উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি(কুমারটুলি)

in Incredible India12 days ago
IMG_20250716_225734.jpg

Hello,

Everyone,

IMG_20250716_230102.jpg

কুমোরটুলি নামটা ছোটবেলা থেকে শুধু শুনেছি, তবে কলকাতার কাছাকাছি থাকলেও কখনো ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি। শুধু কুমোরটুলি বললে ভুল হবে, কলকাতার এখনো অনেক ঐতিহ্যবাহী জায়গা রয়েছে যেগুলো ঘুরে দেখা হয়নি।

তবে প্ল্যান আছে এবার শীতকালে তাদের মধ্যে থেকে বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখবো। যাইহোক গতবছর বান্ধবীদের সাথে হঠাৎ প্ল্যান করে বেরিয়ে পড়েছিলাম কুমোরটুলি ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি দেখার উদ্দেশ্যে।

এই বছর বৈশাখ মাসের ২৫ তারিখে রবি ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষ্যে, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা আমি আপনাদের সাথে পোস্টের মাধ্যমে শেয়ার করেছিলাম। সেই পোস্টে জানিয়েছিলাম পরবর্তীতে কুমোরটুলি ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতাও আপনাদের সাথে শেয়ার করবো।

IMG_20250716_225754.jpg

তবে মাঝখানে দার্জিলিং এর ঘুরতে যাওয়া ও আনুসঙ্গিক আরো বিভিন্ন ঘটনার কারণে মাঝখান থেকে সেগুলোই আর শেয়ার করা হয়ে ওঠেনি। আজ গ্যালারি ঘাটতে ঘাটতে সেই ছবিগুলো চোখে পড়তেই সিদ্ধান্ত নিলাম, আজ আমার লেখা পোস্টের মাধ্যমে আপনাদেরকেও ঘুরে দেখাবো কলকাতার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী জায়গা কুমোরটুলি।

আশাকরি আপনারা প্রত্যেকেই জানেন কুমোর তাদেরকে বলা হয় যারা মাটি দিয়ে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এদের আরও একটি নাম আছে সেটা হলো মৃৎশিল্পী এবং টুলি শব্দের অর্থ হলো কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা পাড়া। সুতরাং **কুমোরটুলি শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো মৃৎশিল্পীদের পাড়া।

IMG_20250716_225713.jpg

এটি উত্তর কলকাতার একটা বিখ্যাত স্থান গুলোর মধ্যে একটি। কুমোরটুলিতে মাটির বিভিন্ন জিনিস তৈরি হলেও, এখানকার মৃৎশিল্পীরা বিখ্যাত হলেন বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি তৈরি করাতে। তাদের তৈরি সেই মূর্তিগুলি শুধুমাত্র যে কলকাতা বা তার আশেপাশের এলাকায় পুজিত হয় এমনটা নয়।

এই কুমোরটুলি থেকেই প্রতিবছর বহু মূর্তি দেশে-বিদেশের বিভিন্ন জায়গাতে পৌঁছে যায়। এই কারণে সারা বছর এখানে আপনি মূর্তি তৈরি করার কাজ দেখতে পাবেন। আর শুধু মাত্র মূর্তি তৈরি নয়, এখানে ঠাকুরের প্রতিটি সাজসজ্জার জিনিস তৈরির কাজও আপনার দৃষ্টি কাড়বে। বহু সংখ্যক মানুষ বংশ-পরম্পরায় শুধুমাত্র এই কাজের সাথেই যুক্ত রয়েছেন।

IMG_20250716_225815.jpg

ইট-কাঠ-পাথরে ঘেরা কলকাতার মধ্যে বোধহয় সবথেকে বেশি মাটির ছোঁয়া পাবেন আপনি এই কুমোরটুলিতেই। আমরা প্রত্যেকেই শোভাবাজার সূতানটী মেট্রো স্টেশন থেকে থেকে অটো করে পৌঁছে গিয়েছিলাম কুমারটুলিতে। সেদিন অনেক বেশি রোদ্দুর ছিলো, কিন্তু তৎ সত্ত্বেও কুমোরটুলিতে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রচুর মানুষ প্রতিদিন এই কুমোরটুলিতে ঘুরতে আসেন। অনেকে নিজেদের মতো করে সময় কাটান, আবার অনেকে ছবি তুলতে ভালোবাসে বলেও কোমরটুলিতে চলে আসেন। এছাড়াও সেখানে প্রিওয়েডিং ফটোশুটের ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।

তবে ভিড় যতই উপচে পড়ুক না কেন, ছবিগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন মৃৎশিল্পীরা কিন্তু নিজেদের কাছেই ব্যস্ত থাকেন। তারা যেন নিজেদের সমস্ত ধ্যান মূর্তি তৈরীর কাজেই নিয়োজিত রাখতেই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা প্রত্যেকে ঘুরে ঘুরে প্রতিটি গলি সুন্দর করে দর্শন করছিলাম এবং শিল্পীদের কাজ দেখে মুগ্ধ হচ্ছিলাম। এতো নিখুঁত ও নিপুন হাতের কাজ বোধহয় তাদের পক্ষেই করা সম্ভব, যারা নিজেদের কাজটাকে ভালোবেসে করেন।

IMG_20250716_230010.jpg
IMG_20250716_225852.jpg

সেখানে মা দুর্গার মূর্তির বিভিন্ন রং চোখে পড়ল। কোনোটার শুধু রং হয়েছে তখনও পোশাক পড়ানো হয়নি, কোনোটার তখনও রঙ শুরু হয়নি তখনো শিল্পীরা যত্ন সহকারে মাটির প্রলেপ দিয়ে চলেছেন, আবার কিছু জায়গায় চোখে পড়লো বিচলি দিয়ে সবেমাত্র কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, সেখানে মাটির প্রলেপ তখনও বাকি।

IMG_20250716_230041.jpg
IMG_20250716_230024.jpg
IMG_20250716_225955.jpg
IMG_20250716_225937.jpg

ঘুরতে ঘুরতে একটা দোকান চোখে পড়ল যেখানে মা দুর্গার বিভিন্ন সাইজের মূর্তি তৈরি করে রাখা আছে। অনেক সময় আমরা নিজেদের ঘর সাজানোর জন্য এই ধরনের মূর্তি গুলি কিনে থাকি। সেরকমই ছোট বড় অসংখ্য মূর্তি চোখ কাড়লো। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছবিগুলো দেখলাম এবং অবাক হলাম কিভাবে এত নিপুণ ও সুন্দরভাবে মায়ের মুখ ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।

IMG_20250716_230235.jpg
IMG_20250716_230221.jpg
IMG_20250716_230208.jpg

এরপরে যে দোকানটির সামনে থমকে দাঁড়ালাম সেটি ছিল বিভিন্ন দেবদেবীর সাজসজ্জায় ভরা একটা দোকান। যেখানে বিভিন্ন সাইজের ও বিভিন্ন ডিজাইনের দেব দেবীর মূর্তির সাজ পোশাক বিক্রি হচ্ছে এবং এখান থেকেই মাপ মতন জিনিস নিয়ে মূর্তি সম্পূর্ণভাবে তৈরি করে, সেগুলো বিভিন্ন মণ্ডপে পৌঁছে দেওয়া হয়।

IMG_20250716_230147.jpg

এইরকম ভাবে বেশ কিছু অলিগলি দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে আমরা একটা পুরনো রাজবাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। আর সেখানে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটালাম। পুরনো রাজবাড়ি দেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমি আপনাদের সাথে পরবর্তী পোস্টে আলোচনা করবো। আজকের মত কুমোরটুলি দেখার অভিজ্ঞতার প্রথম পর্ব এখানেই শেষ করছি।

প্রত্যেকে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আর আপনাদের কাদের এইরকম কুমোরটুলি ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা আছে সেটা জানাতেও ভুলবেন না। শুভ রাত্রি।

"ক্রপ করার কারনে ছবির তারিখ গুলো পরিবর্তিত দেখাচ্ছে।"
Sort:  
Loading...