"হসপিটালে কাটানো আরেকটি দিনের গল্প"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
শশুর মশাইয়ের বায়োপসি করার দুদিন বাদে জানতে পারলাম নতুন করে কিডনির আরও একটা টেস্ট করতে হবে। আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সাথে সেই দিনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো।
তার আগে জানতে চাই |কেমন আছেন আপনারা? আশাকরি সকলে ভালো আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটা খুব ভালো কাটছে।
কিডনির টেস্ট হবে বলে আমরা সেদিন একটু সকাল সকালই হসপিটালে এসেছিলাম। অবশ্য আজকাল সকালের দিকে যে পরিমানে রোদ্দুর থাকে, তাতে রাস্তায় বেড়ানোটাই কষ্টকর। কিন্তু উপায় নেই তাই বেরিয়ে পড়লাম।
হসপিটালে পৌঁছানোর পর ওয়ার্ডে গিয়ে নার্সদের কাছে জানতে চাওয়া হলো কখন টেস্ট হবে। ওরা হাতে একটা লিস্ট ধরিয়ে দিলো টেস্টের জন্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের, সেগুলো কেনার জন্য আবার ঔষধের দোকানে লাইন দিতে হলো। সেগুলো কেনা হয়ে গেলে আমরা ওয়ার্ডে গিয়ে জমা দিয়ে দিলাম।
তারপরে ওয়ার্ড থেকে ফোন করলে সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম, টেস্টটা করার জন্য শ্বশুর মশাইকে সাথে নিয়ে আমাদেরকে ইউরোলজি ডিপার্টমেন্টে যেতে হবে। তাই শুভ শশুর মশাইকে নিয়ে গেলো এবং আমি প্রয়োজনীয় সকল জিনিসগুলো নিয়ে ইউরোলজি ডিপার্টমেন্টে গেলাম।
অদ্ভুতভাবে ইউরোলজি ডিপার্টমেন্টে গেলে আমার ফোনে নেটওয়ার্ক একেবারেই কাজ করে না। তাই ভিতরের দিকে শ্বশুর মশাইকে বসিয়ে, আমি বাইরে এসে বসলাম। কারণ ততক্ষণে শুভ এই টেস্টের বিল করার জন্য আবার রেডিওলজি ডিপার্টমেন্টে গিয়েছিলো। সেখানেই সকল টেস্টের বিল করতে হয়।
তখন ফোন করলে আমাকে পাবে না বলে বাইরে এসে ওকে একটা মেসেজ করে, আবার ভিতরে গিয়ে শ্বশুর মশাইয়ের কাছে বসলাম। আসলে যে কোনো টেস্ট করতে গেলে সকলকে মাস্ক পরিয়ে নিয়ে যাওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে শ্বশুরমশাইকে যে মাস্কটা হসপিটালে ভর্তির দিন দিয়েছিলাম, সেটা কোথাও হারিয়ে ফেলেছেন। সেই বিষয়টাই শুভকে মেসেজ করে জানিয়েছিলাম, যাতে ও মাস্ক নিয়ে আসে।
এরপর শুভ এসে শ্বশুর মশাইয়ের সাথে বসলো আর আমি নীচে নেমে এসে কমিউনিটির কাজগুলো করলাম। আসলে সেদিন কমিউনিটিতে চলমান একটি কনটেস্টের ডিটেইলস অ্যাডমিন ম্যামকে মেইল করে পাঠাতে হতো। আমি সেই কাজটাই শেষ করছিলাম।
অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করার পর, আবারও উপরে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখলাম তখনও পর্যন্ত টেস্ট হয়নি। এই টেস্টটা আসলে যে ডক্টরের আন্ডারে শশুর মশাই ভর্তি আছেন, তিনি নিজেই করবেন। তবে যেহেতু তিনি পেশেন্ট দেখছিলেন, তাই আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হচ্ছিলো।
টেস্ট হতে প্রায় বিকেল চারটের বেশি বেজে গিয়েছিলো, এরপর শ্বশুর মশাইকে ওয়ার্ডে নিয়ে গেলাম। দুপুরবেলা লাঞ্চে যে খাবারটা ওখানে দেওয়া হয়েছিলো, সেটা শ্বশুর মশাইয়ের বেডের সামনে সিল করে রাখা ছিলো। তিনি হাত মুখ ধুয়ে এসে খাবারটা খেলেন আর আমরাও নিচে এসে লাঞ্চ করে নিলাম।
এরপর আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম কারন টেস্টের পরে যদি আরো কোনো ওষুধ আনতে বলে, সেগুলো এনে দিয়ে একসাথে দুজন বাড়ি ফিরবো। তাই ওপিডির নিচে বসে অপেক্ষা করছিলাম। সামনের চেয়ারগুলো তখন সব ফাঁকা হয়ে গেছে। আমরা দুজন ছাড়া সেখানে আরও দুজন ব্যক্তি ছিলেন, তারা অবশ্য সেখানকার কাজ করছিলেন। সকাল থেকে এতো মানুষের ভিড় হয় যে, প্রয়োজনীয় কাজগুলো বোধহয় সকলেই রাতের দিকে করে নেন।
বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর শুভ আরও একবার ওয়ার্ডে গিয়ে খোঁজ নিলো, তবে তেমন কোনো ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ছিল না, তাই আমরাও শ্বশুরমশাইকে বলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করার জন্য নিচে এলাম। অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেকটাই দেরি হয়েছিলো সেদিন, পার্কিং এড়িয়ায় গিয়ে দেখতে পেলাম গাড়ির সংখ্যা একেবারেই নেই।
সেখানে দুজন একটু সময় বসলাম। অল্প অল্প খিদে পেয়েছিলো, তাই ব্যাগে থাকা বিস্কুটের প্যাকেট থেকে দুজনেই বিস্কুট খেয়ে জল খেলাম। তারপর বাইকের কাছে পৌঁছালাম। আমাদের বাইক ছাড়া আর হাতে গোনা কয়েকটি গাড়ি রাখা ছিল পার্কিং এড়িয়াতে।
এতো শূন্যতায় ভরা পার্কিং এড়িয়ার ছবিটি তুললাম। উল্টো দিকে তাকাতেই নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম, কি যেন মনে হলো, তাই একটা ছবি তুললাম।
তখনও পর্যন্ত বুমিংএর কাজ করতে পারিনি, সেটা অ্যাডমিন ম্যামকে ইনফর্ম করলাম।বাড়ি পৌঁছাতে একটু লেট হলো, তাই সবার প্রথমে ঘরে ঢুকে বুমিং এর কাজ শেষ করলাম। তারপর গেলাম স্নান করতে।
শুভ বাড়িতে পৌঁছে শ্বশুরমশাইয়ের পাশের বেডে ভর্তি হওয়া একটা ছেলের নাম্বারে ফোন করে শশুর মশাই শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলো। ছেলেটি জানিয়েছে তিনি ঠিকই ছিলেন। আসলে বায়োপসি করতে যতটা কষ্ট হয়েছিলো, পরের দিনের টেস্টটা করতে ততটা কষ্ট হয়নি। তাই শারীরিক অবস্থাও বেশ ভালোই ছিল।
তারপর যথারীতি মামা শ্বশুর বাড়িতে গেলে সকলেই শ্বশুর মশাই শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানলেন। স্নান করার পর রাতের খাওয়া-দাওয়া সেরে আমি পোস্ট ভেরিফিকেশন করতে বসলাম। তারপর রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি, সত্যিই বুঝতে পারিনি।
বাকি ভেরিফিকেশন সকালে উঠে শেষ করেছিলাম। সারাদিন হসপিটালের মধ্যে বসে থাকাটাও বেশ ক্লান্তির কাজ। তারপর ওপিডি থেকে শশুর মশাইয়ের ওয়ার্ডের দূরত্ব অনেকটাই। হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা হয়ে যায়। যাইহোক এইভাবেই কাটলো আমার ঐদিন। জানিনা এইভাবে আর কতোদিন এখানে থাকতে হবে। ছবিগুলোকে আমি এডিট করে ব্যবহার করেছি,তাই তারিখ পরিবর্তিত দেখাচ্ছে।
ভালো থাকবেন আপনারা সকলে। ধন্যবাদ।
সত্যি দিদি অসুস্থ মানুষ নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া খুবই কষ্টকর। তাতে আবার বাইরে প্রচন্ড রোদ গরম। যে কোন মানুষেরই শরীরে একটা রোগ ঢুকে গেলে তাকে সবদিক থেকেই যেন আরো রোগ আক্রমণ করতে থাকে। অনেকদিন ধরেই আপনার পোস্টে পরি আপনার শশুর মশাইয়ের শরীর খারাপ। অসুস্থ মানুষকে নিয়ে দুদিন অন্তর আপনাকে হাসপাতালে ছুটতে হয়। আমাকেও মাঝে মধ্যেই দিদা কিছুদিন আগে বোনকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটতে হয়েছিল। বাড়িতে অসুস্থ মানুষ থাকলেই সব সময় দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হয়। আমারও বাড়িতে আমার দিদা রয়েছে তার জন্য প্রত্যেক টা মুহূর্ত আমার ভয় ভয়ে দিন কাটে।
Thank you for your support @memamun.
এমন দিনগুলো সত্যিই খুব কষ্টের, তবে আপনার ধৈর্য এবং সহানুভূতির জন্য প্রশংসা প্রাপ্য। আশা করি আপনার শ্বশুর মশাইয়ের অবস্থা দ্রুত উন্নতি হবে। আপনার জন্য দোয়া রইল দিদি,