নমস্কার বন্ধুরা,
আজ ঘুরতে গিয়েছিলাম বোনের বাড়ি। যদিও ঐ স্থান পছন্দ না তবুও বোনের বাড়ি বলে কথা যেতে তো হবেই। এটাকে প্রচলিত রীতিতে বলা হয় "বাঁধা ভাঙ্গা"। বিবাহের পরে ছেলের বাড়ি থেকে মেয়ের বাড়ি এবং মেয়ের বাড়ি থেকে ছেলের বাড়িতে যাওয়ার একটা পর্ব।
সকাল দশটার দিকে ঘুম থেকে উঠতেই মা বললো, স্নান সেরে রেডি হতে। কিন্তু সত্যি বলতে আমার একদমই যেতে ইচ্ছে করছিল না। কারণ যদিও আমার ঐভাবে কোনো নির্ধারিত কাজ নেই তবে অনলাইনে অনেক রুটিন করা কাজ রয়েছে। যাইহোক, প্রাতঃকৃত্য সেরে হালকা খাবার খেয়ে স্নান সেরে নিলাম।
ইদানিং খুব দরকার ছাড়া ঘর থেকেই বের হই না আর এই রোদ্দুরে কোথাও যাওয়া তো দূরের কথা। বিশেষ করে ঐ কারণেই রোদ্দুর একদমই নিতে পারি না। যাইহোক সকলে মিলে গাড়িতে উঠে বোনের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলাম। তাছাড়া আমি একদমই গরম সহ্য করতে পারিনা যে কারণে বাইরে তাকাতেই পারছিলাম না।
আমাদের একটি বাজারের নাম গিলাতলা সেখানে যেতেই যেন গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। তাই গাড়ি দাঁড় করিয়ে আমি এক লিটারের একটা জল ক্রয় করে নিয়ে এসেছিলাম। ওহ! জলটা গালে দিতেই যেন একটু প্রশান্তি পাচ্ছিলাম। ঐ যে কথায় আছে জলের আর এক নাম জীবন। এই আবহাওয়ায় উপলব্ধি করা যায় জল কতোটা গুরুত্বপূর্ণ!
বোনের বাড়ি যাওয়ার যে রাস্তা সেখানে কাজ চলছিল । যে কারণে আমরা পথ পরিবর্তন করলাম। অনেকদিন বাদে ইটের বাঁধ প্রকৃতির রাস্তা দেখার সুযোগ মিললো।
কিছুটা পথ অতিক্রম করতেই আবার দেখলাম সুন্দর পাকা রাস্তা। রাস্তার দুই পাশে দূর্দান্ত সবুজ বৃক্ষরাজি। এতোক্ষণ বাদে যেন প্রকৃতি পরিদর্শনের সুযোগ মিললো। এই গাছ গুলো কিন্তু আমাদের গ্রামে মতো আগাছা বা দেশি প্রকৃতির গাছ না। এই বাঁধ প্রকৃতির রাস্তার দুই পাশে সরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হয়েছে। আমি যতোটা জানি এগুলোর দায়িত্বে থাকে স্থানীয় সরকার।
আবার রাস্তার অবস্থা বেহাল তাই সকলে গাড়ি থেকে নেমেছিলাম। নচেৎ লোড নিয়ে গাড়ি সামনে এগোতে পারছিল না। এখনো প্রত্যন্ত কিছু গ্রাম রয়েছে যেখানে যোগাযোগ মাধ্যম একদমই উন্নত না।
যাইহোক, মোটামুটি ঘন্টা তিনেক গাড়িতে থাকার পরে বোনের বাড়িতে পৌঁছালাম যখন সময় প্রায় দুপুর দুইটা। অবশেষে সেই বন্ধুর পথ অতিক্রম করে আমরা সকলে আমাদের গন্তব্যে পৌছেছিলাম।
আমরা প্রথম এই বোনের বাড়িতে গেলাম। নিজেদের পরিষ্কার করে ঘরে গিয়ে বসতেই জলখাবার নিয়ে এসেছিল। তবে এই সবের থেকে জলের দরকার অনেক বেশি ছিল। অন্যদিকে বোনের বাড়িতে জল আবার আমাদের এলাকার মতো না। ঐ যে আছে বলেই আমরা মূল্যায়ন করি না। নদী প্রধান দেশ আমাদের তবে সুপেয় জলের খুব অভাব। সকলেই হালকা করে কিছু কিছু ফল ও অন্যান্য খাবার খেলাম। প্রথমবার এসেছি তাই একটু বাইরে তো যেতেই হবে।
বোনের ঘরের সামনে উঠোন এবং তারপরেই একটা জলকর যেখানে দেখলাম রক্তজবা ও বোলিং ফুল ভেসে এসেছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম জলকরের দক্ষিণ পাশে একটা বোলিং ফুলের গাছ।
ওহ! এই বোলিং ফুলের গাছ এখন বিলুপ্তির পথে। আমাদের বাড়িতেই একটা গাছ ছিল ঐ বোলিং ফুল জলের মধ্যে পড়লেই টুপটাপ শব্দ পেতাম কারণ মাছে এই ফুল খুব পছন্দ করে। পাশাপাশি চড়ুই পাখিরা ঝাঁক ধরে এই গাছে বসতো। এমনকি এই বোলিং গাছে বাসা বাঁধতে তাঁরা খুবই পছন্দ করতো। এখন আর বোলিং ফুল গাছ ও নেই, আবার চড়ুই পাখি ও নেই।
আমাদের দুইজন তখনো পৌঁছায়নি তাই আমরা একটু পথের দিকে ও এগোচ্ছিলাম। তবে রোদ্দুরে বেশিক্ষণ টিকতে পারলাম না।
আমরা হয়তো আরো বিলম্ব করেই যেতাম তবে ছবিতে যাকে দেখছেন ইনি আমার কাকাতো বোনের শাশুড়ি যিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। এই কারণেই দ্রুত যাওয়া, ভাবলেই তো শরীর শীতল হয়ে যায়। নিশ্চিত মৃত্যু নির্ধারিত একটা সময়ে। মৃত্যুর জন্যই আমাদের জন্ম তবে আমরা কেউই এটা ভাবতেই পারিনা যে আগামীকাল আমরা থাকবো না। কতোটা মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করছেন এই মানুষটা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন, এমনকি এখনো ঐ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলছেন। ঈশ্বরের আশীর্বাদে সেই কারণেই তিনি এখনো আমাদের মাঝে রয়েছেন।
কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম বড়দি ও দাদা বাইকে করে এসেছেন। আমি একটু এগিয়ে বড়'দি কে সাহায্য করলাম, কারণ পদোন্নতির সাথে দায়িত্ব ও অনেক বেড়েছে। সারাদিন কাজ সামাল দিয়ে আসছে আবার সাথে রয়েছে ভারী ব্যাগ।
মাছ, মুরগির মাংস, খাসির মাংস ইত্যাদি খাওয়ার পরে সকলে মিলে একটু আড্ডা দিলাম। এভাবে বাড়ির সকলে মিলে ঘুরতে যাওয়া সর্বদা হয়ে ওঠে না। এবার বাড়িতে ফেরার পালা।
হঠাৎ আকাশে মেঘ এবং মেঘের গর্জন, মনে হচ্ছিল হয়তো এখানেই আজ সকলকে থেকে যেতে হবে।
আমি ও আমার বড় কাকু এবার আলাদা করে কাকুর বাইকে বাড়িতে ফিরে এসেছি যে কারণে আমরা সকলের আগেই বাড়িতে পৌঁছে ছিলাম প্রায় আটটার দিকে।
এভাবেই আমি আজকের দিনটা অতিবাহিত করেছি। সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ্য থাকুন।
আপনারা আপনার দিদির বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছেন অনেকটা পথ অতিক্রম করে দুপুরের দিকে তাদের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছালেন ওখানে গিয়ে আবার খাওয়া দাওয়া করেছেন সবাই মিলে আড্ডা দিয়েছেন আসলে পরিবারের সবার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো অনেক বেশি সুন্দর হয়ে থাকে ধন্যবাদ দিদির বাড়িতে কাটানো আনন্দঘন মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন।