দীর্ঘ দিন পর একটু ঘুরাঘুরি (A little stroll after a long day)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারোকাতুহ।
সবাই কেমন আছেন? আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালে আছি। হয়ত আপনারা খেয়াল করে থাকবেন গত প্রায় এক মাসের কাছাকাছি সময় আমি কোনো পোষ্ট করি নাই। নিজের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে কিছু সমস্যার কারণে কোনো কাজই ঠিক মতো করা হয় না। যেহেতু আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি রেগুলার পোষ্ট করতে পারব নানে, এজন্য পোষ্ট করাই বন্ধ রাখছিলাম। আবারও আল্লাহ তায়ালার রহমতে আপনাদের মাঝে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগতেছে। আশা করি আবারও আমি আমার পোষ্ট নিয়মিত করতে পারব। আর গত দিনগুলো পোষ্ট না করার কারণ নিয়ে অন্য একদিন একটা পোষ্ট শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ। যাতে আপনারা বিষয়গুলো বুঝতে পারেন।
দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময় ধরে ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে হতাশা, টেনশন, দুশ্চিন্তা, ভালো না লাগে, আবেগ, দুঃখ কষ্টে,, জীবনের সাথে লড়াই করে বেঁচে আছি। আপনাদের প্রশ্ন জাগতে পারে এতো সমস্যা কেন। সেই গল্পটা অনেক লম্বা। সারসংক্ষেপ হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়ার কারণে নিজে মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পরেছিলাম তারপর থেকে আমার এমন অবস্থা। কোন ভাবেই নিজেকে মানসিক ও শারীরিক ভাবে সুস্থ করে তুলতে পারতেছি না। পড়াশুনা, কাজ কোনো কিছুতেই মন নাই। গত চার মাস ধরে ঢাকাতে ছিলাম, কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো সময়গুলো কাজে লাগাতে পারি নাই, মানসিক সমস্যায় সময় গুলো নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিনই মনে হতো বাড়ী চলে যায়, পড়াশুনা আর ভালো লাগে না। এক দিন দুই দিন এভাবে করতে করতে গত ৫ তারিখ আর ঢাকাতে থাকতে না পেরে নিজের সকল জিনিসগুলো নিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়েছি৷ জীবন যুদ্ধে হেরে গেছি।😞😞 কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারতেছি না, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতেছি। কি করব বুঝতে পারতেছিলাম না। ভাবলাম হয়ত বাড়ীতে গেলে কিছুটা সমস্যা কমে যাবে। তাই বাড়ী চলে আসি।
বাড়ীতে এসেও মানসিক অবস্থা ঠিক হয় না। সারা দিন রুমে শুয়ে কেটে যায়, আর ভাবতে থাকি, আমি কি করব৷ কোনটা করা উচিত। আসলে জীবনের এমন একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি যেখানে সিদ্ধান্ত ভুল হলে জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে।😑😑 বুধবার হঠাৎ আমার বন্ধু আশিক আসরের সময় কল দিয়ে বললো চলো ঘুরতে যায়, আমি বললাম না গো মনটা ভালো না আর পকেটে এক টাকাও নাই। সে বললো চলো টাকা লাগবে না, মোটরসাইকেল নিয়ে যাব। অনেক বলার পর রাজি হলাম, ভাবলাম যদি ঘুরাঘুরি করতে একটু যদি মনটা ভালো হয়। আসলে আমার জীবনটা এখন পানিতে ভাসা ভেলার মতো হয়ে গেছে কখন কোন দিকে যাচ্ছে বোঝা যায় না। আসরের নামাজ শেষ করে এসে রেডি হয়ে আমি রাস্তা দিয়ে হেটে চলে গেলাম ব্রীজের সামনে সেখানে আশিক অপেক্ষা করতেছিল গাড়ি নিয়ে আমার জন্য। আমি উঠে পরলাম মোটরসাইকেলে। আমাদের উদ্দেশ্যো ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ী যাওয়া। যাকে আমাদের গ্রামীণ ভাষায় কুঠি বাড়ী বলা হয়। আমাদের বাড়ী থেকে গাড়ি নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ী যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট মতো। যিনি তার লেখনী দিয়ে জয় করেছেন বিশ্বকে। আমরা মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হলাম। যার সময়ে অনেকটা পথ যাওয়ার পর রাস্তায় একটা দুর্ঘটনা ঘটে ছোট রাস্তায় বড় বালি টানা গাড়ি ঢুকে পড়াই আমার বন্ধু আশিক মোটরসাইকেলের ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারে নি। যার ফলে আমরা দুইজনই রাস্তার পাশে পরে যায় গাড়ি নিয়ে 😥। আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত যে আমাদের এবং গাড়ির কিছুই হয় নাই। পাশে একটা মহিলা দেখে আমাদেরকে বলেই উঠল, বাবা যাবার পথে বাধা আর ঘুরতে যাওয়ার দরকার নাই, বাড়ি চলে যাও।
আমরা বললাম সমস্যা নাই, এটা বলেই আবার আমাদের পথ চলা শুরু করলাম। কুঠি বাড়ী পৌছে দেখি বড় গেট বন্ধ করা। আপাতত জনসাধারণের প্রবেশ নিষেদ্ধ। বৃহস্পতিবার থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়েছে তারই পূর্ব প্রস্তুতি চলতেছিল। যার ফলে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছিল না, এজন্য আমরাও মোটরসাইকেল থেকে না নেমে আবার সিদ্ধান্ত নিলাম একটু গেলেই পদ্মা নদী সেখানে ঘুরে আসা যাক। এজন্য কুঠি বাড়ির কোন ছবিও তুলেছিলাম না। নদীর তীরে গিয়ে একটা জাগায় গাড়ি রেখে আমরা পাড়ি থেকে নিচে নেমে গেলাম। এখন নদীতে পানি কম। সব জায়গায় প্রায় বালির চর পরা। অল্প কিছু জায়গা জুরে পানি আছে। নদীর তীর সারি সারি বড় নৌকা বাধা আছে। দেখতে অনেক ভালো লাগতেছিল। আমি নদীর তীরে গিয়ে বেশ কিছু ছবি তুললাম। ছোট ছোট নৌকা নিয়ে জেলেরা মাছ ধরতেছে। আমি তাদেরও কিছু ছবি তুললাম। অস্তমিত যাওয়া সূর্যের অপরূপ সৌন্দর্যের কিছু ছবিও আমার ফোনের ক্যামেরা বন্দি করে ফেললাম। এরপর নদীর ধারে বেধে রাখা জেলেদের নৌকার উপর বসে কিছু ছবি তুললাম।
সন্ধার কিছুটা সময় পূর্বে আমরা নদীর তীর থেকে বাড়ীর উদ্দেশ্যে আবার রওনা হলাম। দীর্ঘ দিন পর এভাবে ঘুরে মনটাও বেশ ভালো হয়ে গেল। এমনিতেই মানসিক টেনশন আর হতাশায় কোনো কিছু ভালো লাগে না। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটাতে পেরে বেশ ভালো লাগল। আশা করি আমার আজকের পোষ্টটা আপনাদের সবারও কাছেও ভালো লেগেছে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আবারও দেখা হবে আমার নতুন কোনো পোষ্ট নিয়ে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
অনেক সময় কোন একটা জিনিস আমরা খুব বেশি চাইলেও সেই জিনিস আমরা পাই না বিভিন্ন কারনে ।এখানে আমরা ভাগ্যের কাছে হেরে যাই ।এর কারণে আমরা অনেক সময় মানসিক অবসাদের শিকার হয়ে থাকি।
তবে এই হেরে যাউয়া সব কিছু না।আমরা আমাদের পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে অনেক কিছু পেতে পারি ।
আপ্নি বন্ধুদের সাথে বেরাতে হিয়ে ভালো কাজ করেছিলেন ।এতে মন ভালো হয় ।
রবি ঠাকুর এর কুঠিবাড়ি দেখতে আমরাও গিয়েছিলাম বছরখানেক আগে ।কিন্তু প্রচন্ডরকম বৃষ্টির করনে শেষ পর্যন্ত আমাদের আর যাওয়াহয় নাই ।ফেরত আসি আমরা।
ছবিগুলো খুব সুন্দর হয়েছে
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
জীবন কখনো কখনো এতটা কঠিন হয়ে পড়ে, আমরা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারি না কীভাবে সামলে উঠব। আপনি একজন সাহসী মানুষ এই কঠিন সময়েও আপনি লড়াই করছেন, সেটাই অনেক বড় ব্যাপার। মনে রাখবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পাওয়া মানেই জীবনের সব দরজা বন্ধ নয়। আপনি এখনও অনেক কিছু করতে পারেন, ইনশাআল্লাহ। ধৈর্য ধরুন, নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন, এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুনভালো সময় আসবেই। বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি ঘুরুন, জীবনে সফলতা বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্সের উপর নির্ভর করে না।
অনেক ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।