"প্রাপ্তি"

in Incredible India4 days ago
IMG_20250615_214256.jpg

Hello,

Everyone,

কেমন আছেন আপনারা সকলে?
আশা করছি প্রত্যেকে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে।

দার্জিলিং এ ঘোরার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো এমনটাই ভেবেছিলাম, কিন্তু তার আগে আজ আরো একটা আনন্দের বিষয় আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য পোস্ট লেখা শুরু করছি।

আপনারা যারা অনেকদিন ধরে কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং নিয়মিতভাবে আমাদের কমিউনিটিতে কাজ করছেন, তারা অনেকেই জানেন আজ থেকে প্রায় বছর দুই আগে একটা খুব খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমাকে যেতে হয়েছিলো।

IMG_20250615_213758.jpg

একদিকে বাবা অসুস্থ অবস্থায় আইসিইউতে ভর্তি, কয়েকদিন বাদে ঠাকুমাকে হারানো। কিছুদিনের মধ্যে শ্বশুর মশাইয়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি, ঠিক তার কয়েকদিনের মধ্যেই আমার দিদির হাজবেন্ড অর্থাৎ জামাইবাবুর ব্রেন সার্জারি। সবকিছু মিলিয়ে খুব কঠিন একটা সময় পার করতে হয়েছিলো। তবে ধীরে ধীরে সমস্ত কঠিন নাম সময় কেটে গেছে, ঈশ্বরের কৃপায় এখন সবদিক থেকেই কিছুটা স্বস্তি পেয়েছি।

যদিও শ্বশুরমশাই সম্পূর্ণরূপে সুস্থ নন। কিন্তু হসপিটালের বদলে বাড়িতে আছেন এটাই কম স্বস্তির নয়। নিজের মুখে এই কথাগুলো বলতেও আজকাল ভয় করে, কারণ মুহূর্তের মধ্যে কিভাবে পরিস্থিতি বদলে যায়, তা নিজের জীবনে বহুবার দেখেছি। যাইহোক আজ যে বিষয়ে কথা বলব এখন সেই প্রসঙ্গেই আসি।

আমার লেখার মাধ্যমে আপনারা হয়তো অনেকেই জেনেছেন আমার দিদি একজন নার্স। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর জি এন এম ট্রেনিং নিয়ে দিদি প্রথম নার্স হিসেবে কাজ শুরু করেছিলো। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে আরো পড়াশোনা করে বর্তমানে সে এমএসসি পাস করেছে। যদিও কথাটা আমি দুই লাইনেই শেষ করে ফেললাম, তবে এই পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে ওকে।

সেটা মাকে হারানো হোক, ওর মিসক্যারেজ হোক, বারবার বাচ্চা নেওয়ার প্রচেষ্টায় হেরে যাওয়া হোক, অবশেষে বহুকষ্টে সন্তানের মা হওয়া হোক, ঠাকুমাকে হারানো হোক, বাবার অসুস্থতা হোক, কিংবা নিজের হাসবেন্ডকে মৃত্যুর সঙ্গে প্রতিদিন লড়াই করতে দেখার অভিজ্ঞতা হোক। এই সমস্ত কিছুই ছিল এর মধ্যে সামিল।

যা কিছু আনন্দ ছিল সেটা শুধুমাত্র দুটো সন্তানের মুখ দেখা। সেই আনন্দটুকু পেতেও কি যে অসম লড়াই ওকে লড়তে হয়েছিলো, তার একমাত্র সাক্ষী ছিলাম আমি। কারণ সেই মুহূর্তে ওর হাজবেন্ডও চাকরি সূত্রে বেশিরভাগ সময় বাইরে থাকতো। তাই বলতে পারেন কাছ থেকে ওর সমস্ত খারাপ সময় গুলো দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য সেটা একমাত্র আমার হয়েছিল।

IMG_20250615_213818.jpg

ভালো সময়ে না হলেও আমি বরাবর চেষ্টা করেছি ওর খারাপ সময় ওকে সঙ্গ দেওয়ার। আর ওর ছোট বোন হিসেবে ওর প্রতিটা লড়াইয়ে ওকে সাহস যোগানো হোক, কিংবা ওকে সামলানো হোক, সবটাই করেছি। ওর প্রতি আমার অনেক অভিযোগ আছে এই কথা সত্যি, কিন্তু কিছু কিছু জিনিসের বিষয়ে ওর প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা আজীবন থাকবে।

সে বিষয়ে না হয় অন্য কখনো কথা বলবো। তবে আজ যখন ওর জীবনে অনেক বড় একটা প্রাপ্তি হয়েছে, তখন প্রথম ওর যে আমার কথা মনে পড়েছে, এটা ভেবে সত্যিই ভিতরে ভিতরে আমি অনেক আনন্দিত।

এতদিন আমি ভাবতাম বোধহয় আমার সময়ের মূল্য হোক, কিংবা আমার উপস্থিতির মূল্য, অনেকেই দিতে জানে না। তবে আজ ওর কথা, ওর কান্না খানিক আমাকেও দুর্বল করে দিয়েছে। ও যে আমার উপস্থিতির মূল্যায়ন এভাবে করবে এটা আমি সত্যিই ভাবি নি। তবে ওর যে কোনো প্রাপ্তি আমাকে আনন্দ দেয় বরাবর। হয়তো আমি ওর পাশে থেকেছি কিন্তু লড়াইটাও লড়েছে একাই।

ওর হাজবেন্ডের অত বড় বিপদের সময় প্রতিদিন যখন আইসিইউতে ঢুকে ঘন্টার পর ঘন্টা হাজবেন্ডকে হারিয়ে ফেলার ভয় নিয়ে বসে থাকতো, তখন আমি বাড়িতে ওর বাচ্চাদেরকে সামলাতাম। ও তখন নিশ্চিন্তে থাকতো যে বাচ্চা দুটো আমার কাছে আছে।

যখন তাতান জন্মানোর সময় হলো, তখন ছোট্ট তিতলিকে আমার হাতে সঁপে দিয়ে ও নার্সিং আমি গিয়েছিলো। তবে ওর চোখে মুখে আমি একটা বিশ্বাস দেখেছিলাম যে ওর মেয়েকে আমি ভালো রাখবো। আর সেই কারণেই বোধহয় দায়িত্বটা নেওয়ার সাহস দেখাতে পেরেছিলাম। এরপর যখন হঠাৎ করেই ওর পা ভেঙে গেলো, দুটো বাচ্চা নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে ওর অনেক সমস্যা গেছে, মাঝেমধ্যেই আমি সেখানে গিয়ে ওকে সঙ্গ দিয়েছি।

IMG_20250615_213841.jpg

কখনো কখনো ওর প্রতি অভিমানের পাহাড় জমেছে আমার মনে। মনে হয়েছে ওর জন্য করা আমার সমস্ত কিছুই ও ভুলে গেছে। তবে আজ সন্ধ্যার পর যখন ফোন করল মনটা আমারও ভারী হয়ে এলো। ওর শেয়ার করা ছবিগুলো বারবার খুলে দেখছি, ওর মত করে নিজেও যেন বারবার গর্বিত হচ্ছি, ও আমার দিদি বলে।

খুবই নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা আমাদের, সেখান থেকে অনেক অসম লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে যখন নিজের কাছের মানুষের কোনো কিছু প্রাপ্তির জন্য, তারা কিছুটা হলেও আপনাকে অধিকার দেয় বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, তখন বোধহয় ঘুরিয়ে আর অন্য কিছু বলা হয়ে ওঠে না। অন্তত আমি কিছুই বলতে পারলাম না। তবে এটুকু বুঝতে পারছিলাম ও বোধহয় আরও অনেক কিছু বলতে চাইছে কিন্তু বলতে পারছে না।

IMG_20250615_213914.jpg

এক মুহূর্তে অভিমানের পাহাড় সত্যিই সরে গেলো। রক্তের সম্পর্ক গুলোর প্রতি অভিমান জন্মে আমাদের ঠিকই, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে যেন এই অভিমানের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ভালোবাসা টান। ওর জীবনের এই প্রাপ্তির জন্য আমার সামান্য অংশগ্রহণ ও যে আছে, এটা আমি মানতে চাই না। কারণ সমস্ত পরিশ্রমটাই ও করেছে।

তবে মানুষ সফল হয়ে যাওয়ার পরে অনেক সময় জীবনের কঠিন মুহূর্তে পাশে উপস্থিত থাকা মানুষের কথা ভুলে যায়। সেটা যে আমার দিদি করেনি এটা ভেবেই কোথাও একটা ভালো লাগছে। বাকি আজ যা ও অর্জন করেছে সবটাই ওর প্রাপ্য। কারণ পরিশ্রমটা ও করেছে। আমি হয়তো শুধু ওর পাশে থেকে ওকে কিছুটা সাহায্য করেছি এইটুকুই।

দিদির এই সফলতা শুধুমাত্র ওর, তবে ওর এই সফলতায় আমি গর্বিত। আজ মা বেঁচে থাকলে আরো বেশি খুশি হতো। তবে আমার বিশ্বাস উপর থেকে তিনি নিশ্চয়ই দিদির সফলতা দেখে খুশি হয়েছেন। সত্যি কথা বলতে এমন মুহূর্ত সামনে থেকে দেখতে পারার সুযোগ হলো না ঠিকই, তবে বরাবর সিনেমায়, ছবিতে এমন পোশাক পরিহিত মানুষকে দেখেছি। এমন সৌভাগ্য আমার দিদিরও কখনো হবে এমনটা আমি কল্পনাও করিনি, তবে সত্যি বলতে আজ এই ছবিগুলো দেখার পর বেশ ভালো লাগছে।

IMG_20250615_213858.jpg

ওর আরো সফলতা কামনা করি আমি। কারণ একজন নার্স হিসেবে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়, কত মানুষের উপকার করে চলেছে ওরা বছরের পর বছর ধরে। হয়তো অনেক সময় আমরা অনেক নার্সের প্রতি নিজেদের অভিযোগ উগড়ে দিই। কিন্তু যারা ওদের জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন, তারা হয়তো আমার সাথে সহমত হবেন যে, নার্সের চাকরিটা দেখতে বা বলতে যতটা সহজ, যারা সেটা প্রতিদিন করে চলেছেন একমাত্র তারাই জানেন এর পেছনে কত পরিশ্রম, কত ধৈর্য্য, আর কত কঠিন অধ্যাবসায় রয়েছে।

যাইহোক আমার দিদির সফলতায় আমি আনন্দিত, তাই আপনাদের সাথেও সেই মুহূর্তগুলো ভাগ করে নেওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। আপনারা আমার দিদির জন্য প্রার্থনা করবেন, যাতে আগামী দিনগুলোতে ওর জীবন সহজ ও সুন্দরভাবে কাটে, কারণ অনেক কঠিন লড়াই ইতিমধ্যেই ও লড়ে নিয়েছে। যাইহোক সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

Sort:  
Loading...

Want to grow faster on Steemit? Try www.pussteem.com – the first platform that lets you use $PUSS tokens to power up your posts. For just $0.50, you can receive $10 worth of upvotes through our curated support system.

➤ Learn more: Unlock the Power of Your Steemit Journey
➤ Step-by-step guide: How to Get Started -Video Tutorial

Join the movement – boost your visibility, earn more, and grow with Pussteem!
:globe_with_meridians: https://pussteem.com
Join with us on Discord: https://discord.gg/g4KWCtFJbk

_Spend $0.5 in $PUSS — Get $10 in UPVOTE! Boost Your Steemit Journey with P_20250602_220938_0000.png

Thank you for sharing quality content on Steemit
You have been supported by the team:


Curated by: @adeljose