গর্ব ভালোবাসা ও স্মৃতির গল্প

in Incredible Indialast month

আসসালামু আলাইকুম,
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকের এই গল্পটি আমার হৃদয়ের খুব কাছের একটি অভিজ্ঞতা নিয়ে। ঘটনাটি খুব সাধারণ হলেও এর ভিতর ছিল অনেক আনন্দ ভালোবাসা আর গর্বের এক মিশেল । তাই আমি মনে করলাম যে আপনাদের সাথেও শেয়ার করি আমার এই সুন্দর হৃদয়ঘন এক মুহূর্ত।

আমার হাজবেন্ডের অফিসে আগামীকাল একটি বিশেষ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। সেই অনুষ্ঠানটি ঘিরে চলছে নানা প্রস্তুতি। অনুষ্ঠানটি হবে একটি বড় খোলা মাঠে,যেখানে স্টেজ, সাউন্ড সিস্টেম লাইটিং বসার ব্যবস্থা সবকিছু দিয়ে চলছে জোরদার কাজ। অফিসের কর্মীরা সবাই খুব ব্যস্ত, যেন একজন অবসর নেই। আমার হাজবেন্ড ও এই প্রস্তুতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি শুধু দায়িত্ব পালন করছেন না বরং অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। এটা দেখে আমার মনে এক ধরনের গর্ব আর ভালোবাসা কাজ করছিল। আমি ভাবলাম মিরাকে নিয়ে একটু ঘুরে আসা যাক সেই সাথে দেখা যাবে কতটা এগিয়েছে কাজ, আর মিরার জন্যও তো এটি এক নতুন অভিজ্ঞতা হবে।

মিরাকে নিয়ে বিকেল বেলা আমি রওনা দিলাম মাঠের দিকে। আমাদের বাসা থেকে হাটলেই পৌঁছে যাওয়া যায়। মাঠে ঠান্ডা বাতাস বইছিল আর চারপাশের গাছে পাখির ডাক, সব মিলিয়ে এক শান্ত পরিবেশ। মিরা আমার হাত ধরে লাফাতে লাফাতে চলছিল,ওর মুখে ছিল বিশাল আনন্দ। মাঠে পৌঁছে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । পুরো মাঠটা যেন রূপকথার কোন মেলায় রূপ নিয়েছে। বিশাল স্টেজ টা তৈরি হয়ে গেছে তার সামনে সারি সারি চেয়ার বসানো হচ্ছে। চারদিকে লাইট ঝুলানো হয়েছে, অনেকগুলো রঙ্গিন কাপড় এ সাজানো প্যান্ডেল চোখ জুড়িয়ে দিচ্ছিল।

আবার সুন্দর করে অনেক রঙ্গের কাপড় দিয়ে সুন্দর সুন্দর স্টেজ এর মত বানিয়েছে। এক কথায় সবকিছু যেন অসাধারণ। কেউ মঞ্চ ঠিক করছে কেউ সাউন্ড চেক করছে আবার কেউ সবকিছুর দিকে নজরদারি করছে। মিরা অবাক হয়ে সবকিছু দেখছিল।ওর ছোট চোখ গুলো যেন এক নতুন জগৎ আবিষ্কার করছিল। মাঝে মাঝে ও খুশিতে হাততালি দিচ্ছিল, আবার কখনো দৌড়ে গিয়ে একটা লাইটিং তার ধরে ফেলছিল। আমি ওকে বারবার থামাচ্ছিলাম কিন্তু ওর আনন্দ দেখে আমি বিরক্ত হতে পারছিলাম না। হঠাৎ ওর একটা বড় আপুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল মিরা তো ভীষণ খুশি ওর আপুকে পেয়ে। তাই বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিলাম।

হঠাৎ দেখি আমার হাজব্যান্ড একটি ব্যানার ধরে ব্যস্ত ভাবে কারো সঙ্গে আলোচনা করছেন। কাজের ভিড়ে আমাকে খেয়াল করেননি। আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলাম। ওর কপালে ঘাম মুখে পরিশ্রমের ছাপ কিন্তু চোখে মুখে পরিতৃপ্তি। কোন কিছু সফলভাবে আয়োজনে অংশ নেওয়া যে কতটা গর্বের সেটা ওর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল। আমি ভাবছিলাম এই মানুষটাই তো আমার জীবন সঙ্গী। শুধু অফিসে নয় বাসাতেও সে আমাকে সাহায্য করে মিরাকের সময় দেয় আর আজ অফিসের এই বিশাল আয়োজন নিজের ভূমিকা রাখছে পরিপূর্ণ মনোযোগ দিয়ে। এক মুহূর্তে মনে হলো আমার, অনেক সময় ভালোবাসার মানুষদের এই ছোট্ট ছোট্ট দায়িত্ব ও নিষ্ঠার পেছনের গুরুত্ব ঠিকমতো উপলব্ধি করি না। মিরাকে কোলে নিয়ে আমি একটু দূরের ঘাসে বসে পড়লাম। ও তখনো প্যান্ডেলের রং বাতির ঝিলিক আর মানুষের কোলাহল নিয়ে আনন্দের বিভোর। আমি চারপাশে তাকিয়ে এক ধরনের শান্তি অনুভব করলাম।

সন্ধ্যার আলো ধীরে ধীরে গাঢ় হচ্ছিল। আকাশে তখন সোনালী আঁভা বাতাস হালকা ঠান্ডা। দূর থেকে অনুষ্ঠান স্তরে লাইটগুলো একে একে জ্বলে উঠছিল, চারপাশ আলোকিত হয়ে উঠছিল এক স্বপ্নময় পরিবেশে। আমি বুঝতে পারছিলাম আগামীকাল হয়তো আরো বড় আনন্দ আসবে কিন্তু আজকের এই প্রস্তুতির মুহূর্ত গুলো আমার কাছে অনেক বেশি অর্থবহ।এমন সময় চোখ পরলো আমার হাজবেন্ডের দিকে, দেখি তিনি আমাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন এবং এগিয়ে আসা শুরু করলেন তখন আমার মেয়ে কোল থেকে নেমে পড়ে বিশাল একটা দৌড় দিল তার বাবার কাছে যাওয়ার জন্য। এই আনন্দময় মুহূর্তটা আমি কিছুতেই মিস করতে চাইলাম না এই জন্য ফোনে একটা সুন্দর মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে রাখলাম। একদিক থেকে মেয়ের বাবা আসতেছে মেয়ের দিকে আরেক দিকে মেয়ে ছুটে চলছে তার বাবার কাছে। কি অসাধারণ একটি মুহূর্ত। এরপর আমার মেয়ে আমার হাজবেন্ড জড়িয়ে ধরল।

হাজব্যান্ড হেসে বললো তোমরা এসেছে তাহলে। মিরা তো মনে হয় পুরো জায়গার রানী হয়ে গেছে। আমি হেসে বললাম তুমি কি সুন্দর ভাবে সব সামলাচ্ছ দেখে খুব গর্ব লাগছে। আমার হাজব্যান্ড হালকা লজ্জা পেল তারপর বলল সবাই মিলে করছে বলেই তো সম্ভব হচ্ছে। এই ছোট্ট কথা গুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে পারিবারিক বন্ধন সম্মান আর ভালোবাসা। আমরা সাধারণ মানুষ কিন্তু আমাদের এই সাধারন মুহূর্তগুলো একদিন হয়ে দাঁড়ায় জীবনের অমূল্য স্মৃতি। জীবনে ছোট ছোট অভিজ্ঞতা পরিবারের সাথে কাটানো সময় আর প্রিয় মানুষদের পাশে দেখা এসবই আমাদের জীবনের আসল সাফল্য। আগামীকাল অনুষ্ঠানটা যেমনই হোক না কেন আজকে সন্ধ্যাটা আমার কাছে নিঃসন্দেহে অনেক বিশেষ। ধন্যবাদ সবাইকে সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...