শৈশবের স্মৃতি।

in Incredible India12 days ago
1000000993.jpg

নমস্কার বন্ধুরা,
সময়ের সাথে সাথে স্মৃতি গুলো যেন অতীত হয়ে গিয়েছে। হয়তো এই প্ল্যাটফর্মে লেখার সুবাদে আবারো মাঝেমধ্যে মনে করে লেখার সুযোগ পাই। অন্যথায় এটা হয়তো বিলীন হয়ে যেতো, কখনো মনেই পড়তো না।

বিগত রাতে একদমই ভালো ঘুম হয়নি তাই ঘুম থেকে উঠতে অনেক বিলম্ব হয়েছে। বাবা বলেছিল আজ পুকুর থেকে মাছ ধরতে হবে। কিন্তু ঘুম থেকে উঠতে উঠতেই আজ অন্য দিনের থেকে বিলম্ব হয়েছিল। বাবা মাছ ধরে নিয়ে এসেই আমাকে ডাকাডাকি করছিল তখন সকাল এগারোটা বাজে।

আমার শৈশবের সাথে মাছ ধরার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। মাছ ধরতে ধরতে তো স্কুলের কথাও মাঝেমধ্যে মনে থাকতো না। বিশেষ করে শীতকালে এই ঘটনা অনেক ঘটতো। তাছাড়া আমাদের গ্রামে মাছ চাষ করে সকলেই আর শীতের সময় জল শুকিয়ে মাছ ধরা হতো। মাছ দেখলেই আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিতো যতোক্ষণ না সেইটা ধরতাম।

আমার দাদা, জ্যাঠাবাবু এবং এক দাদু এই তিনজনের একটা বড় জলকর ছিল যখন আমি তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী। আমার শৈশবে অনেক বন্ধু ছিল। পাড়ার সমবয়সী অনেক বন্ধু ছিল। যুদ্ধ হয়ে যাক কিন্তু বিকেলে খেলার মাঠে আমরা সকলেই দলবদ্ধ।

1000001001.jpg

ঐ যে বললাম তিনজনের একটি জলকর যে দাদার কথা বলেছি সেই দাদার ছেলে আমার সহপাঠী ছিল। মানস দাস(দাদার ছেলে)- মানসের সাথে চুক্তি করলাম ওদের পুকুরে ভেটকি মাছ ধরতে যাবো। যে যা পাবো সব অর্ধেক অর্ধেক। চুক্তি পর্ব শেষ এবং আমরা শুক্রবার ঠিক দুপুর বেলা বরশি দিয়ে ভেটকি মাছ ধরতে গিয়েছিলাম।

প্রায় ঘন্টা দুয়েক অতিবাহিত হলো কিন্তু কেউ কিছুই পেলাম না। মানস ক্লান্ত হয়ে বসেই পড়লো। তাছাড়া বরশিতে গাঁথা চিংড়িটাও ততোক্ষণে মারা গিয়েছিল। ভেটকি হলো শিকারী মাছ ওরা জ্যান্ত আহার পছন্দ করে। আমি তখনো হাল ছাড়িনি, আমি কাঠ জড়ো করে ফেলে রাখা এক জায়গায় বরশিটা ফেলতেই দেখলাম কিছু একটা আমার বরশির রশি টান দিলো।

আমি তখনো বুঝতে পারেনি যে ভেটকি মাছ। বরশিটা অনেক ভারী মনে হচ্ছিল, এদিক ওদিক না তাকিয়ে মাছ টেনে তুলেছিলাম। তবে উপরে এসেই মাছটা ছিটকে পড়লো মাটিতে। আমিও নাছোড়বান্দা, অনতিবিলম্বে মাছটা জড়িয়ে ধরেছিলাম। যদিও গলা এবং গালের ডান পাশ কেটেছিল কিন্তু মাছতো ছাড়া যাবে না। এখানে ভুল করলে মাছটা আবার পুকুরে চলে যাবে।

কি সমস্যা? তখন মানস ভাগ বসাবে চলে আসল। আমি তো ভাগ দিতে নারাজ কারণ এতো বড় মাছ আগে কখনোই নিজে বরশি দিয়ে ধরিনি। আমি প্রচন্ড মারুটে প্রকৃতির ছিলাম। তখন কোনো বুদ্ধি না পেয়ে বললাম, "তুই এখন বিশ্রাম নিচ্ছিল , তাই এই মাছটা শুধু আমার।"

মানস নাকি বাড়িতে বলে দিবে!

আমি:- বাড়িতে বললে তোর খবর আছে, যেখানে পাবো তোকে সেখানেই পিটাবো।

মানস:- ঠিক আছে কিছু বলবো না।

আমার তো মনে হয় আমরা শৈশবে অনেক বোকা ছিলাম। কিন্তু না, মূলত আমাদের মধ্যে শিশু সুলভ বৈশিষ্ট্য ছিল। তবে বর্তমানে ঐ বয়সের শিশুদের আচরণ দেখলে তাঁদেরকে পরিপক্ক মনে হয়।

আমি এমন ও দেখেছি যদি শিক্ষক মারধর করে, পরক্ষনেই অভিভাবকগণ শিক্ষকের বিচার করতে চলে আসে। তাহলে ঐ শৈশবে থাকা শিশুরা কি শিক্ষা পাবে?

রামায়ণ না জানলেও বিভিন্ন পর্ব হয়তো অনেকেই ইউটিউবে দেখেছেন যেখানে গুরুকে কিভাবে সম্মান করা হয়েছে। শুধুমাত্র এখানে না বরং আমি বাস্তবে ও দেখেছি। এইরকম আমার ও কয়েকজন প্রিয় শিক্ষার্থী রয়েছে।

আমার এক শিক্ষার্থী আছে যে এখন স্নাতকোত্তর সম্মান সম্পন্ন করে বি সি এস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমনকি সর্বশেষ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ সে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়য়েছিল। তবে লক্ষ্য বি সি এস তাই এখানে যোগদান করেনি।

যাইহোক, এখনো দেখলেই সাইকেল থেকে নেমে কথা বলে। আমার সামনে সাইকেলে ও চড়ে না।

এইটা কিন্তু শৈশবে আমার পরিবার ও আমাকে শিখিয়েছে যে শিক্ষকদের সামনে কি কি করা যাবে না। এই যে শৈশবের শিক্ষা এটা কিন্তু এখন কম দেখা যায়। ঐ সময়টা খুব মিস করি। আবারো যদি ফিরে পেতাম।

আমার আজকের লেখাটি এখানেই সমাপ্ত করছি।

Sort:  
Loading...
 12 days ago 

আপনার পোস্টে শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরেছেন যা পড়ে অনেক ভালো লাগল। শৈশবে ছোটবেলায় মাছ ধরতে যাওয়া , বন্ধুদের সাথে চুক্তি করে মাছ ধরা, বন্ধুদের সাথে ঝগড়া করা, বন্ধুদের সাথে খুনসুটি সবই যেন স্মৃতির অংশ।

বিশেষ করে শিক্ষকদের প্রতি সম্মান এবং শৈশবে পাওয়া শিক্ষার মূল্য অনেক বড় বিষয়।

আপনার শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত লেখাটা পড়ে আমার সেই পুরোনো শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল!যাইহোক শৈশব সম্ভব মনে করে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন