"পাহাড়ের কোলে বাঙালিয়ানার ঠিকানা- লামাহাটায় লালমোহন রেস্টুরেন্ট"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের প্রত্যেকের আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে। আমার আজকের সারাটাদিন অনেক বেশি কর্মব্যস্ততা ছিলো। তার উপরে ছিলো আজ একাদশী। তাই সব কিছু মিলিয়ে এই মুহূর্তে বড্ড ক্লান্ত অনুভব করছি।
যদিও সারাদিনের কাজের অর্ধেক শেষ হলেও, বাকি অর্ধেক কাজ এখনো রয়ে গেছে। তবে সেই কাজগুলো আগামীকাল শেষ করবো এমনটাই ভেবেছি। কারণ আজ সত্যিই আর শরীর দিচ্ছে না। যাইহোক আজ আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করবো দার্জিলিং-এ ঘুরতে যাওয়ার সময় একটা রেস্টুরেন্টে আমাদের সকলের খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা।
সত্যি কথা বলতে দার্জিলিং এ ঘোরার এখনো অনেকগুলো পর্ব আপনাদের সাথে শেয়ার করা বাকি রয়েছে। তবে আজ মনে হলো একটু আলাদাভাবে শুধুমাত্র এই রেস্টুরেন্টের রিভিউ আপনাদের সাথে শেয়ার করি। কারণ ওখানে যতগুলো রেস্টুরেন্টে খেয়েছিলাম, তার মধ্যে থেকে সবথেকে ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছিলো এই রেস্টুরেন্টের।
রেস্টুরেন্টের পরিবেশ থেকে শুরু করে ভিতরকার সৌন্দর্য্য, এমনকি খাবার পরিবেশন এর ব্যবস্থাও এতটা সুন্দর ছিল যে, বাঙালি হিসেবে তা মনে এক সুস্পষ্ট ছাপ রেখেছে। আর পরবর্তীতে যদি কখনো আবার দার্জিলিংয়ে যাই, তখন এই রেস্টুরেন্টে নিশ্চিত কোনো একদিন লাঞ্চ করবো এই ইচ্ছাও রয়েছে।
![]() |
---|
যাইহোক প্রথমেই আপনাদেরকে বলি রেস্টুরেন্টের নাম ছিল লামাহাটায় লালমোহন। লামাহাটা ওখানকার এক দর্শনীয় স্থান, যেটা একটা পাইন ফরেস্ট বলা যায়। কিন্তু তার সৌন্দর্য্য সম্পর্কে আমি অন্য পোস্টে আপনাদের সাথে অবশ্যই আলোচনা করবো এবং এই জায়গায় ঘুরতে যাওয়াটা আমার জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতাও বলতে পারেন। লামাহাটার পাইন ফরেস্ট থেকে বেরিয়ে আমরা কিছুটা দূর হেঁটে এসে এই রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করেছিলাম।
রেস্টুরেন্টটার ভিতরের পরিবেশ ছিল একেবারে ষোল আনা বাঙালির মতন। সেখানকার পরিবেশ, বসার ব্যবস্থা এমন কি ভেতরকার ডেকোরেশন ছিল চোখে পড়ার মতন। সত্যি কথা বলতে বাঙালিয়ানা দিয়ে এমন সুন্দর সাজানো গোছানো রেস্টুরেন্ট আমাদের কলকাতায় কতোগুলো আছে সত্যিই আমার জানা নেই। কিন্তু লামাহাটার মতন জায়গায় এইরকম একটা রেস্টুরেন্ট আমার মন কেড়েছিল।
![]() |
---|
ভিতরের সাজানোর ক্ষেত্রে তারা বাঙালির বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ব্যবহার করেছেন, সেটা বেতের বোনা ঝুড়ি কুলো থেকে শুরু করে তালপাতার হাতপাখা, পূজোয় ব্যবহৃত কদম ফুল থেকে শুরু করে সামিয়ানা পর্যন্ত। সবথেকে যেটা ভালো লেগেছে এদের রং এর ব্যবহার। সাদা এবং লাল কাপড় ব্যবহার করে সম্পূর্ণ জায়গাটাকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তুলেছে।
![]() |
---|
![]() |
---|
**সাদা রংয়ের যে পর্দা ব্যবহার করেছে, তার গায়ে ছোট ছোট লাল রঙের ডিজাইন করা যে পর্দাটা টানানো ছিলো, সেটা ব্যক্তিগতভাবে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে লাল সাদা রংয়ের গামছা এবং ভিতরের পিলার গুলোতে খুব সুন্দর ভাবে এই সমস্ত জিনিসগুলো দিয়ে ডিজাইন করার পাশাপাশি, হাতে আঁকা আলপনা দিয়েও সাজানো রয়েছে যা এক নজরেই আপনার পছন্দ হবে। একপাশে রাখা আছে গ্রামোফোন, যা সত্যিই পুরনো দিনের ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। **
![]() |
---|
কাঠের তৈরি খাবারের টেবিলগুলোকেও সাবেকি ভাবে সাজানো আছে এবং খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে সেখানে সমস্ত কাঁসার বাসন ব্যবহার করা হয়। বসে খাবার খাওয়ার সাথে সাথে সামনের খোলা জানালা দিয়ে উপভোগ করতে পারবেন বাইরের প্রকৃতির সৌন্দর্য্যও। এর থেকে ভালো পরিবেশ বোধহয় আর কিছুই হয় না
![]() |
---|
![]() |
---|
সেখানকার দেওয়ালে আঁকা রয়েছে কলকাতার বিভিন্ন ঐতিহ্য যেমন ট্রাম, বিশ্ব বাংলা গেট, নেতাজি ও লালমোহন গাঙ্গুলির ছবি(যিনি সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা গল্পের একটি জনপ্রিয় চরিত্র)। যতদূর আমার ধারণা তার নামকরণেই বোধহয় এই রেস্টুরেন্টের নাম রাখা হয়েছে লামহাটায় লালমোহন। যদিও এই বিষয়ে সেখানকার কোনো স্টাফের সাথে কথা হয়নি।
![]() |
---|
![]() |
---|
যাইহোক আমরা সেখানে গিয়ে বসার পর ছবি তুলে নিলাম এবং সবশেষে আমরা ভেজ খালি অর্ডার করলাম। ভেজ থালিতেই এতো প্রকারের খাবার আমাদেরকে সার্ভ করা হলো, যেন মনে হল বহুদিন বাদে এমন সাজিয়ে গুছিয়ে কেউ খেতে দিয়েছে। তবে সত্যি কথা বলতে তরকারি গুলো সেখানে ভালো হলেও, ভাতটা একেবারেই ভালো ছিল না। ভেজ খালির মেনুতে সেদিন আমাদের যে যে খাবার দেওয়া হয়েছিলো, সেগুলো আমি নিচে উল্লেখ করলাম-
|
---|
ভাত | আলু উচ্ছে ভাজা |
---|---|
পুঁইশাক | শুক্তো |
ভেজ মুগ ডাল | আলু পোস্ত |
আলু পটলের তরকারি | আমের চাটনি |
পায়েস | পাঁপড় ভাজা |
স্যালাড | জল |
![]() |
---|
মূলত আঁতপ চালের ভাত দিয়েছিলো। যেহেতু আঁতপ চালের ভাত খাওয়াতে আমরা কেউ অভ্যস্ত নই, সেই কারণে ভাতটার তৃপ্তি করে খেতে পারিনি। শুধু এইটুকু যদি বাদ দিই তাহলে রেস্টুরেন্টের আপ্যায়ন থেকে শুরু করে, সেখানকার পরিবেশ, খাবারের কোয়ালিটি প্রত্যেকটা জিনিস ছিল অসম্ভব সুন্দর।
![]() |
---|
![]() |
---|
খাওয়া-দাওয়া শেষ করার পর ওখানে সকলে মিলে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটিয়েছিলাম, কারণ জ্যামের কারণে আমাদের গাড়ি অনেকটা পিছনে আটকে গিয়েছিলো। সেই মুহূর্তেই রেস্টুরেন্টের সামনে লাগানো সুন্দর কিছু ফুলের ফটোগ্রাফি আমি করেছিলাম।পাহাড়ে ঘোড়ার অভিজ্ঞতা এতো সুন্দর ছিল বোধহয় এতো রকম ফুলের কারণেই। পথ চলতে চলতে যে এতো সুন্দর সুন্দর ফুল চোখে পরেছে তা আসলে লিখে শেষ করা যাবে না।
যাইহোক এইরকম ভাবেই লামাহাটায় সেদিন আমরা লাঞ্চ করেছিলাম, যেটা ব্যক্তিগতভাবে আমি ভীষণ উপভোগ করেছি। আর সেই মুহূর্ত গুলো ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম কেবলমাত্র আপনাদের সাথে শেয়ার করবো বলে। তাই এই রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। প্রত্যেকে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।
SPOT-LIGHT TEAM: Your post has been voted on from the steemcurator07 account.
Thank you for your support @memamun. 🙏