মায়ের হাতে বানানো পিঠা 😋
নমস্কার বন্ধুরা,,,
কেমন আছেন সবাই..? আশা করি সবাই অনেক বেশি ভালো আছেন। আমিও অনেক ভালো আছি। ভালো না থেকে আর উপায় আছে! চোখের সামনে এমন সুস্বাদু পিঠা রাখলে যে কারো মন ভালো হয়ে যাবে।
পিঠা, শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অংশ। শীতের আগমন মানেই বাঙালির বাড়িতে বাড়িতে পিঠার উৎসব। চালের গুঁড়ো, গুড়, নারকেল, খেজুরের রস দিয়ে তৈরি এই মিষ্টান্নটি বাঙালির মনকে ভরিয়ে তোলে আনন্দে।
পিঠা খাওয়ার জন্য শীতকালকে বেছে নেওয়ার কারণ হলো, এই সময় পিঠা তৈরি করার নানা রকমের গুড় বাজারে পওয়া যায়। যেমন- খেজুরের রস থেকে বানানো খেজুরের গুড়, পাটালি গুড়, নলেন গুড় ইত্যাদি ইত্যাদি। এই সময় গুড়ের মিষ্টি গন্ধে চারদিক ম ম করে। এসব গুড় থেকে তৈরি পিঠা খেতে অত্যন্ত মজাদার হয়ে থাকে। নতুন গুড় শীতকাল ছাড়া পাওয়া যায় না। তাই শীতকালই পিঠা তৈরির জন্য উপযুক্ত সময়। তাছাড়া শীতের সকালের পিঠার স্বাদ অন্য যেকোনো সময়ের চাইতে আলাদা লাগে।
পিঠার সঙ্গে পৌষ সংক্রান্তি শব্দটি জড়িত। বিশেষ করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এ সময়েই আনুষ্ঠানিকভাবে খোলা পুড়িয়ে পিঠা তৈরি শুরু করা হয়। আর তাই এই সংক্রান্তি পিঠা উৎস নামেও পরিচিতি লাভ করেছে। পৌষ সংক্রান্তিকে মকর সংক্রান্তিও বলা হয়ে থাকে। বাংলা পৌষ মাসের শেষের দিনে এই উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। তবে শেষের দিন হলেও সাধারণত দুই-তিন দিন ধরে এই রকম পিঠা বানানোর কাজ চলে প্রতিটি হিন্দু বাড়িতে।
তেলের পিঠা |
---|
তাই গতকাল আমাদের বাড়িতেও পিঠা বানানো হয়েছিল। কারণ গতকাল বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিন ছিন। আর আমাদের এখানে এই পিঠা উৎসবটি বাংলা পৌষ মাসের শেষ দিনে পালন করা হয়। মা পিঠা গুলো সব নিজের হাতে তৈরি করেছিলেন। আমি আর আমার ঠাকুরমা মাকে পিঠা বানানোর কাজে সাহায্যও করেছিলাম। মা-এর বানানো পিঠা গুলোর মধ্যে ছিল- তেলের পিঠা, কুলি পিঠা, চিতই পিঠা যেটা আমাদের এখানে কাঁচি গড়া পিঠা বা সাদা পিঠাও বলা হয়ে থাকে। পিঠা গুলো খেতে খুবই সুস্বাদু হয়েছিল।
বাংলাদেশে শতাধিক ধরনের পিঠা তৈরির প্রচলন রয়েছে। প্রতিটি অঞ্চলের পিঠার স্বাদ ও তৈরির পদ্ধতি আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
কিছু জনপ্রিয় পিঠার মধ্যে রয়েছে:
- ভাপা পিঠা: ভাপা পিঠা চালের গুঁড়ো, গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। এই পিঠা বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি পিঠা।
- চিতই পিঠা: চালের গুঁড়ো, গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি এই চিতই পিঠা স্বাদের পাশাপাশি দেখতেও খুব সুন্দর হয়ে থাকে।
- দুধচিতই: চিতই পিঠার মতোই তৈরি হয়, তবে এতে দুধ যোগ করা হয়।
- দুধকুলি: দুধ ও চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি এটি একটি মিষ্টি পিঠা।
- তিলকুলি: তিল দিয়ে তৈরি এটিও দুধকুলির মত একটি মিষ্টি পিঠা।
- পাটিসাপটা: পাটিসাপটা পিঠা ময়দা, ডিম ও দুধ দিয়ে তৈরি করা একটি মিষ্টি পিঠা। পাটিসাপটা পিঠাও বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় পিঠা।
- নকশি পিঠা: চালের গুঁড়ো, গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি এই পিঠা বিভিন্ন নকশা করে তৈরি করা হয়। এই জন্য একে নকশি পিঠা বলা হয়ে থাকে।
- কুলি পিঠা: কুলি পিঠা চালের গুড়ো, গুড ও নারকেল দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে।
- মালপোয়া: ময়দা, ডিম ও দুধ দিয়ে তৈরি একটি মিষ্টি।
আগের বলেছি,পিঠা শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি বাঙালির জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। পিঠা তৈরি করা ও খাওয়া বাঙালির জন্য একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা। শীতের দিনে পরিবার-পরিজন একসাথে মিলিত হয়ে পিঠা তৈরি করা এবং একসঙ্গে খাওয়া একটি আনন্দের ব্যাপার।
পিঠা শুধুমাত্র বাড়িতে তৈরি করা হয় না, বিভিন্ন উৎসব ও অনুষ্ঠানেও পিঠা তৈরি করা হয়। এবং সেগুলো বিভিন্ন দামেও বিক্রি করা হয়। বিশেষ করে পৌষ মাসে পিঠা তৈরির প্রচলন বেশি। পিঠা তৈরি করা শুধুমাত্র একটি রান্নার কাজ নয়, এটি একটি কলা। প্রতিটি পিঠার পেছনে লুকিয়ে থাকে একজন মহিলার মমতা ও ভালোবাসা।
সাদা পিঠা |
---|
আধুনিক যুগে পিঠা তৈরির পদ্ধতি বদলে গেছে। তবে পিঠার জনপ্রিয়তা এখনো কমেনি। নতুন প্রজন্মও পিঠা খেতে ভালোবাসে। বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও হোটেলে এখন পিঠা পাওয়া যায়।
পিঠা শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অমূল্য সম্পদ। আশা করা যায়, আগামী দিনেও পিঠা বাঙালির জীবনে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সমাপ্ত |
---|
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
এত সুন্দর একটা আনন্দ মুহূর্ত আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা। আপনার পোস্টটি পড়ে জানতে পারলাম। ভাপা পিঠা বা চিতই পিঠা দুধ দিয়ে ভিজিয়ে খেলে খুবই মজা লাগে। এটা সত্যি বলছেন ,বাংলাদেশের খুবই জনপ্রিয় এই পিঠা গুলো। আর মায়ের হাতের খাবার! পৃথিবীর সব থেকে দামি খাবার ,এবং মজার খাবার। আপনার জন্য শুভকামনা রইল দাদা। ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন।
শীত মানেই হচ্ছে বাঙালি নতুন একটা আনন্দে মেতে ওঠে এই সময় বাঙালির ঘরে ঘরে নানা ধরনের পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে আপনি ঠিকই বলেছেন পিঠা শুধুমাত্র একটা খাবার নয় এটা বাঙালি জাতির ঐতিহ্য।
আপনার মায়ের হাতে বানানো বেশ কিছু পিঠার ফটোগ্রাফি আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন আমার মা ও মাঝে মাঝে পিঠা তৈরি করে কিন্তু পিঠা আমি কতটা পছন্দ করি না অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আপনার মায়ের হাতের পিঠে আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ভালো থাকবেন।
মায়ের হাতে তৈরি পিঠার স্বাদ একদমই অন্যরকম। আমি ও সমস্ত পিঠা খেতে ভালোবাসি। সবকিছু খেতে ভালবাসলেও সমস্ত কিছু তৈরি করা ঝামেলার কাজ। এখন কার যুগে সমস্ত কিছু বদলে গেছে। আগেকার দিনের মতো মায়ের হাতে পিঠার স্বাদ আর পাওয়া যায় না।
পোস্টটি পড়ে মন ভরে গেল! পিঠা বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কতটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তা আপনার লেখার মাধ্যমে সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে। শীতের পিঠার এই গল্পগুলো যেন আমাদের শিকড়ের সঙ্গেই যুক্ত রাখে। মায়ের বানানো পিঠার স্বাদ আর শীতের সকালে পিঠা খাওয়ার আনন্দ সত্যিই অতুলনীয়। আশা করি, এমন আরও সুন্দর পোস্ট ভবিষ্যতেও পাব। শুভকামনা রইল!
পিঠা শুধুমাত্র একটি খাবার নয়, এটি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অমূল্য সম্পদ। পিঠা খেতে ভালোবাসে না এমন লোক হয় তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর সেটা যদি হয় মায়ের হাতে বানানো তাহলে আর কোনো কথাই নাই। শীত মানেই হচ্ছে বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা তৈরির উৎসব। এই সময়ে বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে।
আপনি আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমার পোস্টি পড়েছেন এবং এতো সুন্দর একটি মন্তব্য করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন।