"**শিব গুরু চর্চা** - এক ভিন্ন উপায়ে শিব ঠাকুরের আরাধনা"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে।
আমরা মানুষেরা আসলে খুবই স্বার্থপর হয়ে থাকি। আনন্দের দিনে কতজন ঈশ্বরকে স্মরণ রাখি তা জানি না। তবে বিপদের দিনে আমরা সকলেই তার শরণাপন্ন হই, একথা হয়তো কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। কারণ আমরা সকলেই বিশ্বাস করি এই পৃথিবীতে আমাদের প্রত্যেকের রক্ষাকর্তা তিনি। হয়তো বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন ভাবে, তিনি মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন, তবে সর্বশক্তিমান সেই একজনই।
তবে ব্যতিক্রমী মানুষ যে পৃথিবীতে নেই একথাও অস্বীকার করবো না। অনেকেই আছেন যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তবে তাদের মতন ধৃষ্টতা বোধহয় আমাদের মতন ছাপোষা মানুষদের থাকে না। যাইহোক আপনারা যারা আমার পূর্বের পোস্ট পড়েছেন, তারা জানেন বছর দুয়েক আগে আমার জামাইবাবুর ব্রেন সার্জারি হয়েছিলো এবং তারপরে প্রায় বছর খানেকেরও বেশি সময় তিনি অসুস্থ ছিলেন। আবার কয়েক মাস আগে পুনরায় তার ব্রেন সার্জারি করা হয়েছে।
![]() |
---|
ঐরকম একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় আমার দিদি অনেক জায়গাতেই মানসিক করেছিলো, কারণ আমরা আমাদের প্রিয়জনকে রক্ষা করার জন্য একেবারে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করি। সকল ঈশ্বরের শরণাপন্ন হই। আমার দিদিও তার ব্যতিক্রম নয়। ঐ কঠিন মুহূর্তে বোধহয় ঈশ্বরের ভরসাতেই ও দিন পার করতে পেরেছিলো। যাইহোক সেই সময়কারই একটি মানসিক পূজা ছিলো গতকাল ওর বাড়িতে, এই কারণে আমি সকাল বেলাতেই ওর বাড়িতে চলে গিয়েছিলাম।
তবে এই পূজোটা সচরাচর আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে হয় না। দেখুন ঈশ্বর অবশ্যই একজন, তবে বিভিন্ন ধর্ম ও প্রজাতির কাছে তিনি পূজিত হন বিভিন্ন রূপে। নিয়মাবলির কিছু পার্থক্য থাকে বটে, তবে সকল পূজার লক্ষ্য একটাই ঈশ্বরের নাম জপ করা। দিদিদের সামনের ফ্ল্যাটে যারা থাকেন, ওনরা জাতিতে বিহারী। ওনাদের পূর্বপুরুষেরা বিহারেই থাকতেন এবং এখনও ওনাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন বিহারে থাকলেও, ওনরা অনেক বছর ধরেই কলকাতায় থাকছেন।
![]() |
---|
**এই পুজোটা মূলত ওনাদের পুজো, যাকে ওনরা শিব গুরু চর্চা বলেন। ওনাদের এই পুজোতে দিদিদের প্রতি বছর নিমন্ত্রণ করেন। তাই সেবার যখন দিদি ওনাদের বাড়িতে এই পূজাতে গিয়েছিলো, তখন মনে মনে মানত করেছিলো - দাদা সুস্থ হয়ে উঠলে ও নিজেও বাড়িতে এই পুজো করবে। শ্রাবণ মাসে মূলত এই পুজোটা করা হয় এবং এই পূজার প্রধান আরাধ্য দেবতা যেহেতু দেবাদীদেব মহাদেব, তাই দিদি এই পুজো করার জন্য শ্রাবণ মাসের শেষ সোমবার বেছে নিয়েছিলো।
তবে বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে এই দিন এই পুজো করার ভীষণ চাপ থাকে, ফলতো ওইদিন যারা এই অনুষ্ঠান করেন তাদেরকে একসাথে পাওয়াটা খুবই কষ্টসাধ্য ছিলো। তবুও অনেক অনুরোধ করার পর তারা রাজি হয়েছিলো। সারা দিনের মধ্যে তারা আরো চারটে বাড়িতে এই একই অনুষ্ঠান করে, সবশেষে দিদির বাড়িতে পুজো করবে এমনটাই ঠিক হয়েছিলো।
![]() |
---|
দিদি আগে থেকেই ওর প্রতিবেশী দিদিকে সাথে নিয়ে সমস্ত বাজার গুছিয়ে নিয়েছিলো। এমনকি সন্ধ্যার সাথে সাথে তারা দুজন মিলে আসনও সাজিয়ে ফেললো। মূলত শিব ঠাকুরেরই একটা ছবিতে ওনরা পুজো করেন। সেখানে আকন্দ ফুলের মালা থেকে শুরু করে বেল পাতার মালা, সমস্ত কিছুই পড়ানো হয়। তবে এই মালাগুলো বানানোর জন্য কেউ সুঁচের ব্যবহার করেনা। সুতো দিয়ে ফুল ও পাতাগুলিকে খুব সুন্দর ভাবে গেঁথে মালা তৈরি করেন, তারপর সেটা ঠাকুরের ফটোতে পড়ানো হয়।
![]() |
---|
![]() |
---|
এমনকি কোনো ফল প্রসাদ কেটে দেওয়া হয় না, সমস্ত ফল ধুয়ে সেখানে গোটা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে যখন প্রসাদ বিতরণ করা হয় তখন চাইলে আপনি সেগুলো কেটে দিতে পারেন, অথবা সকলকে গোটা দিতে পারেন। বাকি ভোগের জন্য বাকি আপনি যা কিছু আয়োজন করবেন না কেন, সবকিছুই ঠাকুরের সামনে ঢাকা দিয়ে রাখতে হবে এবং তার উপরে একটা করে বেল পাতা দিতে হবে। চন্দন এবং সিঁদুরের সাথে ওরা আরো দুই রকমের জিনিস রাখেন ওখানে। পুজোর পরে সকলের কপালে ফোটা দেওয়া হয় এবং সিঁথিতে কমলা রঙের সিঁদুর পড়ান।
![]() |
---|
যাইহোক সবকিছু আয়োজন করে আমরা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিলাম। সমস্ত জায়গায় অনুষ্ঠান শেষ করে প্রায় আটটা দশ নাগাদ দিদি বাড়িতে এসেছিলেন সকলে।এরপর সকলে মিলে মহাদেবের নাম স্মরণ করে বেশ কিছুক্ষণ গান করলেন। এরপর ওনাদের চা করে দেওয়া হলো। তারপর এক এক করে আরও কিছু গান গাইলেন।
![]() |
---|
এই পুজো মূলত মহিলারা একত্রিত হয়ে করেন এবং প্রত্যেকের মাথায় কাপড়ের আঁচল থাকে। যারা কাপড় পরেন না, তারা চুরিদারের ওড়না মাথায় দিয়ে বসেন অর্থাৎ এই পুজো করার সময় মাথা খালি রাখা যায় না। এমনকি ওই পুজোতে যারা উপস্থিত থাকবে তাদের সকলের ক্ষেত্রে একই নিয়ম প্রযোজ্য। এরপর ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, ভোগের আরতি সম্পন্ন করার পর, প্রসাদের ঢাকা গুলো খুলে দেওয়া হয়, এরপর এক এক সকলকে প্রসাদ বিতরণ করা হয়।
![]() |
---|
পুজোটা একটু অন্যরকম হলেও আমরা সকলে খুব উপভোগ করেছি। সকলের মিলিত স্বরে যখন মহাদেবের নামে গান করেছেন, সে আনন্দ একেবারেই অন্যরকম। বিশেষ করে আমার বাবা খুব পছন্দ করেছেন সকলের গান। যদিও তিনি হিন্দি একেবারেই বোঝেন না, তাই তিনি বলছিলেন যে,- ভাষা না বুঝলেও গানের তাল এতো সুন্দর ছিল যে বসে শুনতে ইচ্ছা করছিলো।
![]() |
---|
যাইহোক গতকালও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছিল পুজোটা। অন্যরকম র্তরল প্রথমবার এই পুজো আমিও বেশ উপভোগ করেছি, তাই কিছু মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করেছিলাম যেগুলো আপনাদের সাথে আজকে করলাম। আপনাদের কাদের কাদের এই পুজো দেখার সুযোগ হয়েছে অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।
আগামীকালের পোস্টে এই পুজোর সংক্রান্ত এবং এই দিনের অন্য আরেকটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। আজকের পোস্ট এখানেই শেষ করলাম।