খ্যাতির বিরম্বনা ও এর থেকে মুক্তি
আসসালামু আলাইকুম/আদাব,
কেমন আছেন বন্ধুরা? আমি সৃষ্টিকর্তার অশেষ মেহেরবানীতে ভালোই আছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে “খ্যাতির বিরম্বনা ও এর থেকে মুক্তি” শীর্ষক আমার একটি লিখনি উপস্থাপন করলাম। তাহলে শুরু করা যাকঃ-
আমরা মানুষ। সবাই বলে সামাজিক জীব। হ্যাঁ আমিও মানি আমরা সামাজিক জীব। কেননা এই সমাজেই আমাদের বসবাস। আমরা মানুষ ঠিকই কিন্তু এই সমাজ আবার আমাদের পরিচয় বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করে দিয়েছে। অর্থ্যাৎ সম্পদের হিসেবে এই ভাগ করা হয়েছে।
একটু খুলে বললে যার সম্পদ যতটুকু সমাজে সে সেই পরিচয় নিয়েই বেঁচে থাকে। বেশি সম্পদশালী হলে আপনি উচ্চবিত্ত, মাঝামাঝি সম্পদশালী হলে আপনি মধ্যবিত্ত এবং অল্প সম্পদশালী হলে আপনি নিম্নবিত্ত। তবে সমাজ আমাদের যেভাবেই পরিচয় করিয়ে দিক না কেন দিনশেষে কিন্তু আমাদের সকলের একটাই পরিচয়, সেটি হলো আমরা সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ।
মানুষ হিসেবে এই পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি বলে সৃষ্টিকর্তার প্রতি আমাদের সকলেইরই কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত।
একজন মানুষ তার জীবনদশায় যেকোন সময়ে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হতে পারে, অধিক ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করতে পারে, হঠ্যাৎ করেই আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তাও পেতে পারে, আবার কখনো তার যোগ্যতার চেয়েও অনেক বড় পদ লাভ করতে পারে।
এতক্ষণ যেগুলো বললাম এগুলো সবই স্বাভাবিক। একজন মানুষের জীবনে এমন যে কোন একটি ব্যপার যখন তখন ঘটতেই পারে।
ধরুন এরকম যেকোন একটি ব্যপার আপনার বা আমার সাথে ঘটলো। তখন আমরা কী করবো? ম্যক্সিমাম মানুষ এই সময়টায় কী করে? আমরা অনেকেই এই সময়টায় বিভিন্ন ভুল করে থাকি। এর প্রধান কারণ হলো অধিক জনপ্রিয়তা কিংবা অধিক ক্ষমতাবলে আমরা নিজেরাই নিজেদের নিয়ন্ত্রন করতে পারি না।
ফলস্বরুপ কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের মুখ থুবরে পরতে হয়। বাস্তবে এমন অনেক উদাহরণ আছে। এই ধরুন কিছু কিছু লোক সোস্যাল মিডিয়ার বদৌলতে রাতারাতি সেলিব্রেটি হয়ে যায়। সাধারণ মানুষ তাদের চিনতে থাকে। এ সময়টায় জস ক্ষ্যতি তাদের এমন ভাবে গ্রাস করে যে তারা তাদের আগের অবস্থা ভূলে যায়।
এমতবস্থায় অনেকেই তাদের ন্যায়-নীতি এবং মানুষ্যত্ব জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সবার সাথে এমন আচরণ করে যেন তাদের আচরণে হিংস্র পশুর ছাপ ভেসে ওঠে। ক্রমাগত এমন আচরণ ও অহংকারের ফলে তাদের মানুষ ঘৃণা করতে শুরু করে। চারপাশের মানুষ তাদের নিয়ে কুৎসা রচনা করতে থাকে।
যেই সোস্যাল মিডিয়া তাদের সেলিব্রেটি বানিয়েছিলো সেই সোস্যাল মিডিয়াই এবার তাদের নামে বদনাম দিতে থাকে। এভাবে ধীরে ধীরে সেই মানুষটি সকলের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসে।
একসময় সে বুজতে পারে আসলে সবই ছিলো তার ভুল। যদি নিজেকে একটু সুধরাতো অথবা নিজের ঔদ্ধত্য নিজের মধ্যেই রাখতো তাহলে হয়তো আজকে তার এই পরিণতি হতো না।
পরবর্তীতে তার আত্মবিশ্বাসে অনেকখানি ঘাটতি দেখা যায়। তখন চাইলেও সে আবার নতুন করে সব কিছু শুরু করতে পারে না। অনেক সময় আমরাই তাদের শুরুটা ঠিকমত শুরু করতে দেই না। তাদের মাঝে প্রকৃত উপলব্ধির জ্ঞ্রান ফিরে আসে ঠিকই কিন্তু তারা আর নতুন করে কারো অন্তরে প্রবেশ করতে পারে না।
আর যারা প্রকৃত বুদ্ধিমান এবং অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ তারা কখনই এই যশ বা খ্যাতি পাওয়ার পর নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করে না। বরং এই সময়টাকে কাজে লাগিয়ে নিজে আরো বিলিয়ে দেয় মানুষের মাঝে। তারা প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে যানে এবং পরবর্তীতে ধীরস্থিরসম্পন্ন ও বিনয়ী ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটায়।
কারণ তাদের মাঝে প্রকৃত জ্ঞান রয়েছে। তারা খ্যাতি পাওয়ার পর কখনই অহংকার আর যৌলুশে মজে যায় না। একজন প্রকৃত বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে কখনই তার অর্জন, খ্যাতি, যশ ও ধনসম্পদ মানুষের শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসার থেকে বড় হয় না। ফলস্বরুপ তারা সফলকাম মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পায়।
আর এর বিপরীত যদি হয় অর্থ্যাৎ মানুষকে সম্মান ও ভালোবাসা দিতে পারি তাহলে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পরেও আমরা হয়ে উঠবো জ্বলজ্বলে এক ধ্রুবতারা, আমরাই হবো পরবর্তী প্রজন্মের আদর্শ। সত্যি তো তাই। যারা সত্যিকারের সেলিব্রেটি তারাই দেশ ও দশের বন্ধু।
আজ আর নয় বন্ধুরা, ভালো থাকবেন সবাই।
খুবই ভালো লেগেছে আপনার পোস্ট।। একটা কথা না বললেই নয় আপনার লেখনীয় সত্যিই অসাধারণ।। উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত নিয়ে যে কথাগুলো একদম বাস্তব।। আমাদের সমাজে ঠিক এরকমটাই দেখা হয়।।
আপনি আরো বেশ কিছু কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো আমার অনেক ভালো লেগেছে।। আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদেরকে উপহার দেওয়ার জন্য।।