অবশেষে বাড়ি ফেরা
![]()
|
---|
Hello,
Everyone,
২২ দিন পর আজ বাড়ি ফিরবো, কথাটা শোনার পর থেকেই সময় যেন কিছুতেই কাটতে চাইছে না।
গত ২২ দিন ধরে প্রতিদিন সকালবেলায় হসপিটালে আসা এবং রাতের বেলায় মামা শশুর বাড়িতে ফিরে যাওয়া, এটাই ছিল ডেইলি রুটিন। হসপিটালে কখনো ওয়ার্ডে, কখনো ওপিডিতে, কখনো ব্ল্যাডব্যঙ্কে, কখনো সিটি স্ক্যান, কখনো এক্সরে, কখনো ওষুধের দোকানে, কখনো ওপিডির সামনে এই ভাবেই কেটেছে আমার ও শুভর দিনগুলো।
আজ হসপিটালে আসার পর শুনলাম বিকালের দিকে বাড়ি যেতে পারবো। ইউরোলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে ছুটি দিয়ে দেবে আজ। পরবর্তীতে ট্রিটমেন্টের জন্য আগামী মাসের ৩ তারিখ ও ২২ তারিখ দুটো টেস্ট আছে। বাড়ি ফিরে আলোচনা করে যদি সকলে সম্মতি দেয়, তাহলে আবার আগামী মাসে আসতে হতে পারে।
![]()
|
---|
যাক আজকের দিনের গল্পটা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে হলো, কারণ বেশ কিছু বিষয়ে মনটা একটু খারাপ হয়ে আছে। আমার বিয়ের পরে এই প্রথম মামা শ্বশুর বাড়িতে এতগুলো দিন কাটালাম। সত্যি কথা বলতে কোথাও কয়েকদিন কাটালে সেখানকার পরিবেশ, মানুষ জনের সাথে আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি।
ছোট মামা শশুর বাড়িতে বেশিরভাগ সময় ছিলাম। তার উপরের তলাতে বড় মামা শ্বশুররা থাকেন। মাঝেমধ্যে সেখানে আমরা খাওয়া-দাওয়া করেছি। তবে হিসেব মতো সন্ধ্যার পর থেকে পরের দিন সকাল পর্যন্ত, বেশিরভাগ সময় ছোটো মামা শ্বশুরের ঘরেই কাটিয়েছি।
অনেক গল্প হয়েছে, অনেক কথা হয়েছে, সব থেকে বেশি যে খুশি হয়েছিলো, সে ছিলো মামাশশুরের ছেলে। এই কিছুক্ষণ আগেও ফোন করে বলছিলো,- তোমাদের আজকে আবার আমাদের বাড়িতে আসতে হবে দেখো বৌদি। পিষূনের আজকেও ছুটি হবে না।
বাচ্চা মানুষ মনে মনে এটাই চাইছিলো, যাতে আজও ওদের বাড়িতেই আবার ফিরে যেতে হয় অন্যান্য দিনের মতো। কিন্তু ও বুঝতে চাইছে না যে, আমাদের আর ভালো লাগছে না। নিজের বাড়ি ছেড়ে থাকতে, বিশেষ করে পিকলুটার জন্য মন টানছে কয়েকদিন ধরেই।
![]()
|
---|
আসলে আমি থাকলে ওকে ওর মা বকতে পারে না, মারতে পারে না, সময় মেনটেন করে ওকে পড়তে বসতে হয় না, বৌদির কাছে তার আবদারের শেষ নেই। তাছাড়া তার ছোটবেলার গল্প, তার স্কুলের গল্প, সবকিছুর ঝুলি নিয়ে সন্ধার পরেই বসে পড়তো আমার কাছে।
আজ ওদের বাড়িটা বড্ড ফাঁকা লাগবে। কারণ প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এটা যেন আমাদের রুটিন হয়ে গিয়েছিল বাড়িতে ফিরে আসলে সকলে মিলে এক কাপ চা খেতাম, তারপর মামী রান্না করতে গেলে আমি স্নান করে কমিউনিটির কাজ নিয়ে বসতাম। আবার খাওয়ার সময় সকলের একসাথে টেবিলে বসে ডিনার করতাম।
আজ নিশ্চয়ই ওদের মনটা খারাপ হবে। ঠিক যেভাবে আমার মনটা খারাপ হচ্ছে। একদিকে বাড়ি ফেরার আনন্দ রয়েছে, অন্যদিকে এতো দিনের অভ্যাসকে পেছনে ফেলে যেতে হবে কষ্টও হচ্ছে এটাই যা।
![]()
|
---|
সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম দরজা দিয়ে হালকা রোদ্দুর ঢুকছে ঘরে। আসলে আগেরও একটা পোস্টে জানিয়েছিলাম মামাদের ব্যালকনি পুরো কাঁচ দিয়ে ঘেরা, তাই সূর্যের তীব্রতা ততটাও বোঝা যায় না। তবে আলো পড়ছে এটা বোঝা যায়। আজ আমার একাদশীর উপবাস। তাই চাও খাবো না। মামা আর শুভর জন্য একসাথে চা করলাম। তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে ব্যাগগুলো গোছালাম।
![]()
|
---|
গত দুদিন ধরেই আমরা ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে আসছি, যাতে ছুটি দিলে ওখান থেকে সোজা বাড়ি ফিরতে পারি। আজকেও রেডি হয়ে নিলাম, হসপিটালে আসার জন্য। তারপর উপর থেকে শুভর মাসিদের সাথে দেখা করে রওনা করলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় আমার এক মাসি ফোন করলো যে, সে কল্যাণীতে এক আত্মীয় বাড়িতে এসেছে। সেখান থেকে শ্বশুরমশাইয়ের সাথে দেখা করবে।
আমি তাকে দেখা করার সময় জানিয়ে দিলাম। এরপর আমরা এসে ওয়ার্ডে গিয়ে কথাবার্তা বললাম এবং ছুটি পেতে পারি এরকম একটা সংবাদ পাওয়ার পর, মনটা খুশিতে ভরে গেলো। নিচের ওয়েটিং লঞ্চে বসেছিলাম। এমন সময় বেশ কয়েকটি মেয়ে এসে আমাদেরকে সামনের দিকে ঘুরে বসতে বললো। আসলে মেয়েগুলো সবাই নার্সিং পড়ছে। তাদের ট্রেনিং এরই একটা পার্ট হচ্ছে অ্যাওয়ারনেস প্রোগ্ৰাম। যেহেতু এখানে হসপিটালে ভর্তি সকলের পরিবারের লোক বসেছিলো, তাদের সামনেই ওরা একটা ছোট্ট সেশন তারা নিলো।
![]()
|
---|
তাদের আলোচ্য মূল বিষয় ছিলো, কোনো কিছু গলায় আটকে গেলে আমরা সেই মুহূর্তে কি কি কাজ করতে পারি? কি কি উপায় অবলম্বন করে আমরা মানুষকে সুস্থ করতে পারি? বাচ্চা, বয়স্ক ও গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে কি কি সাবধানতা আমাদের অবলম্বন করা উচিত, এই সমস্ত বিষয় নিয়ে তারা সুন্দর একটা উপস্থাপন করলো। ভেবেছিলাম তার একটা ছবি তুলবো, কিন্তু সিকিউরিটিরাও দাঁড়িয়ে ছিলো, আর ওখানে ছবি তোলা একেবারেই নিষিদ্ধ।
যাইহোক এরপরে মাসি এলে ভিজিটিং আওয়ারে শ্বশুর মশাইয়ের সাথে দেখা করিয়ে দিলাম। তারপর আমরা আর একবার ওপিডিতে গিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বললাম। তখন জানতে পারলাম তিনি ওটিতে গেছেন, ফিরতে বিকাল হবে। বুঝে গেলাম এখান থেকে বের হতে সেই সন্ধ্যা হবে।
![]()
|
---|
এরপর বেশ কিছুক্ষণ ওষুধের দোকানেও লাইন দিতে হলো। কয়েকটি ওষুধ নেওয়ার ছিলো, সেগুলোই নিয়ে নিলাম। তারপর এসে ওয়েটিং এড়িয়াতে অপেক্ষা করলাম। আজ একাদশীর জন্য ছোট মামি শাশুড়ি ফল দিয়ে দিয়েছিলো, সেগুলোই খেয়ে নিলাম। আর শুভ বাইরে থেকে লাঞ্চ করে এলো।
তারপর আমার ননদ, শাশুড়ি, আমার নিজের দিদি সকলেই ফোন করলো এবং সবাইকে জানালাম আজ রাতের দিকে আমরা বাড়ি যেতে পারি। এখন হাত একটু ফাঁকা আছে তাই ভেরিফিকেশন শুরু করলাম। একটা পোস্টের সময় বেশি ছিলো, তাই সেটা আগের ভেরিফাই করে নিয়ে, নিজের পোস্টটা লিখে রাখলাম। এরপর বাকি পোস্টগুলো ভেরিফাই করবো এবং বাড়িতে গিয়ে নিজে পোস্ট করবো বলে ঠিক করলাম।
এতদিন বাদে বাড়িতে গিয়ে আশা করছি ভালো লাগবে। তবে মামা বাড়িকেও মিস করবো, এ কথাও অস্বীকার করতে পারছি না। যতই হোক নিজের বাড়িতে ফেরার এক অন্য আনন্দ, উল্টো দিকে ২২ দিনের অভ্যাসটা একদিনে পরিবর্তন করাটাও কষ্টকর।
শ্বশুরমশাইয়ের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে আপনাদের সাথে পরবর্তী কোনো একটা পোস্টে কথা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
হাসপাতালে যে মানুষ কতোটা খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হলে থাকে সেইটা আমিও জানি। তবে হ্যাঁ আপনার মতো এই দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতা আমার নেই। এতো দিন পরে বাড়িতে ফেরার কথা শুনতে পেলেই তো মন খানিকটা ভালো হয়ে যায়।
আমি যখন আমার বোন ও কাকিমার জন্য হাসপাতালে ছিলাম, রাতে তো ঘুম তো হতোই না। আবার সকাল হতেই অপেক্ষা করতাম কখন যেন বাড়ি থেকে কেউ একজন আসবে। অন্যদিকে, অসুস্থ মানুষটির চিন্তা সব মিলিয়ে একটা অস্বস্তিকর মূহুর্ত।
এই জন্যই হয়তো বড়রা বলেন যে রোগীর দেখাশোনা করতে করতে সুস্থ্য মানুষ ও একটা সময় অসুস্থ হয়ে পড়ে।
যাইহোক, অবশেষে এটাই আমার অভিমত ঈশ্বর যেন সব কিছু দ্রুতই ঠিক করে দেন। ভালো থাকুন দিদি আর নিজের খেয়াল রাখবেন।