"শূন্যতার অনুভূতি"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
কেমন আছেন আপনারা সকলে? আশা করছি প্রত্যেকে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং সকলের আজকের দিনটা বেশ ভালো কেটেছে।
তবে আমার আজকের দিনটা একেবারেই ভালো কাটেনি, একাকী দিন যাপনের সেই গল্প আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। খুব সত্যি কথা বলতে কিছু কিছু পরিস্থিতি আমাদেরকে জীবন সম্পর্কে ভিন্ন রকম ভাবতে বাধ্য করে। আমি জানি আমার এই কথার সাথে অনেকেই সহমত পোষণ করবেন, তবে প্রত্যেকের জীবনে সেই পরিস্থিতি গুলো অবশ্যই ভিন্ন।
সংসার জীবনে মাঝে মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়, যখন মনে হয় আশেপাশে কেউ না থাকলে ভালো লাগতো। যদি কারোর সাথে কথা বলতে না হতো, যদি চুপচাপ নিজের মতন করে সময় কাটানো যেতো, তাহলে বোধহয় সবথেকে ভালো হতো।
কিন্তু দেখা যায় তখনকার পরিস্থিতি এমন থাকে যে, আপনাকে না চাইতেও অন্যের সাথে কথা বলতে হয়। অন্যের কথার উত্তর দিতে হয়। চাইলেও আপনি চুপচাপ থাকার অবকাশ পান না। আর তখনই মনের ভেতরে এক বিরক্তি কাজ করে, যেটা না প্রকাশ করা যায়, আর না নিজের মধ্যে দমন করা যায়। জীবনের প্রতি তখন সবথেকে বেশি বিতৃষ্ণা কাজ করে। এমন পরিস্থিতি আমার তো মাঝে মধ্যেই হয়।
![]() |
---|
তিতলির জন্মদিন থেকে ফেরার পরদিন যখন আমার বান্ধবী এবং বোনেরা বাড়ি চলে গেলো সেদিনও ততটা বেশি খারাপ লাগেনি। কারণ শুভ বাড়িতেই ছিলো। তবে পরদিন যখন শুভ অফিসে চলে গেলো, তখন থেকে সম্পূর্ণ বাড়িতে আমি একা। কাজে কর্মে যতটুকু সময় অতিবাহিত হয় ততটুকু ঠিক আছে, তারপর থেকে একেবারেই একা।
গতকাল দিনটা বেশ কাজকর্মে অতিবাহিত হওয়ায়, ততটাও খারাপ লাগেনি। তবে আজ সকালে অফিসে শুভ অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে এক অন্য রকমের খারাপ লাগায় মনটা ভরেছিলো, এমনকি এখনও পর্যন্ত তেমনটাই লাগছে।
আসলে আজ সকাল থেকে শরীরটাও খুব খারাপ, তার উপরে বাইরের যা পরিবেশ। সারাদিন মেঘলা আকাশ, টুপটাপ বৃষ্টি হয়েই চলেছে। আর আপনাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো আমার পোস্টে পড়ে থাকবেন যে, এই রকম মেঘলা আবহাওয়া থাকলে আমার মনটাও খারাপ থাকে।
তার ওপর সম্পূর্ণ বাড়িটি ফাঁকা। শুধু আমি একটি মানুষ, যার সাথে না অন্য কেউ কথা বলছে, আর না সে কারোর সাথে কথা বলতে পারছে। কখনো কখনো এইরকম শূন্যতাই এতো বেশি পরিমাণে চেয়ে থাকি, সেটা আপনাদের বলে বোঝানো যাবে না। আবার ঠিক আজ এই শূন্যতাই যেন আমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরেছে, বিশেষ করে পিকলুর না থাকা আজ সারাদিন আমার মনটাকে আরো ক্ষতবিক্ষত করেছে।
![]() |
---|
এর আগে যখন ও ছিলো, তখন বাড়িতে কেউ না থাকলেও আমার কিছু ফারাক পড়তো না। কারণ পিকলু ছিলো। আমি যেখানেই যেতাম আমার পিছু পিছু ও ঘুরে বেড়াতো, কারণ ও কিছুতেই একা থাকতে পারতো না। আবার অনেক বেশি লোকজন এলেও খাটের তলায় লুকিয়ে থাকতো, কারণ অনেক বেশি লোকের সমাগমও ওর অপছন্দ ছিলো। বাড়ির মুষ্টিমেয় কতগুলো লোকের মধ্যেই ও সবথেকে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করতো।
আজ যেন পিকলুকে অনেক বেশি মিস করছি। সেই সকাল থেকেই বারবার চোখ যাচ্ছে ওর ছবিতে। যেন মনে হচ্ছে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে। বাইরের দিকে তাকালেই মেঘলা আকাশ মন খারাপ বাড়াচ্ছে দ্বিগুন। মনের ভেতরে কেমন একটা হাহাকার কাজ করছে। যেন চারিদিকের শূন্যতা আমাকে ঘিরে ধরেছে।
জীবনে অপূর্ণতা কম নেই, বরং হিসেব করলে পাওয়ার ঘরে শূন্যতাই মিলবে। এই শূন্যতার সাথে থাকাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি একথা সত্যি, তবে আজ এই শূন্য বাড়িটা বড্ড বেশি আঘাত করছে মনকে।
আমি জানি না এই অনুভূতি কে কি বলে। এই বাড়ির মানুষগুলির প্রতি দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে করতে, কখন এদের মায়ায় পড়ে গেছি জানিনা। রাগ হলে, কষ্ট পেলে হয়তো অনেক সময় অনেক কিছু বলে ফেলি, অথচ আজ তাদের অনুপস্থিতি এমন শূন্যতা সৃষ্টি করেছে যে, মন বলছে আশেপাশের মানুষগুলোর উপস্থিতি তাদের কথাবার্তায় আমার সারাদিন কিছুটা হলেও পূর্ণ হয়।
আর বারংবার একটা কথাই ভাবছিলাম, তাদের অনুপস্থিতিতে আমি যে শূন্যতা অনুভব করছি, আদেও কি আমার না থাকায় তাদের ততটাও শূন্যতা অনুভূত হয়, নাকি এই সমস্যাটা শুধুই আমার?
আমার তাদের প্রতি মায়া জন্মালেও আমার প্রতি তাদের কি আদেও মায়া জন্মেছে, নাকি এটাও আমার ব্যক্তিগত সমস্যা?
আজও পিকলুর ছবির দিকে চোখ তুলে তাকাতে পারি না, ওর না থাকা বুকের ভিতরে যে হাহাকারের জন্ম দেয়, পিকলুও কি পরজন্ম পেয়ে আমার জন্য এমন হাহাকার করে?
এইসব অবান্তর প্রশ্ন সারাদিন ধরে মনে আনাগোনা করেছে। সন্ধ্যার দিকে ঠিক করলাম একটা সিনেমা দেখবো। তবে কেমন যেন অধৈর্য্য হয়ে গেছে আজকাল, ১৫-২০ মিনিট সিনেমা দেখার পরে যেন আর ভালো লাগেনা।
অনেকক্ষণ যাবৎ পুরনো ছবিগুলো দেখলাম। দার্জিলিং থেকে শুরু করে বান্ধবীদের সাথে কাটানো অনেকগুলো মুহূর্তের স্মৃতি দেখতে দেখতে ভাবলাম, একটা সময় এই শরীর আর সাথ দেবে না। বান্ধবীরাও নিজেদের জীবনে ব্যস্ত হয়ে যাবে, তখন আর ওদের সাথে এমন সুন্দর মুহূর্ত কাটানো হবে না। বয়সের ভারে বাইরে বেরোনো বন্ধ হবে। তখন এই শূন্য ঘর গুলোতে আদেও আমি থাকতে পারবো তো?
তবে এটাই জীবনের নিয়ম। বেঁচে থাকলে এটাই হবে ভবিষ্যৎ। তবে ভবিষ্যৎ যদি এমন শূন্যতায় ভরা থাকে, তাহলে জীবন এই বর্তমানেই শেষ হয়ে যাক। কারণ বয়সের ভারের সাথে, শূন্যতার ভার বহন করার ক্ষমতা বোধহয় তখন থাকবে না। এইসবই ভাবছিলাম আজ সারাদিন।
Beautiful weather and beautiful photography