রঙিন পাখিদের রাজ্যে একটি দিন
আসসালামু আলাইকুম,
সকালটা ছিল অন্যরকম সুন্দর। জানালার পাশে বসে চা খাচ্ছিলাম, আর দূর থেকে ভেসে আসছিল পাখিদের কিচিরমিচির। বাসার নিচে খানিকটা দূরে চিড়িয়াখানার পাখিরা যেন আমায় ডাকছিল। তাদের রঙিন পালকের সৌন্দর্য আর মিষ্টি কণ্ঠে কথা বলার ইচ্ছা মনে জেগে উঠল। বহুদিন ধরে ইচ্ছা ছিল পাখিদের এই অভয়ারণ্যে ঘুরে আসার। আজ আর দেরি করলাম না। এক কাপ চা শেষ করেই মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
চিড়িয়াখানার প্রবেশপথে ঢুকতেই মনে হলো, আমি যেন প্রকৃতির কোনো রঙিন রাজ্যে চলে এসেছি। ছোট ছোট পাখি ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ কিচিরমিচির করছে, কেউ বা ডানা ঝাপটাচ্ছে। প্রথমেই গেলাম টিয়া পাখিদের ঘরে। সবুজ টিয়া পাখির লাল ঠোঁট যেন আলোয় ঝলমল করছিল। হাত বাড়াতেই একটি টিয়া পাখি ডালে বসে আমায় দেখছিল। মনে হলো, সে যেন আমার সঙ্গে কথা বলার অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমি বললাম, তুমি কেমন আছো? পাখিটি ডানা ঝাপটালো, আর আমি আনন্দে হেসে উঠলাম।আমার মেয়েটা তো ভীষণ খুশি।
এরপর গেলাম ময়না পাখিদের কাছে। ময়নাদের বুদ্ধিমত্তার গল্প শুনেছি, তাই কথা বলার চেষ্টা করলাম। কাছে গিয়ে বললাম, ময়না, কেমন আছো? আর কী আশ্চর্য! ময়না পাখি একদম স্পষ্ট কণ্ঠে উত্তর দিল, ময়না ভালো, আমার আনন্দ আর বিস্ময়ের শেষ রইল না। আমি আবার বললাম, তুমি কী খাবে? সে সোজা বলে উঠল, ময়না ফল খায়! পাখিটার এমন বুদ্ধি দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।
পরবর্তী ঘরটিতে ছিল নীল রঙের পাখি। তারা এত ছোট আর সুন্দর যে চোখ ফেরানো দায়। কেউ কেউ গাছের ডালে বসে ছিল, কেউবা একসঙ্গে উড়ে বেড়াচ্ছিল। গাইড জানালেন, এগুলো বিশেষ প্রজাতির পাখি যারা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। তাদের গানের আওয়াজ এত মধুর ছিল যে মনটা ভরে উঠল।আরো কিছুদূর এগিয়ে গেলাম হলুদ রঙের পাখিদের দিকে। তাদের ডানার রঙ এত উজ্জ্বল ছিল যে মনে হচ্ছিল, সূর্যের আলো যেন ওদের মধ্যে ভেসে উঠেছে। আমি দাঁড়িয়ে শুধু দেখছিলাম, আর অনুভব করছিলাম প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য।শেষে এলাম লাল রঙের পাখিদের ঘরে। তাদের ডানা আর পালকগুলো এমন উজ্জ্বল লাল যে দেখে মনে হচ্ছিল, যেন তারা প্রকৃতির রঙের খেলা। গাইড বললেন, এরা দলবদ্ধভাবে থাকে এবং এদের পোষ মানানো সম্ভব। আমি ভাবছিলাম, এমন পাখিদের যদি বাসায় রাখা যেত, তবে প্রতিদিন এমন সুন্দর সঙ্গ পাওয়া যেত।
ঘুরতে ঘুরতে সময়ের হিসাব ভুলে গিয়েছিলাম। এত রঙিন পাখি, এত সুন্দর পরিবেশ মনে হচ্ছিল, আমি কোনো রূপকথার রাজ্যে চলে এসেছি। প্রতিটি পাখির আচরণ, তাদের উড়ার ভঙ্গি, আর তাদের রঙ আমার মনের মাঝে গভীর ছাপ ফেলে দিল।ফেরার পথে ময়নার কাছে আরেকবার গেলাম। এবারও তাকে ডাকলাম, ময়না! পাখিটি সোজা আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ময়না, শোনে না! হাসতে হাসতে বললাম, তুমি তাহলে এত স্মার্ট কেন? ময়না উত্তর দিল, ময়না স্মার্ট! তার এই কথায় আশেপাশে যারা ছিল তারাও হেসে উঠল।
চিড়িয়াখানা থেকে বাড়ি ফেরার পথে মনে হলো, প্রকৃতির সান্নিধ্য কতটা শান্তি এনে দেয়। পাখিদের এই রঙিন রাজ্যে কাটানো সময় শুধু আনন্দ নয়, মনের গভীরে এক নতুন প্রশান্তি এনে দিয়েছে। পাখিদের মধুর কণ্ঠস্বর, তাদের রঙিন ডানার সৌন্দর্য আর তাদের সহজ-সরল জীবন আমাকে প্রকৃতির প্রতি আরো ভালোবাসতে শিখিয়েছে।এই পাখিদের ছোট্ট জগতটা আমাকে শিখিয়েছে যে, প্রকৃতির সৌন্দর্য ঠিক মানুষের মনের মতোই বৈচিত্র্যময়। আমাদের উচিত এই জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা, কারণ প্রকৃতিই আমাদের জীবনের সত্যিকারের সঙ্গী।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
This is very lovely and beautiful in which three parrots are sitting together.
মেয়ের সাথে চিড়িয়াখানায় ভালো একটা সময় কাটল, পাখি কার না ভালো লাগে মোটামুটি সবাই পাখি দেখতে পছন্দ করবে। পাখিটা কিন্তু দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে সেই সাথে একত্রে তিনটি পাখি বসে আছে সেই ছবিটাও খুবই সুন্দর হয়েছে।
পোস্টে দেখে সত্যিই অসাধারণ লেগেছে। পাখির গুলোর ছবি দেখে তো মন ভালো হয়ে গেলা। পাখি হলো শান্তির প্রতীক । ময়না ,টিয়া পাখি আমার খুবই ভালো লাগে । যখন ময়না পাখি কথা বলে তখন আরো ভালো লাগে।
আপনি পাখিকে যখন খাবার দিয়েছিলেন তখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন কি খাবে । তার উত্তরে বলেছিল
পাখিরে মিষ্টি কথা অনেক ভালো লাগে। পোস্টটি পড়ে মনটা ভালো হয়ে গেল ।নতুন পোস্ট করার অপেক্ষায় রইলাম।
বাহ পাখিগুলোকে দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে। আমি সাধারণত এইরকম টিয়া পাখি দেখিনি। যেরকম টিয়াপাখি সচরাচর টিয়া পাখি দেখা যায় সেই রকম টিয়া পাখি দেখেছি। ছোট ছোট বাচ্চারা এগুলো দেখতে খুবই ভালোবাসে। আমার নিজের মামার মেয়েও বেশ কিছুদিন হল বায়না ধরেছে চিড়িয়াখানায় যাবে। কিন্তু সময়ের অভাবে কেউ তাকে নিয়ে যেতে পারছে না। আসলে আমাদের বাড়ি থেকে চিড়িয়াখানা অনেকটাই দূরে। এইরকম ছোটখাটো পাখি আমার বোনের বর লালন পালন করত।সেও কিছুদিন হল সমস্ত পাখি বিক্রি করে দিয়েছে। আপনার পোস্টের মাধ্যমে সুন্দর সুন্দর পাখি দেখতে পেলাম।
বর্তমান সময়ে চিড়িয়াখানা এবং বিভিন্ন জায়গাতে কিন্তু এ ধরনের রঙিন পাখি গুলো দেখা যায় আমি নিজেও একবার চিড়িয়াখানায় যখন ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন এই পাখিগুলো দেখতে পেয়েছি পাখিগুলো দেখলে মনে হয় তাদের সাথে কিছুটা সময় পার করতে পারলে আরো বেশি ভালো হতো।
কিন্তু আমাদের হাতে সময় অল্প থাকার কারণে আমরা সেটা করতে পারিনি তবে আপনি বেশ অনেকটা সময় নিয়ে সেখানে ঘোরাঘুরি করেছেন। যেটা দেখে বেশ ভালই লাগলো অসংখ্য ধন্যবাদ রঙিন পাখির ভিড়ে কাটানো মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মনকে অনেক গুণ আনন্দে বাড়িয়ে দেয়।। ময়না পাখির সাথে কথা বলা কি এক অদ্ভুত পাখিরাও যেন আমাদের কথা বলতে আবার উত্তর দিতে পারে।। এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি পাখির সাথে কথা বলার।। শুনে সত্যি অনেক ভালো লাগলো আজকের দিনটি আপনার অনেক বেশি আনন্দে কেটেছে।।