"কিছু পরিস্থিতি চাইলেও এড়ানো সম্ভব হয় না"
![]()
|
---|
Hello,
Everyone,
মানসিক দিক থেকে যে কতখানি বিরক্তিকর জায়গায় আছি, ,সেটা আসলে লেখার মধ্যে বোঝানো সম্ভব না। হয়তো আমার লেখা উপরে লাইনটি পড়ে আপনারা অনেকেই আমাকে জাজ করবেন।
কিন্তু এটা কথা সত্যি যে, মানুষের জীবনের প্রত্যেকটি জিনিসের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত এই সবটা সহ্য করা যায়। কখনো কখনো যখন সেই সীমা অতিক্রম করে যায়, তখন সেগুলো মেনে নেওয়া, সহ্য করা, বা সেই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে।
পরশুদিন থেকে চেষ্টা করছি নিজের মনোযোগ একটু অন্যদিকে রাখার জন্য, কিন্তু পরিস্থিতি আমাকে সেই অনুমতিও দিচ্ছে না। তৎসত্ত্বেও যখন সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে পোস্ট লিখতে বসেছি, তখন কিছুটা বিরক্তি, কিছুটা হতাশা, লেখার মাধ্যমে উপস্থাপন হবে এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
গতকাল রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত জেগেছি। শুধু আমি নয় আমার সাথে শুভও। কারণ শ্বশুরমশাই সারারাত কিছুতেই ঘুমাননি। ১০ মিনিট বাদে বাদে শুধু বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করেছেন, কখনো বেশি নড়াচড়া করার কারণে ক্যাথেটার আটকে যাচ্ছিলো, কখনো একটু জল খাবে বলছিলো, সবকিছু মিলিয়ে একটি বিরক্তিকর পরিস্থিতি ছিলো, সত্যিই তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। যাইহোক শুরু থেকেই শুরু করি।
"এইমস এর মেন বিল্ডিং, এই বিল্ডিং এর ভিতরে বিশাল অডিটোরিয়াম রুম আছে শুনলাম"
গতকাল হসপিটালে পৌঁছানোর পরে ডাক্তার ভিজিটে আসেন। তখন ইউরিন কিছুটা পরিষ্কার হয়েছে। আসলে এইমস হসপিটালে সমস্ত কিছু এখনও তেমন ভাবে শুরু হয়নি। আর গতকাল শনিবার থাকার কারণে অনেক ওপিডি সেকশন বন্ধ ছিলো। সুতরাং ইউরোলজি ডিপার্টমেন্টে কাল কোনো ডাক্তার ছিলো না। তাই তাকে দেখানো সম্ভব হতো না।
অগত্যা গন্তব্য সেই বাড়ি। ইমারজেন্সিতে ওখানে পেসেন্ট রাখা সম্ভব নয়। ইউরোলজি ডিপার্টমেন্টের ডক্টর সপ্তাহে ৩ দিন অর্থাৎ সোম, বুধ, শুক্র বারে বসেন। তবে মাঝখানের রবিবারের দিনটা শ্বশুরমশাইকে নিয়ে কোথায় থাকবো, এই কারণেই বলতে পারেন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া।
হসপিটালে সারারাত নার্সদের বিরক্ত করেছেন, এমনকি সকালে শুভ এবং আমার ননদ খাবার খাওয়াতে গিয়েছেন তখনও খাবেন না, ক্যাথেটারে বাথরুম করবেন না, তাকে বাথরুমে নিয়ে যেতে হবে, এই নানান রকম ঝামেলা। খানিকটা জ্ঞানে করছেন, খানিকটা অজ্ঞানে। সবকিছু মিলিয়ে সব কিছু বোঝার পরেও, কখনো কখনো ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যায় প্রত্যেকেরই।
"এমারজেন্সি গেটের সামনে এই শালিকটা একপায়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলো দেখে ছবিটা তুলেছিলাম"
যাইহোক শুভ সব ফর্মালিটি পূরণ করার পর, ওনাকে ইউএসজি করাতে নিয়ে গেলো। তখন আমি আর ননদ বাইরেটা হেঁটে হেঁটে দেখছিলাম। বেশ ভালো করে সাজিয়েছে হসপিটালের ভিতরের পরিবেশটা।
যাইহোক সবকিছু শেষ হলে বাড়িতে ফিরবো ঠিক হলো। প্রয়োজনে আবার সোমবার সকালে ওখানে গিয়ে ইউরোলজি ডিপার্টমেন্টের ওপিডি সেকশনে দেখানো হবে। সমস্ত কাজ শেষ করে, গাড়ি ভাড়া করা হলো, তারপর শশুর মশাইয়ের ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে তাকে বাইরে এনে, আমরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।
"গাড়িতে আমরা সকলে,বাড়িতে ফিরছি"
"বাড়ি ফেরার পথে গাড়ি থেকে তোলা ছবি"
বাড়ি এসে সমস্ত জামা কাপড় ধোঁয়া কাঁচা করে, ভালোভাবে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে, একটু খেয়ে যখন বিছানায় বসলাম। শরীর তখন বড্ড ক্লান্ত বিশ্রাম চাইছে। কিন্তু মাথা বিশ্রাম নিতে পারছে না। তখন সেখানে রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। দায়িত্ব কর্তব্যের সাথে তখন প্রাপ্তির লড়াই, মাথা যন্ত্রনা বাড়িয়ে তুলেছে। সেই লড়াই থামাতে কমিউনিটির বুমিং এর কাজ নিয়ে বসলাম।
"এক কাপ চা গতকাল খুব প্রয়োজন ছিলো"
এরপর চা বানালাম। চা খেতে খেতে সকলে কথা বললাম শশুর মশাইকে নিয়ে। কিছুক্ষণ বাদে ভেরিফিকেশন নিয়ে বসতেই শাশুড়ি মায়ের ডাকে নিচে গিয়ে দেখলাম, শশুর মশাইয়ের ক্যাথিডারের পাইপ কিভাবে যেন আটকে গেছে। কিছু না বুঝতে পেরে শুভকে ফোন করে ডাকলাম। সে এক পরিস্থিতি হলো ওনাকে নিয়ে।
"ওষুধের ঝুড়িতে নতুন আরো কিছু যোগ হয়েছে গতকাল থেকে"
খাওয়া দাওয়ার শেষে ননদরা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার পর, আমরাও খেয়ে নিয়েছিলাম। তবে ঘুমাতে ঘুমাতে ভোর ৪টা বেজে ছিলো। কারন একটাই, শশুর মশাই ১০-১৫ মিনিট বাদেই উঠে বস ছিলো, হাঁটছিলো, আর ওনাকে পাহারা দিতেই আমাদের রাত শেষ হয়েছে।
আগামীকাল সকালে আবার গন্তব্য হবে ঐ কল্যাণী এইমস হসপিটাল। কাল অন্য কিছু হোক না হোক, অন্ততপক্ষে যেন ওনার ক্যাথিডার খুলে দেওয়া হয়। না হলে আবার কবে নিজেই ওটা খুলে ফেলে ব্লিডিং শুরু করাবে জানিনা।
সবকিছু মিলিয়ে মাথা যন্ত্রনা গতকাল থেকে পিছু ছাড়েনি এখনও। আগামীতে আরও কতো কিছু অপেক্ষা করছে জানি না। যাইহোক ভালো থাকবেন সকলে।
আমার সাথে এই রকম ঘটনা হয়েছিল। আমার ভাবি যখন হসপিটালে ভর্তি ছিল।আমার ভাইয়া তখন ঢাকার বাইরে। তখন ২-৩ দিন আমাকে হসপিটালে থাকতে হয়েছে। হসপিটালে রোগীর সাথে, যারা অভিভাবকরা থাকে তারাও একটা মানসিক রোগী হয়ে যায়। তার উপরে যদি বৃদ্ধ মানুষ হয়ে থাকে , তখন তাদের ব্যবহার বাচ্চাদের মতন হয়ে যায়। মাঝে-মাঝে আমার আব্বুর সাথে অনেক ঝগড়া হয়। আমার আব্বুরে এই কাজটা আমি করতে বললে সে উল্টা পাল্টা করে। আপনার পোস্টটি পড়ে বুঝতে পারলাম আপনি খুব মানসিক প্রেসারে রয়েছেন দিদি। এই মানসিক যন্ত্রণা থেকেও আমাদের সাথে যে আপনি কিছু শেয়ার করেন তার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার পোস্টটা পড়লাম, সত্যিই খুবই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন আপনি। শ্বশুরমশাইয়ের প্রতি যত্ন এবং ধৈর্যের যে নমুনা আপনি দেখাচ্ছেন, তা প্রশংসনীয়। কঠিন সময়েও আপনি যে ভাবে পরিস্থিতি সামলাচ্ছেন, তা সত্যিই অনুপ্রেরণার। মনোবল বজায় রেখে সামনে এগিয়ে চলুন, ইনশাআল্লাহ সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সাহস ও শক্তি দিন।
Curated by : @miftahulrizky