Better Life With Steem || The Diary game || 10/07/2025
আসসালামু আলাইকুম
আজকের দিনটা খুব সাধারণ কিন্তু আমার কাছে মনে হলো অজস্র আবেগে ভরা এক একটা মুহূর্ত। সকালে ঘুম ভাঙতেই যেন বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভব করলাম। কারণ আজ আমার হাজবেন্ড কর্মস্থলে চলে যাবে। আমরা প্রায় ১৪ মাস একসাথে ছিলাম এই প্রথম আবার তাকে ছেড়ে থাকতে হবে এই ভাবনা মনটাকে ভার করে তুলেছিল।
ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি করে উঠলাম। তারপর রান্নাঘরে গিয়ে সকালে কাজ শুরু করলাম। উঠান ঝাট দিলাম শিশির ভেজা মাটি আর কাকের ডাক শুনতে শুনতে মনটা বিষন্ন হয়ে উঠল। তারপর চুলার সাই পরিষ্কার করলাম চুলায় পানি বসালাম এইসব করতে করতেই চোখে পানি চলে এলো। কারণ মেয়েটা ঘুম থেকে জেগে উঠলেই বাবার কোলে উঠে বসে থাকবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মেয়ের কান্না।তাড়াতাড়ি করে মেয়েকে উঠালাম। মেয়েটা আমার কাছ থেকে ওর বাবার কোলের ভিতর গিয়ে গুটি শুটি হয়ে আবার শুয়ে পড়লো। এরপর আমি রান্নাঘরে ফিরে সকালের জন্য ভাত চড়ালাম। তখনই চোখে পড়লো আমাদের গাছের কাঁঠাল গুলো অনেক বড় হয়ে গেছে।
হঠাৎ মন চাইলো একটা কাঁঠাল পারি যেন কিছু কাজের মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখি। কিন্তু কাঁঠাল গুলো এত বড় বলে বোঝার মত না। আমার শশুরকে বলে কাঁঠাল গুলো পেড়ে রাখলাম গাছ থেকে। অনেক বড় বড় চারটা কাঁঠাল পারলো আমার শ্বশুর। আমার মেয়ে তো কাঁঠাল গুলো দেখে একদম চোখ ছানা বড়া হয়ে গেছে।বারবার বলছিল আম্মু এত বড় কাঁঠাল।আমি বললাম হ্যাঁ আম্মু এত বড় কাঁঠাল। আমি একটু দুষ্টামি করে বললাম তোমার জন্য এনেছি আম্মু কাঁঠাল খাবে।
মেয়েটা মাথা নাড়ল, বললো হ্যাঁ দাও আমি খাই। একটা কাঁঠাল কেটে ওকে কুয়া দিলাম ও খেতে খেতে আবার মুখে মেখে ফেলল। আমি পরিষ্কার করতে করতে ভাবলাম সত্যিই সন্তানের হাসি যেন সব দুঃখের প্রতিদান। এদিকে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমার হাজবেন্ড রওনা দিল তার কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে। একবার মনে হচ্ছিল তাকে যদি সম্ভব হতো, বাড়িতে রেখে দিতাম। কিন্তু আমাদের মত অনেক নারী রাই হয়তো এরকম ভাবে কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হয় না। কাঁঠাল খাওয়ার পর চাল ঝারার কাজ শুরু করলাম। পুরনো চালের মধ্যেও কিছু পোকা রয়েছে তাই ঝেড়ে একটু পরিষ্কার করছিলাম।
এদিকে মেয়েটা এসে চালের ওপর বসে পড়ল আম্মু আমি চালের উপর পুকুর বানাই। আমি কিছু বললাম না কারণ জানতাম ওর এই খেলা গুলোই হয়তো আজকের দিনটা কিছুটা আনন্দময় করে তুলবে। এরপর রান্নার জন্য পাশের কুমড়ার গাছ থেকে একটা মাঝারি কুমড়া কেটে আনলাম। আজ ভাবলাম কাঁঠালের বিচি আর কুমড়া একসাথে রান্না করবো এই ভাঁজিটির নাম হল কুমড়া ভাজি। কুমড়া খুব চিকন চিকন করে কেটে রেখে পিয়াজ রসুন বাটা শুরু করলাম, চুলায় আগুন ধরালাম। রান্নার ঘ্রাণে মনটা একটু হালকা লাগল। যতই কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকি না কেন তবু আমার হাজবেন্ডের জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছিল। সবদিকে যেন হা হা করছিল শূন্যতা। সবকিছু বাদ দিয়ে মেয়েকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলাম।
কিন্তু তবু মনের ভিতর যেন বারবার কেঁপে উঠছিল। কোন কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিলাম না। মেয়েটাকে দোলনায় বসিয়ে দৌল খাওয়ালাম বাতাসে আমার সোনা পাখিটার চুল উড়ছিল, হাসিতে মুখ ভরা।আমি ওর ছোট্ট হাতটা ধরে বললাম তুমি থাকলে আমি একা না মা। ও তখন বলল তুমিও আমার সোনা আম্মু। এই কথায় চোখ আবারও ঝাপসা হয়ে এল। দুপুরে সবাই একসাথে খাইলাম। রান্নাটা বেশ ভালই হয়েছে আমি ভাবলাম নিজের হাতে ফলানো কাঁঠাল নিজের হাতে বানানো কুমড়া আমার নিজের হাতে রান্না এটাই সত্যি আসল সুখ। শহরের দামি খাবারের সাথে এটার কোন তুলনা চলে না। বিকেলে উঠানে বসে চা খেতে খেতে আমি চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মনে হচ্ছিল সে যেন এখান থেকেই আমাকে দেখছে আমার একাকীত্ব বুঝতে পারছে। মেয়েটা তখন মাটিতে পাতা কুড়িয়ে খেলছে আর মাঝে মাঝে এসে আমার কোলে এসে বসছে। দিনটা শেষ হলো সন্ধ্যার আযানে। বিছানায় শুয়ে ভাবলাম সারাদিন নিজেকে কাজে ব্যস্ত রেখেছি শুধু একটা মানুষকে ভুলে থাকার জন্য কিন্তু ভুলে থাকা যায়নি।বরং প্রতিটি কাজের ফাঁকে প্রতিটি দমে তার অনুপস্থিতি যেন আরো বেশি করে অনুভব করছি।
এই একটা দিন অনেক কিছু শিখিয়ে দিল। একজন নারী একজন মা একজন স্ত্রী সব চরিত্রে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করালাম। হয়তো সে পাশে নেই কিন্তু আমার মেয়ের হাসি সবকিছুতেই তাকে খুঁজে পাচ্ছি বারবার। এটাই জীবনের সত্যি ভালোবাসা, মায়া আর ছোট ছোট মুহূর্তেই লুকিয়ে থাকে আমাদের সবচেয়ে বড় অনুভূতি।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.