে সবকিছু কেমন যেন থমকে গেছে।
[ছবিগুলো আমি এর পূর্বেও ব্যবহার করেছি]
আপনার লেখাটা পড়তে গিয়ে আমার নিজের অনুভূতির সাথে মিল খুঁজে পেলাম। প্রায় এক বছর আমি আমাদের বাড়িতে যাই না। আমার ছেলেরা ও তাদের বাবা বলে তোমার কি একবারও
যেতে ইচ্ছে করে না তোমাদের বাড়িতে। কারণ আমি প্রায়ই গ্রামে যাই কিন্তু বাড়িতে না গিয়ে ভাইদের অফিসে বসে থাকি বা অন্য জায়গাতে যাই। ওদের বলা হয় যে আমি যায় কারণ ঐবাড়িতে গেলে এখন কাউকে খুঁজে পাই না। দমবন্ধ হয়ে আসে আমার। তারচেয়ে দূরে থাকলে মনে হয় সবকিছু আগের মতোই আছে। ওদের বললেও হয়তো আমার অনুভূতি বুঝবে না। যারা এর মাঝ দিয়ে না গেছে তারা কখনই এই অনুভূতি বুঝতে পারবে না।
ঠিকই বলেছেন ,সময় কেটে যাবে তার নিয়মে। কিন্তু কিছুই আর আগের মতো হবে না। তারপরও বেঁচে থাকবো।
Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator08. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.
Curated by @miftahulrizky
@miftahulrizky,Thank you so much for your encouraging support, sir .
Congratulations! This post has been upvoted through steemcurator08. We support quality posts, good comments anywhere, and any tags.
Curated by @miftahulrizky
Thank you so much for your support @miftahulrizky.
সত্যি কথা বলতে কি জানেন তো নিজের স্মৃতি নিজের ছোটবেলার অভিজ্ঞতা সবকিছুই আমরা চেষ্টা করি সবার সাথে তুলে ধরার জন্য কিন্তু আপনি আপনার বাড়িতে যাওয়ার সাহস করতে পারেননি কারণ আপনার ফেলে আসা স্মৃতি আপনার মায়ের স্মৃতি বাড়িতে গিয়ে আপনি কাউকে দেখতে পাবেন না এই ভয় আপনার ভেতরে কাজ করছিল চেষ্টা করেও আপনি নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আনতে পারেননি এটার নাম হয়তো বা মায়া যেটা আপনি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি তারপরেও বলবো নিজের বাড়ি থেকে একবার ঘুরে আসতেন দেখবেন একটু হলেও ভালো লাগবে।