**ছোট্ট সফলতার গল্প**
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
সফলতা ছোটো হোক বা বড়ো, ছোটো বেলায় তার আনন্দ হয় অসীম। আমার আজকের লেখা পোস্টে আমি তেমনি একটি ছোট্ট সফলতার গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।
বর্তমানে অনেক বাবা-মায়ের চিন্তা ধারার বদল হয়েছে এ কথা সত্যি, তবে একটা সময় ছিল যখন বাবা মায়েরা নিজেদের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো নিজেদের সন্তানের মাধ্যমে পূর্ণ করার আশা রাখতেন। তখনকার বাবা মায়ের চিন্তা ভাবনা ছিলো, নিজের জীবনে হয়তো কিছু পাওয়া হয়নি, তবে নিজের সন্তানকে সবটুকু দেওয়ার চেষ্টা তারা করেন।
তবে সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতির বদল ঘটেছে, তার সাথে আধুনিক যুগের সন্তানদের মানসিকতাও। আর সেই মানসিকতার সাথে তাল মিলিয়ে আজকাল অভিভাবকেরাও নিজেদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা করেন। যাতে সন্তানের সাথে নিজেদের সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি না হয়।
কারণ আজকালকার দিনের সন্তানেরা বড্ড বেশি আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতার হয়। ফলতো যদি তাদের মনে হয় বাবা-মায়ের সাথে তাদের মানসিকতার কোনো মিল হচ্ছে না, তখন তারা নিজেরাই বাবা মায়ের সাথে দূরত্ব তৈরি করে নেয়।
একটা সময় বাবা মায়ের ইচ্ছার দায়ভার সন্তানেরা নিজেদের উপরে নিয়ে নিতো এবং নিজেদের ইচ্ছাগুলোকে ত্যাগ করতো আনায়াসে। কিন্তু আজকাল ছেলে মেয়েরা সেটা করে না। তাই বাবা মায়েরা নিজেদের ইচ্ছাগুলো সন্তানের উপরে চাপানোর চিন্তা-ভাবনা ধীরে ধীরে বন্ধ করছেন। কারণ আজকাল সন্তানদের সাথে জোর করলে তার পরিণাম সম্পর্কে সকলেই কম বেশি সচেতন হয়েছেন।
যাইহোক হয়তো ব্যক্তিগতভাবে মাতৃত্বের বা সন্তানকে বড় করে তোলার কোনো অভিজ্ঞতা আমার নেই। তবে আশেপাশে সকল বাচ্চাদের বড় হতে দেখে উপরোক্ত ধারণাগুলোই মাথায় আসে। একটা সময় আমার দিদি খুব চেয়েছিলো নাচ শিখতে।
কিন্তু সেই সময় আর্থিক কারণে ওর স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এরপর সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য ও আমাকে নাচের স্কুলে ভর্তি করেছিলো। তবে সেটাও কয়েক বছর পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। এরপর যখন তিতলি হলো, তখনও খুব চেয়েছিল তিতলিকে নাচের ক্লাসে ভর্তি করবে এবং করেও ছিলো। তবে নাচের প্রতি তিতলির খুব বেশি আগ্রহ কোনোদিনই লক্ষ্যিত হয়নি।
শুরুর দিকের ক্লাসগুলোতে খুবই উৎসাহের সাথে গেলেও ধীরে ধীরে ওর যেন নাচের প্রতি আগ্রহ কমতে থাকে। একটা সময় ও নিজে থেকেই আর নাচের ক্লাসে যেতে চাইনি। অগত্যা দিদিও ওকে আর জোর করেনি।
তবে বরাবর ক্যারাটে ওর খুব পছন্দের ছিলো। টিভিতে ক্যারাটে দেখতে পছন্দ করতো এবং দিদিদের ফ্ল্যাটের সামনেই একটা জায়গাতে ক্যারাটে শেখানো হতো, খুব ছোটবেলা থেকেই ও দাড়িয়ে সেগুলো দেখত এবং উপভোগ করতো।
![]() |
---|
আজ থেকে প্রায় দু বছর আগেই ওকে ক্যারাটে ক্লাসে ভর্তি করে দিয়েছিলো এবং প্রত্যেকটা ক্যারাটে ক্লাস ও ভীষণ উৎসাহে সহিত করতো। শুরুর দিন ও যতটা উৎসাহী ছিলো এই ক্যারাটে ক্লাসে যোগদানের জন্য, আজও পর্যন্ত ওর মধ্যে সেই আগ্রহ, সেই উৎসাহ চোখে পড়ে।
আপনাদের হয়তো মনেও থাকবে বেশ কয়েক মাস আগে ওর পরীক্ষা ছিলো বলে আমি দাদাকে নিয়ে ওর সাথে সেখানে গিয়েছিলাম, যার অভিজ্ঞতা একটা পোস্টের মাধ্যমে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম।
গতকাল ওর দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা ছিলো এবং এই পরীক্ষাতে ও প্রথম হয়েছে। আর ওর আনন্দ ছিলো সীমাহীন। যদিও পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে মাকে বলেই গিয়েছিল পরীক্ষা খুব ভালো হবে। ওই যে আমরা প্রত্যেকেই জানি যে বিষয়ে আমাদের আগ্রহ থাকে সেটা যেন অল্পতেই আমরা রপ্ত করতে পারি। ক্যারাটেটাও তিতলির কাছে তেমন।
তবে খুব সত্যি কথা বলতে যে প্রথম হবে এমনটা আমার দিদি আশা করেনি। কারণ বাড়িতে আলাদাভাবে কখনো তেমন প্র্যাকটিস করে না, যতটুকু করার সেটা ওই ক্লাসেই। কিন্তু ওই যে এর প্রতি একটা ভালোলাগা যেহেতু আছে, তাই যতটুকু করে ভীষণ মন দিয়েই, তাই বোধহয় প্রথম হওয়া সম্ভব হয়েছে।
![]() |
---|
একটা মেডেল পেয়েছে। বাড়িতে এনে স্নান করে সেটা আবার ঠাকুরের আসনের সামনে রেখে ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। জীবনের প্রথম মেডেল প্রাপ্তি বলে কথা, ঈশ্বরকে তো ধন্যবাদ দিতেই হয়। ওদের বাড়িতে ওর বাবার, মার চাকরি জীবনে প্রাপ্য অনেক মেডেল আছে। তার সাথে আজ মেয়ে হিসেবে ও একটা মেডেল এনেছে। তাই ও ভীষণ খুশি।
আর ভাইকেও যথারীতি উৎসাহিত করছে একটা মেডেল আনার জন্য, তাহলে নাকি ওদের ফ্যামিলির প্রত্যেকের নামের মেডেল থাকবে। ছোটো বয়সের যেমন ভাবনা হয়, ঠিক তেমন কথাই বলে। সন্ধ্যেবেলায় দিদি ফোন করে আমাকে পুরো বিষয়টা বললো, তার সাথে হোয়াটসঅ্যাপে ছবিও পাঠিয়েছে।
ছবিগুলো দেখে আমারও ভীষণ ভালো লেগেছে, হয়তো সফলতা ছোটো কিন্তু ওর বয়সে এতোটুকু প্রাপ্তি ওকে অসীম আনন্দ দিয়েছে, আর পাশাপাশি আমাদের সকলকে গর্বিত করেছেন। সত্যিই বোধহয় বাচ্চাদেরকে নিজেদের পছন্দের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দিলে, তারা সেগুলোতেই সবথেকে নিজেদেরকে সুন্দরভাবে প্রকাশ করতে পারে।
হয়তো জোর করে ওকে নাচের ক্লাসটা করানো যেতো, কিন্তু সেটাতে না ও মন দিতে পারতো, আর না কখনো প্রথম হতে পারতো। সবটাই বাধ্য হয়ে করতো। অথচ এই ক্যারাটে ক্লাসে যাওয়ার শুরু থেকেই ও যতটা আগ্রহ নিয়ে করেছে, আজও আগ্রহ তেমনটাই রয়েছে। আর এই কারণেই হয়তো আজ এই সাফল্যটুকু ওর রপ্তের খাতায় যোগ হয়েছে।
এমনভাবেই ছোটবেলা থেকে বিকশিত হতে দেওয়া উচিত প্রত্যেকটি শিশুকে, শুধু তাদের পাশে থেকে তাদেরকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিতে হবে। তাহলে বোধহয় এইরকম ছোট্ট ছোট্ট সফলতা ওদের জীবনে বড় কিছু বয়ে আনবে।
জীবনে এই ছোট্ট সফলতার গল্প আপনাদের পড়ে কেমন লাগলো এবং সন্তানদেরকে আজকের দিনে বড় করার ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দেওয়া আদেও কতটা জরুরী, সেই বিষয়ে আপনার ব্যক্তিগত মতামত অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে শেয়ার করবেন। তিতলিকে আশীর্বাদ করবেন। সকলের ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।
You have been supported by the Team 02: